চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।০৩ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
452

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।০৩ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

সূর্য্যিমামা তার তেজসী আলোকরশ্মি দিয়ে চারিদিকে সোনালী রঙের আলোকিত করেছে। রিকশা-গাড়ি চলাচলের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে তা-ও অন্য দিনের তুলনায় সেটা কম। কেননা আজ শুক্রবার সপ্তাহিক ছুটির দিন। এদিনে অফিস-স্কুল-কলেজ ছুটি থাকে তার দরুন গাড়ির শব্দদূষণ আজকের দিনে অন্যদিনের তুলনায় একটু কমই পাওয়া যায়। হানিয়ার কক্ষের জানালার থাই ভেদ করে সেই শব্দ- আলো এসে জানান দিচ্ছে দিনের আলো ফুটেছে ঘুম থেকে জাগো।

সকালে ঘুম ভাঙল বেশ দেরি করে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল আলরেডি সাড়ে নয়টা বেজে গেছে হানিয়া অবাক হলো কেউ ওকে ডাকল না? আশ্চর্য! এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। বাইরে থেকে হইহট্টগোল, বাচ্চাদের চিৎকার, গান কিছুই শোনা যাচ্ছে না। হানিয়া যে অবস্থায় ছিল চটপট বেড়িয়ে আসলো। আসল ঘটনা উদঘাটন হল ড্রইংরুমে গিয়ে দোলা বসে আছে তার চোখে অশ্রু তার থেকে কিছু দূরে রৌদ্দুর চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। আত্মীয়-স্বজনরাসহ, বাড়ির সকলে এখানে উপস্থিত। আহছানউল্লার কাছে রৌদ্দুর যে শক্ত একটা চড় খেয়েছে এ খবরটা ওকে ইমন কানে কাছে এসে ফিসফিস করে বলল। হামজা-হায়াত বোনের পাশে এসে সকলের অগোচরে দাঁত বের করে হাসি দিল। হানিয়া চোখ-মুখ কুঁচকে চোখ দিয়ে ভাইবোনকে ধমকালো কাজও হলো। এখনকার এই অবস্থা যে বিশেষ সুবিধার নয় তা বুঝতে বেগ পেতে হলো না ওর। হানিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল পরের সিন দেখার জন্য। রৌদ্দুরের মা রাবেয়া তিনি ফ্যাসফ্যাস করে কান্না করছে। তিনি জানে এবং মনে প্রাণে বিশ্বাস করে ওনার ছেলে কোনো ভুল করতে পারে এটা তিনি কিছুতেই মানতে পারে না। সবসময় বলেন ওনার ছেলে নিষ্পাপ। ঠিক যেনো,‘দুধে ধোঁয়া তুলসীপাতা’। এমনিতেই তিনি ছেলের সুনামে পঞ্চমুখ রৌদ্দুর যখন নাটকের ছোটখাটো রোল শুরু করল তখন থেকেই তার ছেলের জন্য অহংকারে মাটিতে পা-ই পড়ে না। আহছানউল্লা রৌদ্দুরের বাবা ডিরেক্টর হওয়ায় রৌদ্দুরকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। অল্পসময়েই বেশ সুনাম অর্জন শুরু করে তেমনি পতনও শুরু হয়। মেয়েদের বিছানায় নেওয়া তার একটা নেশায় পরিণত হয়। হানিয়া এসব জেনেই রৌদ্দুরের প্রতি ঘৃণাটা বাড়ে সবসময় দূরত্ব বজায় রাখত। তার মা-বাবা এসব জেনেও ছেলেকে ফেরাতে হানিয়ার সাথে বিয়ে ঠিক করে তখন ও দশম শ্রেণির ছাত্রী ওর বাবা তখনও বেঁচে আছে। রৌদ্দুরের সাথে হানিয়ার বিয়ের প্রস্তাবে তিনি প্রথমেই নাকচ করে দেয়। তার কয়েক মাস পরেই ওর বাবার মৃত্যু ঘটে। বাবার মৃত্যুতে আবারও বিয়ের কথা উঠে। না করতেই রৌদ্দুরের ইগোতে হার্ট হয়। জোর করতে লাগল। হানিয়া হতাশ হয়ে হ্যাঁ বললেও শর্ত দেয় পড়াশোনা শেষ হলে বিয়ে করবে। প্রথম প্রমথ কয়েকমাস মেনে নিলেও হঠাৎই আবারও জোর শুরু করল হানিয়া নানানভাবে বাঁধা দিতে থাকে। এবার আর ওর কোনো বাঁধাই কেউ মানছে না।

হানিয়ার মাঝে মাঝে মনে হয় ওর বাবা-মা বেঁচে থাকলে এমন জোর করে রৌদ্দুরের সাথে ওকে কেউ বিয়ে দিতে পারত না বা এমন পরিস্থিতি আসার সাহস পেত না।

আহছানউল্লা রাগান্বিত কণ্ঠে বলল
–“কী হলো কথা বলছ না কেনো? আমি জিজ্ঞাসা করেছি দোলাকে তুমি বিয়ে করেছ?”

রৌদ্দুর ছোট করে বলল
–“নাহ”

–“তাহলে তোমাদের দুজনের বাচ্চা আসবে এটা কথা কী সত্য না মিথ্যা”

রৌদ্দুর রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে বলল
–“বাবা ও মেয়েটা আমাকে ফাঁসাতে চাইছে। ও আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল আমি রিজেক্ট করেছিলাম ও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমন করছে।”

দোলা ভালোবাসা মানুষটা সব সত্য গুলো এভাবে অশিকার করতে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো। তড়িৎ গতিতে তেড়ে এসে বলল
–“কী বললে তুমি? আমি তোমাকে ফাঁসিয়েছি? তুমি আমাকে ফাঁসিয়েছ। তোমার সাথে বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাই নি বলে আমাকে বিয়ে করে বিষয়টা গোপন রাখতে বলেছিলে। বলেছিলেন কিছু দিন পর ফ্যামেলিকে রাজি করিয়ে মিডিয়া জানিয়ে বড় ধুমধামে বিয়ে করবে। অথচ দেখ ঠিকি বিয়ে করছ তুমি কিন্তু পাত্রীর জায়গায় অন্য একটা মেয়ে। নিজের জন্য না বাচ্চার অধিকরের জন্য আজ তোমার দরবারে এসে হাজির হয়েছি নাহলে কখনোই আসতাম না। তোমার মুখটাও দেখতাম না।”

রৌদ্দুর হিসহিসিয়ে বলল
–“ও তা-ই? তা বিয়ের প্রমাণ কই? কাগজ কই?”

–“সে সব তো তুমি নিয়ে রেখেছ যাতে আমার কাছে কোনো প্রমাণ না থাকে।”

রৌদ্দুর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলল
–“দেখলে বাবা ও মিথ্যা গল্প বানাচ্ছে। ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। অযথায় আমাকে ফাঁসাতে চাইচ্ছে।”

দোলা রৌদ্দুরকেই দেখে যাচ্ছে মানুষ কত সহজে বদলে যায়। এতোদিন কী মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে তাকে পটিয়েছে এখন সবার কাছে ওকে দোষী প্রমাণ করতে চাইছে। হায় রে দুনিয়া!
আহছানউল্লা ছেলের কথায় কান দিল না দোলার দিকে ফিরে বলল
–“তোমার কাছে রৌদ্দুরের নামে বা যা বলছ তার প্রমাণ নেই?”

দোলা যান্ত্রিক রোবটের মতো করে উচ্চারণ করল বলল
–“ওর আর আমার একসাথে ভিডিও, ছবি… ”

কথাটা বলতে বলতে থেমে গেল হঠাৎ মনে পড়ল বিয়ের সময় ফেন্ডরা ভিডিও করেছিল সেটা রৌদ্দুর ওর ফোন থেকে ডিলিট করো দিয়েছিল কিন্তু ও পরে রিস্টোর করেছিল আছে ওটা আছে ওর কাছে। ইমন তখন প্রমাণের কথা বললেও ওর মাথায় ভিডিওর কথাটা আসে নি। দোলা বলল
–“বিয়ের সময়কার ভিডিও আছে”

রৌদ্দুর বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকালো ও এমন কিছু শুনবে ভাবতে পারে নি। ও ভেবেছিল বলবে এগুলো ফেক বালবে কিন্তু ভিডিও তো দেখলে বোঝা যাবে ওটা রিয়েল। রৌদ্দুর ভয়ে ঘামতে লাগলো। আহছানউল্লা সহ সব উপস্থিত সকলে ভিডিওটা দেখল রৌদ্দুরের গালে আরো একটা চড় মা*রল।
–“কুলাঙ্গার ছেলে জন্ম দিয়েছি। যার জন্য সোসাইটিতে মুখ দেখাতে লজ্জা করে। এখন একটা মেয়ের সর্বনাশ করে শান্তি হয় নি মধুর জীবনটাও শেষ করতে চাই ছিলি।”

কথাগুলো বলে তিনি আরো মা*রতে চাইছিলেন কিন্তু রৌদ্দুরের মা রাবেয়া বেগম সেটা হতে দিলেন না ছেলেকে বাঁচিয়ে নিলেন বলল
–“মাইরেন না ওকে ভুল তো হয়ে গেছে তাই মারলে কী ভুল শুধরে যাবে? শুধরানোর কাজটাই করেন”

–“হ্যাঁ তোমার গুনধর ছেলের জন্য সারাজীবন আমি শুধরানোর কাজ করে যাবো।”

আহছানউল্লা হানিয়ার কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
–“আমাকে ক্ষমা করে দিস মধুমা।”

আহছানউল্লার চোখে পানি হানিয়ার এবিষয়টা খারাপ লাগল মানুষটা ছেলে, বউয়ের জন্য সারাটা জীবন লাগিয়ে দিলো অথচ দিন শেষে কী পেলে? অসম্মান! তিনি জানতেন ছেলে অধপতনে গিয়েছে জেনেও বিয়েটা যখন দিয়ে ছেলের সুপথে আনার চেষ্টা করে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে চাই ছিল কথাটা ভাবতেই খারাপ লাগা চলে গেলো। এতো খারাপ লেগে কষ্ট পেয়ে কী হবে? তারা তো ওর কথা না ভেবে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
–“দোলা মা তোমার বাবা-মার নম্বরটা দাও”

দোলা দিল নম্বর কিন্তু ও মনে মনে ভয়ে আছে। এ ব্যাপারে দোলার বাড়ির লোকজন কিছুই জানে না। দোলাকে নিয়ে যেতে বলল রুমে হানিয়াই নিয়ে এলো দোলাকে। হানিয়াকে দেখলেই দোলার মাথার আগুনটায় মনে হচ্ছে কেউ ঘি ঢেলে দিচ্ছে। অসহ্য লাগছে মেয়েটাকে একটুও সহ্য হচ্ছে না। কে সহ্য করে ভালোবাসার মানুষটার পাশে অন্যজনকে?

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here