#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।২৫ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না
হায়াতের কাল ক্যামেস্ট্রি শেষ টেস্ট পরিক্ষা পড়াশোনা শেষ করে। হায়াতের প্রেম পিয়াসু মনটা ছটফট করে উঠলো। কতদিন কথা হয় না নিশাদের সাথে ফোন দিলেও সাহেব ধরে না কেটে দেন মহাব্যস্ত মানুষ কি-না! তবু্ও ফোন দেয় ও ভালো লাগে আবার রাগও লাগে কত পাষাণ্ড হলে এতোবার ফোন দেওয়ার পরও ধরে না। তার মতে ফোন দিলে প্রেম, ঝগড়াঝাটি হবে তাতে দুজনেই পড়াশোনা চাঙ্গে উঠে যাবে ফলে পরিক্ষা খারাপ হবে। হায়াত ফোন দিল নিশাদকে।
নিশাদ আর তার ছেলেমেয়ে উভয় বন্ধুরা মিলে হোস্টেল থেকে লুকিয়ে শীতের রাতে চা খেতে এসেছে। ওদের কথার মাঝে নিশাদের ফোন বেজে উঠল। নিশাদ ফোন বের করে ‘crazy girl’ লেখা দেখে চা খেতে খেতে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে রইলো। ফোন বাজতেছে ধরছে না তাকিয়ে আছে দেখে ওর ফ্রেন্ডদের কথা বলা বন্ধ করে একজন বলল “ফোন ধরছিস না কেনো? ঝগড়াঝাটি করছিস না-কি মামা?”
আরেকজন বলল “আরে মামা ওর কথা বলিস না মেয়েটা ফোন দিতে দিতে পাগল হয়ে যায় আর এই হা*রা*মজা*দা ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে।”
নিশাদ হেসে বলল “ওর এক্সাম চলছে ফোন ধরলে ওর কথা থামবে না। আমি রাগারাগি করলে ওর মন খারাপ হবে পরিক্ষা খারাপ হবে আমি সেটা চাই না।”
ওর বন্ধুরা হৈ হৈ করে উঠলো বাহবা দিয়ে বলল “আদর্শ প্রেমিক!”
ওর মধ্যে ডলি নামক মেয়েটা নিশাদকে পছন্দ করে এসব দেখে ওর মনে জ্বলুনি ধরলো। নিশাদের কাছ থেকে ফোন কেঁড়ে নিয়ে হেসে বলল “তুই কথা বলতে না পারিস আমরা তো বলতেই পারি।”
সকলে সাই জানালো। ডলি বলল “চল প্রাঙ্ক করা যাক পিচ্চি ভাবীর সাথে প্রেমিকা সেজে কথা বলি দেখি কি রিয়াকশন দেয়।”
ওদের প্লানট পছন্দ হলো সাই জানালো। নিশাদ নাকচ করে বলল “নো নো ওর এক্সাম চলছে এসব বললে ওর ওপরে প্রেশার পড়বে।”
একজন বলল “আরে থাম তো কিছু হবে না এখনি তো আবার সত্যিটা বলে দিবো। জাস্ট মজা করবো”
ডলি বলল “ হ্যাঁ আর তোর ওপরে বিশ্বাস কতটুকু এটাও আমরা দেখি।”
নিশাদ না না করছে ওর কয়েকটা বন্ধু ওকে চেপে ধরে রাখলো। ওরা ফোন রিসিভ চুপ করে রইলো। হায়াত ক্লান্তিতে শুয়ে পড়ছিল ফোন রিসিভ হতেই খুশিতে লাফিয়ে উঠে বসলো। খুশিতে গদোগদো হয়ে বলল “হ্যালো…হ্যালো শুনছো?”
হায়াতের কণ্ঠ শুনে নিশাদের অশান্ত মনটা শান্ত হয়ে গেলো। ছটফট থেমে গেলো। ডলি বলল “কে বলছেন?”
মেয়েলি কণ্ঠ শুনে হায়াত আকাশ থেকে পড়লো নম্বর চেক করল আদেও সঠিক নম্বরে ফোন দিয়েছে কি-না! না, নাম্বার তো ঠিকি আছে! হায়াতের অজানা ভয়ে বুকের হৃদয়পিন্ড ধক করে উঠলো ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল
–“কে?”
–“আপনি ফোন দিয়েছেন আপনি জানেন না কাকে ফোন দিয়েছেন? আজব তো! আমার হাসবেন্ডকে কন্টিনিউসলি ফোন দিয়ে যাচ্ছে।”
হায়াতের চোখ জোড়া ছলছল করে উঠল কাঁপা গলায় বলল “আপনার হাসবেন্ড? নাম কী?”
–“ নিশাদ শেখ”
হায়াতের চোখ দিয়ে অশ্রু কণা গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো গলা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল “সরি, মাই মিস্টেক!”
হায়াত ফোন কেটে থম মেরে বসে রইলো আবার ফোন আসতে কেটে বন্ধ করে দিলো। বালিশে মুখে চেপে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো সে শব্দ বাইরে গেলো না রুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইলো। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো “বেইমান! ধোঁকাবাজ! ঠকবাজ! সার্থপর! তুই আমার মন নিয়ে খেললি! কী শান্তি পেলি?”
হায়াত উঠে ফোন অন করে নিশাদকে সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিলো। তারপর চুপচাপ শুয়ে রইল। চোখ দিয়ে অবিরাম অশ্রু ধারা গড়াতে থাকছে। হায়াতের হঠাৎ মনে হলো নিশাদের সাথে কথা বলা, ভালোবাসতে থাকা, সবটা বোনের থেকে লুকিয়েছে বোনকে ঠকিয়েছে। ভুল করেছে। হায়াত ফোন দিল বোনের কাছে। আবেগী অবুজ মন হুট করেই সব কাজ করে ফেলছে। এর পরিণতি কী?
হায়াত ফোন কেটে দিতেই ওরা নিশাদকে ছেড়ে দিলো। নিশাদ বিরক্ত নিয়ে বলল “হয়েছে স্বাদ মিটেছে?”
–“না এখনো মেটেনি। আবার ফোন দে এবার তুই কথা বল দেখি কী বলে!”
নিশাদ নিজেও মনে মনে ভয় পাচ্ছে। প্রথম বার ফোন দিতেই কেটে দিলো। তারপর ফোন দিতেই ফোন বন্ধ। নিশাদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো। পর পর ফোন দিতে থাকলো। একবার ডুকলেও পরের বার ব্যস্ত বলতে থাকছে মানে ব্লক করেছে। বন্ধুরা চিন্তায় পড়ে গেলো। ডলি মনে মনে শান্তি পেলো। নিশাদের মতো সুন্দর ড্যাসিং, ব্রাইট ফিউচার ছেলে যে কোনো মেয়েরই ভালো লাগবে। ডলি বলল “কী রে এই তোদের ভালোবাসার বিশ্বাস?”
–“জাস্ট সাট আপ, ও ছোট অবুঝ আবেগি। ওর সাথে আমি মেপে কথা বলি পাছে কোনো ভুল নাা হয় আর তোরা কী করলি এটা?”
–“আমরা কী জানতাম তোর শিশু প্রেমিকা কোনো রিয়াক্ট না করে ব্লক করে দিবে!”
নিশাদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল “রাত হয়েছে চল হোস্টেলে ফিরি।”
ওরা চলে গেলো। নিশাদ চিন্তিত হলো এতো রাতে ইমন, হামজা বা কাউকে ফোন দিয়ে হায়াতের খবর জানতে চাইলে কে কী ভাববে? বন্ধুদের নম্বর থেকে ফোন দিবে ভেবে দিলো না ও ধরবে না আর ধরলেও ব্লক করবে। এদিকে হায়াতের একটা খোঁজ না পেলে ও শান্তি পাচ্ছে না। নিশাদ অনেক ভেবে হামজাকে ফোন দিলো। হামজা পড়া শেষ করে কেবলি শুয়েছে চোখ লেগে আসতেই ও ধড়ফড়িয়ে উঠলো। এতো রাতে নিশাদের ফোন দেখে বিরক্ত হলো রিসিভ করে বলল “হ্যালো”
–“হামজা তুই কোথায়?”
–“এতো রাতে মানুষ নিশ্চয়ই মানুষজন হাডুডু খেলবে না!”
–“বেশি কথা বলস তুই নিজের বোন কী করে দেখে আমাকে বলল”
–“ঘুমাচ্ছে না হলে পড়ছে।”
–“তোকে দেখে এসে আমাকে জানতে বলছি।”
–“দূর রাখোতো জানাচ্ছি।”
হামজা ফোন রেখে বিরবির করে বলল “প্রেম করবে ঝগড়াঝাটি করবে আর সাফার করব আমি এই ঠান্ডায় শুলে উঠতে ইচ্ছে করে!”
হামজা হায়াতের রুমে উঁকি দিলো লাইট অফ ড্রিম লাইটের আলোই দেখলো চোখ বন্ধ করা ও আর কিছু না বলে চলে গেলো। ও চলে যেতেই হায়াত চোখ খুললো। ও হানিয়ার কাছে ফোন দিয়ে না পেয়ে নিজেই ফোন অফ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো আদেও ঘুমানো সম্ভব কিনা ও জানে না। হায়াতের রাতে ঘুম হলো না সকালে খেতেও পারলো না। এক্সাম হলে খাতায় নাম, রোল লিখে বসে থেকে কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর করলো কিন্তু রাতে না ঘুমানোর জন্য সব প্রশ্ন উল্টো পাল্টা হয়ে গেলো। শেষে এক ঘন্টা ত্রিশ মিনিটে খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে গেলো হামজাকে ইশারায় বাড়ি চলে যাচ্ছে বলল। এতো তাড়াতাড়ি হায়াতকে পরিক্ষার হল থেকে বের হতে দেখে ও চিন্তিত হলো। হায়াত চলে গেলো বাড়িতে। হামজা এক্সাম শেষ করে বের হয়ে নিশাদকে মাক্স, ক্যাপ পড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে যা বোঝার বুঝে গেলো। ও এগিয়ে গেলো।
–“তোর বোন কই?”
–“এক্সাম দিয়ে চলে গেছে এক ঘন্টা আগে। এক্সামের সময় অনন্ত কাহিনী অফ রাখতা না জানি কী লিখেছে।”
–“চুপ কর জ্ঞান দিস না। তোর বোনকে গিয়ে বল আমি দেখা করব। পার্কে আসতে বল”
–“পারব না তোমাদের পিয়নগিরি করতে।”
–“তুই কিন্তু কাহিনী করতেছিস ফেল্টুস”
–“আমি ফেল্টুস না তুমি ফেল্টুস”
–“চুপ কর শা*লা যা বলেছি করবি না হলে বাসায় চলে যাবো।”
–“পার্কে সিনক্রিয়েট হবে তার চেয়ে বাসায়ই চলো”
নিশাদ ভাবলো ভেবে পছন্দ হলো কথাটা তারপর দু’জন মিলে গল্প করতে করতে বাসার দিকে রওনা দিলো। বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজাতে ইফাজ এসে দরজা খুলে দিলো বেচারা এখন রিলাক্স মুডে আছে। সবার আগে পরিক্ষা শেষ উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। নিশাদ বসার ঘরে কাউকে দেখতে না পেয়ে সোজা হায়াতের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। হামজা, ইফাজ দুজন সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিজেদের কাজে গেলো। দরজা লাগানোর শব্দে হায়াতের নিঃশব্দে কান্নাকাটি করাই ভাঁটা পড়লো কম্বলের নিচে ভালো করে চোখমুখ মুছে ঘুমানোর ভান ধরলো ও জানে না কে এসেছে কিন্তু যে-ই আসুক ওর কথা বলার মুড নাই।
–“আমার ঘুম, খাওয়া, পড়াশোনা হারাম করে দিয়ে ওনি আরামে ঘুমাচ্ছে।”
নিশাদের কথা শুনে হায়াত লাফিয়ে উঠে বসলো। নিশাদ তার ছোট অবুঝ আবেগি প্রেমিকার চোখ-মুখ দেখে রাগ করে থাকতে পারলো না। গিয়ে ওর পাশে বসলো।
–“তুমি এইখানে কী করছো যাও এখান থেকে তোমাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।”
হায়াতের কথায় কান না দিয়ে নিজেই বলল
–“এই কয়েকঘন্টাই চোখ মুখের কী অবস্থা করছিস।”
–“আমি মরে গেলে তোমার কী? তোমার তো বউ আছে।”
–“আমার একটাই বউ। সে মরে গেলে আমি কী নিয়ে থাকবো বলতো! কাকে ভালোবাসবো?”
–“জানি না। আমার চোখের সামনে থেকে যাও প্লিজ”
–“এতো অবিশ্বাস? যে যা বলবে বোকার মতো বিশ্বাস করে নিবি? তুই আমাকে চিনিস না?”
হায়াত বোকার মতো তাকিয়ে রইল। ও তো কান্না করতে ব্যস্ত ছিল এসব কথা মাথায় আসে নি। তাহলে কী ভুল বুঝেছে ও?
–“ওটা আমার বন্ধুরা তোর সাথে প্রাঙ্ক করেছে। আর তুই বোকার মতো বিশ্বাস করে নিলি? আমাকে বকতি, ঝগড়া করতি সবটা চুপচাপ মেনে নিলি?”
হায়াত ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলো ও ভয় পেয়েছিল নিশাদকে হারানোর ভয়। তাই তো সবটা না বুঝে করছে। নিশাদ ওকে আগলে নিলো। দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ও নিজেও ভয় পেয়ে গেছিলো। আবেগে না ভুল ডিসিশন নিয়ে ফেলে এটা ভেবেই অস্থির হয়ে গিয়েছিল।
চলবে ইনশাআল্লাহ