#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।১৩ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না
গভীর রাত দোলার চোখে ঘুম নেই। বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে। রৌদ্দুর রাতে বাসায় আসে নি। দোলা আন্দাজ করতে পারছে রৌদ্দুরের রাতে না ফেরার কারণ। নয়ন জোড়া দিয়ে অলনগল অশ্রু ধারা গড়িয়ে গড়িয়ে বালিশ ভিজে যাচ্ছে। রৌদ্দুর ওকে ভালোবেসে কাছে না টাননি শুধু নিজের চাহিদা মেটাতে ওকে ব্যবহার করেছে। দোলা ভেবেছিল আর যায় হোক বিয়ের বন্ধন তো ভালোবাসা এমনিতেই চলে আসবে। কিন্তু না ভালোবাসে নি সে। দোলা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে ‘‘কী করবে সে চলে যাবে? বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসলে বাবা ছাড়া বড় হবে? সে যখন বড় হয়ে কথা বলতে শিখবে তখন বাবাকে? কোথায়? জিজ্ঞাসা করলে কী উত্তর দিবে? না না। বাচ্চাটাকে দেখলে হয়ত মায়া জন্মাবে রৌদ্দুর ওকে ভালোবেসে কাছে টানবে সুন্দর একটা পরিবার হবে। তাকে অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষার ফল মিঠা হয়। রৌদ্দুরকে বদলানোর চেষ্টা করবে।”
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে পাড়ি দিল। এবাড়িতে শশুড় ছাড়া কেউ ভালো করে কথা বলে না। কিন্তু বংশধরের জন্য কেউ অযত্নে নেই। খাওয়া-দাওয়া, ডক্টর টাইম টু টাইম চলছে। কিন্তু ভালোবাসা নেই মানসিক অশান্তিতে ভুগছে ও সেটা কাউকে বোঝাতে বা দেখাতে পারছে না কেউ বুঝতেও পারছে না।
°°°
সুভানা সন্ধিহান চাহনিতে শাবনূর বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে। সোনিয়া চা, কফি নিয়ে আসল। সায়েম ফোন দেখতে দেখতে সেজাদের পাশে বসে কফি নিলো। লাইজু নিজের রুমে টিভিতে সিরিয়াল দেখতে বসে গিয়েছে তাকে আর উঠানো যাবে না। সুভানা শাবনূর বেগমের পাশে গিয়ে বসে বলল
–“কী হলো বলছ না কেনো? চুপ করে আছ কেনো?”
সোনিয়া সোহানের জন্য হলডিক্স ফিডারে ঠান্ডা করতে করতে বলল “কী হয়েছে কী বলবে?”
সুভানা মনে হচ্ছে হানিয়াকে ক’দিন নিজের বাড়িতে এনে রেখে ও মস্ত বড় ভুল করে ফেলছে। আগে জানলে কখনোই আনত না। সুভানা সোনিয়ার কথার উত্তর না দিয়ে সায়েম আর সেজাদকে ডাকল “বড় ভাইয়া, ছোট ভাইয়া।”
দুজনেই প্রশ্নাত্নক চোখে তাকালো। সুভানা বলল “আচ্ছা। আমার বান্ধবী মানে হানিয়া কী তোমাদের কখনো প্রেমের ইঙ্গিত দিয়েছে? বা তোমাদের ফাঁসানোর মতো এমন কিছু করেছে?”
সেজাদ হতভম্ব হয়ে গেলো বলল “হোয়াট ননসেন্স”
সায়েম কিছু না বুঝেই বলল “সবার সামনেই তো আমাকে ভাই বানিয়ে দিলো। কেনো বলতো এমন কিছু করার কথা ছিল নাকি?”
সুভানা চোখ ছলছল করে উঠল বলল “তাহলে দাদুমণি এমন কেনো করছে? দাদু মণির মতে হানিয়া তোমাদের ফাঁসিয়ে বিয়ে করে নিবে। হানিয়া এমন নয় আমি ওকে চিনি। আমি জানতাম না হানিয়া আসলে এতো কাহিনী হবে। ওনিজেও আসতে চাইছিল না হোটেলে উঠতে চাইছিল আমিই জোর করেছি আমার ভুল হয়ে গেছে আমি আর কখনো কোনো ফ্রেন্ডকে এবাড়িতে আনব না। খুশি তোমরা।”
সুভানা উঠে চলে যেতে গেলে শাবনূর বেগম আঁটকে দিল। রেগে বলল “আমি তোরে এখন কিছু কইছি? শুধু জিগাইছি আহে না ক্যান? তুই বইলাছিলি তোরে ছাড়া কাউরে চিনে না এখানে। এইডাই আমার দোষ?”
সুভানা কিছু বলল না চুপচাপ বসে রইল। সোনিয়া বলল
–“দোষ নয় কিন্তু হঠাৎ ওর কথা জিজ্ঞাসা করছ কেনো?”
–“মাইয়াডারে কেমন কেমন রহস্য লাগে। এই ক’দিন আমাগো সাথে থাইকা গেলো খোঁজ নিতাছি তাও দোষ হইয়া গেলো।”
সুভানা আবার খেপে গেলো বলল “কেমন রহস্য লাগে? তুমি এমন কেনো করছ? হানিয়ার বাসার সবাই কত ভালো আমি দুইরাত ছিলাম ওরা বুঝতে দেয় নি আমি বাইরের কেউ নই বরং আপন করে নিয়েছিল।”
সোনিয়া অবাক হয়ে বলল
–“মানে তুই ওদের বাড়ি কবে ছিলি?”
–“ঐ যে ছিলাম প্রথম এখান থেকে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম কুরবানি ঈদের পরে। তখন তোমরা খুলনাই ছিলে। আমি বড়ভাইয়া, আর ছোট ভাইয়ার সাথে ঢাকাতে এসেছিলাম। আমি জানতাম আম্মু, দাদুমণি যেতে দিবে না তাই ভাইয়াকে রাজি করিয়েছিলাম। বড়ভাইয়া তোমার মনে আছে আমি বলেছিলাম আমার ফ্রেন্ডের ভাইয়ের বিয়ে তুমি আমাকে দিয়েও এসেছিলে। গার্জিয়ানের সাথে কথাও বলেছিলে।”
সেজাদ গম্ভীর কণ্ঠে বলল “ইয়াহ।”
–“ওটা ওর ফুপি আর কাজিন ছিল ওর আসার কথা থাকলেও ও পায়ে মচকে গিয়েছিল তাই আসতে পারে নি। ওনারা আমার বাড়ির সবাইকেই ইনভাইট করেছিল আমি বারণ করে দিয়েছিলাম জানি তোমরা যাবে না। তাই।”
শাবনূর বেগম গম্ভীর হয়ে বসে থেকে বলল
–“ওর বাপে কী করে?”
–“তুমি জেনে কী করবে?”
–“দেখলি একখান ভালো কথা জিগাইলাম খ্যাঁক হইরা উঠলি। ওর বাপে কী চুরি ডাকাতি করে?”
–“দাদুমণি ভুলভাল বকবে না তিনি সিআইডি অফিসার ছিল। চোর-ডাকাত হাজতে ঢোকাত।”
–“ও এখন কী বইয়া আছে? কিছু করে না।”
সুভানা বিরক্ত নিয়ে বলল
–“ওফফ! ওর বাবা-মা নেই। মা*রা গেছে। হয়েছে আমি আর ওর সম্পর্কে কিছু বলতে চাইছি না। ও নিজের সম্পর্কে কম জানায় সবাইকে।”
উপস্থিত সকলে অবাক হলো। সোনিয়া বলল “তাহলে মাম, বাবাই ওরা কারা?”
–“ওর বড় মামা-মামী।”
–“যাচ্ছি ঘুম পাচ্ছে।”
শাবনূর বেগম সুভানাকে উঠতে দিল না। কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করল “কেমনে মরল তারা? আর ওরে কে দেখে? খরচ চালাই কেডা?”
–“বিরক্ত লাগতেছে এসব প্রশ্ন। বাই দ্যা ওয়ে তোমার আমার বান্ধবীকে নিয়ে কৌতুহল কেনো বুঝলাম না।”
শাবনূর বেগম খেপে গেলো বলল “যা জিগাইবো উত্তর দিবি। বেশি কথা কইবি না।”
সুভানা চোখমুখ কুঁচকে বসে রইল। সোহান ফিডার খেতে খেতে বিশুম লেগে গেলো। সোনিয়া ওকে শান্ত করল। সেজাদ বলল “দাদুমণি এসব বাদ দাও অন্য কারোর সম্পর্কে জেনে তোমার লাভ কী?”
–“না আমি শুনুম। তুই ক”
সুভানা বুঝে গেলো হানিয়ার সম্পর্কে না জানা অবধি শাবনূর বেগম ওকে ছাড়বে না তাই বলতে শুরু করল
–“আমি জানি না ওর মায়ের কী হয়েছিল। নিজেও সেভাবে জানে। শুনেছি ওর মা বেশিরভাগ সময়ই অসুস্থ থাকত। ওর যখন তিন বছর ওর জমজ ভাইবোন হয়। তখন আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে দূর্বল হয়ে যায় ঠিকঠাক চলাচল করতে পারত না তিন সন্তানকে নিয়ে একমাস বাপের বাড়ি থাকে তারপর চলে আসে ওর দাদুবাড়ির সতেরো দিনে ওনি সিড়ি থেকে পড়ে যায়। মাথা, সিজারের সেলাই কেটে যায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওনার মৃত্যু হয়। আর ওর বাবাকে আমি দেখেছি ওনি অনেক ভালো ছিল। বড়আব্বু যেমন বিয়ে করে নি তেমনি ওনিও আন্টি মারা যাওয়ার পর বিয়ে করে নি…”
সুভানা থামল একপল সোনিয়া আর সেজাদের দিকে তাকালো। সোনিয়া ওর দিকে তাকিয়ে আছে আর সেজাদ চোখ-মুখ শক্ত করে কফিতে চুমুক দিচ্ছে তার চোখ ল্যাপটপের স্কিনে। সুভানা শুকনো ঢোক গিলে বলল “আঙ্কেল এসএসসি এক্সাম যখন শেষ তখন ঘুরাঘুরি চলছে। আমারা এখানে আসার ক’দিন পর শুনি ওনি শ*ত্রুদের গু*লি ও আঘাতে নিহত হন। তারপর থেকে হানিয়া কেমন বদলে গেছে বাবাকে খুব ভালোবাসে ও। জেদি, ঝগড়ুটে, কিছু না বুঝে দুমদাম উলটোপালটা কাজ করে ফেলা মেয়েটা আচমকা বুঝদার ভাবুক হয়ে গেলো।…(একটু থেমে সবার দিকে তাকিয়ে দেখে গলা ঝেড়ে আবার বলল) এহুম এবার আমি যায় দাদুমণি”
–“না আমারে ক। ঐ মেয়ের ওপরে কী চাচা-চাচী, মামা-মামী অত্যাচার করে না-কি?”
–“আরে কী বলো ওরা অনেক ভালো। আচ্ছা দাঁড়াও দেখাচ্ছি… ”
–“কী দেখাবি?”
–“আরে দাঁড়াও ফোনটা টিভির সাথে কানেক্টেড করে দেখাচ্ছি।”
এবার কৌতুহল নিয়ে সেজাদও তাকালো। কী দেখাতে চাইছে সুভানা?
চলবে ইনশাআল্লাহ