গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
পর্ব- ৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
সবাই আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। ছোট সাহেব বাদে। তিনি শুধু নীচের দিকে সকলের আড়ালে নিজের বাঁকা দাঁতের হাঁসি দিলেন। যা সকলের নজরে না পড়লেও আমার নজরে ঠিক-ই’ পড়েছে।হয়তো তিনিও আন্দাজ করতে পেরেছিলেন আমার উত্তর। আমি সবার হাঁসি থামানো দেখে চোখ-জোড়া ছোট ছোট করে বলে উঠলাম,
“কি হলো তোমাদের? হাঁসাহাঁসি বন্ধ করে দিলে কেন? হাঁসো সবাই আরো জোড়ে হাঁসো। ”
সবাই চুপ হয়ে রয়েছে। সিথি ও সাদি ভাইয়া মুখ টিপে হাঁসছে।
জেনি আপু আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলেন,
“এইসব করে কী ভেবেছো? আমরা তোমাকে সিলেক্ট করে নিবো। ”
আমি জেনি আপুর চোখের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠি-
“আমার যোগ্যতা থাকলে অবশ্যই আপনি সিলেক্ট করতে বাধ্য। এমনকি ভার্সিটির ভিপির সাধ্য নেই। ”
কথাটা বলেই উনি আমার দিকে তাঁকালেন।
—–“ওহ তার মানে তুমি মনে করো তোমার যোগ্যতা আছে?
আমি এইবার জেনি আপুর দিকে এগিয়ে গিয়ে হাঁসিমুখে বললাম,
“যদিও গানে আমার নাম দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো নাহ। কিন্তু এইবার আমি সত্যি দিবো কিন্তু কাউকে প্রমাণ করার জন্যে নয় বরং নিজের কাছে নিজেকে কিছু প্রমাণ করার সুযোগ এসেছে। সেইটাই করবো। আপনি বরং এইটা ভাবুন আমাকে এতো কথা বলছেন আপনার কী এমন যোগ্যতা আছে? ”
জেনি আপু দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠে-
“যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা। ড্রাইভারের মেয়ে কিনা আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করছে। এই জেনি আহসানের যোগ্যতা নিয়ে?রুদ্রিকের বাবা দয়া না করলে তো এই ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ-ই’ পেতে নাহ।
কথাটি শুনেই সাদি ভাইয়া বলে উঠে-
“জেনি তুই এখুনি চুপ যা। ”
—-“চুপ না হলে কী করবি তুই? ”
সিথিও বলে উঠে,
“কাজলকে অপমান করার অধিকার কিন্তু তোমাকে কেউ দেয়নি। ”
জেনি কটু স্বরে বলে,
“এই থার্ড ক্লাস মেয়ে আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস পাই কোথা থেকে? হাও ডেয়ার সি। ভিক্ষারি ঘরের মেয়ে একটা। ”
—–“জাস্ট শাট আপ জেনি। ”
কথাটা বলেই রুদ্রিক উঠে দাঁড়ায়। রাগে যেনো তার নাকের ঢগা লাল হয়ে গিয়েছে। থরথর কাঁপছে সে।
—–“রুদ্রিক! ”
জেনিকে থামিয়ে রুদ্রিক সকলের দিকে তাঁকিয়ে বলে,
“আজকের মতো সবাই চলে যাও। আমরা কালকে অডিশন কনটিনিউ করবো। ”
রুদ্রিকের কন্ঠ শান্ত লাগলেও সবার কাছে কেমন যেনো ভয়ংকর লাগছে। তার সবাই আস্তে আস্তে চলে যেতে শুরু করে।
আমি শুধু চুপ হয়ে সব দেখে যাচ্ছি। একদম স্বাভাবিকভাবেই দাঁড়িয়ে আছি। এখন অডিটোরিয়ামে শুধু আমি, সাদি ভাইয়া, সিথি,জেনি আপু ও ছোট সাহেব।
——“জেনি এখুনি তুমি তিনতলায় চলে এসো। এখুনি মানে এখুনি।”
কিছুটা ধমকের সুরে কথাটি বলে আমার দিকে এক পলক তাঁকিয়ে চলে গেলেন ছোট সাহেব।
জেনি আপু যত দ্রুত সম্ভব উনার পিছন পিছন চলে গেলেন।
আমাকে নীরব থাকতে দেখে সিথি কিছুটা অবাকের সুরেই বলে,
“জেনি আপু তোকে এতো কিছু বলে গেলো আর তুই চুপ ছিলি কেন? ”
সাদি ভাইয়াও তাল মিলিয়ে বলে উঠলেন,
“আমিও তাই ভাবছি। কাজল তো শান্ত থাকার মেয়ে নয়। সবসময়-ই’ উচিৎ জবাব দেয়। ”
আমি ওদের কথা শুনে কিছুটা মিয়ে যাওয়া-ই গলায় বলে উঠলাম,
“এইবার আমাকে কিচ্ছু করতে হবে নাহ। আমার হয়ে
উচিৎ জবাব দেওয়ার মানুষ চলে এসেছে আমার জীবনে। ”
—-” কে সে? ”
সিথির প্রশ্নে আমি কিছুটা মুচকি হেঁসে উত্তর দিলাম,
“আছে একজন। ”
___________ লেখিকা ঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি
জেনি তিনতলায় চলে আসে কিন্তু রুদ্রিককে না দেখতে পেয়ে বলে উঠে-
“রুদ্রিক! কোথায় তুমি? আমাকে শুনতে পারছো? ”
জেনির কথার সাথে সাথে পিছন থেকে কেউ তার হাত মোচরে ধরে।
জেনি ব্যাথায় চিৎকার করতে যাবে কিন্তু তার আগেই
রুদ্রিক তার মুখ চেপে ধরে বাঁকা হেঁসে বলে উঠে-
“জেনি ডার্লিং লাগছে বুঝি? আমারো লেগেছিলো জানো বুকের ভিতরে গিয়ে সোজা লেগেছিলো। কাজলকে বলা তোমার প্রত্যেকটা অপমানজনক কথা আমার বুকের মাঝখানে লেগেছিলো। ঠিক এইভাবেই। ”
কথাটা বলে রুদ্রিক আরো জোড়ে মোচরে ধরে জেনির হাত।
জেনি শুধু মুখ দিয়ে উম উম করছে। ব্যাথায় বোধহয় এখুনি মারা পড়বে। জেনি নিজের হাত ধরে রুদ্রিকের হাতে খামচে ধরছে কিন্তু রুদ্রিক আরো চেপে ধরছে জেনির হাত।
রুদ্রিকের বন্ধুরা উপরে এসে এইসব দৃশ্য দেখে কোনোরকম রুদ্রিকের হাত থেকে জেনিকে ছাড়িয়ে নেয়। জেনি জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে তন্ময়ের কাঁধে ঢলে পড়ে। জেনির হাত পুরো কাচলে রং ধারন করেছে।
পলক রুদ্রিকের কাঁধ ঝাকিয়ে বলে ইঠে-
“কি হয়েছে রুদ্রিক? তুই এইভাবে জেনিকে কেনো টর্চার করছিস? ”
শোভন এক পলক জেনির দিকে তাঁকিয়ে রুদ্রিকের উদ্দেশ্যে বলে উঠে-
“তুই কী সত্যি মানুষ রুদ্রিক? না মানে তুই দেখেছিস কি হাল করেছিস তুই জেনির?”
রুদ্রিক এইবার দ্বিগুন চিৎকার করে বলে ইঠে-
“কাজলকে অপমান করার আগে জেনির মাথায় রাখা উচিৎ ছিলো এর পরিমান কতটা ভয়াবহ হতে পারে। ওর সাহস কী করে হলো? কাজলকে থার্ড ক্লাস বলার? ”
তন্ময় উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“বি কুল রুদ্রিক! তুই হঠাৎ এতো রেগে যাচ্ছিস কেন?তাও ওই কাজলের জন্যে। কি আছ কী কাজলের মাঝে? ”
তন্ময়ের কথায় রুদ্রিক কিছুটা শান্ত হয়ে এক পলক জেনির দিকে তাঁকায়। রাগের মাথায় সে কী করেছে নিজেও বুঝতে পারছে নাহ। রুদ্রিক হাল্কা সুরে বলে,
“জেনিকে তোরা ওর বাড়ি পৌছে দিয়ে আয়। ”
কথাটা বলেই রুদ্রিক গটগট করে নীচে চলে যায়।
শোভন কিছুটা অবাক হওয়া গলায় বলে,
“আমি সত্যি বুঝতে পারছি নাহ রুদ্রিক ঠিক কী চায়।”
জেনি কোনোরকম উঠে দাঁড়িয়ে শক্ত গলায় বলে,
“রুদ্রিককে নিয়ে ভাবার অনেক সময় তোরা পাবি। আপতত আমাকে বাড়ি পৌছে দিয়ে আয়। ”
—-“দেখ জেনি রুদ্রিক নিজের রাগের মাথায়-ই’। ”
পলককে থামিয়ে জেনি বলে,
“আমাকে দয়া করে আপতত বাড়ি পৌছে দিয়ে আয়। রুদ্রিকের সাথে বাকি হিসেব আমি পরে বুঝে নিবো। ”
_____________
দিয়া লেপটপে টাইপ করতে করতে আপনমনে বলে উঠে,
–“ভাইয়া আপতত জরুরী মিটিং এ গিয়েছেন। এই সুযোগে একটা সেল্ফি তুলে নেয়।”
দিয়া কাজের ফাঁকে আরেকটা সেল্ফি তুলে নেয়।
——-“ম্যাম সারাদিন শুধু সেল্ফি তুললেই চলবে? নাকি কিছু কাজও করবেন? ”
কারো কন্ঠস্বর শুনে দিয়া পিছনে তাঁকিয়ে দেখে সুদর্শন একজন দাঁড়িয়ে আছেন।
দিয়া শুকনো গলায় বলে,
” নাকবোচা হ্যান্ডসাম এ্যাসেসটেন্ট! আপনি এতোক্ষন আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলেন?কত্ত বড় সাহস আপনার? ”
কথাটা বলেই দিয়া কোমরে হাত গুজে দেয়।
—” হ্যান্ডসাম নাম টা ঠিক আছে তাই বলে নাকবোচা এ্যাসেসটেন্ট?”
কিছুটা হতাশার সুরে বলে লাজুক।
____________
সিথিকে বিদায় দিয়ে আমি তাঁকিয়ে দেখি, ভার্সিটির কিছুটা দূরে ছোট সাহেব সানগ্লাস পড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি এগিয়ে গিয়ে বলে উঠি,
“কি এতো ভাবছেন? ”
আমার কন্ঠস্বর শুনে ছোট সাহেব আমার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠেন,
“তুই এখানে কেনো? ”
—“আপনাকে দেখলাম চলে এলাম। মন খারাপ? ”
—-“আমার মন খারাপ তোকে আমি বলেছি দূর হও সামনে থেকে। ”
ছোট সাহেবকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিনি যথেষ্ট রেগে আছেন।
আমি কিছুটা আস্তে করে বলে উঠলাম,
“আপনার কোনো এক কারনে মন খারাপ। তা আমাকে বলে দিতে হবে নাহ। আমি নিজেই বুঝে যাই। ”
ছোট সাহেব হাত দুটো ভাজ করে বলেন,
“তাই নাকি সব বুঝিস? আমাকে বুঝা এতে সহজ নাহ। ”
আমি উনার চোখের দিকে গভীরভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলি,
—-“কাউকে বুঝতে হলে তার চোখ গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করতে হয়। এতে অপরদিকে থাকা মানুষের জমে থাকা সকল লুকিয়ে থাকার কথা খুব সহজেই চোখে ধরা দিয়ে দেয়। চোখ কখনো মিথ্যে বলেনা। আপনি নিজের ক্ষতগুলো যত-ই’ লুকানোর চেস্টা করুন না কেন তা আপনার চোখে ঠিক ধরা দিবে।”
ছোট সাহেব নিজের নজর সরিয়ে ফেললেন।
—–“নজর সরিয়ে ফেললে কী চোখের ভাষা লুকানো যায় ছোটসাহেব? ”
আমার কথায় ছোট সাহেব ক্ষিপ্ত গলায় বলেন,
“তুই যাবি আমার সামনে থেকে। ”
হুম মশাইয়ের মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে রয়েছে কিন্তু তাতে কী? কাজল এখুনি তার ছোট সাহেবের মন ভালো করে দিবে। কথাটি ভেবেই আমি চট করে বললাম,
“ছোট সাহেব একটা জায়গায় যাবেন? প্রমিস মন ভালো হয়ে যাবে। ”
—–“কোন জায়গা? ”
—“আহা এতো প্রশ্ন করেন কেন? গেলেই দেখতে পাবেন। ”
—-“তা আমার গাড়িতে যেতে পারবি তো? না মানে আমার গাড়ীতে তোর আবার এলার্জি। ”
ছোট সাহেবের কন্ঠে কিছুটা অভিমান স্পষ্ট। আমি মুচকি হেঁসে বললাম,
“আপাতত এলার্জির প্রব্লেম হবে নাহ। ”
রুদ্রিকে কাজলের হাঁসির দিকে তাঁকিয়ে থাকে। মেয়েটি এতো অদ্ভুদ সুন্দরভাবে হাঁসে কীভাবে? সুন্দরের ও অনেক প্রকার ধরণ আছে। এই মেয়ে অদ্ভুদ সুন্দরভাবে হাঁসে। এই অদ্ভুদ হাঁসি দেওয়ার ব্যাখা দেওয়া বোধহয় রুদ্রিকের সাধ্য নয়।
____________
গাড়ি আপনমনে ছুটে চলেছে।আমি জানালার পাশে বাইরের দৃশ্য দেখে যাচ্ছি। ছোটসাহেব নিজের মতো গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। এখুনি বোধহয় গোধূলী বেলা পড়বে মনে হয়। আমি হুট করে বলে উঠলাম,
“গাড়ি থামান! ”
রুদ্রিক জোড়প ব্রেক কষে। কাজল তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ে।
—-“কাজল আস্তে এতো তাড়াহুড়োর কি আছে? ”
আমি যত সম্ভব নদীর পাড়ে ছুটে এলাম। প্রকৃতির মৃদ্যু বাতাসে নদীও সমানতালে বয়ে চলেছে। পানি গুলো আমার বড্ড ছুতে ইচ্ছে করছে। আকাশে তাঁকিয়ে দেখি
আকাশটা গোধূলীর রঙে রঙিন হয়ে রয়েছে। যেনো রঙের উৎসব চলছে।
রুদ্রিক গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে গোধূলী উপভোগ করছে কিন্তু তার দৃষ্টি শুধুমাত্র কাজলে সীমাবদ্ধ। গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করছে কাজলকে।।
হঠাৎ করে রুদ্রিকের ফোন বেজে উঠে। রুদ্রিক ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে দেখে আফজাল শেখ ফোন করেছেন। রুদ্রিক তাড়াতাড়ি ফোনটি কেটে দেয়। রুদ্রিক আবারো তাঁকিয়ে দেখে কাজল নেই। কাজল কোথায় গেলো? রুদ্রিকের মনে অজানা ভয় ঢুকে যায়। তখনি কেউ…….
বাকিটা আগামী পর্বে…
চলবে……কী?
লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি
(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু 🥰 কমেন্ত করে দিয়েন ওখে?)