গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story) পর্ব- ৪৭+৪৮

0
2884

গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
পর্ব- ৪৭+৪৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

আমি ঠোট কামড়ে ব্যাথা সহ্য করছি। আমার অবস্হা ক্রমশ খারাপ হতে দেখে রুদ্রিক কিছু না ভেবে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির দিকে ছুটলো। পিছন পিছন বাকিরাও চলে আসলো। রুদ্রিক আমাকে গাড়িতে বসিয়ে লাজুক আংকেলের দিকে তাঁকিয়ে বলে,
–“কাজল আংকেল এবং দিয়া পিপি তোমরা বরং সেফলি বাচ্ছাদের পৌছে দিয়ে এসো এন্ড সাদি, সিথি তোরা আমার সাথে আয়। ”

লাজুক আংকেল সম্মতি জানিয়ে বলে,

—“তুমি চিন্তা করোনা রুদ্রিক। ”

দিয়া পিপি প্রশ্নের সুরে বললো,

—“সেন্টমার্টিনে তো ভালো কোনো হসপিটাল নাই। ”

রুদ্রিক কাজলের দিকে তাঁকিয়ে শুকনো গলায় বলে,

—“কাজলকে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। ”

—“কিন্তু অনেক দেরী হবে তো ভাইয়ূ ততখনে যদি…

সিথিকে থামিয়ে রুদ্রিক চিন্তা
রুদ্রিক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,

—-“কিচ্ছু হবে নাহ কাজলের। আমি আছি তো। আমি যথাসম্ভব দ্রুত ড্রাইভিং করার চেস্টা করবো। ”

লাজুক আংকেল ও দিয়া পিপি নিজেদের গাড়ি করে বেড়িয়ে যায়।

আমি ব্যাথায় ছটফট করে যাচ্ছি।রুদ্রিক আমার কাছে আসতেই আমি রুদ্রিকের হাত শক্ত করে ধরে বলি,

—-“আহহ রুদ্রিক আমাদের বেবীর আবার কিছু হয়নি তো? আমাদের বেবী ঠিক হয়ে যাবে তো?”

আমার কপালে চুমু খেয়ে বলল,

—“জানেমান সবসময় একটা কথা মনে রাখবি তোর ‘হাজবেন্ড’ সবসময় তোর সাথে আছে। তোর কিংবা আমাদের বেবীর কোনোপ্রকার ক্ষতি সে হতে দিবে।”

রুদ্রিকের কথা শুনে ব্যাথায় নিয়েই মাথাটা সিটে এলিয়ে দিলাম।রুদ্রিক ড্রাইভিং সিটে বসতে নিলে, সাদি ভাইয়া রুদ্রিককে থামিয়ে দিয়ে বলে,

—“আমার মনে হয় এখন তোর কাজলের কাছে থাকা উচিৎ। আমি যত দ্রুত সম্ভব ড্রাইভ করছি। ”

সিথিও সায় দিয়ে বলে, ‘হ্যা ভাইয়ূ তুমি কাজলর কাছে গিয়ে বসে পড়ো। ”

সাদি ড্রাইভিং সিটে এবং সিথি সাদির সাথে বসে পড়ে। সাদি ইঞ্জিন চালু করে দেয়।

রুদ্রিক আর কিছু না ভেবে আমার পাশে বসে আমার কাঁধটা নিজের কোলে করে রেখে বলে,

—-“কষ্ট হচ্ছে লক্ষিটি? ”

আমি স্লান হেঁসে রুদ্রিকের হাত জোড়া শক্ত করে ধরে বললাম,

—-“তুমি শুধু পাশে থাকো। কোনো কষ্টই আমার কাছে কষ্ট নাহ।”

রুদ্রিক কাজলের মাথায় আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে সাদিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—“ফাষ্ট ড্রাইভ কর সাদি। ”

সাদি ভাইয়া গাড়ি ঘুড়িয়ে ফেলে। আমার কষ্ট হলেও
রুদ্রিকের দিকে তাঁকিয়ে দাঁত কামড়ে ব্যাথাটুকু সহ্য করে নিলাম। রুদ্রিকের চোখ দিয়ে নোনাজল আমার হাতে টুপ করে পড়ে। আমি রুদ্রিককে শক্ত করে আকড়ে ধরি।

________

হসপিটালের কাছে সামনেই আসতেই রুদ্রিক তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে আমাকে কোলে তুলে নেয়। এতোক্ষন ব্যাথা সহ্য করতে পারলেও এখন আমার পক্ষে ব্যাথা সহ্য করতে পারছি নাহ। রুদ্রিক আমাকে হসপিটালে দিকে নিয়ে জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে বলে,

—–“কে কোথায় আছেন? আমার ওয়াইফ ব্যাথায় ছটফট করছে। ওয়াট দ্যা হেল। কেউ কি নেই? ”

রুদ্রিকের চিৎকার শুনে সকল ডক্টরসরা বেড়িয়ে এসে বলে,

—-“মিঃ শেখ আপনি? ”

রুদ্রিক অস্হির হয়ে বললো,।

—-আপনার আমার ওয়াইফকে একটু দেখুন। ওর অবস্হা ভালো মনে হচ্ছে। ”

ডক্টর কিছু নার্সকে বলে আমাকে কেবিনে নিয়ে যেতে। স্ট্রেচার আসতেই কয়েকজন ওয়ার্ডবয় আমাকে নিতে চাইলে, রুদ্রিক তাদের মানা করে আমাকে কোলে করে কেবিনের দিকে নিয়ে যায়।

রুদ্রিক কেবিনে আমাকে শুয়িয়ে দেয়। আমি ব্যাথায় কেঁদে ফেলি। আমার কান্না দেখে রুদ্রিক ও কেঁদে দেয়। রুদ্রিক আমাকে কাছে আসতে চাইলে, ডক্টর রুদ্রিকে বারণ করে বলে,

—“মিঃ শেখ আপনি আপাতত বাইরে যান। ”

রুদ্রিক আমার হাত আকড়ে ধরে বলে,

—“নাহ আমি যাবো নাহ। আপনি দেখছেন নাহ আমার কাজল কতটা কষ্টতা পাচ্ছে আমার কাজলের সাথেই থাকবো। এই অবস্হায় আমি কীভাবে যাবো? আপনি যা করার করুন আমার সামনেই করুন। ”

ডক্টর সাহেবা বুঝলেন এই ছেলেকে বুঝিয়ে লাভ নেই। তিনি যথাসম্ভব দ্রুত কাজলের চেকাপ শুরু করলেন। কিছু একটা ভেবে তিনি বলে উঠলেন,

—-“আমার মনে হয় এখুনি আমাদের বেবীর ডেলিভারি করতে হবে। ”

আমি ও রুদ্রিক কথা শুনে চমকে যাই। রুদ্রিক বলে উঠে,

—“কিন্তু ডক্টর কাজলের সময় তো আরো ২মাস পরে। ”

ডক্টর মাথা নাড়িয়ে বললেন,

—-“আমিও তো তা বুঝতে পারছি, কিন্তু আপনার ওয়াইফের এখুনি পানি ছেড়ে দিচ্ছে। আমাদের যত তাড়াতাড়ি সিজারি করতে হবে। যদিও টাইমের আগে সিজারে করাটা রিস্কি কিন্তু এখন না করলে
নাহলে বেবীর ক্ষতি হতে পারে। ”

বেবীর কথা শুনে এইবার আমার চিন্তা হতে লাগলো।

রুদ্রিক আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে,

—“একদম ভয় পাবিনা কাজল আমি আছি কিন্তু ওকে। ”

আমি রুদ্রিকের হাতে চুমু খেয়ে বললাম,

—-“তুমি আছো রুদ্রিক তাই আমার কোনো ভয় নেই।
তুমি আছে তে।
আমাদের বেবী ঠিক সুস্হ হয়ে জন্ম নিবে আল্লাহর রহমতে। ”

কথাটি বলে আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। আমাকে স্ট্রেচারে করে ও.টিতে নিয়ে আসলো।

ও.টির বাইরে পাইচারি করে যাচ্ছে রুদ্রিক। যদিও তার বড্ড চিন্তা হচ্ছে। সিথি ও সাদি রুদ্রিককে সামলাচ্ছে। রুদ্রিকের অবস্হা নাজেহাল। টাইমের আগে সিজার হচ্ছে এখন যদি বাচ্ছা কিংবা কাজলের ক্ষতি হয় তাহলে? রুদ্রিক আর কিছু ভাবতে পারছে নাহ।

দিয়া ও লাজুক ও চলে আসে ততক্ষনে। দিয়া এসে বলে,

—“কাজলের বাবা-মা আমাকে ফোন করছেন। উনাদের বড্ড চিন্তা হচ্ছে। আমি আপাতত আসতে বারণ করেছি। ”

দিয়ার কথা শুনে সিথি বললো,

—-“ঠিক করেছো। বাবা-মা ও বড্ড চিন্তা করছে। আমিও আসতে বারণ করেছি। এই অবস্হায় মা-বাবার না আসাই ভালো। ”

রুদ্রিক মাথা নিচু করে বসে আছে। সাদি রুদ্রিকের কাঁধে হাত রেখে বলে,

—“চিন্তা করিস নাহ রুদ্রিক। সব ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহ আছে আমাদের সাথে। ”

রুদ্রিক মলিন হাঁসি দিয়ে বলে,

—“আই হোপ সো!”

_______

প্রায় ৩ ঘন্টা পর,

অপরাশের থিয়াটারে বাচ্ছার কান্না আসতেই আমি পাশে তাঁকিয়ে দেখে নার্স হাঁসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে তোয়েলা মোড়োনো আমার ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে।

আমি নার্সের দিকে তাঁকাতেই সে হাঁসিমুখে আমার বাচ্ছাকে আমাকে কোলে দিয়ে বলে,

—-“অভিনন্দন ম্যাম আপনার মেয়ে হয়েছে। ”

মেয়ে কথাটি শুনে আমি হাঁসলাম। তোয়েলা জড়ানো আমার ছোট্ট পরীকে কোলে দেতেই আমি কান্না করে দিয়ে, আমার পরীকে সাদোরে চুমু খাই। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া।
আল্লাহ যে আমাদের সংসারের বরকত আমাদের মেয়েকে পাঠিয়েছে। আমার কেনো যেনো চোখ মেলে তাঁকাতে কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে ঘুমের চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। ডক্টর ম্যাম আমার অবস্হা বুঝতে পেরে আমার মেয়েকে আস্তে করে নিয়ে বলে,

—-“কাজল, তুমি আপাতড ঘুমাও। ”

—“কিন্তু আমার হাজবেন্ড? ”

আমার প্রশ্নে ডক্টর মুচকি হেঁসে বললেন,

—” তিনি বাইরেই আছেন। তোমার উপর দিয়ে অনেক স্ট্রেজ গিয়েছে তাই তুমি আপাতত ঘুমাও। ”

______

অপরাশের থিয়েটারের বাইরে থেকে বাচ্ছার কান্নার শব্দ শুনে সকলের মুখে হাঁসি ফুটে উঠে।

—–“কংগ্রাচুল্যাশন মিঃ রুদ্রিক। আপনার মেয়ে হয়েছে। ”

‘মেয়ে’ হয়েছে কথাটি শুনে সকলে একসাথে বলে উঠে,

—“আলহামদুলিল্লাহ! ”

ডক্টর হাঁসিমুখে বেড়িয়ে আসেন। রুদ্রিক ডক্টরের কাছে গিয়ে বলে,

—-“আমার কাজল? আমার বেবী কেমন আছে? আমার কাজল ঠিক আছে তো? ”

ডক্টর মুখের মাস্কটা খুলে বলে,

—“মা এবং বাচ্ছা দুজনেই আপাতত ঠিক আছে।
ডেটের আগে ডেলিভারি হয়ে যাওয়াতে আমরা কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু এখন সব ঠিক আছে। আপনার বেবীকে আমরা কয়েকটা দিন ওভজারবেশনে রাখবো। আসলে ২মাস আগেই হয়ে গিয়েছে তো। তাছাড়া তেমন একটা সমস্যা নেই। ”

সিথি কিছুটা আগ বাড়িয়ে বললো,

—-“আমরা বেবী এন্ড কাজলের সাথে দেখা করতে পারবো? ”

ডক্টর মুচকি হেঁসে বললো,

—-“অবশ্যই। বাবা ও বেবী দুজনকেই৷ কেবিনে শিফট করা হয়েছে।
আমরা মিসেস কাজলকে আপাতত ইঞ্জেকশন পুশ করে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি। অনেক স্ট্রেজ গিয়েছে তার উপর। ”

ডক্টরের কথা শুনে সবাই কেবিনে গিয়ে দেখে কাজল ঘুমাচ্ছে। পাশে ছোট্ট পরী ছোট্ট ছোট্ট হাত-পা নাড়িয়ে যাচ্ছে। রুদ্রিক আলতো করে নিজের বেবীকে ছুয়ে দেখে। আস্ত একটা হুরপরী যেনো নেমে এসেছে।
ইসস কি সুন্দর অনুভুতি। নিজের সন্তানের ছোট্ট ছোট্ট হাত-পা যেনো রুদ্রিককে তার কাছে ডাকছে। রুদ্রিক তার মেয়ের হাতে চুমু খেয়ে বলে,

—-“এইতো আমার মা। তোমার বাবা এসে গেছে। ”

রুদ্রিক নিজের মেয়েকে দেখে কেঁদে উঠে। সত্যি বাবা হওয়ার অনুভুতিটা পৃথিবীর শ্রেষ্ট অনুভুতি।

—-“ভাইয়ু আমাকে বেবীটা দে প্লিয়। ”

সিথির আবদার শুনে রুদ্রিক সিথির কোলে বাচ্ছাটা দিয়ে দেয়। সিথি বাচ্ছাটার দিকে তাঁকিয়ে বলে,

—-“একদম কাজলের মতো গোলাপের মতো টকটকে লাল দুটো ইসস। শুধু ছুতে ইচ্ছে করে। ”

দিয়া বলে,

—“নাকগুলো দেখ? একেবারে রুদ্রিকের মতো খাড়া। যে কেউ দেখে বলবে এই পুচিটা আমাদের রুদ্রিকের মেয়ে। আচ্ছা নিউ বেবীর সাথে একটা সেল্ফি তুলা হবেনা? ”

সাদি বলল,

—-“এইবার কিন্ত আমিও সেল্ফি তে থাকবো। আমার বন্ধুর মেয়ে বলে কথা। আমার ছোট্ট ভাতিজি। ”

দিয়া লাজুকের হাতে ক্যামেরা দিয়ে বলে,

—“নাকবোঁচা এ্যাসিস্টেন্ট তুমি তুলে দাও। তুমি এখানে সব থেকে লম্বা। ”

—“জু হুকুম। ”

কথাটি বলে লাজুক সেল্ফি তুলা শুরু করে দেয়।

রুদ্রিক কাজলের পাশে বসে কাজলের হাত ধরে কান্নামিশ্রিত গলায় বলে,

—“জানিস তুই ঘুমাচ্ছিস, কিন্তু তোকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম নাহ কাজল। থ্যাংকস আ লট কাজল। ধন্যবাদ এতো সুন্দর সর্গীয় অনুভুতির সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যে।
এই অনুভুতিটুকু আমি সত্যি প্রকাশ করতে ব্যর্থ। ভালোবাসিরে বড্ড ভালোবাসি তোকে কাজল। ”

রুদ্রিক কাজলের কপালে চুমু খায়। রুদ্রিকের চোখ থেকে বিন্দু জলের কণা কাজলের হাতে টুপ করে গড়িয়ে পড়ে। উহু এইতো সুখের জল। বড্ড সুখের।

________

সকালের মিষ্টি আলো জানালা দিয়ে রুদ্রিকের মুখে পড়তেই রুদ্রিক আড়মোড়া হয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। সারারাত সে বেবী এবং কাজলের জন্যে কেবিনের চেয়ারেই বসেই দুজনকে দেখছিলো।দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলো কে জানে? যদিও সিথি থাকতে চেয়েছিলে কিন্তু রুদ্রিক সবাইকে পাঠিয়ে দিয়েছে। রুদ্রিক ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখে প্রায় সাড়ে ৮টা বাজে। কিছুক্ষন পর সকলেই চলে আসবে নিউ বেবীকে দেখতে। রুদ্রিক তার সদ্য সন্তান ও স্ত্রীর দিকে তাঁকালো। এইবার তার সংসারটা সম্পুর্ন হলো। কথাটি ভেবে রুদ্রিক মুচকি হাঁসলো। তখনি একজন নার্স কেবিনে প্রবেশ করে বললেন,

—-“স্যার আপনি এইবার কেন্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিন। কালকে রাত থেকে আপনি তো কিছুই খাননি।

—-“কিন্তু….

রুদ্রিকের কথার মাঝেই নার্স বললেন,

—-“আমি আছি স্যার আপনি নিশ্চিন্তে যান।”

রুদ্রিক সায় দিয়ে কাজলের দিকে তাঁকিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

রুদ্রিক চলে যেতেই আরেকজন নার্স এসে বললো,

—“উনি সত্যি বড্ড কেয়ারিং হাজবেন্ড। নিজের বউকে যথেষ্ট ভালোবাসে। ”

—“হুম তা ঠিক। ”

—“আচ্ছা শুন তুই একটা কাজ কর আমার সাথে আয়।”

—“কেন? ”

—“ডক্টর তোকে ডাকছে। ”

—“আচ্ছা চল। ”

নার্সরা চলে যেতেই একজন বোরখা পরিহিতা মহিলা লুকিয়ে প্রবেশ করে।

__

অন্যদিকে,

রুদ্রিক কেন্টিনের কাছে আসতেই তার ফোন বেজে
উঠে। রুদ্রিক তাঁকিয়ে দেখে ‘পুলিশ স্টেশন ‘ থেকে ফোন এসেছে। রুদ্রিক ফোন রিসিভ করে এমন কিছু শুনে যা শুনে তার মাথা হ্যাং হয়ে যায়।

______

আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি পাশের ছোট্ট বেডে আমার বেবী নেই। নিজের বেবীকে না দেখে আমি চিল্লিয়ে নার্সকে ডাক দেই। নার্সরা ডাক শুনে এসে বলে,

—-“কি হয়েছে ম্যাম? ”

আমি বেডের দিকে তাঁকিয়ে ভয়ার্থ বলি,

—-“আমার বেবী কোথায়? ”

নার্সরাও অবাক হয়ে বলে,

—“বেবী তো এখানেই ছিলো। কোথায় গেলো? ”

বাকীটা আগামী পর্বে….

চলবে কী?

[গল্পটা সম্পুর্ন কাল্পনিক
আশা করি সবাই গল্পটাকে কাল্পনিক ভাবেই নিবেন। গল্পকে বাস্তব মনে করা আমার কাছে বোকামি ছাড়া কিছুই মনে হয়না]

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ৪৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

নিজের বেবীকে দেখতে না পেয়ে আমি কেঁদে উঠি। আমার কান্না শুনে রুদ্রিক দৌড়ে ছুটে এসে আমার হাত ধরে বলে,
—“কাজল, কি হয়েছে আমাকে বল? কাঁদছিস কেনো তুই এইভাবে? ”
রুদ্রিককে আকড়ে ধরে আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,

—“রুদ্রিক আমাদের মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে নাহ। ”

কথাটি শুনে রুদ্রিকের মাথাও কাজ করা যেনো বন্ধ হয়ে যায়। রুদ্রিক বেডের দিকে তাঁকিয়ে দেখে তাদের মেয়ে নেই।
কিছুক্ষন আগেও তাদের ছোট্ট মেয়ে বিছানায় কি সুন্দর ঘুমাচ্ছিলো। কোথায় গেলো তাদের ছোট্ট মেয়ে? রুদ্রিক নার্সদের কাছে গিয়ে চিৎকার করে বলে,

—-“আমার মেয়েকে আপনাদের কাছে রেখে গিয়েছিলাম? কোথায় আমার মেয়ে? ”

নার্সরা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিয়ে বলে,

—“স্যার আমরা শুধু পাঁচ মিনিটের জন্যে বাইরে গিয়েছিলাম। এসে দেখি বেবী নেই। ”

রুদ্রিক দ্বিগুন চিৎকার করে বলে,

—“জাস্ট স্টপ ইট! এইসব লেম এক্সকিউজ দেওয়া বন্ধ করুন। এতোটা ইররেস্পন্সেবল আপনারা কীভাবে হন? ছোট বাচ্ছাকে রেখে কীভাবে চলে গেলেন? ”

রুদ্রিকের চিৎকার শুনে ডক্টররা চলে এসে বলে,

—-“কি হয়েছে মিঃ শেখ আপনি হঠাৎ এতো উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছেন কেন? ”

রুদ্রিক রক্তচক্ষু দিয়ে তাঁকিয়ে বলে,

—“আমার একদিনের শিশু আমার বেবীকে পাওয়া যাচ্ছে নাহ আর আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন আমি কেন উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছি? আমি জাস্ট আপনাদের ওয়ার্ন করে দিলাম। আমার বেবীকে না পেলে আমি কিন্তু সত্যি এই হসপিটালটাকেই বন্ধ করে দিবো। এই রাফসিন শেখ রুদ্রিকের এক মিনিটও লাগবে নাহ। ”

কথাটি বলে রুদ্রিক যেতে নিলে, আমি রুদ্রিকের হাত ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বললাম,

—–“রুদ্রিক আমাদের বেবীর কিছু হবে নাহ তো? ”

রুদ্রিক আমার কাছে এসে আমার গালে হাত দিয়ে বলে,

—-“আমি আমাদের পরীকে ঠিক ফিরিয়ে আনবো। আমাদের পরীর কিচ্ছু হবেনা। ”

রুদ্রিক কাউকে ফোন করতে করতে বেড়িয়ে যায়।

রুদ্রিক বেড়িয়ে যেতেই আমি মাথা ধরে বসে পড়ি। আমার ছোট্ট মেয়েটা কোথায় গেলো?

সাদি ভাইয়া, সিথি, দিয়া ও লাজুক হসপিটালে চলে আসে।
রুদ্রিককে বেড়েতে দেখে লাজুক আংকেল রুদ্রিককে উদ্দেশ্য করে বলে,

—-“রুদ্রিক পুলিশ স্টেশন থেকে তোমার কাছে ফোন এসেছিলো?”

—“হুম ইশানি শেখ আজকে পালিয়েছে। সবথেকে বড় কথা মাহির আহমেদ বেঁচে নেই। আমার ইশানি শেখের উপরেই সন্দেহ হচ্ছে। ”

দিয়া সবকিছু শুনে বলে,

—-“আপাই যদি এই বাচ্ছা অপরহনের কাজটা সত্যি করেই থাকে তাহলে আমরা তাকে কিছুতেই ক্ষমা করবো নাহ। ”

দিয়ার কথা শুনে রুদ্রিজ হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,

—“আমি জানি এই কাজ ইশানি শেখের ছাড়া আর কারো হতে পারেনা। উনি নিজের স্বামীর মৃত্যুর জন্যে আমাদের দায়ী করছে। তাই তো প্রতিশোধ নিতে চাইছেন। উনি কি ভেবেছে এইসব করে আমার বেবীকে অপহরন করে আমাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারবে? আমি আমার সন্তানের কিচ্ছু হতে দিতে দিবো নাহ।
আমার বাচ্ছার গাঁয়ে একটুও আঁচ লাগলেও আই জাস্ট কিল হার। ”

কেবিনে বসে থেকে রুদ্রিক ও বাকি সকলের কথাই আমার কানে আসলো। তার মানে ইশানি শেখ প্রতিশোধপরায়নতা হয়ে আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। এখন যদি আমার মেয়ের যদি কোনো ক্ষতি করে ফেলে তখন?
আমার কান্নাগুলো যেনো গলায় দলা পাঁকিয়ে আসছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। আমি হাতড়ে পানির বোতলটা হাতে নিয়ে ঢগঢগ করে পানি খেয়ে ফেলি। আমার মেয়েটা নিশ্চই বিপদে আছে। আমি এখানে কীভাবে বসে থাকবো? নাহ তা কিছুতেই হতে পারেনা আমি জানি আমার মেয়েটা নিশ্চই কাঁদছে। আমার বুকে কষ্ট হচ্ছে। তখনি আমার ফোনে একটি ছোট্ট মেসেজ আসে। আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি ইশানি শেখের মেসেজ। মেসেজ লেখা,

—-“কাজল, তোমার মেয়ে এখন আমার কাছে। চিন্তা করোনা তোমার মেয়ে আমার কাছেই সেফ আছে। আর এই হসপিটালেই আছে। তুমি শুধু একটা কাজ করো। নিজের মেয়েকে পেতে কষ্ট করে হসপিটালে টপে অর্থাৎ ছাদে চলে এসো। ”

মেসেজ টা দেখে আমি তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ালাম। ইশানি শেখ ছাদেই আছেন। নাহ আমি দেরী করলে চলবে নাহ। আমার এখুনি যেতে হবে।

কথাটি ভেবে আমি আমি উঠতে নার্স এসে বলে,

—-“ম্যাম আপনার সবে সিজারি করা হয়েছে। এই অবস্হায় আপনার হাঁটাচলা করা ঠিক হবে নাহ।”

আমি ক্ষিপ্ত গলায় বললাম,

—“আমার সদ্যজাত দুধের শিশু কি অবস্হায় আছে কে জানে? তাকে পাওয়া যাচ্ছে আর আমি মা হয়ে এখানে বসে থাকবো? ওয়াট দ্যাল হেল? সরুন আপনি আমার সামনে থেকে। ”

নার্সকে একপ্রকার সরিয়ে দিয়েই আমি কেবিন থেকে সোজা দৌড়ে ছাদের দিকে চলে যেতে থাকি।

কাজলকে এইভাবে দৌড়াতে দেখে রুদ্রিক, সাদি, সিথি ও দিয়া অবাক। তারাও কাজলের পিছনে পিছনে ছাদে চলে যায়।

কাজল ও রুদ্রিকের বাচ্ছা নিয়ে ছাদের একেবারে কিনারে দাঁড়িয়ে আছেন ইশানি শেখ। আজ সকলেই সে পালিয়ে এসেছে হসপিটালে। বরখা পড়ে সে লুকিয়েই বাচ্ছাটাকে একপ্রকার চুরি করে ছাদে নিয়ে এসেছে।

কারো পায়ের শব্দ পেতেই ইশানি শেখ পিছনে তাঁকিয়ে দেখে কাজল। কাজলকে দেখে ইশানি শেখ বিদঘুটে হেঁসে দিয়ে বললেন,

—-“অবশেষে তুমি এলে কাজল? ”

আমি তাঁকিয়ে দেখি আমার বাচ্ছাটাকে নিয়ে ইশানি শেখ একেবারেই ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। এইভাবে চলতে নিলে তো আমার বাচ্ছাটার ক্ষতি হয়ে যাবে।

আমি এগোতে নিলে আমাকে থামিয়ে দিয়ে ইশানি শেখ বললেন,

—“একদম এগোবে নাহ নাহলে আমি কিন্তু তোমার বাচ্চাকে ফেলে দিবো। ”

কথাটি শুনে আমি থেমে গেলাম। আমার সদ্যজাত সন্তান কেঁদে যাচ্ছে। আমি মা হয়ে কীকরে সহ্য করি?

ইশানি শেখ আবারো বলতে লাগলেন,

—“আমার স্বামী মাহির নাহ মারা গেছে জানো? আমাকে রেখে সেই দূরে চলে গেছে আমাকে একা করে। শুধুমাত্র তোমাদের জন্যে। আমি তোমাদের কীকরে সুখে থাকতে দেই বলো? আমি তোমার এবং রুদ্রিকের মেয়েকে এই ছাদ থেকে ফেলে দিবো হু আমি ফেলে দিবো।তাও তোমারই চোখের সামনে।”

কথাটি বলে ইশানি শেখ খিলখিল করে হেঁসে উঠে। ইশানি শেখকে দেখেই মনে হচ্ছে উনার মাথা ঠিক নেই। এই অবস্হায় আমাকে কিছু করতেই হবে নাহলে আমার মেয়ের ক্ষতি হয়ে যাবে। কথাটি ভেবে আমি দৌড়ে ছাদের কিনারে গিয়ে ইশানি শেখের থেকে আমি আমার বাচ্ছাকে কেড়ে নিতে চাইলে, ইশানি শেখ আমার সার্জারি করা জায়গাতে ধাক্কা দেয় এতে আমি ব্যাথা সহ্য না করে পড়ে যেতে নিলে,
ইশানি শেখ আমাকে ধরে ফেলেন। আমি একেবারে রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছি। ইশানি শেখ হাত টা ছেড়ে দিলেই আমি পড়ে যাবে।

ততক্ষনে রুদ্রিক ও বাকি সবাই চলে আসে। কাজলকে এই অবস্হায় দেখে রুদ্রিক চিৎকার করে বলে,

—“ইশানি শেখ কি করছেন? আমার কাজল আর আমার বেবীকে ছেড়ে দিন বলছি। ”

ইশানি শেখ বললেন,

—“নাহ আমি তো ছেড়ে দিবো নাহ কাজলকে। রাফসিন শেখ রুদ্রিক তুমি আমার মাহিরকে জেলে পাঠিয়েছিলে তাইনা?আমার মাহিরকে? আমার মাহির অনেক অভিমান নিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। এখন তুমি দেখবে নিজের ভালোবাসার মানুষটি ছেড়ে গেলে কেমন লাগে।

দিয়া ও সিথি কেঁদে উঠে। সিথি কাঁদতে কাঁদতে বলে,

—-“পিপি? তুমি এতোটা খারাপ হয়ে গেলে কীভাবে?”

—“তোরাই আমাকে বাধ্য করেছিস আর শুন রুদ্রিক
আর ভূলেও এগোনের চেষ্টা করিস নাহ। তোর বউ একি কাজ করতে গিয়ে এখন পস্তাচ্ছে। ”

রুদ্রিক এগোতে নিচ্ছিলো ইশানির কথা শুনে থেমে যায়।

রুদ্রিক অসহায় দৃষ্টিতে কাজলের দিকে তাঁকায়। কাজল কেঁদে উঠে। ছোট্ট বেবীটাও ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।
রুদ্রিক কাঁদতে কাঁদতে বলে,

—“আমার কাজলকে কিংবা আমার বেবীকে কিছু করোনা। তোমার সব শ্রত্রুতা তো আমার সাথে ইশানি শেখ। তাহলে ওদের কেনো এর মধ্যে টানছো? ”

রুদ্রিকের অসহয়তা দেখে ইশানি শেখ পৌচাশিক আনন্দ পায়।
ইশানি শেখ হেঁসে বললেন,

।—” এইতো এই কান্নাই তো আমি চেয়েছিলাম। তোমাদের এইবার আমার কষ্টটা উপলব্ধি করাবো। আমি তো নিজের সময় কাঁদতেও পারেনি। এতোটা পাথর হয়ে গিয়েছিলাম আমি।
আমি সো সরি রুদ্রিক। তোমরাই আমাকে এই কাজ করতে বাধ্য করলে। ”

কথাটি বলে ইশানি শেখ হাতটা আলগা করতেই, রুদ্রিক কিছু না ভেবে নিচে নেমে যায়। উদ্দেশ্য নিজের প্রেয়সীকে প্রানে বাঁচানোর চেস্টা,কিন্তু ততক্ষনে ইশানি শেখ কাজলের হাত ছেড়ে দেয়।
কাজল দুতলা ছাদ থেকে পড়ে যায়। সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়! ছোট্ট বাচ্ছাটা কী বুঝে কে জানে? সে আরো জোড়ে চিৎকার করে কেঁদে দেয়।

রুদ্রিক নিচে এসে দেখে কাজলের মাথা থেকে তাজা রক্ত বেয়ে চারদিকে ছিটিয়ে গেছে। কাজল নিজের রক্তাক্ত হাত দিয়ে রুদ্রিকের দিকে নিজের হাতটা কোনোরকম বাড়িয়ে দেয়। রুদ্রিকের পুরো পৃথিবী যেনো থমকে গেছে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে এই অবস্হায় দেখে। পা ও যেনো চলছে নাহ।

[নীচের কথাগুলো পড়বেন]
_______
ওহে হারাই-হারাই সদা হয় ভয়

হারাই-হারাই সদা হয় ভয়

হারাইয়া ফেলি চকিতে

আঁশ না মিটিতে হারাইয়া

পলক না পড়িতে হারাইয়া

হৃদয় না জুড়াতে

হারাইয়া ফেলি চকিতে

মাঝে মাঝে দেখা পাই

চিরদিন কেন পাইনা?

বাকীটা আগামী পর্বে…

চলবে কী?

[প্রথমে বলে রাখি এতোটা হাইপার না হয়ে কাজলের জন্যে প্রে করুন। গল্পে এখনো ৩-৪ পর্ব বাকি। আপ্নারা ভাব্বেন নাহ আমি কালকেই গল্পটা শেষ করে দিব। এখনো ৩-৪ পর্ব বাকি আছে। ইশানি চরিত্রটা মেন্টালি সিক টাইপের নিয়ে। কীভাবে সে নিজের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে অন্যায় কাজ করে তা এই গল্পে তা ফুটিয়ে তুলা হয়েছে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here