চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।১৮ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
347

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।১৮ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

মেঘ মলিন বিকালের বিষণ্ণ আকাশটাতে পাখিদের উড়াউড়ির। আজ প্রকৃতির মন খারাপ থাকলেও নিশাদের মন আজ বেজায় খুশি। অবশেষে হানিয়ার মন গলাতে সক্ষম হয়েছে। আবার একটা চান্স দিয়েছে। এক’দিন আগে ফোন দিয়ে ছিল। নিশাদের তখন ধুম জ্বর প্রিয়শীর যন্ত্রনায় কাতর হয়ে পড়েছিল হায়াত-হানিয়া কেউ ফোন ধরে না। দুঃশ্চিন্তায় ওর জ্বর চলে এসেছে। কিন্তু এতো জ্বরেও হুশ আছে হানিয়ার ফোন পেয়ে খুশিতে ডগমগ হয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে। হানিয়াকে মনের সব দুঃখ, রাগ উগ্রে দিল। হানিয়াও সবটা শুনলো। ওর যতই রাগ থাকুক না কেনো ওর নিশাদের ওপরে মায়া হলো। যতোই হোক ভাই তো দূরে ঠেলে রাখতে পারে না। মান-অভিমানের পর্ব শেষ করে হানিয়া শর্ত জুড়ে দিল ‘(।)মন দিয়ে পড়াশোনা শেষ করতে হবে। (।।) রাগ কমাতে হবে, আর উদ্ভট আচার-আচরণ, মারপিট করা যাবে না। (।।।) হায়াতের ওপরে কোনো রকম প্রেশার ক্রিয়েট করা যাবে না।’ নিশাদও সব মেনে নিয়েছে। একটু আগেই বাসা থেকে বের হয়েছে হোস্টেলে যাবার জন্য ওর বাসায় থাকলে পড়াশোনা হয় না মনটা হায়াত, হায়াত করে। কিন্তু বন্ধুদের মাঝে থাকলে ওদের পড়া দেখলে পড়তে ইচ্ছে করে। দু’দিন ক্লাস করতে পারি নি তার দরুন পিছনেও গিয়েছে। ও হোস্টেলে যাওয়ার আগে ইমনদের বাসায় আসল।

ইমন, হায়াত, হামজা, ইফাজ দুপুরের ঘুম থেকে উঠে। বসে আছে। ইমন কয়েকবার ইরাবতী বেগমকে ডাকল কফির জন্য ওনি উঠল না। ইফাজের বাবা-মা ওর নানাবাড়ি গিয়েছে। ইরাবতীকে উঠতে না দেখে ইমনই সবার জন্য কফি বানাতে গেলো। তখনি নিশাদের আগমন। হায়াত নিশাদকে দেখে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইল। ইমন দুধ গরম করতে দিয়ে এসপ নিশাদকে দেখে বলল “আরে ভাগ্নে কেমন আছিস? শরীর, মন ভালো তো?”

নিশাদ হেসে বলল
–“একেবারে ফাটাফাটি।”

–“আচ্ছা বস কফি আনি।”

নিশাদ ডার্ক চকলেট কয়েকটা টেবিলের ওপরে রেখে বলল “তোদের সবার। আর এই ইয়ারপটটা তোর হামজা”

–“আমার? হঠাৎ?”

–“হানিয়া দিলো। গিফট।”

–“গিফট? হঠাৎ?”

–“আমি কি জানি।”

ইফাজ ভারাক্রান্ত মনে বলল
–“বড়প্পি আমাকে ভুলে গেলো?”

নিশাদ হায়াতের বাহু ধরে টেনে বলল “চল তোর সাথে কথা আছে।”

হায়াত ভয়ে চুপ করে আছে। আগে নিশাদকে এতো ভয় লাগত না তো! হঠাৎ আজ এতো ভয়ের কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। হামজা বলল “ওর সাথে আবার কী কথা?”

–“সেটা আমার আর তোর বোনের কথা শালাবাবু। তোমরা এই চকলেটগুলো নিয়ে খুশি থাকো।”

••••
দুপুর দুইটা বেজে গেছে কিন্তু শাবনূর বেগম আর ইরাবতী বেগমের কথা শেষ হচ্ছে না। হানিয়া কয়েকবার বলেছে “নিজের ফোন দিয়ে কথা বলুন। আমার ফোনটা দিন আমি চলে যায়।”

কিন্তু না ওনি ফোনও দিবে না হানিয়াকে যেতেও দিবে না। ও ভিতরে ভিতরে রাগে ফেটে যাচ্ছে বয়সে বড় বলে কিছু বলতেও পারছে না। কী বলবে? এই মহিলাতো সুবিধার না নিজের কথাকে প্রধান্য দিয়ে গো ধরে বসে আছে।

সুভানা হানিয়ার মনোভাব বুঝতে পেরে হেসে বলল “আহা, সোনা গো আমার। থাক কষ্ট পাস না। আজ এখানেই থাক।”

হানিয়া রাগে দুঃখে কান্না পাচ্ছে বলল “তুই আমার পরিস্থিতি জেনেও এমন বলছিস? এতো এসাইনমেন্ট, কাল ক্লাস টেস্ট, পৌশু ল্যাব টেস্ট অথচ আমি কিছু পারি না আমার কী হবে? এই সেমিস্টারে ফাস্ট এক্সাম আর বিশ দিন পর। ফেইল করব দেখিস।”

কথাগুলো বলতে বলতে ওর চোখ ছলছল করে উঠলো।

সোনিয়া সোহানকে লান্স করিয়ে দিচ্ছে বেচারার ক্ষুদা পেয়েছে। কিন্তু বাচ্চাটা এক জায়গায় না বসে ছোটাছুটি করে খাচ্ছে। লাইজু সকলের লান্সের জন্য ডাইনিং টেবিল সাজাচ্ছে। সায়েম, সেজাদ নিচে নেমে আসলো। হানিয়া চুপচাপ বসে আছে আর সুভানা ওর দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে আছে। দাদীর ওপরেও মেজাজ খারাপ হচ্ছে। কী করবে বুঝতে পারছে না। একদিকে দাদী তো একদিকে বান্ধবী দুজনের চাপাচাপিতে আজ ও চ্যাপ্টা। সায়েম বলল “হোয়াট এ্যাপ গার্লস?”

হানিয়া কিছু বলল না জুতা খুলে সোফার ওপরে পা তুলে মাথা এলিয়ে বসে আছে। সুভানা বিরশ মুখে বলল “খুবই বাজে।”

সেজাদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল হানিয়ার দিকে। সায়েম বলল
–“কেনো আবার কি হলো?”

সুভানা কিছু বলার আগে ফোন বেজে উঠল। ইমন অডিও কল দিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে। ও হানিয়ার দিকে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করে কথা বলল। ইমন বলল “তোর সাথেও হানিয়া কথা বলছে না? তাহলে ও কার সাথে কথা বলছে? লাস্ট ১৫ মিনিট ধরে কল করছি। ও কী প্রেম-ট্রেম করছে না-কি কিছু জানিস?”

সুভানা বিরশ মুখে বলল “আর ফোন ওকে আজ আর ফোনে পাবে না।”

–“মানে? ঐ আমার ভাগ্নে প্রেম করছে? আর আমি জানি না!”

–“আরে দূর ও তো আমার পাশে বসে ফেইল কী করে আটকাবে সেই টেনশনে আছে। আর তুমি বলছ প্রেম।”

–“দাঁড়া ভিডিও কল দি!”

সুভানাকে কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে কল দিয়ে বলল
–“মানে কী? আমারে বুঝা হয়েছে কী? ওর ফোন বিজি আবার এদিকে ও ফেইল আটকাবে কী করে সেই টেনশন করতেছে। মানে টেনশন করলে ফোন বিজি থাকবে কেনো?”

–“দূর ওর সাথে কথা বলো…নে মামা”

হানিয়া নির্জীবের মতো ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে বলল “তোর মা’কে ফোন কাটতে বল”

–“মানে? এক্টচুয়ালি কী হয়েছে? বলবি আমাকে?”

–“এখন সব বলতে গেলে রাত কাবার হবে। তোর মা সখীরে পেয়ে দিন দুনিয়া ভুলে লাস্ট দুই ঘন্টা ফোনে গল্প করতেছে। এই এদিকে হিটলার ওদিকে বুড়ি কেউ ফোন কাটে না।”

–“বুড়িটা তোর নানী আর হিটলারটা কে?”

–“জানি না।”

–“ওহ ওকে এই জন্য এতো ডাকাডাকি করছি মা পাত্তাই দিচ্ছে না ফোন রাখ দেখছি।”

ওপাশ থেকে ইফাজ, হামজা ফোনের ওপরে হামলিয়ে পড়ে বলল “না না ফোন কেটো না ইম্পর্ট্যান্ট কথা”

–“কী?”

ইফাজ অভিযোগ তুলে বলল “তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না আপি। ছোটপ্পি ঠিকি বলে তুমি শুধু হামজা ব্রোকে বেশি ভালোবাসো।”

হানিয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। হামজা এ্যাপল কোম্পানির ইয়ারপট দেখিয়ে বলল
–“এটা তুই দিয়েছিস আপি?”

হানিয়া আকাশ থেকে পড়ার মতো করে তাকিয়ে বলল
–“আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে আমি একটা পাঠাবো? পাঠালে ৪টা পাঠাব। বাট কে বলল আমি পাঠিয়েছি।”

হামজা মাথা চুলকে বলল “ভাইয়া আসছিল। একটু আগে হোস্টেলে যাচ্ছে তাই দেখা করতে আসছিল। তোদের ঝগড়া ঝামেলাঝাটি শেষ? হায়াতের সাথেও কী জানি বলছিল শুনতে পাই নি”

–“বাহঃ গাধাটা তোকে ঘুষ দিয়ে গিয়েছে। তুই ভাইয়ের হয়ে সুপারিশ করছিলি, ভাইয়ের জন্য দরদ উথলায় পড়ছিল তাই দয়া করে ফোন ধরেছিলাম তাই মাথায় উঠে বসেছে সাইকো শালা মানুষ হবে না।”

হঠাৎ করে ফোন কেটে গেলো। সুভানা ওর পাশে বসে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে সেজাদ, সায়েম ওদের দু’জনের কান্ড দেখছে বসে বসে। সুভানা বলল “তোদের দু’জনকে আমি বুঝতে পারি না। এই ভাইবোনের কত আহ্লাদ, ভালোবাসা আবার দেখো উড়াধুড়া ঝগড়া, মারপিট আবার এর ওর ওপরে কথা, দোষ চাপিয়ে দিয়ে উধাও হয়ে যাস।”

–“খুব মজা লাগে না এসব দেখতে?”

–“খুব। বাট বুঝে বেবস। ফিউচার বোনের হাসবেন্ড এতো টর্চার করিস না বেচারাকে”

–“জ্ঞান দিস না। আচ্ছা ভাইয়া বলুন তো এখন যদি কোনো সাইকো লাভার এসে আপনার বোনকে বিয়ে করতে চাই আপনি বোনকে দিয়ে দিবেন।”

সেজাদ ওদের দু’জনের কথা বিরক্ত লাগছিল তাই ফোন দেখছিল। কিন্তু ওদের কথা কানে আসছিল। হঠাৎ হানিয়ার প্রশ্ন শুনে চোখ তুলে তাকালো। সায়েম মাথা চুলকে ভাবছে কী উত্তর দিবে তার মধ্যে সুভানা ইমাজিনেশনে চলে গিয়ে বলল “সাইকো লাভার হলে আর কিছু লাগতো না রে কত ভালোবাসত আমাকে।”

–“তোর মাথা। সাইকো অর্থ যার কোনো মন বা মাথায় কোনো গিলু নেই,, একথায় পাগল এসব। বুঝলি এরা ডেসপারেন্ট হয়ে গেলে যখন যা খুশি করতে পারে। ওরা যাকে ভালোবাসে অন্য কারো হতে দিবে না বলে তার লাশ ওরা রেখে দেয়।”

সায়েম ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলল “রিয়েলি? এমন সাইকোও আছে।”

–“ইয়েস। আর আপনার এতো গার্লফ্রেন্ড ভাইয়া সাইকো লাভারের হাতে পড়েন না যেনো বলা তো যায় না। একটু কেয়ারফুলি গার্লফ্রেন্ড চুস করবেন।”

সায়েমের কলিজা কামড় লাগল যেনো। আঁতকে উঠে বলল “না না এসব হবে না। সব ছেড়ে দিব।”

সুভানা, হানিয়া মুখ লুকিয়ে হাসলো। সেজাদও ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে না হাসার বৃথা চেষ্টা করলো।
শাবনূর বেগম তড়িঘড়ি করে এসে বলল “এই ছেমরি ফোন কাইটা গেলো কেনো? আবার ফোন দাও তো!”

হানিয়া খুশি হয়ে গেলো ফোনটা নিয়ে বলল “আপনার ফোন দিয়ে কথা বলুন। আমি আপনার ফোনে নানুর নম্বর সেভ করে দিয়েছি।”

–“বেশি কথা না বললে ফোন লাগাও”

হানিয়া ফোনে দেখলো। ইমনের এসএমএস দিয়েছে “ওয়াইফাই অফ করে দিয়েছে তাই ফোন কেটে গিয়েছে।”
–“কারেন্ট নাই তাই ওয়াই-ফাই ও নাই তাই ফোন যাচ্ছে না।”
–“আচ্ছা আবার পরে দিও।”
লাইজু বলল “আম্মা অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে। আসেন খাবেন সবাই। হানিয়া এসো।”

–“না আন্টি আমি… ”

–“না শুনছি না মামণি এসে পড়ো।”

সকলে খাওয়ার শেষ করে হানিয়া চলে যাবার কথা বললে শাবনূর বেগম যেতে দিবে না তার কথা এখানে থাকতে হবে। সমস্যা গুরুতরো। সেজাদ খেয়ে রুমে গিয়েছিল। সুভানা সেজাদকে গিয়ে বলল “ব্রো তুমি দাদুমণিকে থামাও হানিয়া এখন না গেলে ওর বিপদ কাল কেউ ঠেকাতে পারবে না। প্লিজ বোঝাও তুমি আমার কথা শুনছে না”

সেজাদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে গিয়ে বলল “দাদুমণি, স্টোপ নাউ। ওনাকে যেতে দাও মানুষের সুবিধা অসুবিধা কাজ থাকতে পারে তুমি অবুঝের মতো আঁটকে রাখলে তো হবে না।”

সেজাদ শাবনূর বেগমকে বোঝানোর পর হানিয়াকে যেতে দিতে রাজি হলো। তবে আবার তাড়াতাড়ি আসতে বলেছে। হানিয়া হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বিরবির করে বলল “ন্যাড়া বেল তলায় একবার যায় তাই হিটলারের কথায় একবার আসছি বারবার আসব নাকি! জীবনেও না।”

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here