চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।২৩ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
341

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।২৩ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

মধ্যরাতে প্রতিনিয়ত রহস্যময়ীর ফোনালাপের ইমনের বেঁধে রাখা মনটা প্রেম পিপাসায় ছটফট করে উঠলো। তার নাম বলে নি তবুও ইমন তাকে চিনে নাম জানে। অথচ সে অপর পাশের ব্যক্তিটা তার সম্পর্কে সব কিছুই জানে। আর সে শুধু থাকে চিনে। এতোদিন চেনা থাকলে-ও তার প্রতি ও তেমন আগ্রহ প্রকাশ করে জানা হয় নি।

–“প্রতিরাতে একজন পুরুষ মানুষকে ফোন দেন কোন কারণে? উদ্দেশ্যে কী?”

–“উদ্দেশ্যে বড়সড়! এই যে একজন সিঙ্গেল মানুষ-ই তো একজন সিঙ্গেল মানুষের কষ্ট বুঝবে।”

–“মানে?”

–“এই যে আপনি ও সিঙ্গেল, আমি ও সিঙ্গেল। সিঙ্গেলে সিঙ্গেলে – মিঙ্গেল।”

ইমন আকাশ থেকে পড়লো যেনো ‘মিঙ্গেল’ ওদের প্রেমটা শুরু হলো কখন? মৃদু চিৎকার করে বলল “হোয়াট! কী সব বলছে?”

–“আরে চিৎকার চেচামেচি করছেন কেনো? আপনার বাসার লোকজন জেনে যাবে না? এতোরাতে ছেলে প্রেম করে।”

ইমন রেগে বলল “আপনার মাথায় সিট উড়ে গেছে? আজব কথা বলেন কেনো? প্রেম করলাম কখন?”

–“আপনি ইন্জিনিয়ারিং পাশ করলেন কেমন করে বলুন তো! মাইনাসে মাইনাসে প্লাস হয়। ঠিক তেমনই, সিঙ্গেলে সিঙ্গেলে মিঙ্গেল হয়। ম্যাথ করতে করতে যেমন প্রুভ হয়ে মিলে যায়। তেমনই কথা বলতে বলতে প্রেম হয়ে মিলে যায়। এই একটা সাধারণ ম্যাথ আপনার মাথায় থাকে না?”

অপরপাশের কথা শুনে ইমনের মাথা ঘুরে উঠলো। হতভম্ব হয়ে গেলো বলল
–“জাস্ট… জাস্ট সেট আপ মিস.রুহি!”

ফোনের অপর পাশ থেকে মজা নিয়ে মুখে হাত চেপে শব্দহীন হাঁসচ্ছিল ইমনের মুখে নিজের নাম চমকে মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো। ভয়ে কয়েক সেকেন্ড পর ফোন কেটে দিল। ইমন হেসে ফেললো। না চাইতেও মুখ দিয়ে নামটা বেরিয়ে গেছে। কিন্তু ও দেখতে চাইছিল। মেয়েটা কী করে আর কী কী বলে, কত দিনই বা পরিচয় লুকিয়ে ফোন দেয়?

ইমন ফোন দিলো কয়েকবার ধরলো না কেটে ফোন অফ করে দিলো। ইমন বার্তা পাঠালো “আমার সাথে অফিসের পর পার্কে দেখা করবেন।” ও জানে না আদেও রুহি এ বার্তা দেখবে কিনা!

তারপর দু’দিন রুহি লাপাত্তা না ফোনে পাওয়া যাচ্ছে আর না অফিসে আসছে। আর না ওর খবর কেউ জানে। ইমন চিন্তিত হলো কাজে মন দিতে পারলো না বসের কাছে ঝাড়িও খেলো। মেয়েটা আচমকা ভয় পেয়ে হাওয়া হয়ে যাবে ও বুঝতে পারি নাই। তাহলে আর এভাবে ধরা দিতো না। কয়েকদিন পর রুহি অফিসে আসলো চোখমুখের বেহাল অবস্থা। আজ আর অন্য দিনের মতো মুখ ভর্তি মেকাপ নেই। ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে ইমনের কেবিনে নক করল। ইমন কাজ করছিল নক করাই বলল ‘কামিং’

রুহি রুমে ডুকে দাঁড়িয়ে রইল। ইমন কাজে ব্যস্ত কয়েকমিনিট পরেও রুমে ঢোকা লোকটি কথা না বলাই ওর তাকালো। রুহিও ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো। ও তাকাতেই দৃষ্টির মিল ঘটলো। ইমনের সকল কাজ থেমে গেলো। রুহি মাথা নিচু করে কাচুমাচু করতে লাগলো। ওকে কোনো কথা বলতে না দেখে ইমনই বলল “মিস. রুহি! এই, ক’দিন আসেন নাই কেনো?”

রুহি মিনমিন করে বলল “অসুস্থ ছিলাম, জ্বর আসছিল।”

ইমনের হাসি পেলো রুহির চোখ-মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও অসুস্থ ছিল। ধরা পড়ে জ্বরে পড়ে গেলো মেয়েটা! আহারে, ইমনের মায়া হলো ওকে অস্বস্তিতে না ফেলে বলল
–“মিস. ফোন নামক একটা জিনিস থাকে। সেটা দিয়েও ইনফর্ম করতে পারতেন। এর পরের বার থেকে ইনফর্ম করবেন। ম্যানেজার হওয়ার জন্য বসের জবাবদিহিতার সকল উত্তর আমাকেই দিতে হয়। আশা করি বুঝবেন।”

রুহি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বলল “জি পরের বার থেকে বলব। আসছি।”

রুহি চলে যেতে ধরলে। ইমন ডাকলো। রুহি কলিজা ছ্যাৎ করে উঠলো। বলল “জি”

–“অফিস শেষে পার্কে আসবেন। আপনার সাথে কথা আছে। অপেক্ষায় থাকবো”

রুহি ভয়ে ভয়ে সম্মতি জানালো। আজ ও সব কিছুর জন্য প্রস্তুত হয়েই এসেছে।

নভেম্বর মাসে ছ’টার আগে সন্ধ্যা নামে পাঁচটার দিকে সন্ধ্যা নামার প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। ওদের অফিস নয়টা থেকে শুরু হয়ে পাঁচটার দিকে শেষ হয়। আজও তাই হলো। রুহি আগে এসে একটা বেঞ্চে বসলো। এটাই অফিসের কাছে প্রথম পার্ক। চারিদিকে কপোত-কপোতীর, বন্ধুদের মেলা। রুহি মনে মনে ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে না জানি ইমন কী বলবে। ইমন আসলো তার কিছুক্ষণ পর বাইক নিয়ে ওকে দেখে রুহি দাঁড়িয়ে পড়লো। মনে মনে নিজের কথা গোছাতে লাগলো। ইমন বেঞ্চে বসে এদিক ওদিক তাকালো। বলল “কী খাবেন?”

–“কিছু খাবো না স্যার।”

ইমন ভ্রু কুঁচকে বলল
–“স্যার! আমরা না প্রেম করছি।”

রুহি কাচুমাচু করে বলল “সরি স্যার। আর এমন করব না।”

ইমন শান্ত কণ্ঠে বলল “বসুন।”

রুহি দূরত্ব নিয়ে বসলো। ইমন আবারও শান্ত কণ্ঠে বলল “মিস. রুহি! আপনি আমাকে ভালোবাসেন? নাকি মজাই করছিলেন?… আমি স্ট্রেট কথা বলতে পছন্দ করি। তাই স্ট্রেট কথা শুনতেও পছন্দ করি। আপনার থেকে সেটাই আসা করছি।”

রুহির বুকের মধ্যে ধুকপুকানি বেড়ে গেলো এখুনি বুকটা ফেটে যাবে মনে হচ্ছে। সময় নিয়ে বলল “ভালোবাসি বললে কী আমার মন ভেঙে দিবেন?”

ইমন রুহির দিকে তাকিয়েই রইল বলল
–“সেটা আপনি বলার পর। আমার কিছু কথা থাকবে সেগুলো মানতে পারলে ভেবে দেখবো।”

ও ইমনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
–“বাসি, ভালোবাসি!”

ইমন দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নড়েচড়ে বসে বলল
–“আমার একটা মেয়ের সাথে প্রেম হয়েছিল…”

কথাটা শুনেই ও চোখ তুলে তাকালো ইমনের দিকে বুকের ভিতরে ধক্ করে উঠলো। রুহি শক্ত কণ্ঠে বলল “ছিল এখন তো নেই, তাই না? তাহলে আমাকে কী এখন আপনার প্রেমের গল্প শুনতে হবে বসে বসে?”

ইমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল “আমার জীবনের একটা অংশ যেটা এখনো আমার সাথে জুড়ে আছে।”

রুহির কিছু বুঝতে পারলো না বলল “আপনি না বললেন প্রেম হয়েছিল তাহলে এখনো কেনো জুড়ে আছে? আপনি ওকে এখনো ভালোবাসেন?”

–“আমার কথার মাঝে বাঁধা দিচ্ছেন। পুরোটা না শুনে ভুলভাল প্রশ্ন করবেন না।”

রুহি অধৈর্য্য হয়ে উঠলো বলল
–“আচ্ছা, আচ্ছা বলুন শুনছি।”

–“ঢাবির ২য় বর্ষ পড়ি তখন নবীনদের আগমন। আগে কখনো মেয়েদের প্রতি আমার ইন্টারেস্ট জাগেনি। আসলে সময় পাই নি। মেয়েটা আপনার মতো দূর থেকে চোখে চোখে রাখতো। নাম জেনি। মাঝেমধ্যে সিনিয়র হওয়ায় একটু হেল্প চাইতো। আস্তে আস্তে ওর সাথে আমি জড়িয়ে যায়। আমি বা ও কেউ-ই তখন কাউকে ভালোবাসি কথাটা বলি নি। আমার ক্লাস ছিল কিন্তু সেটা ক্যান্সাল হয়ে যায়। আমি জেনিকে খুজতে যায় সেখানে ওর বন্ধুদের সাথে ওকে স্মোক করতে দেখি। আকাশ থেকে পড়লাম যেখানে আমি ছেলে হয়ে স্মোক করি না সেখানে ও মানতে পারছিলাম না। ও আমাকে দেখে এগিয়ে আসলো। জিজ্ঞেসা করলাম কেনো করে এটা ও বলল ও ছোট থেকে আমেরিকায় বড় হয়েছে ওখানকার কালচার অভাস হয়ে গেছে। আমি একটু অধিকার নিয়েই বললাম আর এসব খাবে না ওও মেনে নিলো। হুট করে আমাকে প্রপোজ করে আমিও এক্সেপ্ট করি। আস্তে আস্তে বুঝতে পারি ও অনেক উগ্র স্বভাবের ও আমাকে কন্টিনিউসলি ফিজিক্যাল হওয়ার জন্য ফোঁস করতে থাকে…”

ইমন থামতেই রুহি মাথানিচু করে ফেললো একটা মেয়ে এমন করেছে ছেলের সাথে লজ্জা রাগ লাগলো অন্য দিকে ভয় ইমন তারপর কী করেছিল। ও আবার বলতে শুরু করলো

–“ও সাথে ঝগড়া লেগে থাকতো দূরত্ব বাড়তে লাগলো। শুধু আমাদের জড়িয়ে ধরা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। ও আমার ফ্যামেলি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেসা করত না আমি জিজ্ঞাসা করতাম তখন ও এড়িয়ে যেতো। এমন একটা সময় আমার মৃত্যুতে আমার পুরো পরিবার ভেঙে পড়ি। আপু আগেই মৃত্যু হয়েছিল। দুলাভাই আর বিয়ে করে নি। তিনজন সন্তান অনাথ হয়ে গেলো। আমি প্রেমে পড়ে ওদের সাথে আমার দূরত্ব বেড়ে গেছিলো। ওদের সাথে সময় কাটানো হতো না। মাঝে মাঝে জেনির রাগ ওদের ওপরে ঝাড়তাম খুব রাগারাগি করতাম। ওদের বাবা চলে যাওয়ায় কেমন শান্ত হয়ে গেলো ওরা। সেই দুষ্টমি ফাজলামি বন্ধ করে ভদ্র বাচ্চা হয়ে গেলো। আমার কাছে আবদার করাও বাদ দিয়ে দিলো। আমি সহ সবাই ওদের সাথে সময় কাটিয়ে আগের মতো করার চেষ্টা করছি। জেনিকে সময় দেওয়া হতো না। বেড়াতে গেছিলাম ওদের নিয়ে মধু তখন এসএসসি এক্সাম শেষ রেজাল্ট দিবে সেই টেনশনে ওর মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে। রেস্টুরেন্টে গিয়ে আমার বাহু জড়িয়ে ধরে ও কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ছিল। জেনি কোথা থেকে এসে ওকে চ’ড় মা*রলো। জেনি মধুকে না চিনলেও মধু চিনতো। আমি বলেছিলাম ও দেখা করতে চাইত কিন্তু আমি বারণ করে দিতাম। চড় খেয়ে ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। আমি ওকে বিয়ে করলে ওটা ওর মামী হবে মামার বউকে তো আর মারা যাবে না। আমার আর ভাগ্নেকে জড়িয়ে বাজে কথা বলতে লাগলো। আমি চুপ থাকতে পারলাম না সিনক্রিয়েট হয়ে গেলো। আমি সম্পর্ক শেষ করে দিলাম। কিন্তু মধুকে যতটুকু স্বাভাবিক করতে পেরেছিলাম সেদিনের পর ওর সাথে আমার দূরত্ব বাড়লো। মামা, মামা করে না। জেনিও আমার পিছু ছাড়ে না আমার মা’কে এসে ওর আমার সম্পর্কে উল্টো পাল্টা বলল। পরে অবশ্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ও ছিল মানসিক রুগী যা চাই তা ওর পেতে হবে। ওর ফ্যামেলিকে জানালাম ওনারাও জানতো মেয়ের সম্পর্ক আমেরিকায় নিয়ে গিয়ে টিটমেন্ট শুরু হলো কিন্তু ও যা তাই এতো বছরেরও ঠিক হলো না। আমাকে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখলে আমার নামে উল্টো পাল্টা ছড়ায়। আপনাকেও বলবে। বি রেডি ফর দ্যাট।”

রুহি ভাবুক হয়ে প্রশ্ন করলো “আর মধু ও আপনার সাথে এখন কথা বলে না?”

–“সি ইজ মাই বেস্ট ডটার এন্ড বেস্ট ফ্রেন্ড। আপনার সম্পর্কে শুনেছে। ও বলেছে ভেবে দেখতে।”

রুহি আগ্রহ নিয়ে বলল “কী ভাবলেন?”

–“ভেবে দেখলাম আপনাকে মেকাপ ছাড়াই বেশি সুন্দর লাগে।”

রুহি লজ্জা পেলো। ইমন বলল “আমার মা আপনাকে তেমন পছন্দ করে না রুহি।”

রুহি আহত হলো। ইমন বলল “আপনার এতো মেকাপের জন্য বোধহয়।”

রুহি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল
–“মেকাপ ছেড়ে দিবো। শাশুড়ী মাকেও পটিয়ে ফেলবো। যদি শাশুড়ী মায়ের ছেলে রাজী থাকে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here