চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।১১ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
431

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।১১ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে হানিয়ার একপাশে শাবনূর বেগম আরেকপাশে সুভানা। ওর মুখোমুখি সেজাদ তার পাশে সায়েম। হানিয়ার ফোন সাইলেন্স করা সেটাতে কল আসছে বারবার ও দেখেও ধরছে না। ওর ফোন জ্বলছে শাবনূর বেগম হানিয়াকে বলল “তোমার ফোন বাজচ্ছে ধরো।”

হানিয়া খেতে খেতে বলল “পরে কথা বলে নিব!”

–“কেনো কেনো? বাসা থেকে ফোন দিচ্ছে তারা তোমাকে নিয়ে টেনশনে থাকে একা একটা মেয়ে এতদূরে থাকছো টেনশন হওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কী! তোমার মা বোধহয় ধরো। মারা সবসময় সন্তানদের নিয়ে চিন্তায় থাকে তোমরা আজকালকার যুগের ছেলে-মেয়েরা বাবা-মাদের চিন্তা কথা মনেই করো না ইচ্ছে হলে ফোন ধরো ইচ্ছে না হলে ধরোই না। তোম…”

সুভানা বুঝতে পারছিল এখনে কথা বলতে চাইছে না। শাবনূর বেগম মা-বাবা নিয়ে জ্ঞান দেওয়ায় সুভানা মাঝে বাঁধা দিল ততক্ষণে অনেকক্ষাণি দেরি হয়ে গেছে বলল “দাদুমণি, থামো। খেতে বসছে দেখছ না পরে কথা বলে নিবে।”

–“কেনো খেতে খেতে কথা বলা যায় না? তোরা বাইরে থাকলে ফোন ধরস না বাড়ির লোকজনের টেনশন হয় সে সব তোদের মাথায় থাকে না তো!”

হানিয়া হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল “আচ্ছা আচ্ছা ধরছি। আমি তো ভুলেই গেছিলাম স্বয়ং হিটলার এখানে আছেন।”

শাবনূর বেগম তেতে উঠে বলল “এই মেয়ে, এই! তুমি আবার আমাকে হিটলার বললে?”

হানিয়া উত্তর না দিয়ে ফোন নিয়ে উঠে গেলো। সেজাদ, সায়েম হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। সোনিয়া, লাইজু, সোহান মুখ চেপে হাসছে। হানিয়া দৃষ্টির বাইরে যেতেই সুভানা রেগে বলল
–“দাদুমণি তোমাকে কতবার বারণ করেছি হানিয়া সাথে এমন করবে না।”

–“তোর বান্ধবীকে আমি কিছু করি নি ও আমারে হিটলার কইল ক্যান শুধু ফোন ধরতে কইছি। এটা আমার দোষ”

–“হ্যাঁ তুমি ওসব নিয়ে জ্ঞান ঝাড়লে কেনো? এসব বলার খুব দরকার ছিল?”

–“তুই বাইরের মেয়ের জন্য আমার লগে এমনে কথা বলতেছিস?”

সেজাদ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল “সুভানা এসব কী হচ্ছে?”

সুভানা নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বলল “সরি!”

সুভানাও চলে গেলো। সোনিয়া বলল “দাদুমণি তুমি হানিয়ার সাথে একটু আলাদা বিহেভিয়ার করছ। এসব ঠিক না। ও তোমার সাথে মজা করে। অন্য কেউ হলে তোমার সাথে ঝগড়া লেগে যেতো।”

লাইজু বলল
–“শাশুড়ি আম্মা আমি একটু সুন্দর বলে আপনি আমার সাথে ঝগড়াঝাটি করেন মানা যায়। যে একবাড়িতে থাকি হিংসা হয়। আর ঐ মেয়েটার কী দোষ মেয়েটা সুন্দর বলে আপনি ওর সাথে এমন করেন। সহ্য করতে পারেন না। মানতেই পারেন না আপনি বুড়ি হয়ে গেছেন মেনে নিলে কী সমস্যা হয়?”

সায়েম জ্যাম দেওয়া পাউরুটি কামড় দিয়ে বলল “দাদুমণি এই বয়সে সুন্দরী মেয়ে দেখলে তোমার জ্বলে? সহ্য করতে পারো না। আয়হায়। কাহিনী কী? আসল কথা বলো তো!”

সেজাদ সবার কথা মন দিয়ে শুনে শান্ত কণ্ঠে বলল “দাদুমণি আর এমন বিহেভ করবে না। তুমি ছেলেমানুষী করছ। তুমি তোমার জায়গা থেকে সুন্দর আর তারা তাদের জায়গা থেকে সুন্দর। দ্যাটস ইট। এটা নিয়ে আর কোনো ঝামেলা চাই না।”

সকলে একে একে প্রস্থান করল শাবনূর বেগম চুপচাপ বসে আছে। সোহান এসে কোমড়ে হাত রেখে চোখ ছোট ছোট করে বলল “তুমি সুইটগার্লকে হার্ট করবে না।”

শাবনূর বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–“কেনো তোর সুইটগার্লকে কষ্ট দিলে কি হইব? কী করবি তুই?”

–“আমি সুইটগার্লের মেয়েকে বিয়ে করব। মণি বলেছে আমি সুইটগার্লের মেয়ের জামাই হবো।”

শাবনূর বেগম বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে বলল “দুধের দাঁত পড়ে নি। তুই বিয়ার কি বুঝস হাতড়ছাড়া।”

সেজাদ এসেছিল কফি চাইতে খাবার খাওয়ার পর ওর এক কাপ কফি না হলে চলে না। এসে শাবনূর বেগম আর সোহানের কথা শুনে নিঃশব্দে হেঁসে ফেলল। পরক্ষণে হাসি চাপিয়ে সামলে পিছু ফিরে চলে গেলো ড্রইংরুমে গিয়ে বলল “আপু কফি দিয়ে যা অফিসে যাব”

•••

হানিয়া ডাইনিং রুম থেকে এসে। ফোনটা ধরল ওর ফুপু নাদিয়া ফোন দিচ্ছে। ফোন কানে নিয়ে রাগান্বিত কণ্ঠ ভেসে আসল
–“ফোন ধরছিলি না কেনো? আমার ছেলেকে কী বলেছিস? ভাংচুর করছে কেনো? কী চাইছিস তুই?”

–“আমি তোমার ছেলে কী বলব? ও কী আমার কোনো কথা শুনে? ও ভাংচুর করছে ওর কাছে গিয়ে শুনো কী হয়েছে? আমি কী বলছি! ও কী করছে? আশ্চর্য! তুমি কিছু না জেনে আমাকে কেনো কথা শুনাচ্ছ?”

–“কারণ আমি জানি সবটা তোর জন্য হচ্ছে। কাজিনদের মধ্যে প্রেম হয় না? তোর বোনকে আমার ছেলে ভালোবাসে তাতে কী এমন দোষ হয়ে গেছে। তুই বাঁধা দিচ্ছিস!”

–“ভালোবাসাটা দোষের নয় ফুপি। কিন্তু কী বলো তো তোমার ছেলে রেগে গেলে অমানুষ হয়ে যায়। আর সেটার জন্য আমার বোন কষ্ট পেলে আমি মানব না। তোমার ছেলেকে মানুষ হতে বলো আর আমার বোন যদি চাই তবে ওরা এক হবে আমি কোনো বাঁধা দিব না।”

–“বড় হয়ে গেছিস? আমরা বড়রা তোদের গার্জিয়ান। আমরা নিশ্চয়ই তোদের খারাপ চাইব না। আমার ছেলেটা গুমরে গুমরে মরছে আমি মা হয়ে বুঝতে পারি।”

–“তুমি স্বার্থপরের মতো কথা বলছ নিজের ছেলের কথা ভাবছ আর আমার বোনটা এখনো অনেক ছোট স্কুলের গন্ডি পার হতে পারে নি তার আগে কীসের বিয়ে? এই যুগে এসে তেমার এমন মেন্টালিটি দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না। আর হ্যাঁ আমি বড় হয়ে গেছি অনেক আগেই। আর তোমরা আমাদের তিনভাইবোনের গার্জিয়ান কবে হলে? পাপা চলে যাওয়ার সময় কী বলে গিয়েছিল তার ছেলেমেয়েদের দায়িত্ব তোমাদের? বলে নি তো! আর আমি আছি আমার ভাইবোনদের ভাবার জন্য। আর ওরা বড় হচ্ছে নিজেদের দায়িত্ব সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারে। আর সেখানে বিয়ে নামক বিষয় জীবনের বড় সিদ্ধান্ত ওরা নিজেরাই নিবে তাই আমাদের নিয়ে ভেবে নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করো না।”

হানিয়া ফোন কেটে দিল। রাগে মাথা দপদপ করছে সাথে ভাইবোনদের চিন্তা। সুভানা হানিয়ার কাঁধে হাত রাখল। হানিয়া বলল “আমি ভাইবোন দু’টোকে রেখে একা এসে অনেক ভুল করলাম রে! আমার উচিত হয়নি ওদের একা রেখে আসা। সবাই স্বার্থপর।”

–“রিলেক্স। কুল ডাউন বেবস। রাগের মাথায় কোনো সিদ্ধান্ত নিস না। সবসময় ঠান্ডা মাথায় ভাববি। ওরা এসএসসিটা দিক ওদের দু’জনকে এখানে আনার ব্যাবস্থা করিস। কয়েকটা মাসের ব্যপার।”

–“এর মধ্যে যদি কোনো বিপদ হয়। ওরা ছাড়া বাঁচব কীভাবে?”

–“দেখ আমি বলি। এই ক’টা মাস যতদিন না ওরা তোর কাছে আসছে ততদিন কোনো আত্মীয়স্বজনদের সাথে এভাবে রুডলি কথা বলিস না রাগের মাথায় যদি ওদের কেউ ক্ষতি করে। নিশাদকেও কিছু বলিস না। সবটা ঠান্ডা মাথায় হ্যান্ডেল কর।”

হানিয়া সম্মতি জানিয়ে বলল “আমি রেডি হচ্ছি তুই কী যাবি আমার সাথে?”

–“এখনি চলে যাবি? থাক না আরো ক’টা দিন।”

–“আরে দূর প্রতিদিন আমাদের দেখা হবে ভার্সিটিতে সেন্টি খাস না। সাথে অনেক কাজ আমি এখানে ছোট বাড়ি কিনতে চাই। ওদের এখানে আনলে তো সব দিন থেকে গুছিয়ে উঠতে হবে।”

–“হ্যাঁ।”

হানিয়া বিদায়ের সময় লাইজু, সোহান, সোনিয়া মন খারাপ করে বিদায় জানালো। শাবনূর বেগম বাসায় নেই এখানে ওনার মতো কোন সখির সাথে না-কি বাইরে গেছে। সেজাদ, সায়েম তখন অফিসে।

•••

রাতে ডিনারের সময় যখন সকলে উপস্থিত তখন সায়েম সুভানাকে বলল “এই আমার বোন কই?”

সুভানা আকাশ থেকে পড়ার মতো করে তাকিয়ে থেকে বলল “তোমার বোনকেই জিজ্ঞাসা করছো তোমার বোন কই?”

–“আরে আমার দুইদিকের বোন হানিয়া”

–“চলে গেছে।”

সেজাদ খাচ্ছিল হঠাৎ এমন কথা শুনে খাওয়া থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল “চলে গিয়েছে? বাট হোয়াই? হোইয়ার ডিড সী গো?”

সেজাদের প্রশ্নে ওর দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকালো সকলে। সেজাদ সচারাচর কারোর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে না। কে কখন আসলো আবার চলে গেলো এসবে ওর কখনো শুনে না। সবাইকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল “হোয়াট? একটা কোয়শ্চন আক্স করছি। এমন রিয়াক্ট করছ কেনো তোমরা?”

–“ভাই তুই তো কখনো কারোর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিস না তাই।”

–“আব দাদুমণির কথায় রাগ করে চলে গিয়েছে কি-না সেটাই বোঝতে চেয়েছি।”

–“কোথাই গিয়েছে রে সুভানা? আহারে দাদুমণির অত্যাচারে আমার বোনটা রাগ করে চলে গেলো?”

শাবনূর বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বলল “কই মাইয়াডা আমারে কিছু বইলা গেলো না। বলে যেতে হয় এইডাও জানে না? তা কই গেছে সে মেয়ে।”

–“হোস্টেলে গেছে। তুমি তো কোথায় গেছিলা খুঁজে পাই নি তোমাকে তাই বলেও যেতেও পারি নি।”

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here