চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।১৪ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
391

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।১৪ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

সুভানা টিভির সাথে ফোনটা কানেক্টেড করতে করতে বলল “আপু আমার জন্য একটু কফি আনো”

সোনিয়া দ্বিমত করল না উঠে গেলো। মিল্ক গরম করাই আছে চটপট কফি আর সুগার মিক্স করে সাথে চিপস ভেজে আনল বেশি দেরি হলো না। সেজাদও টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। কী করতে চাইছে সুভানা বুঝতে পারছে না। সেজাদেরও হানিয়ার প্রতি কৌতূহল জেগেছে। কানেক্টেড করতে ফোনের স্ক্রিন টিভিতে সো করছে ইউটিউবে গিয়ে সার্চ করে নিশাদের চ্যানেলে গেলো। সেখানে ইদের আর বিয়ের ব্লগ দেওয়া। সুভানা খুঁজে খুঁজে নাহিদ আর রুবার বিয়ের ব্লগ বের করল। সেখানে ভিডিওর কভার ফটোতে নিশাদ আর রুবার কাপল পিক সাথে নিশাদ, ইমন, হামজা, হায়াত, সুভানা, হানিয়ার পিক ইডিট করা। সেটা দেখে সায়েম লাফিয়ে উঠে বলল “আরে তোরা সেলিব্রিটি না-কি? এতো ভিউস কেমনে?”

সুভানা ঠোঁট উল্টে বলল
–“আসলেই ওরা সেলিব্রিটি নিশাদ, হায়াত, হামজা ও…”

সায়েম বলল
–“ওরা কারা?”

–“বলছি তো সময় তো দিবে। নিশাদ, হায়াত, হামজা অভিনয় ও মডেলিং করে এখন বেশ জনপ্রিয় ওরা। হানিয়া মডেলিং করে ও একটা মুভি করেছিল অনেক হিট হয়েছে। এইতো আগের বছরেই করেছে তারপর আর করে নি। ওর না-কি ভালো লাগে না তাই শুধু মডেলিংই করে। আর এটা নাহিদ ভাই মানে হানিয়ার কাজিনের বিয়ের হলুদের ব্লগ যে বিয়েতে আমি উপস্থিত ছিলাম।”

সোনিয়া অবাক হয়ে বলল “আগে বলিস নাই তো! সে জন্য মনে হচ্ছিল কোথায় যেনো দেখেছি”

–“ওমাইগড! আমারও কেমন চেনা চেনা লাগছিল। কিন্তু মনে করতে পারছিলাম না। ওকে ওকে শুরু কর ভিডিও।”

ভিডিও শুরু হলো নিশাদ নিজের ইন্ট্রডিউস দিয়ে বিয়ের কমিউনিটি সেন্টরের সাজানো দেখাল। বিয়ে একে একে হানিয়ার চাচা-চাচি, ফুপা-ফুপি, বর কণের সকলের মতামত নিচ্ছে মজা করে জিজ্ঞাসা করছে নাহিদের পরে তার সিরিয়াল? মেয়ে খোঁজা শুরু করো। সাথে কান মলা ফ্রিতে খাচ্ছে। খাওয়া-দাওয়ার সাইডে আসতেই দেখাল হামজা-হায়াত টুপটাপ ফুচকা খাচ্ছে। সুভানা ভিডিও পচ করে করে কে কী হয় পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে আবারও ভিডিও পচ করে বলল “হানিয়ার আপন ভাইবোন দু’টো জমজ।”

শাবনূর বেগম বলল “তিনডাই তো একরকম দেখতে।”

সায়েম বলল “ভিডিওতে তুই হানিয়া কই? নাই তোরা?”

–“আছি আমাদের একসাথেই দেখাবে এখনি।”

সুভানা আবার ভিডিও শুরু করল। নিশাদ চোখ-মুখ কুঁচকে বলল “হেলদি খাবার খাচ্ছিস তো তোরা।”
হায়াত ফুচকাটা খেয়ে সুখের ঢেকুর তুলে বলল “আই নোউ।”

–“হ হ তুমিও খাওয়া ভাইয়া। সেই স্বাদ।”

–“চুপ কর শালা। ব্যাটা মানুষ হইয়া মাইয়াগো খাবার খাস!”

হায়াত খেপে উঠে বলল “খাবার আবার ছেলেমেয়ে কী? মেয়েরা মেকাপ করে ছেলেরাও মেকাপ করো কেনো?”

–“এই…”

নিশাদ আর বলতে পারল না হায়াত ঠাস করে একটা ফুচকা ওর গালে ঠুসে দিল। ফেলতে চাইলে হায়াত বলল “নিচে ফেলো না কার্পেট নষ্ট হলে তোমাকে দিয়ে পরিষ্কার করাবো।আর সেই ভিডিও ছেড়ে দিব সোশাল মিডিয়ায়। ক্যামেরার সামনে পার্টে নেওয়া বের হবে। এই চল ভাই আমরা অন্য খাওয়ার টেস্ট করি।”

নিশাদ ফুচকা খেয়ে বলল “বাদ দিন গাইস পাগলে কত কিছুই বলে সব কী ধরতে হয় না-কি! চলুন আমার লাইফের একমাত্র শত্রুর সাথে দেখা করে আসি।”

ক্যামেরা ম্যান রাতুল বলল “পাগল কে পাবলিক সেটা জানে।”

–“রাতুলের বাচ্চা তোকে তো পরে দেখে নিচ্ছি।”

ছেলে মেয়ের থিম রং সবুজ। হানিয়া আর সুভানা গেস্ট চেয়ারে স্টোরেজের সামনে বসে আছে। হানিয়া, হায়াত, সুভানা একই রকমের লেহেঙ্গা পরেছে। সুভানা হানিয়া আর ওর ফোন নিয়ে কিছু একটা করছে। হানিয়া চেয়ারে পা তুলে কেচের ফিতা লাগাচ্ছে। নিশাদ পাশে বসে বলল “গাইস আমরা দুই সুন্দরীর ইন্টারভিউ নিতে চলে এসেছি। তো দেখতেই পাচ্ছেন। ক্ষেত, অশিক্ষিত এক মহিলা লেহেঙ্গার সাথে কেচ পড়েছে গ্রামের মামাতো বোন যখন শহরে আসে এমনই হয়। যাকগে তো বলুন কেমন আছেন আপনারা?”

কয়েক মিনিট দেখল ওরা ওদের মতো কাজ করে যাচ্ছে। নিশাদ হানিয়ার মাথায় ঠাস করে মেয়ে বলল “ক্যামেরা অন ভাব নিচ্ছিস বেশি।”

হানিয়া নিশাদের কাঁধে কনুই দিয়ে গালে হাত দিয়ে ঠোঁট উল্টে বলল
–“একচুয়েলি গাইস, আমরা পাতি ব্লগারদের চ্যানেলে ইন্টারভিউ দি না। তাই না সুভানা বেবস?”

–“ইয়াহ বেবস। বাট কিছু দিলে সেটা অন্য কথা। আমাদের মুখ দিয়ে তখন মধু ঝড়বে।”

–“ঐ থেমে যা। দুই পেত্নী। তোদের সিনিয়র রেসপেক্ট মি!”

হানিয়া-সুভানা একসাথে বলল “সাট আপ।”

হানিয়া বলল
–“তোর ব্লগে তুই মুড়ি খা। এখন ডান্স এনাউন্সমেন্ট করবে। বাট আমার পার্টনার কই গেলো? চল বেবস খুঁজে আসি।”

–“থাক গাইস ফকিন্নিদের কথা বাদ দিন। আজ গরিব বলে কেউ পাত্তা দেয় না। ও ডার্লিং!”

ডাক দিয়ে ইরাবতী মানে হানিয়ার নানী আর বড় মামীর পাশে গিয়ে বসে বলল “ডার্লিং গো…আজ অবলা বলে কেউ এই অধমকে পাত্তা দিচ্ছে না গোওও শুধুই নির্যাতিত হচ্ছি।”

ভিডিও পচ করে সুভানা বলল “এটা হানিয়ার নানুমণি আর মাম।” বলে ভিডিও চালু করল।

শাবনূর বেগম অস্ফুটস্বরে বলল “ইরু” তারপর জোরে বলল “ঐ মহিলার নাম কী ইরাবতী?”

সুভানা সন্ধিহান কণ্ঠে বলল “জানি না তো! কিন্তু কেনো তুমি কী ওনাকে চিনো?”

–“হ ওরে চিনতে আমার ভুল হইব না। সেই ইরু।”

–“এ্যাঁ তোমার কী হয়? কীভাবে চিনো?”

–“চুপ কর পরে বলতেছি। দেখতে দে…”

তারপর ভিডিওতে একে একে ডান্স পারফরম্যান্স হলো। প্রথমে কণেপক্ষরা ডান্স শুরু করল। বরপক্ষের নাচ শুরু করল “হায়াত-হামজা, নিশাদ-সুভানা দিল্লিওয়ালা গার্লফ্রেন্ড গানে নাচলো।”

ওদের শেষে হানিয়া-ইমন নাচল
“এ ক্যাসা লারকা হে?
এক্যাসা লারকি হে?
এ লাড়তা হে
এ্যাকারতি হে
ঝাগারতা হে, বিগারতি হে
দিবানি হে, দিবানা হে
বাট হি ইজ হে বেস্ট ফ্রেন্ড ইয়ার, বাট সি ইজ এ বেস্টফ্রেন্ড ইয়ার” গানে।

“দিলডুবা, দিলডুবা
মেহেবুবা, মেহেবুবা” গানে হামজা-হায়াত, সুভানা-নিশাদ, হানিয়া-ইমন নাচতে নাচতে বর-কণেকে বড়দের টেনে আনল নাচতে।
তারপর বর-কণেপক্ষ থেকে মেয়েকাজিনগুলো আর কণে নাচলো ‘কারেন্ট লাগা’ গানে। কাপল ডান্স হলো।

সায়েম বলল “হানিয়ার সাথে ছেলেটা কে?”

শাবনূর বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বলল “হের প্রেমিক না-কি?”

সুভানা ঠাস করে টিভি বন্ধ করে বলল “ভুলভাল কথা বলবা না বলছি না। ওটা ওর মামা ওর মায়ের আপন ভাই। হুটহাট বলে দিলে হয়ে গেলো না? আজব!”

–“তুই এতো চ্যাতটাচ্ছ ক্যান?”

–“আমার বান্ধবীকে নিয়ে বলবা তা গায়ে তো লাগবেই।”

–“থাক হইছে তোর বান্ধবী রে কাল আয়তে ক ছুটির দিন। বেড়ায় যায়বোক্ষণ ওর লগে আমার দরকার আছে।”

–“ওর সাথে আবার কী দরকার। ও আসবে না।”

–“কেন আইব না? ফোন লাগা আমি কইতাছি।”

–“ওর ক্লাস টেস্ট আছে সাথে এসাইনমেন্ট ফ্রী সেগুলো তুমি করবা?”

–“সারাক্ষণ পড়ব না-কি! ২ ঘন্টার জন্যে আসলে কিছু হবে না।”

সুভানা চিন্তায় পড়ে গেলো। এই দাদিকে ওর বিশ্বাস হচ্ছে না আবার কী না কী ঘটায় বাজে ব্যবহার করলে ও নিজে কষ্ট পাবে। আবার ইনি না ছোড় বান্দা।
–“কথা দাও ভুলভাল কিছু করবা বা বলবা না।”

–“তুই বেশি না বুইঝা ফোন দিয়া ক। এখনি দে।”

–“আচ্ছা পরে বলব।”

–“না এখন দে আমার সামনে। জোরে দিবি দেহি ছেমড়ি কী কয়! তুই কথা কইতে না পরলে আমারে দে আমি কই।

–“ওফস তুমি কিন্তু বেশি বেশি করতাছ।”

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here