গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
পর্ব- ৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মিঃ রাফসিন শেখ রুদ্রিক নিজের অনুভুতি কবে বুঝবেন আপনি?বড্ড অবুঝ আপনি।কথাটা আপনমনে বলে, জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। ছোট সাহেবকে নিয়ে ভাবতে বেশ ভালো-ই ‘ লাগে। আচ্ছা আমি তো নিজেই নিজের অনুভুতিটা বুঝতে পারছিনা। আসলে আমি ঠিক কী চাই। জানিনা উত্তরগুলো শুন্য হয়ে যাচ্ছে আমার। খাটে চট করে বসে পড়লাম।
রুদ্রিক ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দেয়। কাজল যেনো তার মস্তিষ্কে ঘুড়পাক কাচ্ছে।
রুদ্রিকের ভাবনার মাঝেই কেউ এসে বলে উঠে,
“কিরে কাজলের প্রেমে অতলভাবে ডুবে গেলি?
কারো কন্ঠস্বর শুনে রুদ্রিক তাঁকিয়ে দেখে,সাদি তার পাশে হাঁসিমুখে বসে আছে। রুদ্রিক কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠে-
“রাফসিন শেখ রুদ্রিক শেষে কিনা ওই ড্রাইভারের মেয়ের প্রেমে অতলভাবে ডুবে যাবে?যার কিনা গার্লফ্রেন্ড এর অভাব নেই। হাঁসালি তুই। ”
কথাটা বলেই রুদ্রিক আবারো ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিলো।
রুদ্রিকের কথায় সাদি সোজাসোজাি বসে বলে উঠে-
“যাক বাবা। তাহলে তো আমার জন্যে-ই ‘ ভালো। ”
রুদ্রিক ভ্রু কুচকে বলে উঠে,
“তোর জন্যে ভালো মানে? ”
সাদি মুচকি হেঁসে বলে –
“ভালো হবে নাহ? সেই দুই বছর আগের থেকে আমি কাজলকে পছন্দ করি। তোকে নিয়ে একটু টেনশনে ছিলাম,বাট আমার রাস্তা ক্লিয়ার হয়ে গেলো। ”
কথাটা শুনেই রুদ্রিক চোখ বড় বড় করে বললো,
“তার মানে আমার সংদেহ ঠিক ছিলো?তুই সত্যি সত্যি কাজলকে ভালোবাসিস?”
—-” হুম। নাহলে শুধু শুধু দুই বছর ধরে কাজলের পিছন পিছনে ঘুড় ঘুড় করতাম কেনো তুই বল? ”
এইবার রুদ্রিক উঠে দাঁড়িয়ে সাদির কলার চেপে ধরে , রাগান্বিত সুরে বলে উঠে-
“হাও ডেয়ার ইউ? তুই কী করে কাজলকে ভালোবাসতে পারলি? ”
সাদি চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলে উঠে,
“রুদ্রিক ডোন্ট বি হাইপ্যার। সবাই দেখছে। তুই একটু বস। বসে কথা বল। ”
রুদ্রিক রাগে ফুশতে ফুশতে বসে পড়ে।
সাদি নিজের শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলে উঠে-
“দেখ রুদ্রিক, তুই তো কাজলকে ভালোবাসিস নাহ। তাহলে তো আমি ভালেবাসলে দোষ নেই। তাছাড়া বন্ধু হিসেবে তোর তো আমাকে সাপোর্ট করার দরকার। তা না করে তুই আমার দিকে তেড়ে আসছিস? ইটস নট গুড।”
রুদ্রিক নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। সাদি রুদ্রিকের অবস্হা বুঝতে পেরে কিছুটা মুচকি হেঁসে বলে,
“আশা করি কাজলকে পেতে, আমি তোকে সবসময় নিজের পাশে পাবো। আফটার অল তুই আমার বন্ধু বলে কথা। ”
রুদ্রিক জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের রাগটুকু নিয়ন্ত্রন করার চেস্টা করতে থাকে। এই মুহুর্তে সাদিকে কাঁচা চিবিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তবুও নিজেকে সামলিয়ে নেয় রুদ্রিক। সাদি
“আসি ” বলে বাঁকা হেঁসে চলে যায়। সাদি চলে যেতেই রুদ্রিক এক নিঃশ্বাসে পুরো ওয়াইনের বোতল শেষ করে দেয়। তারপর বোতল টা ছুড়ে ফেলে। তা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
রুদ্রিক নিজের কাছে নিজেরেই ‘ অবাক হচ্ছে। সাদি কাজলকে ভালোবেসে, এতে সে কেনো এতো রিয়েক্ট করছে? সে তো ওই মেয়েকে ভালোবাসে নাহ তাহলে?
রাত প্রায় ১০টা , কিছু বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলাম।
তখনি আমার ফোনটা বেজে উঠলো। আননোন নাম্বার। আমি ফোনটা রিসিভ করে বলে উঠি–
—-“কে? ”
—-“আমাকে ভুলে গেলি? আমি নিতিয়া। ”
নিতিয়ার কন্ঠস্বর শুনে আমি কিছুটা উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠলাম,
“নিতিয়া! তুই ফোন করেছিস? আমার তো বিশ্বাস-ই ‘ হচ্ছে নাহ। ”
নিতিয়া কিছুটা হতাশার সুরে বলে উঠে,
“যাক বাবা! তুই তাহলে আমাকে চিনতে পেরেছিস।আমি তো ভেবেছিস তুই আমাকে ভুলেই গিয়েছিস।
——” তুই আমার সব থেকে ভালো বন্ধু। তোকে কী করে ভুলতে পারি? দূরত্ব বেড়ে গেলে সম্পর্কে ফিকে হয়ে যায়। ধারণাটা সম্পর্ন ভুল। ‘বন্ধুত্ব হোক কিংবা ভালোবাসা’ দুরত্বের সাথে কখনো এইসব সম্পর্ক ফিকে হয়ে যায়না। বরং সম্পর্কের রং আরো গাঢ়ো হতে থাকে”
নিতিয়া হেঁসে বললো,
” বাহ ভালো-ই’ কথা বলতে শিখে গিয়েছিস।যাক আমাকে ভুলিস নি,বলছিস। ”
—-“তোকে কী করে ভুলবো? ”
নিতিয়া আমার এক কলেজ ফ্রেন্ড। সিলেটে থাকার সময়,নিতিয়া বলতে গেলে আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলো। আমাকে সবসময়-ই’ সাহায্য করতো সব বিষয়ে। কিন্তু ঢাকায় চলে আসায়,বছর খানিক ধরে আমাদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
আমি এইবার নিতিয়াকে উল্টো প্রশ্ন করে বসলাম,
“আমি তো তোর নাম্বার হারিয়ে ফেলেছি,তুই আমার নাম্বার পেলি কোথা থেকে? ”
—–“সেসব কথা পরে হবে। আগে যে কথার জন্যে তোকে ইমার্জেন্সি ভাবে ফোন করেছি সেইটা শুন।
—“কোন কথা?”
নিতিয়া কিছুটা ইতস্তত হয়ে বলে উঠলো,
“আসলে কথাটা ‘তনয় ‘ ভাইকে নিয়ে নিয়ে ছিলো। ”
‘তনয় ভাই ‘ নামটি শুনে বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠলো আমার। আমি কিছুক্ষন শ্বাস নিয়ে বলে প্রশ্ন করে বলে উঠলাম,
“আচ্ছা তার আগে এইটা বল। তনয় ভাইয়ের কয় বাচ্ছা? উনার নিশ্চই ভরা সংসার? ”
নিতিয়া মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো,
“হুম একটি ছোট্ট ফুটেফুটে ছেলে হয়েছে। একেবারে তনয় ভাইয়ের মতো দেখতে। কি যে কিউট হয়েছে। সবে মাত্র দেড় বছর হয়েছে। ”
চোখগুলো থেকে যেনো এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। যাক তনয় ভাই সুখে আছে এইটাই অনেক। কিন্তু তবুও যেনো এক চাপা কস্ট রয়ে গিয়েছে। আমি আর আর পারলাম নাহ। ফোনটা কেটে দিলাম। দিনশেষে আমারও কস্ট হয়।
“অতীতের পুরনো ক্ষত গুলো যখন হুট করে নাড়া দিয়ে উঠে তখন আপনি যত-ই ‘ চেস্টা করুন। নির্বিশেষে সেই ক্ষতগুলো আপনাকে পুনরায় ভেঙে দিতে যথেষ্ট। ”
কথাটা ভেবেই আমার চোখ থেকে আরেকফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
ফোনের ওইপাশ থেকে কেটে দিতেই,নিতিয়া অবাক হয়ে বললো,
“যাহ বাবা! ফোনটা কেটে দিলো। মেইন কথাটা -ই’ তো বাকি ছিলো। এখন কাজলকে কী করে বলি? তনয় ভাইয়ার কথাটা। ”
নিতিয়া আবারো ফোন করলো কিন্তু কাজলের নাম্বার বন্ধ।
তখনি কেউ বলে উঠলো,
” আমি জানি কাজলরেখা এখন খুব কাঁদছে, খুব করে। কিন্তু আমি জানি যখন ও সারপ্রাইজ টা পাবে। তখন দেখবে খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে যাবে। আমি সিউর। ”
নিতিয়া মুচকি হাঁসে।
_________লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি
শেখ বাড়িতে,
পায়ের উপর পা তুলে খবরের পেপারে মনোযোগ সহকারে কাগজ পড়ছেন ইশানি শেখ। আফজাল শেখ ও খবরের কাগজ পড়ছেন। তার চোখ বার বার সদর দরজার দিকে যাচ্ছে। জেসমিন শেখ ও অন্যান্য সার্ভেন্টরা ট্রে তে করে চা নিয়ে এলো। জেসমিন শেখ আফজাল শেখের দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে বলে উঠলেন,
“সদর দরজার দিকে কি এতো দেখছেন? ”
আফজাল শেখ চায়ের কাপে হাতে নিয়ে বলে উঠেলন,
“কতদিন ধরে ছেলেকে দেখিনা। রুদ্রিক কখন আসবে সেই প্রহর-ই ‘ গুনছি আপতত। ”
ইশানি শেখ কিছুটা কটু স্বরে বলে-
“তুই তো জানিস ভাই। তুই এসেছিস কথাটা শুনে নিশ্চই আজকে রুদ্রিক বাড়িতে ফিরবে নাহ। শুধু শুধু অপেক্ষার করার কোনো মানেই হয়না। ”
ইশানি শেখের সোজাসোজি কথায় আফজাল শেখ আশাহত হয়ে বলে উঠেন,
“তাই তুই ঠিক-ই ‘ বলেছিস। রুদ্রিক তো আমাকে ঘৃণা করে তাহলে শুধু শুধু কেনো আসবে? আসলে ছেলেটাকে অনেকদিন ধরে দেখিনা। আমার-ই ‘ দোষ অহেতক আশা নিয়ে বসে ছিলাম। ”
জেসমিন শেখ বলে উঠেন –
“আপনি কস্ট পাবেন নাহ। রুদ্রিক ঠিক চলে আসবে।”
—–“জেসমিন এইসব মিথ্যে আশা অন্তত আমাকে দিও নাহ। আমার ছেলেকে আমি খুব ভালো করেই চিনি। আমি বরং উপরে যাই, ঘুমিয়ে পড়ি। কাল সকালে আবার অফিস আছে।”
কথাটি বলেই আফজাল শেখ উপরে চলে যান। জেসমিন শেখ জানেন আজকে আফজাল শেখ কিছুতেই ঘুমাবেন নাহ।
___________________
ভার্সিটির করিডোরে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছি। সিথির মুখে ঝুলে আছে অদ্ভুদ হাঁসি। আমি কিছুটা মেকি রাগ দেখিয়ে বলে উঠলাম,
“তোর মাথা ঠিক আছে? আমি কিনা ভার্সিটির ফাংশনে অংশগ্রহন করবো?”
সিথি মুখটা কাচুমাচু করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই, সিথি খেয়াল করে রুদ্রিক কারো সাথে কথা বলতে বলতে তাদের দিকেই আসছে।
সিথি নকটা কামড়ে আপনমনে বলে উঠে,
“এইরে ভাইয়া চলে এসেছে। কাজটা শুরু করি।”
আমি সিথির কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলাম,
“কিরে কি ভাবছিস? ”
সিথি কিছুটা জোড়েই বলে উঠলো,
“সেসব কথা পরে বলবো। আগে তুই লাইব্রেরি তে যা। সেখানে সাদি ভাইয়া তোর জন্যে ওয়েট করছে। কি যেনো ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে। ”
কথাটা বলেই সিথি কেটে পড়ে। আমি ভাবতে থাকি সাদি ভাইয়ার আমার সাথে আবার কিসের জরুরী কথা? থাক যেতে যখন বলেছে, একবার যাই। কথাটা ভেবে আমি পা বাড়ালে, আমার ওড়নায় টান পড়ে।
“কে? এইসব অসভ্যতার মানে কি? ”
কথাটা বলেই আমি পিছনে তাঁকিয়ে দেখি ছোট সাহেব। উনি আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি তাঁকিয়ে আছেন এই চোখ যেনো আমাকে জ্বলিয়ে ছাড়খাড় করে দিতে যথেষ্ট।”
বাকিটা আগামী পর্বে….
চলবে……..
,🔜গল্প নিয়ে কিছু কথা—
অনেকে গল্পের নাম দেখে নানারকম জিনিস এখনি ভেবে যাচ্ছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলি,গল্পটা মাত্র শুরু হলো এখনো গল্পের কিছুই শুরু হয়নি। অনেককিছু বাকি আছে। তাই শুধু শুধু নাম দেখে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। গল্পের পাশে থাকুন। আশা করি ভালো লাগবে।
(কেমন হয়েছে, কমেন্ট করে জানাবেন কিন্তু 💙)