গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
পর্ব-৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ছোট সাহেব আমার একেবারেই কাছে। আমাদের মধ্যে তেমন একটা দুরুত্ব নেই। আমি শুধু উনার চোখের দিকে তাঁকিয়ে আছি। রুদ্রিক ভালো করে কাজলকে লক্ষ করে দেখলো। কাজলের কুচকুচে কালো চোখ-জোরা শুধুমাত্র তার চোখের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই চোখ গুলো যেনো অনেক কিছু বলতে চায় রুদ্রিককে।
রুদ্রিকের ভাবনার মাঝেই কাজল মুখ দিয়ে উম উম করতে থাকে। রুদ্রিক কিছুটা বিরক্ত হয়ে, কাজলের মুখ চেপে ধরে বলে উঠে,
“এতো উম উম করছিস করছিস কেন? ”
সারাদিন শুধু সাদি ভাইয়া আর সাদি ভাইয়া? সাদি ছাড়া আর কারো নাম মনে থাকে না তোর তাইনা?”
আমি কোনোরকম উনার হাত নিজের মুখ থেকে ছাড়িয়ে, জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলি,
“ভারি খারাপ লোক আপনি! এমনভাবে মুখটা চেপে ধরেছিলেন, এখুনি দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। রাক্ষস লোক একটা!
উনি আমার হাত চেপে ধরে বলে,
” তুই আমাকে রাক্ষস বললি? ”
——“বেশ করেছি। ”
——–“তুই..”
উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই…আমি ধরা গলায় বললাম,
—-“আপনি এখানে কেনো এসেছেন? দেখতে এসেছেন একা লাইব্রেরিতে আমি কিংবা সাদি ভাইয়া কি করছিলাম? নিজের বন্ধুর প্রতি বিশ্বাস নেই কিন্তু আমার প্রতিও কী একটুও নেই। ”
আমার কথা শুনে ছোট সাহেব কিছুটা চুপ হয়ে আবারোও বলে উঠেন,
“আমি তোর প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য হয়নি। ”
——“হুম আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নন। বড়লোক বলে কথা কিন্তু আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনি বাধ্য। আমার যদি সাদি ভাইয়ার সাথে কিছু থেকেও থাকে তাহলে আপনার কী? আজকে আমাকে উত্তর দিতেই হবে আপনাকে। ”
ছোট সাহেব আমার হাত আরো শক্ত করে চেপে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
“একবার বলেছিস কিন্তু পরের বার যেনো এই কথা তোর মুখে না শুনি।
” I Don’t like to hold anyone accountable
for anything…
(আমি কাউকে জবাবদিহি করতে পছন্দ করিনা।)
কথাটা বলেই উনি আমার হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে চাইলে আমি উঠে দাঁড়িয়ে উনার সোজাসোজি দাঁড়িয়ে বলে উঠি—
‘Sometimes the questions has to be answered… ‘
(কিছু কিছু সময় প্রশ্নেত উত্তর দিতে হয়)
আমজ আবারো বলে উঠলাম,
“তারাই জবাবদিহি করতে পছন্দ করেনা, যাদের কাছে প্রশ্নের উত্তর নেই এবং তারা কখনোই কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারে নাহ। ”
ছোট সাহেব কিছুটা দমে গেলেন আমার কথায়।
তখনি সেখানে জেনি আপু চলে এলো। জেনি আপু কিছুটা জোড় কন্ঠে বলে উঠলেন,
“রুদ্রিক তুমি এখানে? আমরা সবাই তোমার জন্যে কেন্টিনে ওয়েট করছি। ফাংশন নিয়ে কিছু কথা ছিলো।”
জেনি আপুকে দেখে আমি উনার কাছ থেকে তাড়াতাড়ি সরে আসি।
উনি জেনি আপুর দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠেন,
— “আমার কাজ ছিলো, লাইব্রেরিতে। তুমি যাও, আমি আসছি। ”
জেনি আপু আমার দিকে এক পলক তাঁকায়। উনার চোখ -মুখ দিয়ে যেনো আমার প্রতি চাপা ক্ষোভ উপচে পড়ছে। কিন্ত তবুও তিনি বেড়িয়ে গেলেন।
উনি আমার গাল নিজের হাত দিয়ে চেপে বলে উঠেন,
“চাইলে অনেক কিছুই বলতে পারি, কিন্তু পারি নাহ।আমি যে গোলক ধাঁধায় পড়ে গিয়েছি। না পারছি বলতে আর না পারছি সহ্য করতে। ”
উনার জড়ানো কন্ঠে আমার শরীরে মৃদ্যু কেঁপে উঠলো।
আমি পিছনে ঘুড়ে যায়। উনি মৃদ্যু হেঁসে পকেটে হাত ঢুকিয়ে শিষ বাজাতে বাজাতে চলে যান।
_____________________________ লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি…।
আমরা এই মুহুর্তে আপাতত ভার্সিটির মাঠে বসি আছি।
সাদি ভাইয়ার হাঁসতে হাঁসতে পেটে খিল ধরে যাচ্ছে।
আমি বলে উঠলাম,
“ভাইয়া একটু থামবেন? ”
—–“নাহ গো আমি থামতে পারছি।
সিথি নক কামড়ে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলে,
“মানে সিরিয়াসলি? ভাইয়া তোকে এইসব বলেছে? ”
সাদি ভাইয়া কিছুটা হেঁসেই বললেন,
“তোমাদের ভাই-বোনের মতিগতি বাবা আমি বুঝি নাহ। শেষে কী নাহ রুদ্রিক আমাকে নিয়ে জ্বেলাস? এইটাও দেখতে হবে? ”
সিথি কিছুটা চোখ পাকিয়ে বলে,
“আমাকে একদম ভাইয়ার সাথে মিলাতে যাবেন নাহ বলে দিলাম হুহ। ”
সাদি ভাইয়া আবারোও আরেকদফা হেঁসে দিলেন। সিথি মুখ ঘুড়িয়ে ফেলে।
আমার দৃষ্টি ভার্সিটির তিনতলার করিডরে। ছোট সাহেব কারো সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছেন। হয়তো উনার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে। বাতাসে উনার ছোট ছোট চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে। আমার অবাধ্য চোখ যেনো বারবার উনাতে সীমাবদ্ধ। উনার বাঁকা দাঁতের হাঁসি যেনো বলে দিচ্ছে,
“এই হাঁসি সবই মিথ্যে, এই হাঁসির মাঝে লুকিয়ে বেদনাদায়ক স্মৃতি,হয়তো রয়েছে কোনো কঠিন সত্য। যা থেকে গেছে সকলের আড়ালে। ”
________________
আমি রুমে ঢুকে মায়ের কাছে গিয়ে বলি,
“মা আমি ছাঁদে যাচ্ছি। গাছগুলো দেখে আসি।
মা রান্নাঘর থেকেই বলে উঠলো,
—–” কাজল মা আগে কিছু মুখে দিয়ে নে। ”
——” বাবা আসুক,তারপর খাবো। ”
——-“আজ তোর বাবার আসতে দেরী হবে। বড় সাহেব আজ বাড়ি ফিরছেন। তাই তোর বাবা গাড়ি নিয়ে গিয়ে, এয়ারপোর্ট থেকে উনাকে আনতে গিয়েছেন।”
আমি বলে উঠলাম,
“তাহলে তো ভালো-ই ‘ বড় সাহেব ফিরছে। আচ্ছা মা আমি একটু ছাদে গিয়ে গাছগুলো দেখে আসি…।
-তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস…।
______শেখ বাড়িতে,,…..
দিয়া আজ প্রচন্ড এক্সাইটেড তার ভাইয়ু ফিরছে বলে কথা। দিয়া একটা সেল্ফি তুলে। সিথি দিয়ার পাশে বসে বলে উঠে,
” দিয়া পিপি আজ তুমি এতো হ্যাপি যে? ”
—-“ভাইয়া আমেরিকা থেকে প্রায় দুইমাস পর বিসনেজ ট্যুার থেকে ফিরছে। আমি তো ভাইয়াকে বলেই দিয়েছি। আমার জন্যে অনেক গুলো ড্রেস এন্ড ম্যাক-আপ এনে দিতে। ”
—–“আমিও পাপাকে সব বলে দিয়েছি। বাট তুমি এতো স্লেল্ফি না চলো মা ডাকছে। “,
দিয়া এক্টা সেল্ফি তুলে বলে —
“তুই যা আমি আসছি। জাস্ট আরেকটা সেল্ফি। ”
সিথি হেঁসে চলে যায়।
দিয়ামনি শেখ আফজাল শেখের ছোট্ট আদুরের বোন। বয়স ৩০ এর কোটায় পৌছালেও এখনো সে বিয়ে করেনি। তার অবশ্য কারণ কেউ জানেনা। বাড়ির সবাইকে নিয়ে মাতিয়ে রাখতেই সে পছন্দ করে।
রুদ্রিক বাড়িতে ঢুকতেই দিয়া তড়িঘড়ি করে রুদ্রিকের কাছে গিয়ে বলে,
“রুদ্রিক আজকে ভাইয়ু আসছে।”
—–“তো আমি কী করবো?
রুদ্রিকের পালটা প্রশ্নে দিয়া বলে উঠে,
“তুই অন্তত আজকে ভাইয়ুর সাথে কথা বলিস। নাহ মানে ভাইয়ু প্রায় দুইমাস পর বাড়ি ফিরছে। ”
রুদ্রিক গম্ভীর সুরে বলে উঠে,
“ছোট পিপি তুমি জানো এইসব সম্ভব নয় তাহলে কেনো বলছো? তুমি জানো এইসব আমি করবো নাহ। আমার পক্ষে পসিবল নাহ। ”
—–“আসলে রুদ্রিক তুই একটু ভাইয়ুকে বুঝার চেস্টা করো।”
—–“ছোট পিপি তুমি প্লিয মিঃ আফজাল শেখের নামে আমার কাছে সাফাই গাইতে এসো নাহ। ”
দিয়া কিছু বলবে তার আগেই রুদ্রিক রাগে উপরে যায়।
দিয়া বলে উঠে,
“রুদ্রিক আমার কথাটা তো শুন। যাহ বাবাহ চলে গেলো।”
রুদ্রিক রুমে এসে নিজের গাঁয়ের স্লিভ কটন টি-শার্ট টা বিছানায় ছুড়ে ফেলে। প্রচন্ড পরিমান রাগ লাগছে তার। লোকটার সাথে কথা তো দূরে থাক। ওই লোকটাকে সে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। সবথেকে বেশি।
এদিকে,,
আমি ছাঁদে উঠে দেখি৷ পরিবেশটা বেশ সুন্দর। চারদিকে মৃদ্যু বাতাস বইছে। ফুলগুলোও বাতাসের সাথে সমান তালে যেনো প্রকৃতি উপভোগ করছে।
আকাশের কোণে লালচে নীল মেঘ জমেছে। আহা কী অপরুপ দৃশ্য। গোধূলীর বেলা পড়েছে।
আমার ফোন বেজে উঠলো। আমি ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম ছোট সাহেব ফোন করেছেন। আমি ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে এমন কিছু শুনি যা শুনে একপ্রকার আমি থম মেরে বসে পড়লাম।
বাকিটা আগামী পর্বে..
চলবে……..কী?
(সবাই শুধু পড়ে যাও কমেন্ত করো নাহ কেন 🥺হুহ? কিপটামি না করে কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু)