চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।১৫ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
423

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।১৫ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

অক্টোবর রেইন। অক্টোবর মাসের প্রথম বৃষ্টি হচ্ছে বড় বারান্দার টপের গাছগুলো সহ বারান্দার অর্ধেকংশ সেই বৃষ্টির পানিতে ভিজে টইটম্বুর হচ্ছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আঁধার অম্বির খেলা। সেজাদ বাইরের দিকে দৃষ্টি রেখে তাকিয়ে আছে। শীতল বাতাস এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকে। সারাদিন কাজে ডুবে থাকে। মানুষের জীবনে অতীত থাকে সেই অতীত সুখের কীংবা দুঃখের হয়। সারাদিন মানুষ নানান রকমের কাজে ব্যস্ত থাকলেও রাতে এসে একাকীত্ব ঝেঁকে ধরে। সেজাদেরও অতীত আছে সে অতীত দুঃখে ভরা। সেজাদের এখন দুঃখ হয় না। দুঃখের ভরা অতীত মনে করতে চাই না। মেয়েদের থেকে সবসময় দুরত্ব বজায় রাখে।মেয়ে বলতে শাবনূর বেগম, সোনিয়া, সুভানা, লাইজুকে ছাড়া বাইরে দরকারে কারোর সাথে কথা বলে না কেমন ঘৃণ্য লাগে। বিদেশি মেয়েদের প্রতি বিতৃষ্ণা জাগে। শাবনূর বেগম বিয়ের কথা তুললে বাসায় আসা বন্ধ করে দেয়। প্রথম এয়ারপোর্টে দেখার পর তাকিয়ে ছিল অথচ ওর সাথে এমন স্বভাব যায় না। ভুলেও গিয়েছিল তার চেহারাটাও মনে করতে পারছিল না। কয়েক পলকের দেখায় কী কাউকে মনে রাখা সম্ভব! তারপর আবার বাসায় এসে মেয়েটাকে দেখে প্রথমে চিনতে পারল না। জিজ্ঞাসা করল কে? অমনি জ্ঞান হারালো দেখে বিরক্ত লাগলেও ওর বিরক্তি কেটে গিয়েছিল মেয়েটার ভীতিগ্রস্ত দেখে চিনতে পেরেছিল এ্যায়ারপোর্টের সেই মেয়েটা। ওই যে সেদিন রাতে তাকিয়ে থাকলো জ্ঞানহীন মেয়েটার দিকে তারপর থেকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, ওর সম্পর্কিত গল্প শুনতে ইচ্ছে করে। আজ ড্রায়ইংরুমে ও ছিল নিরব দশর্ক সকলে সুভানাকে নানান রকমের প্রশ্ন করলেও ও চুপ করে দেখছিল। হানিয়ার প্রতি সবার এতো আগ্রহের কারণ জানা নেই। সাবার আগ্রহ দেখে ওর আগ্রহ জেগেছিল হানিয়ার সম্পর্কে জানার।

সোনিয়া এসে ভাইয়ের পাশে দাঁড়ালো। বাহু জড়িয়ে ভাইয়ের কাঁধে মাথা রেখে বলল
–“ভাই! এভাবে টি-শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? ঠান্ডা লাগবে তো!”

সেজাদ সে কথার উত্তর দিল না। বলল
–“আপু…”

–“শুনছি!”

সেজাদ কিছু বলল না। সোনিয়া ও চুপ করে থেকে বলল “ভাই, এভাবে কতদিন? বয়স হচ্ছে তোর! তোর কী কোনো পছন্দ আছে? কাউকে ভালোবাসিস? থাকলে বল…”

–“এসব কথা কেনো হচ্ছে? ”

–“মামণি, দাদুমণি তোর আর সায়েমের জন্য মেয়ে দেখছে জানিসই তো! তোর বিয়ে না হলে সায়েমের কীভাবে হবে? ছেলেটার যা স্বভাব হয়েছে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে। মামণি ওকে নিয়ে টেনশনে থাকে।”

–“কোথায় লেখা আছে আমি বিয়ে না করলে ও বিয়ে করতে পারবে না।”

–“বড়ভাইয়ের আগে ছোট ভাইয়ের বিয়ে দিতে নাই সকলে খারাপ ভাবে!”

–“এসব ফালতু কথা বাদ দে আপু। আমার ভালো না।”

–“ওফফ তুই না যাতা ভাই। বিয়ে করে ঘরে লাল টুকটুকে বউ আনবি তখন আর বাইরে মন টিকবে না। জীবনে একটাও গার্লফ্রেন্ড জুটাতে পারলি না!”

–“তাই না-কি! তো মিস্টার. সাঈদ তার বউ ছাড়া কীভাবে আছে? কবে ফিরছিস?”

সোনিয়া মুখ ফুলালো বদ লোকটা গেলো আঠারো দিন হলো তবুও ফেরার নাম নেই। গম্ভীর কণ্ঠে বলল “জানি না ওসব লোকের কথা।”

সেজাদ হাসলো বোন যে তার অর্ধাঙ্গের জন্য অপেক্ষায় আছে সেটা ওর জানা। অবশেষে বোন সুখের ঠিকানা পেলো। সাঈদ লোকটাও যে পাগল তার বোনকে ছাড়া! কাজের মধ্যে, খাবার আগে বউ-বাচ্চার খবর নিতে ভোলে না। ফিরছে না বলে বউয়ের সাথে তার দুপুরে ঝগড়া হয়েছে। সেই থেকে কথা বন্ধ, ফোন বন্ধ। আর সোনিয়াকে ফোনে না পেয়ে সেজাদের কাছ থেকে খবর নেয়। বোনের ছেলেমানুষিতে সেজাদ বেশ মজা পাই।

–“সোহান ঘুমিয়েছে?”

–“হু।”

–“রুমে যা আপু ও একা জেগে গেলে ভয় পাবে সাথে সাঈদ ভাইয়ের সাথে কথা বলে নিস বেচারা কষ্ট পাচ্ছে।”

সোনিয়া লাজুক হেসে বলল
–“তুইও ঘুমিয়ে পড় ভাই। এভাবে এখানে ঠান্ডা লেগে যাবে।”

–“হুম!”

°°°°°°

ভেজা বৃষ্টিমুখর ঘুম থেকে বেশ দেরি করে উঠেছে। সকালে চায়ে বিস্কুট ডুবিয়ে খাচ্ছে সোহান ওর সাথে সায়েমের বিস্কুট নিয়ে মারামারি লেগেছে। ঝগড়া বেশ সিরিয়াস। পেপারকাকার বিস্কুট লাভ সেইফের। আর মাত্র কয়েকটা আছে। বাসায়ও পেপারকাকার বিস্কুট ফুরিয়ে গেছে। এখন দুজনেরই ওটাই খাওয়া লাগবে। সোহান হাত দিয়ে গালে পুরছে আর আরেক হাত দিয়ে পকেটের ভিতরে রেখে দিয়েছে সায়েম বারবার পকেটে হাত দিতে গেলেই সোহান চোখ রাঙিয়ে “স্ট্যাচু” বলছে কিন্তু স্ট্যাচু বলায় কাজ হচ্ছে না তাই শেষ মেষ বিস্কুট বাঁচাতে ঠোঁট ফুলিয়ে “নানুমইয়ে” বলে কান্না জুড়ে দিল। সায়েম বড়বড় চোখ করে বলল “ওরে এক্টিংবাজ, একটা বিস্কুট দে।”

লাইজু সায়েমকে ধমক দিয়ে বলল “কী হইতাচ্ছে সায়েম? বাচ্চা তুই? আমার ভাইটাকে জ্বালাইতেচ্ছিস কেনো? খেতে দে ওকে গলায় আটকাইবে।”

সায়েম সোহানকে ছেড়ে দিল মুখটা ছোট করে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল
–“একটা বিস্কুট দিতে বলো!”

–“এইখানে আয় দুইটা খুন্তির বারি খাইয়া যা।”

সায়েম আর কিছু বলল না চুপচাপ চায়ে চুমুক দিল। সোহান সায়েমের দিকে তাকিয়ে মায়া হলো একটু পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বিস্কুট বের করে অর্ধেক ভেঙে দিয়ে বলল “ছুটুমামাই ইউ ডোন্ট ক্রাই ওকে। এই নাও খাও”

সায়েম বিস্কুটের টুকরোটা নিয়ে চোখের সামনে ধরে বলল “এটা দিয়ে তো আমার পেটের একাংশ ভরবে না। একটা দে মামাইকে।”

–“নো আর দিব না কম হয়ে যাবে। তখন আমার কান্না পাবে।”

–“আচ্ছ আমি কিনে এনে তোকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাবো দেখিস। তোকে দিব না।”

সোহান বের করে দিল। এমন ব্রেনওয়াশ করে সবটা বের করে খেয়ে নিল। সোহান খাওয়া শেষে বুঝতে পেরে কান্নাকাটি জুড়ে দিল। আর সায়েম হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। লাইজু এসে ছেলেকে দু-চার ঘা লাগিয়ে দিয়ে। সোহানের কান্না থামালো। সোহানের কান্না শুনে সুভানার ঘুম ভাঙল। ছুটির দিনে এটা বাড়ি না-কি বাংলাদেশের মাছের বাজার ও গুলিয়ে ফেলে। প্রতিবার ভাবে ঘুমাবে কিন্তু আর ঘুম হয় না।

ব্রেকফাস্ট টেবিলে সকলে একসাথে হলো। সকলে টুকটাক কথা বলছে। সবচেয়ে বেশি সোহান বলছে সায়েম আজ ওর সব বিস্কুট খেয়ে নিয়েছে এটা সবার কাছে নালিশ জানাচ্ছে। সবাই সায়েমকে বকে দিচ্ছে দেখে ওর মজা লাগছে৷ সুভানার মনে চোর ভাব বিদ্যামান আড়চোখে বারবার শাবনূর বেগমের দিকে তাকাচ্ছে কালের সন্ধ্যা বেলার ব্যপারে কিছু বলছে না দেখে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল তাড়াতাড়ি নাস্তা করতে লাগল। হঠাৎ শাবনূর বেগম বলেন “ছেমড়ি কহন আসবে কইল সুভা?”

সুভানার বিষম লেগে গেলো। শাবনূর বেগম সন্দিহান হয়ে তাকালো। সুভানা কাল হানিয়ার কাছে ফোন দিলেও এখানে আসার কথা বলে নি কী বলবে মাথায় আসল না তাই হড়বড় করে মিথ্যা বলল “ওর আসলে আজ কাজ আছে। অন্যদিন আসবে বলল।”

শাবনূর বেগম রেগে গেলো বলল
–“বড় মানুষের কথা শুনে না। আমি কী ওরে খাইয়া ফেলমু না-কি দুই ঘন্টার জন্যে আসলে কী হইব। ফোন লাগাই দে আমি ঐ ছেমড়ি রে বলতেছি।”

সুভানা শুকনো ঢোক গিলে বলল “বাদ দাও দাদুমণি।”

–“তোর সমস্যা ডা কনে বল তো! দে ফোন”

সুভানা বোকার মতো হেসে বলল
–“তোমার কিছু বলতে হবে না আমিই বলছি। আসলে কাল রাতে ভুলে গেছিলাম মনে ছিল না।”

শাবনূর বেগম খেপে গেলো বলল
–“কইছিলাম তোরে আমার সামনে ফোন দিতে দেস নাই এহন দে শুনুম ঐ ছেমড়ি কী কয়।”

সুভানা ভয় পেয়ে ফোন দিলো। শাবনূর বেগমকে বেশি খেপালে তারই ক্ষতি মা’কে উল্টো পাল্টা বুঝিয়ে বিয়েও দিয়ে দিতে পারে।
–“ফোনডা জোরে দে”

সেজাদ শান্ত দৃষ্টিতে বসে আছে। মেয়েটার কথা উঠলেই ওর শান্ত মন অশান্ত হয়ে উঠছে কেনো বুঝতে পারছে না।

হানিয়া ঘুমাচ্ছিল কাল রাতে একটা ঘটনা ঘটে গেছে ওর ঘুম হয় নি তার দারুণ মাথায় প্রচন্ড ব্যথা ঔষধ শেষ চশমা আনতে মনে নেই। ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে। হানিয়া ফোন ধরতেই সুভানা বলল “হ্যালো, হানিয়া।”

–“হুম।”

–“তোর কী আজ কোনো কাজ আছে?”

–“হুম।”

–“কী রে এখনো ঘুমাচ্ছিস তুই?”

–“হুম।”

–“কেনো শরীর খারাপ না-কি?”

–“মাথা ব্যথা দিনের বেলা চোখে চাঁদ-তারা-সূর্য একসাথে দেখছি। কেনো কী হয়েছে বলে ফেল”

–“ওহ তোর যা রুমমেট তুই বেঁচে আছিস এটাই অনেক ঔষধ খাস নাই?

–“ঐ বেয়াদব দুইটার কথা বলিস না। কতবড় শয়তান ওফ্ফ গালিও দিতে পারি না আমার হয়ে তুই গালি দিয়ে দিস।”

–“কেনো কী করছে?”

–“আরে আমি কতবার নিশেষ করছি। রুমে স্মোক, ড্রিংক করো না আমার এসব স্মেইল সহ্য হয় না। আমার কথা শুনছিল না তাই হলসুপারকে বলেছি। ওদেরকে অর্নিং দিয়েছে। ওরা চুপচাপ মেনে ছিল। মাথা ব্যথায় ঘুমিয়ে পড়ছিলাম বেয়াদব মাতাল দুইটা আমার মুখে কসটেপ দিয়ে হাত বাঁধছে।”

সুভানা আঁতকে উঠে বলল
–“ছাড়া পাইলি কেমনে? ওরে বোইন ঠিক আছিস তো?”

–“হুম, হাত বাঁধা থাকলে পা তো খোলাই ছিল না। মাতাল দুইটা হুদাই মার খাইল।”

–“হুম আমি তো ভুলে গেছি তুই কে? আর আজ বাইরে কী কাজ তোর? কোথায় যাবি?”

–“পার্সপোর্ট অফিসে যাবো।”

–“তুই সত্যি সত্যি চলে যাবি?”

–“উহুম কাজ আছে তোকে পরে বুঝিয়ে বলবো।”

–“আচ্ছা শোন আমাদের বাসায় আসবি হ্যাঁ?

–“কেনো?”

–“এমনিতেই বেড়াতে।”

–“আজ না অন্যদিন।”

শাবনূর বেগমসহ সকলে চুপচাপ শুনছিল ওদের কথা ও না বলায় শাবনূর বেগম খ্যাঁক করে উঠে বলল “ঐ ছেমরি আইবানা কেন? দুই ঘন্টার জন্যে আসলে কী মহাভারত অশুদ্ধ হইয়া যাইবো? আহো তোমার লাগে আমার দরকার আছে!”

শাবনূর বেগমের কথা শুনে হানিয়া শোয়া থেকে ধরপড়িয়ে উঠে বসল
–“এ্যাঁ! আমার সাথে আপনার আবার কী দরকার?”

–“দরকার আইলেই দেখতে পাবে এহনি রেডি হইয়া আইসা পড়ো। খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা আছে।”

–“আপনি শিওর আমার সাথে আপনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা আছে? কিন্তু কেনো? আই থিংক আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে”

–“এতো বেশি কথা বলো কেনো আইলেই দেখতে পাবে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here