#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।১৭ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না
হানিয়া সোহানের সাথে শাবনূর বেগমের গেলো। ওনি ব্যাথাতুর মুখোভঙ্গি করে পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে। তা দেখে হানিয়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেসা করল “আপনার পায়ে কী হয়েছে দাদুমণি?”
শাবনূর বেগম চমকে তাকালো হানিয়ার দিকে। এই প্রথম হানিয়া ওনাকে ‘দাদুমণি’ বলে সম্মদধোন করল। হানিয়া পা হাত দিতে গেলে ওনি আর্তনাদ করে বলল “না না পায়ে হাত দিয়ো না”
হানিয়া হাত গুটিয়ে নিয়ে বলল “কী হয়েছে, না বললে বুঝব কী করে?”
শাবনূর বেগম হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল “বয়স হইতাছে তো অনেকক্ষণ পা না নাড়াইনোর কারণে ঝি ঝি লেইগ্যা গেছে তাই তো তোমহারে এইহানে ডাকলাম। তুমি দাঁড়াইয়া রইছ ক্যাঁন বও।”
হানিয়া বসল ঠিক ওনার পায়ের কাছে সোহান ততক্ষণে খাটে উঠে শাবনূর বেগমের শখের পানের বাটা নিয়ে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। হানিয়া ওনার পায়ের হাত দিয়ে হালকা করে মালিশ করে দিতে দিতে বলল “ডক্টর চেকাপ করাবেন হাত, পা বেশি অবশ হলে সমস্যা এখন টেম্পোরারি প্যারেসথেসিয়া হচ্ছে পারমানেন্টলি হতে সময় নিবে না।”
শাবনূর বেগম হানিয়ার কথা বুঝতে পারল না বলল “কী কও?”
“আপনার সাধারণত পা বা হাতের ওপর লম্বা সময় চাপ পড়লে সাময়িক যে অসাড় অনুভূতি তৈরি হয় সেটিকেই আমরা ঝি ঝি ধরা বলে থাকি। এই উপসর্গটির কেতাবি নাম ‘টেম্পোরারি প্যারেসথেসিয়া’, ইংরেজিতে এটিকে ‘পিনস অ্যান্ড নিডলস’ও বলা হয়ে থাকে। এটা সাময়িক সময়ের জন্য হচ্ছে কিন্তু বয়স হয়েছে ডক্টর দেখান। একেবারে প্যারালাইস বা অবশ হয়ে যেতে পারে। একটু বেশি হাটাচলা করবেন।”
শাবনূর বেগম আর্তনাদ করে বলল
–“হাই হাই কী কও! ডাক্তার দেখানো লাগবো আজকেউ নাতিকে বলন লাগব।”
–“আচ্ছ। আমাকে কেনো ডেকেছিলেন? কী বলবেন?”
শাবনূর বেগম কোনো ভনিতা ছাড়াই বলল “তোমার নানীর নাম কী ইরাবতী?”
হানিয়া চমকে বলল “হ্যাঁ। কিন্তু আপনি কীভাবে জানলেন?”
শাবনূর বেগম হেসে বলল
–“আমার বান্ধবী আর আমি জানব না তার নাম কী?”
হানিয়া কিছু বুঝতে পারছে না শাবনূর বেগম কীভাবে জানলো তার নানীর নাম? বান্ধবীই যদি হয় তাহলে ওনার বান্ধবীই যে হানিয়ার নানী ওনি কীভাবে জানলো?
–“কিন্তু আপনি কীভাবে জানলেন আপনার বান্ধবীই আমার নানুমণি?”
সুভানা উপস্থিত হলো। শাবনূর বেগম সুভানাকে ইশারা করে দেখিয়ে বলল
–“কেনো সুভা ভিডিও দেখাইলো।”
হানিয়া জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকালো সুভানা আমতাআমতা করে বলল “তোর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছিল তাই”
–“হ। এহন তোমার নানীর লগে আমারে কথা কওয়াই দাও তো! কতদিন আমাগো দুই সখীর দেখা হয় না কথা হয় না।”
শাবনূর বেগমকে ইমশোনাল হয়ে সেন্টি খেতে দেখে হানিয়া, সুভানা চোখাচোখি করলো সুভানা ঠোঁট উল্টটালো। হানিয়া দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ল। হানিয়া গল্প শুনেছে ইরাবতীর কাছে তার একটা সখী ছিল। সারা গ্রাম দাপিয়ে বেড়াতো। কিন্তু সেই বান্ধবী যে ইনি তা জানে না নামটাও জানে না। হানিয়াকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে শাবনূর বেগম তাড়া দিয়ে বলল “কী হইলো বইসা আছো ক্যান? তাড়াতাড়ি ফোন লাগাও।”
হানিয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ফোন নিলো নরওয়েতে ঠিক ১২টা বাজে আর বাংলাদেশে ৫টা। ও ফোন দিলো বাজতেই ধরলো যেনো অপেক্ষায় ছিল।
ইরাবতী বেগম আজ বেজায় রেগে আছেন। আজ কয়েকদিন পরে হামজা, হায়াত, ইফাজ স্কুলে গিয়েছিল। সেখানে ইফাজ আর হমজা মারপিট করেছে। গার্জিয়ান কল করেছিল ইমন গিয়েছিল। বাড়িতে এসেও কেউ কিছু বলে নি ওদের হাতেপায়ে আঘাত দেখে ইরাবতী যা বোঝার বুঝে গেছে। কয়েকঘন্টা বকার পর হানিয়াকে ফোন করার জন্য ফোনটা হাতে তখনি ওর ফোন আসলো। ফোন ধরে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল “ফোন দিয়েছেন মহারাণী। ভালো করেছেন।”
ইরাবতীর এতো ভালো করে কথা বলতে দেখে হানিয়া হাসার চেষ্টা করে বলল “কী হয়েছে?”
–“কী হয় নি আমারে বুঝা ভাই দুইটা মারামারি কইরা বাড়ি ফিরছে আজ।”
হানিয়া হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে কথা ঘুরালো এখন এসব কাহিনী শুনলে আরো রেগে যাবে। তাই বলল “নানুমণি ওসব বাদ। শুনো আমার কথা…”
হানিয়ার কথা শেষ করতে না দিয়ে ইরাবতী বলল
–“বাদ দেওয়া যাবে না। তুই শোন…”
হানিয়া বলল
–“নানুমণি তোমার সখীকে খুঁজে পেয়েছি। তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে। তুমি কথা বলবে?”
ইরাবতী বেগম থামলো কিছু বুঝতে পারছে না। হানিয়া বলল “ভিডিও কল দিচ্ছি ধরো।”
শাবনূর বেগম বলল “ও কী বলল?”
–“আপনিই কথা বলে নিন।”
ভিডিও কলে দু’জন দু’জনকে দেখে আবেগে কেঁদে দিলো। সুখ দুঃখের গল্প শুরু করে দিল। সুভানার কাছে বিরক্ত লাগছে বিধায় হানিয়াকে টেনে নিয়ে বাইরে নিয়ে যেতে যেতে বলল “বল কী খাবি? আর ঐ মেয়ে দুটোর সাথে কী এখনো রুম শেয়ার করছিস? হলসুপারকে কী জানাস নাই?”
–“হুম জানিয়েছি আমার রুম চেজ্ঞ করে দিয়েছে সাথে বাঙালি রুমমেট জানি না কেমন শুধু নাম আর ক্লাসটাই জিজ্ঞেসা করছিলাম তবে সিনিয়র”
–“ওহ ভালো আর কোনো সমস্যা হলে চটপট ফোন দিবি আমি তোর একমাত্র নায়ক উদ্ধার করে আনবো”
–“ভাব নিস না তোর ফোনটা দে।”
–“কেনো?”
–“জানি না। মামার কাছে ফোন দিয়ে শুনি কী হয়েছে। নানুমণি তো আমাকে বকলো।”
–“নে।”
ড্রইংরুমে এখনো সেজাদ, সায়েম বসে আছে ওরা আসতেই। সায়েম বলল “আরে ব্যাহেনা কেমন আছো?”
–“বিন্দাস। আপনি?”
–“ঝাক্কাস।”
সেজাদ ওদের কথার ধরণ দেখে বিরক্ত নিয়ে বলল “যতসব, থার্ড ক্লাস ওয়ার্ড!”
হানিয়া চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। সায়েম ঠোঁট উল্টে বলল “ব্রো আমি এসব পারি না ওদের দু’জনের কাছ থেকে শিখেছি।”
সুভানা হানিয়ার হাতে অয়েন্টমেন্ট লাগাতে লাগতে বলল “আমাদের দুজনের সাথে থাকো আরো অনেক কিছু শিখে যাবে।”
সেজাদ কিছু বুঝতে না পেরে বলল “ওদের দুজনের সাথে থাকিস মানে?”
–“আরে ব্রো, ছোট ব্রো তো গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বিকালে লেকে ঘুরছিল সেদিন তখন দেখা হয়ে যায়। সারাবিকাল সন্ধ্যা ঘুরেছিলাম।”
সেজাদের জেলাস হচ্ছে শান্ত থেকে সব গুছিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে বলল “ওহ গুড।”
বলে চলে গেলো৷ সায়েমও ফ্রেশ হবে বলে গেলো। হানিয়া বলল “তোর এই বড়ভাই এমন ক্যান এনার প্রবলেম কোথায়? রোবটের মতো বিহেভিয়ার। কেমন করে তাকিয়ে থাকে মাঝে মাঝে মনে হয় এনার কোনো ফিলিংস নাই। আজকে মনে হয় একটু হাসতে দেখলাম।”
–“আরে ভাইয়া একটু অন্যরকম শান্তশিষ্ট, ইন্ট্রোভার্ট মিশতে চাই না। বাট ব্রো অনেক ভালো।”
–“বুঝলাম।”
হানিয়া ইমনের কাছে ফোন দিয়ে জানলো। ইফাজ, হামজা কেনো মারামারি করেছে? কতোটা আঘাত পেয়েছে, মেডিসিন লাগিয়েছে কিনা, ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন। ভাইবোন দু’টোকে নিয়ে সর্বদাই টেনশনে থাকে ও ভালো লাগে না ওর। ওরা তিনজন বেশিরভাগ সময় একসাথে ঘুমাত। হানিয়া মাঝক্ষাণে আর দু’জন দুপাশে থেকে হাতপা তুলে আরামে ঘুমাতো। হানিয়া মাঝে মাঝে ঘুমাতো না ওদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে থাকতো থেকে থেকে দীর্ঘ শ্বাস ফেলত। নিজের বাবার দেওয়া শেষ কথাটা এখনো ওর কানে বাজে, জীবন্ত লাগে। যতই সারাদিন হাসি-মজার মধ্যে থাকুক না কেনো দিন শেষে একা।
চলবে ইনশাআল্লাহ