গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
9Oপর্ব-৩৪ (Special forever)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ইশানি মাহিরের বাড়িতে ঢুকে-ই’ একপ্রকার হাতের পার্সটা ছুড়ে ফেললো। ইশানিকে দেখে মাহির এগিয়ে এসে ইশানির পাশে বসে বলে উঠলো,
—“কি হয়েছে ইশানি? তোমাকে দেখে ঠিক লাগছে না। তোমার কি হয়েছে বলো তো? ”
ইশানি পানির গ্লাস ঢগঢগ করে পানি খেয়ে ফেলে।
—-“আর ইউ ওকে? ”
মাহিরের প্রশ্নে ইশানি কোনোরকম বলে উঠে,
—“হ্যা আমি ঠিক আছি,কিন্তু রুদ্রিক আমার প্ল্যান সম্পর্কে জেনে গেছে। ”
মাহির ইশানিকে থামিয়ে বলে,
—-“তুমি একটু শান্ত হও প্লিয। আগে পুরো ঘটনা আমাকে খুলে বলো। ”
ইশানি এক এক করে সব খুলে বলে। মাহির চুপ হয়ে যায়। ইশানি মাহিরের হাত ধরে বলে,
—-“তুমি বুঝতে পারছো মাহির? রুদ্রিক এখন আমাকে আগের মতো ভরসা করবে নাহ। তার মধ্যে ওই কাজল মেয়েটাট সাথে ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমি জানি কাজল মেয়েটা একবার যদি শেখ বাড়িতে ঢুকে সব অতীত ঘাটে,তাহলে তো আমাদের সবকিছু সকলের সামনে চলে আসবে। রুদ্রিককে আমি যা তা বুঝিয়েছি কিন্তু এখন কি করবো? ”
ইশানিকে শান্ত করে মাহির বলল,
— “শান্ত হও ইশানি। আমি দেখছি তুমি শুধু একটু শান্ত হও। তোমার কথা শুনে আমারোও এখন চিন্তা হচ্ছে। অতীত কিছুতে-ই’ সামনে নিয়ে আসা যাবে নাহ। ”
ইশানি উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
—“এছাড়াও রুদ্রিক আমাকে সকলের সামনে আমাকে এই ইশানি শেখকে অপমান করেছে ওই কাজল মেয়েটির জন্যে। ওই মেয়েকে আমি কিছুতে-ই’ শেখ বাড়িতে ঢুকতে দিবো নাহ। ”
মাহির মাথা নাড়ায়।
রুদ্রিক আমাকে কোলে তুলে ‘মায়া কুঞ্জের’ সদর দরজায় প্রবেশ করে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের উপর ফুলের বর্ষন শুরু হতে শুরু হয়। আমি একপ্রকার হা হয়ে যাই। মায়া কুঞ্জের ‘ বাড়ির প্রতিটি কোণায় আজ আলোয় পরিপূর্ন। বাচ্ছারা সবাই ‘রুদ্রিক ভাইয়া ‘ বলে ছুটে চলে আসে। তারা যেনো নতুন বউকে নিজ হাতে বরণ করতে চলে এসেছে।
বাচ্ছাদের সাথে দিদুন ও বাকিরা ও চলে আসে। দিদুন বলে উঠলো,
—“মাশাল্লাহ কি সুন্দর লাগছে দুজনকে। কারো যেনো নজর না লাগে। তা রুদ্রিক দাদুভাই বউকে একটু কোল থেকে নামাও। আমরা দেখি তোমার বউকে। ”
—“দেখে নাও আমার বউকে যত খুশি,কিন্তু মনে রেখো বউটা কিন্তু আমার।”
রুদ্রিকের কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠে।
রুদ্রিক আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। ছোট্ট মুসকান এসে গাল ফুলিয়ে আদো আদো গলায় বলে,
—“তুমি বফ্রেন্ড এর বউ? তুমি শুনো তুমি বফ্রেন্ড এর বউ হলেও আমি কিন্তু বফ্রন্ড এর গার্লফ্রেন্ড। আমার কথা তোমাকে শুনতে হবে। ”
রুদ্রিকও হেঁসে আমার পাশে বলে উঠে,
—“এইযে আমার গার্লফ্রেন্ডের সব কথা শুনতে হবে।”
আমি মুসকানকে কোলে নিয়ে বলে উঠলাম,
—“জ্বী ম্যাডাম বুঝেছি আর কিছু? ”
—-“তুমি না অনেক কিউট..
কথাটি বলে মুসকান আমার গালে চুমু খায়।
আমিও মুসকানের গালে চুমু খাই।
তখনি দিদুন এসে বলে উঠে,
—-“মুসকান আপাই অনেক রাত হয়েছে। ব্রফ্রেন্ড এর বউ দেখেছো? এখন চলো সবাই ঘুমাতে চলো। ”
দিদুন এর কথা শুনে সবাই মাথা নাড়ায়।
পিছন পিছন সাদি ভাইয়াসহ রুদ্রিকে সব বন্ধুরা ও চলে এসে বলে,
—“দিদুন আপনার কথামতো সব হয়ে গিয়েছে। বাসরঘর রেডি। ”
রুদ্রিক প্রশ্নে ছুড়ে বলে,
—“তোরা কখন এলি? ”
রুদ্রিকের কথার মাঝে-ই’ সিথি আমাকে পিছন থেকে ইশারা করে। আমি ও সিথির ইশারা শুনে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যাই। ছোটসাহেবকে ফাঁকি দিয়ে।
সাদি রুদ্রিককে মৃদ্যু ধাক্কা দিয়ে বলে,
—“তোমার আগে-ই’ চলে এসেছি আমার বন্ধু। ”
বন্ধু হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ছিলো তোমার বাসরঘর সাজানো।।”
শোভন বলে উঠে,
—“হুম,কিন্তু এখন সহজে ঢুকতে দিবো নাহ।”
—“মানে কি? ”
রুদ্রিকের প্রশ্নে সাদি বলে উঠে,
—“তা নয় তো কী আগে টাকা ছাড় তারপর সবকিছু হবে ওকে? ”
রুদ্রিক এইবার কিছুটা রেগে-ই’ বলে,।
—“আমার বউ আমার বাসরঘর আমি তোদের টাকা দিবো কোন দুঃখে? ”
—-“বাসর না করার দুঃখে। তাছাড়া তোর বউ এখন বাসরঘরে। বাসরঘরে না গেলে বউকে পাবি কীভাবে? টাকা না দিয়ে বাসরঘরে এক পা ও এগোতে পারবি নাহ। ”
ইথানের কথায় তনয় ও পলক হেঁসে উঠে।
______________
বাসরঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্রিক। সবকটা বন্ধুগুলো মিলে হাত থেকে গুনে গুনে দশ হাজার টাকা নিয়ে নিলো। আজকে একটা বিশেষ দিন বিশেষ একটি রাত। এই দিনে সবকিছু-ই’ মেনে নেওয়া যায়। কথাটি ভেবে রুদ্রিক বাসরঘরে ঢুকে ফুল দিয়ে সজ্জিত রয়েছে পুরো ঘর। কাঠগোলাপ ও বেলিফুলের মিশ্রনে পুরো ঘরটা ফুলের সজ্জায় সজ্জিত হয়েছে। পাশে ছোট্ট একটি পুলে বেলীফুলগুলো ভাঁসছে। রুদ্রিক হাঁসে। তার কথামতো-ই’ ঘরটা সাজানো হয়েছে।
কিন্তু কাজল কোথায়? হয়তো ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গিয়েছে।
কথাটি ভেবে রুদ্রিক খেয়াল করে খাটের পাশে এক কোণে শুভ্র রংয়ের পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির ডিজাইন্টা কিছুটা ইউনিক। কিন্তু পাঞ্জাবি টা কে রাখলো?রুদ্রিকের পছন্দ হলো তাই সে না ভেবে পড়ে নিলো।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রুদ্রিক তার কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে নিলো।
নিজের হাতের ওয়াচটা খুলতে গিয়ে রুদ্রিকের নজর গেলো ওয়াশরুমের দিকে। সেখানে তো কেউ-ই’ নি। তাহলে কাজল কোথায় গেলো?
তখনি বারান্দা থেকে কারো নুপুরের আওয়াজ পেলো রুদ্রিক। রুদ্রিক বারান্দায় চলে গেলো সেখানেও কাজল নেই। মেয়েটা বড্ড দুষ্টু হয়েছে। রুদ্রিকের সাথে লুকোচুরি? কথাটি ভেবে রুদ্রিক বলে উঠে,
—“দেখো কাজল আজকে দুষ্টুমি একদম লাভ হবে নাহ। আজকে তুমি রুদ্রিকের রোমান্স থেকে কোথাও পাড় পাবে নাহ। সো লুকিয়ে লাভ নেই। ”
রুদ্রিকের কানে আবারোও চুরি ভেঙ্গে যাওয়ার আওয়াজ এলো। রুদ্রিক পিছনে তাঁকিয়ে দেখলো বারান্দার পাশে-ই’ বাগানের থেকে শব্দ টা আসে।
রুদ্রিক এগিয়ে গেলো।
রুদ্রিকের কানে এইবার কারো মিষ্টি কন্ঠের গান ভেসে উঠলো।
রুদ্রিক এগিয়ে গিয়ে নিজে-ই’ যেনো শকড হয়ে গেলো।
বাগানের পাশে ছোট্ট একটি পুকুর আছে। যা আজ শুধু ছোট্ট ছোট্ট ক্যান্ডেল লাইট দিয়ে পরিপূর্ন।
কাজল ক্যন্ডেল লাইটগুলো একটি একটি করে পানিতে ছেড়ে দিচ্ছে এবং গান গেঁয়ে যাচ্ছে।
তোমাকে ছাড়া এ আকাশ সাজে না
সহজে তো বাঁশি বাজে না,
চলনা আজ এ রূপকথা
তোমাকে শোনাই ।
কাজল রুদ্রিকের কথামতো আজকে নিজেকে সাঁজিয়েছে। কাজলের গাঁয়ে শুভ্র রংয়ের শাড়ি। ঠোটে ঘাড়ো লিপ্সটিক। হাতে সর্নের বালা। গাঁয়ে কোনো গয়না নেই। চুলগুলো আকাশে উড়ছে। পায়ে রুদ্রিকের দেওয়া সেই সোনার নুপুর।
রুদ্রিক ঘোরলাগা দৃষ্টিতে কাজলের দিকে এগিয়ে গিয়ে কাজলকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তাল মিলিয়ে গেঁয়ে উঠে,
—”
আকাশ হারায় যেখানে
ও.. তোমায় ছোঁবো সেখানে,
ও.. ভালোবাসো এখনি
হো.. পরে কি হয় কে জানে ।
কাজল মুঁচকি হেঁসে জলের দিকে তাঁকিয়ে গাইতে থাকে…
ভালো লাগা সারাক্ষণ
ও.. জানিনা তার কি কারণ,
হা.. ভেসেছি স্বপ্নে আমি
ও…তোমাকে পেয়েছে মন ।
রুদ্রিক ও কাজল একে অপরকে দিকে তাঁকিয়ে একসাথে গেঁয়ে উঠে,
সারাটা দিন
ঘিরে আছো তুমি এত রঙ্গিন
হয়নি কখনো মন,
সারাটা রাত
আসছে না ঘুম ধরেছি হাত
থাকবো সারাজীবন ।
রুদ্রিক আমার পাশে বসে বলে উঠে,
—-“আজকের রাতটি যেনো আরো স্পেশাল হয়ে গেলো। ”
কাজল একটি ছোট্ট ক্যান্ডিল উঠিয়ে নিয়ে রুদ্রিকের দিকে তাঁকিয়ে বলে,
—-“এই ছোট্ট ছোট্ট ক্যান্ডিলের আলো যেনো আমাদের জীবনটার নতুন অধ্যায়কে আরো আলোকিত করে তুলবে। ”
রুদ্রিক মুঁচকি হেঁসে বলে,
—“কাজল আজকে এই সাঁজে তোকে একদম মোহনীয় লাগছে। যার রুপে বার বার আমি মোহিত হয়ে যাচ্ছি। প্রেমে পড়ে যাচ্ছি বারবার। ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
—“রুদ্রিক সাহেব আপনি কিন্তু আজকাল বেশি বেশি প্রেমে পড়ে যাচ্ছেন। ”
উনি হেঁসে বলল,
—“নিজের বউয়ের প্রেমে হাজারো বার পড়তে রাজি আছি বুঝেছো জানেমান। ”
—-“আপনার মুখে ‘তুমি ‘ ডাকের চেয়ে ‘তুই ‘ ডাকটা বেশ লাগে। ”
আমার কথায় উনি বললেন,
—“তোর মুখে আপনি ডাকের চেয়ে ‘তুমি ‘ ডাকটা ভালো লাগে। আজকে থেকে তো আমরা স্বামী স্ত্রী। তাহলে তুই ও আমাকে তুমি করে ডাকবি। ”
আমি মুখ বেকিয়ে বলি,
—“পারবো নাহ হুহ।
আমার কথার মাঝে-ই’ রুদ্রিক আমার কপালে চুমু খেয়ে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে নেশাক্ত কন্ঠে বলে,
—“কাজল তুই কি জানিস? আজ আমার চোখে শুধু তোকে কাছে পাওয়ার নেশা। তুই কি দেখতে পারছিস? ”
কাজলের গালগুলো লজ্জায় লাল আভা ধারণ করে। রুদ্রিক ঘোরলাগা চাহনিতে সেই মুখপানে তাঁকিয়ে থাকে।
রুদ্রিক কাজলের ঘাড়ে চুমু খেয়ে বলে,
—-“ইউ নো কাজল আমি জাস্ট তোর লজ্জামাখা সেই চাহনীতে জাস্ট শেষ হয়ে যাচ্ছি। আজকে আমি কি করে নিজেকে সামলাবো বলতো?
কাজল জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। তার মধ্যে আলাদা ভালোলাগার শিহরন বয়ে যাচ্ছে। রুদ্রিক কাজলের কোমর টেনে নেয়। কাজল রুদ্রিকের কলার চেপে ধরে। কাজলের গলার মুখ ডুবিয়ে
জড়ানো কন্ঠে বললেন,
—জানেমান আজকের আমাদের বিশেষ দিনটিকে
তোকে নিজের করে আপন করে নিলে খুব বেশি কি ক্ষতি হবে? তোর প্রতি ভেজা চুলের কারণ হলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে? আজকে তোকে সম্পূর্ন রুপে পেতে চাইলে খুব কী ক্ষতি হবে জানেমান। ”
আমি উনার বুকে মাথা রেখে বলি,
—” রুদ্রিক আপনি আমার স্বামী।নিজের অস্তিত্বকে আপনার কাছে বিলিয়ে দিতে
হাজারো বার প্রস্তুত আমি। ভালোবাসি আপনাকে। ”
রুদ্রিক মুঁচকি হেঁসে কাজলকে কোলে তুলে বিছানায় আলতো করে শুয়িয়ে দিলো। রুদ্রিক কাজলের ওষ্টদ্ধয় চেপে ধরলো। কাজল বিছানার চাঁদর চেপে ধরলো।
চারপাশের ফুলের সুগন্ধিতে দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ যেনো একত্রিত হয়ে গেলো।
হোক না আজ রাতটি সুখকর। 💙🌹
(বাকিটা মুই জানিনা। লাইট অফ ছিলো 🙈।৷ এই তোমরা কি করো? যাও কমেন্ট করে আসো)
বাকীটা আগামী পর্বে…..
চলবে কী?
😳😳বাবাগো…..
লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি