চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।২৯ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
324

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।২৯ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

সকালে উঠে হানিয়া সর্দি কাশিতে নাক বন্ধ হয়ে আছে। গাল দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে। সকলে মিলে চা-কফি খেতে বসেছে। সেজাদ হানিয়ার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে দেখে ওর গা জ্বলে গেলো। কিন্তু সকলের সামনে কিছু বলল না। কাল রাতের পর আর কেউ কারোর সাথে কথা বলে নি। শাবনূর বেগম হানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল

–“তোমার নানী কইল তুমি না-কি দেশে ফিরবা! তা কবে যাচ্ছো?”

–“এখনো জানি না। কয়েকদিনের মধ্যে ইউনিভার্সিটি ছুটি দিবে তখন ইচ্ছে আছে।”

–“আমরাও যাইবো শীতে পিঠাপুলি না খাইলে শীত শীত মজা পাওয়া যায় না-কি! তাইলে তোমার আর সুভানার ছুটি হইলেই একসাথে প্লেনের টিকিট কাটবো নে।”

সাইফুল এহসান বলল
–“হ্যাঁ মা তাই করো। শীতে আসল মজাই হচ্ছে রসের পিঠা আহা অমৃত!”

সোনিয়া বলল
–“বাবা তোমার সুগার… ”

–“চুপ কর তো! পিঠার খাওয়ার সময় সুগার ফুগারের কথা বলবি না।”

সোহান নানুর কথা শুনে বলল “আমিও পিতা খাবো। আমাকেও দাও নানুভাই”

সুভানা দাঁত কেলিয়ে বলল
–“তোমার সম্মানীয় পিতা মহাশয় তোমার পাশেই বসে আছে। টুপ করে খেয়ে নাও।”

সায়েম তাল মিলিয়ে বলল “কিন্তু তোমার পিতা অনেক লম্বা তোমার পেটে ধরবে না।”

সাঈদ বলল “আমার ছেলেকে ভুলভাল বোঝানো থেকে দূরে থাকো শালাশালীরা”

হানিয়া উঠে উপরে গিয়ে নিজের জিনিস পত্র গুছিয়ে নিলো। আজই চলে যাবে। হানিয়া কি হয়েছে বুঝতে পারছে না সেজাদের ওপরে অযথাই রাগ হচ্ছে। কেনো হচ্ছে বুঝতে পারছে না। লোকটা যে মিচকে শয়তান সেটা আর বুঝতে বাকি নেই। নাইলে সবার সামনে চুপচাপ শান্তশিষ্ট আবার তার সাথে আড়ালে কথা বলে অসভ্যতামি করে!

সকালের ব্রেকফাস্ট করে ছেলেরা যে যার রুমে চলে গেলো তাদের কাজে যাবে। হানিয়া চলে যাবার কথা উঠাতে শাবনূর বেগম বেঁকে বসলো কিছুতেই যেতে দিবে না। হানিয়া এই মহিলাকেও বুঝতে পারে আসলে তাকে যেতে দিতে চাই না আবার এদিকে তাকে সহ্য করতে পারে না। শাবনূর বেগম ইরাবতীকে ফোন দিয়ে জানালো ওনি হানিয়াকে আরো কিছুদিন থাকতে বললে ও রেগে বলল

–“এই জন্যেই আমি আসতে চাই না। এদিকে আমাকে সহ্য করতে পারেন না আবার আসলে যেতে দিতে চান না। এখানে থেকে কী করবো আমি? আমার পড়াশোনা নাই? দেশে গেলে আমি কতটা পিছিয়ে পড়ব জানেন আপনি? আমার পড়া আপনি করে দিবেন?”

–“আমি তোমারে সহ্য করতে পারি না? এমন একটা কথা বলতে পারলা?”

–“যেটা সত্যি সেটাই বলেছি। আপনি আমার প্রবলেমটা বুঝতে পারছেন না। যার জ্বালা সেই বোঝে!”

–“যাও, যাও। তোমারে আর আটকাবো না। রেডি হইয়া নাও। তোমারে এবাড়িতে আটকানোর ব্যবস্থা করতাছি।”

শাবনূর বেগম কী ভেবে রাজি হয়ে গেলেন। প্রথম কথাগুলো জোরে বললেও শেষের কথাগুলো আস্তে বলল। হানিয়া বুঝতে না পেরে বলল
–“কী বললেন?”

–“কইলাম গুছাইয়া না-ও, যাও আমার কথা তো শুনবানা।”

ওদের কথার মাঝে সেজাদ এসে ভ্রু কুঁচকে বলল “কী হয়েছে চিৎকার চেচামেচি করছ কেনো?”

হানিয়া কিছু না বলে উপরে চলে গেলো। সুভানা বলল “দাদুমণি আর হানিয়া একটু ঝগড়া করছিল আর কী!”

সেজাদ চমকে বলল
–“মানে? কেনো?”

–“হানিয়া চলে যাবে কিন্তু দাদুমণি যেতে দিবে না সেজন্য”

–“ওহ”

ওরা রেডি হয়ে নিচে আসলো। সেলিম এহসানের শরীরটা খারাপ লাগছে তাই সে আজ অফিসে যাবে না। সুভানাও যাবে না আজ ওর তেমন ক্লাস নেই। সায়েম হানিয়া চলে যাবে দেখে বলল
–“তুমি ভাইয়া আর চাচুর সাথে যা-ও তোর ইউনিভার্সিটির সামনে দিয়েই যাবে একটা মিটিংয়ে।”

–“না শুধু শুধু কষ্টের দরকার নাই আমি যেতে পারব সমস্যা নাই।”

সাইফুল এহসান বলল “সে কী কষ্ট কিসের মামণি? একই রাস্তায় যাচ্ছি আমাদের সাথে চলো।”

হানিয়া কিছু বলতে পারলো না। সেজাদ আর সাইফুল এহসান সামনে বসলো। হানিয়া পিছনে একা বসলো। কিছু সময় চুপচাপ যাচ্ছিল সাইফুল এহসান নিরবতা ভেঙে কথা হানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল “মামণি তোমার বাবা কী করে?”

হানিয়া কিছু সময় চুপ থাকে। সেজাদ মিররে ওর দিকে তাকিয়ে বাবাকে ইশারায় কিছু জিজ্ঞেসা করতে বারণ করলো তিনি ছেলের কথা বুঝলো না তিনি তো হানিয়ার সম্পর্কে কিছু জানে না হানিয়া বলল “সিআইডি অফিসার ছিল শত্রুদের শহিদ হয়েছে।”

সাইফুল এহসান এবার ছেলের ইশারার কারণ বুঝলো। সাইফুল এহসান আবার বলল “তোমার মা?”

–“সিঁড়ি থেকে পড়ে মারা গিয়েছে।”

–“সরি মামণি তোমাকে হার্ট করে ফেললাম।”

–“না না আঙ্কেল। এটার নরমাল।”

–“তোমরা কয়ভাইবোন?”

–“তিন ভাইবোন। দু’বোন আর একটা ভাই।”

–“কে বড়?”

–“আমিই!”

–“ওরা দুষ্টু নাকি? তোমাকে জ্বালায়?”

–“জ্বালায় না দু’জন দু’রকম। টুইন ওরা। বোনটা শান্ত ও চুপচাপ থাকবে ওর মনের কথা আমাকে বুঝে নিতে হবে না নাহলে ইমোশোনাল হয়ে কথা বলবে না। আর আমার ভাই ইমোশনাল, জেদি ও যেটা বলবে সেটা না শুনলে বা করলে আমাকে যে কী কী প্যারা দিবে। মাঝে মাঝে ব্যালেন্স করতে কষ্ট হয় বাট আই উইল ম্যানেজ”

ওদের কথার বলছে সেজাদ চুপচাপ শুনছে কথার মাঝে হোস্টেলের সামনে চলে আসলো। হানিয়া বিদায় নিয়ে চলে গেলো। রুমে এসে দেখলো রাত্রি নাই জবের ডিউটিতে গেছে। হানিয়া এতোক্ষণ আটকে রাখা কান্নাটা বের করে ফেললো। সন্তানের সামনে বাবাকে খুন হতে দেখা যে কত কষ্ট বেদনাদ্বায়ক সেটা কাউকে বলে বোঝানো যায় না। চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেদিনের বিভীষিকাময় দৃশ্য…

~ফ্ল্যাসব্যাক~

সেদিন বুধবার হামিদ আহমেদ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিল। আহছানউল্লা আহমেদ স্টুডিওতে আর রাবেয়া আহমেদ নিজের নতুন ব্যবসা নিয়ে তখন চট্টগ্রামে গিয়েছে। হায়াত, হামজা টিচার এসেছে ওরা নিজেদের রুমে পড়ছে। বাড়ির একজন কাজের লোক এই পাঁচজন ব্যথিত কেউ নেই। কলিং বেল বাজতেই কাজের কাজের মহিলা গোলাপি দরজা খুলে দিল। দেশের খাদ্য মন্ত্রী হাবিবুর রহমান এসেছে সাথে কালো পোশাক পড়া আরো লোকজন। ওদেরকে বসতে দিয়ে হামিদ আহমেদকে ডাকলো। উপর থেকে লোকজনকে দেখে হামিদ আহমেদ চিন্তিত হলো। কি করতে এসেছে সে ওনি বুঝতে পারছে। ততক্ষণে হামজা-হায়াতের পড়া শেষ টিচার চলে গেছে ওরা বইখাতা গুছিয়ে রাখছে। হামিদ আহমেদ ওদের রুমের দরজার সামনে এসে ওদের জন্য আনা খাবারগুলো দিয়ে বলল
–“বাসায় অফিসের লোকজন এসেছে নিচে আসবে না।”

ওরা বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো মাথা নাড়ালো। হামিদ আহমেদ তবুও সামনে থেকে দরজা লাগিয়ে দিলো। নিচে নেমে এসে হাত মিলিয়ে বলল “কী সৌভাগ্য আমার খাদ্য মন্ত্রী আমার বাসায় ধন্য হয়ে গেলাম।”

হাবিবুর রহমান হাসলেন বলল
–“আপনার মতো নামকরা অফিসারের সাথে দেখা করে ভালো লাগলো।”

–“কী খাবেন চা নাকি কফি?”

–“বাঙালিরা চায়ে আটকায়!”

হামিদ আহমেদ গোলাপিকে নাস্তা আনতে জানালেন। হাবিবুর রহমান বলল
–“আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না তাই সোজাসাপ্টা কথায় আসি কি বলেন অফিসার?”

–“হ্যাঁ অবশ্যই বলুন কী বলতে চান?”

–“আমি জানি আপনি খাদ্য ভেজাল ও খাদ্যের মধ্যে রোগ ছড়ানোর কেসটাই এগিয়ে গেছেন। অনেক তথ্যই পেয়েছেন। আপনি কেসটা থেকে সরে যান”

–“কেনো বলুন তো?”

–“আপনার ভালের জন্যই বলছি।”

–“নিজের ভালো ভাবি না আমি। যেটা অন্যায় সেটা অন্যায়ই!”

হাবিবুর রহমান হাসলেন হেসে বক্সখুলে এগিয়ে দিলো। সেখানে টাকার ব্যান্ডেলে ভরা।
–“আপনারা অফিসাররা টাকায় আটকান। এটাতে হবে না-কি আরো লাগবে?”

হামিদ আহমেদ মনে মনে রাগে ফেটে পড়লো। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে প্রশ্ন করল
–“মানুষজনকে অসুস্থ করে কী লাভ আপনার?”

–“আফিসার এই ছোট্ট বিষয়টা বুঝতে পারলে না? বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা মাত্র। *** দেশের মন্ত্রী আমাকে অফারটা করে তারজন্য টাকাও পাচ্ছি দেশের ভালোর জন্যই কাজ করছি”

–“এটাতে তো আপনার পরিবারের লোকজনেরও ক্ষতি হতে পারে।”

–“সেটা আপনার ভাবার বিষয় নয়। আশা করি আপনি সরে আসবেন”

–“আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন স্যার। টাকা দিয়ে অন্য কাউকে কিনে নিতে পারলেও আমাকে পারবেন না।”

–“শুনেছি আপনার তিনছেলে মেয়ে। বড় মেয়েটাকে খবরের কাগজে দেখেছিলাম। ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে দেখলাম।”

হামিদ আহমেদ ছেলেমেয়েদের কথা উঠতে মনে মনে ভীত হলেন বলল
–“কি বলতে চাইছেন আপনি?”

ওনি হেসে বলল “আপনি বুদ্ধিমান মানুষ নিশ্চয়ই ভেঙে বলতে হবে না।”

হামিদ আহমেদের তখনই চোখে পড়লো হানিয়া বাসায় ডুকছে। হাবিবুর রহমান ও তাকালো। সাদা আইন-ই কাগজ এগিয়ে দিলো বলল “সাইন করুন অফিসার। নাহলে আপনার মেয়ে এখানেই আছে দেখছেন তো!”

হানিয়া তখন সারাদিন প্রাকটিসে থাকে। বাংলাদেশের মধ্যে ক্যারাটেতে প্রথম হওয়ায় কদিন পর দিল্লিতে খেলতে যাবে। সামনে আবার কলেজ এডমিশন। প্রাকটিস, কোচিং শেষে ফিরে বাসার সামনে এতো গাড়ি দেখে অবাক হয়েছিল। বাসার ভিতরেও মানুষ জন। হামিদ আহমেদ সচারাচর বাসায় অফিসের লোকজন আনে না। তিনি অফিস অফিসের জায়গায় আর ফ্যামেলি ফ্যামেলির জায়গায় রাখেন। ভিতরে এসে বাবাকে খাদ্য মন্ত্রীর সাথে কথা বলতে দেখলো মনে মনে ভাবলো হয়তো খুব দরকারে এসেছে।

–“আরে মামণি যে কেমন আছো?”

–“জি ভালো। আপনি কেমন আছেন?”

–“আমার ভালো থাকার কারণ তোমার বাবার কাছে তিনি যত তাড়াতাড়ি কেসটা স্লভ করবে ততই ভালো হয়ে যাবো।”

হানিয়া কিছু বুঝতে পারলো না। হামিদ আহমেদ শক্ত হয়ে বসে আছে তার ছেলেমেয়েরা যে তার কাজের জন্য বিপদে আছে বেশ বুঝতে পারছে। তার একটা ভুলের জন্য সব শেষ হয়ে যেতে পারে এখনই। আবার একা এতোগুলো লোকের সাথে পেরেও উঠবে না। হামিদ আহমেদ রেগে বলল “ওপরে যাও”

পাপার রেগে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারলো না। মন খারাপ হয়ে গেলো। রুমে চলে গেলো। হাবিবুর রহমান হেসে বলল “ভয় পেলেন নাকি অফিসার?”

সে শক্ত কণ্ঠে বলল
–“নাহ”

ওনি মজা পেয়ে বলল
–“তা বেশ, তা বেশ! তাহলে সাইনটা করুন।”

–“সাদা কাগজে সাইন করব না। হামিদ আহমেদ এতো সহজে ভয় পাই না। আর সত্যিটা কতদিন চেপে রাখবেন বলুন তো! সত্যি তো একদিন না একদিন সকলের সামনে আসবেই।”

–“অফিসার এতো জ্ঞান না ঝেড়ে ভালো মতো সাইন করে টাকাটা রেখে দিন আর যে প্রমাণগুলো পেয়েছেন সেগুলো লোপাট করে দিন। তাতে আপনার আর আপনার ছেলেমেয়েদেরই ভালো।”

–“আপনি এখন আসতে পারেন স্যার দরজাটা ওদিকে।”

হাবিবুর রহমান রেগে মনে মনে জ্বলে উঠলো “এগুলো ঠিক করছেন না অফিসার বিপদ ডেকে আনছেন।”

–“সেটা আমাকে বুঝতে দিন। ক্যারিয়ারে প্রথম হুমকি বার্তা পাচ্ছি এমন নয় এর আগেও পেয়েছি। কিছু করতে পারবেন না”

–“আপনি আমাকে চ্যালেঞ্জ করছেন?”

–“নাহ! আপনাকে শুধু জানালাম”

হানিয়া ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো খাবার খাবে দুপুরে বেশি কিছু খেতে পারে নি। হাবিবুর রহমান হানিয়াকে দেখে গার্ডকে ইশারা করলো। গার্ডটা হানিয়াকে পিছন থেকে গিয়ে ঘাড়ের কাছটাতে আঘাত করলো। ও ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো। হামিদ আহমেদ চমকে পিছন ফিরে তাকালো মেয়েকে আহত দেখে সাথে ওর মাথায় বন্দুক ধরা ট্রিগার্ডে চাপ লাগলে ওর প্রাণ পাখি উড়াল দিবে ওনি হতভম্ব হয়ে গেলো। কথা বলতে ভুলে গেলো।

হানিয়ার ব্যাথাতুর ক্লান্ত কণ্ঠে ডেকে উঠলো “পাপা… পাপা মাথা ব্যথা…”

মেয়ের কথা শুনে ওনার বুকের মধ্যে মোচর দিয়ে উঠলো রেগে চেচিয়ে উঠে বলল “এসব কী? আমার মেয়েকে ছাড়ুন”

এগিয়ে যেতে নিলে অন্য গার্ডরা আটকে দিলো হাবিবুর রহমান হাসলেন বলল “এখনো সময় আছে। ভালোই ভালোই সাইন করুন”

–“কখনো না। আমার বাসা থেকে এখনি বের হন আপনারা নাহলে আপনাদের কাউকে ছাড়ব না আমি। ছাড়তে বলুন মেয়েকে!”

–“মেয়ের জন্য দরদ উথলে পড়ছে দেখছি। আচ্ছা এখন যদি এখানে থাকা ছেলে গুলো আপনার মেয়ের থেকে সুখ নেয়। বাবা হিসাবে আপনি নিশ্চয়ই সেটা দেখতে পারবেন না, না?”

এমন নোংরা কথা শুনে হানিয়া ডুকরে কেঁদে উঠলো। হাবিবুর রহমানের কথা শুনে গার্ডটার হয়তো খুশি হলো ওর কোমড় চেপে ধরলো। হানিয়া “পাপা” বলে আর্তনাদ করে উঠে নিজেকে সর্বশক্তি দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে গার্ডটাকে আঘাত করলো। হানিয়া তেড়ে হাবিবুর রহমানের কলোয়ার চেপে বলল “শয়তান লোক বাড়ি থেকে বের হ”

ওকে ছটকা মেরে সরিয়ে দিলো। বলল “মামণি দেখছি খুব তেজ। তা ভালো কিন্তু সেটা জায়গা বুঝে প্রয়োগ করা ভালো।”

হানিয়া ওর মুখে থুতু ছুড়লো। হামিদ আহমেদ গার্ডগুলোকে অন্যমনস্ক হতে দেখে ছাড়িয়ে হানিয়াকে জড়িয়ে ধরল। ওর শরীর কাঁপছে। গার্ডগুলো বাবামেয়েকে আলাদা করলো। হাবিবুর রহমান রাগে কাঁপতে লাগলো পুঁচকে মেয়ের কাছে এভাবে অপমানিত হতে হানিয়ার বা হাত মুচড়ে ধরলো “খুব দেমাগ তোর? তুই পুঁচকে মেয়ে হয়ে আমাকে অপমান করিস?”

ও হাতে ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো। মেয়ের কষ্টে হামিদের ছটফটানি বাড়লো বলল
–“আমার মেয়ে ছেড়ে দে। তোর শত্রুতা আমার সাথে আমার মেয়ের সাথে না। ছাড় ওকে।”

–“এতোক্ষণ ভালো ভাবে সাইন করতে বলছিলাম শুনিস নি। আর তোর মেয়ে যেটা করল তার মাশুল ও দিতে হবে।”

হাবিবুর রহমান রেগে কথাগুলো বলে বন্দুক তাক করলো। ট্রিগার্ডে চাপ দেওয়ার আগে হামিদ আহমেদ এসে মেয়েকে আগলে নিলো। গু*লি লাগলে তার বুকে তৎক্ষনাৎ বাইরে থেকে পুলিশের গাড়ির আওয়াজ। সাথে নাহিদ, রৌদ্দুর এসেছে। গোলাপি হামিদ আহমেদকে এমন হুমকি ধামকি দিতে দেখে ভয়ে নাহিদকে ফোন করে জানিয়েছিলো। ওরাও হাজির আর যা বিপদ হওয়ার হয়ে গেলো। পুলিশের গাড়ির আওয়াজে হাবিবুর রহমান লোকজন নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে যথাসম্ভব দ্রুত পালিয়ে গেলো। তিনি এসেছিলেন ভালো ভাবে বোঝাতে কিন্তু রাগের কী থেকে কী করে বসলো? রাগ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়!

হামিদ আহমেদের মাথাটা কোলে নিয়ে হানিয়া আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল “পাপা পাপা কী হয়েছে তোমার চোখ খোলো! আমার জন্য এমন হলো? আমি আর এমন করব না। প্লিজ চোখ খুলো”

হামিদ আহমেদ বুকে চেপে রাখা হাতটা হানিয়ার গালে রাখলেন। আটকানো গলায় বলল

–“তোমার জন্য কিছু হয় নি, মা! এটাই আমার ভাগ্য ছিল হয়তো! নিজের খেয়াল রেখো। ভাইবোনদের খেয়াল রেখো। কখনো যেনো কেউ বলতে না পারে হামিদ তার ছেলেমেয়েদের ভালো শিক্ষা দিতে পারে নি।”

হানিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলল “তোমার কিছু হবে না আমি তোমাকে হসপিটাল নিয়ে যাবো।”

হামিদ আহমেদ টিশার্টের বোতাম থেকে ছোট ক্যামেরা আর মেমোরি বের করে হানিয়ার হাতে দিয়ে বলল “এগুলোতে সব আছে ওদেরকে শাস্তি পাওয়ার ব্যবস্থা করো না হলে ওরা সব শেষ করে দিবে।”

–“পাপা”

–“মাই স্ট্রং গার্ল। ডোন্ট ক্রাই তোমাদের পাপা আছে থাকবে তোমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে। হায়াত হামজাকে দেখে রেখো ওদেরকে কষ্ট দিবে না আগলে রাখবে”

এতো শব্দ চিৎকার চেচামেচিতে এতোক্ষণ রুমে হায়াত হামজা ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে ছিলো দরজা খুলে দিলো গোলাপি ওরা ছুটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরল। গোলাপি চোখের পানি মুছে বলল “তাড়াতাড়ি নিচে চলো আম্মাজান আব্বাজান।”

ওরা নিচে গেলো পাপাকে রক্তাক্ত অবস্থা পড়ে থাকতে দেখে ভয়ে কেঁদে দিলো। ওনি ছেলেমেয়েকে আগলে বলল “আপির কথা মেনে চলবে আমি… ”

আর কিছু বলতে পারলো না না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।

~বর্তমান~

হানিয়ার সব দৃশ্য কেমন চোখের সামনে ভাসে উঠে সত্যি মনে হলো। চোখ দিয়ে গলগলিয়ে পানি পড়তে লাগলো। ঠান্ডা লেগেছিল সাথে কান্না করারই আবারও জ্বর ফিরে আসলো। বিছানায় পড়ে রইল ও। চোখ বন্ধ থাকলেও পানি পড়ছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here