#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।। ৩১ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না
পরিবেশ সুবিধাজনক নয়। চেনাজানা পরিচিত, বন্ধুবান্ধব, অত্মীয়স্বজন একে একে ফোন দিয়ে যাচ্ছে আসল কাহিনী যানার জন্য। অনেকে বাড়ি বয়ে আসছে। দু’চারটা কটুকথাও শুনিয়ে যেতে ছাড়ছে না। সকাল থেকে কারোর পেটে দানাপানি পড়ে নি। ইমনের বিরুদ্ধে সবাই। জেনি ইতিমধ্যে সকলের সিমপ্যাথি আদায় করে নিয়েছে তার সস্তার চোখের পানি দিয়ে। সোসাল মিডিয়া চর্চা হচ্ছে। পাড়ার লোকজন খেঁপে শর্ত জুড়ে দিয়েছে। ইমনকে আজই জেনিকে বিয়ে করতে হবে। ইমন বিয়ে করবে না সাফ জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ওর কথা না কেউ শুনছে আর না কেউ মানছে। সকলে ওকেই দুষছে। রুহি বার বার ফোন, এসএমএস দিয়ে যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল হয়ে গেছে। পরিবারের লোকজন বার বার খাওয়ার জন্য ডাক দিচ্ছে। সকালে খাইনি দুপুর গড়িয়ে গেলেও রুহির খোঁজ নেই ওর পরিবারের সকলে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো। ইমন ফোন অফ ছিল রুহির চিন্তা মাথায় আসতেই ও ফোন অন করলো। রুহি তখনো লাগাতার ফোন দিয়ে যাচ্ছে। ইমন ফোন ধরে চুপ করে রইল। রুহি কান্নারত কণ্ঠে বলল
–“ইমন! ইমন! শুনছেন আমাকে?”
ইমনের বুকটা ধক করে উঠল মলিন কণ্ঠে বলল
–“শুনছি!”
–“ঐ মেয়েটা কী বলছে? আপনি এসব করেন নি বলেন একবার আমাকে!”
–“তুমি বিশ্বাস করো আমি করেছি?”
–“না বিশ্বাস করি না। আমি আপনাকে বিশ্বাস করি। কিন্তু ওরা আপনাকে বাজে বাজে কথা বলছে।”
–“এ জীবনে বোধহয় তোমাকে আর পাওয়া হলো না রুহি।”
রুহির কান্না থেমে গেলো শ্বাস আটকে বলল
–“ক্ কি বলছেন এসব? আমি আপনাকে বিশ্বাস করি। ভালোবাসি তো আপনাকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেই পারি না।”
–“আমিও ভালোবাসি। ভালো থেকো নিজের খেয়াল রেখো। ফোনে না পেলে টেনশন করো না। পারলে নতুন করে জীবন শুরু করো। আমার অপেক্ষায় থেকো না।”
ইমন ফোন কেটে অফ করে দিলো। ইরাবতী বেগম সকলের কথা শুনে জেনিকে দেখে মায়া হলো ছেলেকে বিয়ে দিতে রাজি হলেন। হানিয়া এসব শুনে কী করবে ভেবে পেলো না। এমনিতেই প্লেনর টিকিট পাচ্ছে না। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হানিয়া সুভানাকে ফোন দিয়ে ডেকে সবটা বলল ওরা অনেক চেষ্টা করে ইমার্জেন্সি টিকিট পেলো। হানিয়া আর দেরি না করে সব গুছিয়ে নিতে লাগলো। সুভানাও ওকে হেল্প করলো। হানিয়া ইজাজ, সালেহা, ইরাবতীকে বলল ও না যাওয়া পর্যন্ত যেনো বিয়ে না হয়। ইরাবতী তা মানলেন না সকলের মুখ বন্ধ করার জন্য বিয়ে ছাড়া কোনো উপায় নেই। এখন হানিয়া কবে আসবে তার নেই ঠিক ওর জন্য সবাই কী বসে থাকবে? ইরাবতী বেগম হানিয়ার ওপরে রাগারাগি করলেন। বলল
–“তোমার মামা একটা মেয়ের সর্বনাশ করেছে আর তুমি জেনেও চুপ করে ছিলে? সবটা মেনে নিয়েছ? না-কি তুমি ও এমন কোনো অঘটন ঘটিয়েছ?”
হানিয়া ইরাবতী বেগমের কথায় ভিষণ কষ্ট পেলেও কিছু বলল না জানে রাগের মাথায় বলছে এ কথার উত্তর ও পরে দিবে। হানিয়া নিশাদকে বলল ইমনকে নিয়ে যেনো ওর ফ্ল্যাটে যায়। বিয়েটা যেনো না হয়। হানিয়া মাথা ভর্তি টেনশন নিয়ে রওনা দিল। সুভানা ওকে সাহস জোগালো। এই সুভানা সবসময়ই সাহস দেয় ওর পাশে থাকে। হানিয়া ওকে জড়িয়ে ধরে বলল “থ্যাংক্স ইয়ার।”
–“থ্যাংক্স তুই ধুয়ে খা। তুই পৌছে আমাকে ইনফর্ম করিস। ছুটি দিলে আমিও আসছি। তোর নোট গুলোও কালেক্ট করে রাখবো।”
–“লাভিউ বেবস”
–“লাভিউ টু বেবস। মিসিউ সো মার্চ”
–“মি টু”
হানিয়া ২০ ঘন্টার জার্নিতে একফোঁটাও চোখের পাতা এক করতে পারলো না অস্থিরতা চেপে ধরে রাখলো। ওদিকে কী হচ্ছে ও জানে না। দুবাইয়ের এয়ারপোর্টে নেমে ওখান থেকে ওয়াই-ফাই নিয়ে ওদিকের খবর জানালো। নাহিদকে ভিডিওর রিয়েল কপি বের করতে লেগে গেছে। হানিয়া বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে আসলো তখন রাত এগারোটা বাজে। বের হয়ে আসতেই দেখলো নিশাদ, হামজা, হায়াত দাঁড়িয়ে আছে। হামজা-হায়াত দৌড়ে এসে বোনকে জড়িয়ে ধরলো। কতগুলো দিন! কতগুলো মাস পরে! হানিয়া ভাইবোনকে জড়িয়ে ধরে যেনো শান্তি পেলো। চোখে পানি চলে আসলো। নিশাদ এসে হানিয়ার মাথায় চাটি মেরে বলল
–“কীরে শুঁটকি যাওয়ার সময় কাঁদলি আবার এসেও কানতাছোস তোর চোখের পানির কল তো দেখছি অটোমেটিক হয়ে গেছে।”
হানিয়া রেগে বলল “সাইকোর বাচ্চা মাথায় মারবি না। দূর হয়ে যা।”
ওরা সবাই মিলে ফ্ল্যাটে আসলো। ইমন আগে থেকেই ছিল। একদিনে ও যেনো শুকিয়ে গেছে। হানিয়াকে দেখে ইমন জড়িয়ে ধরে বলল “তুইও কী আমাকে অবিশ্বাস করিস?”
–“একবারও বলেছি অবিশ্বাস করি? আমি জানি তুই কখনো এমন কাজ করবি না।”
–“আমার চাকরিটা চলে গেছে রে। ওরা আমাকে ইমেইল পাঠিয়েছে। এদিকে বাড়ি ফিলে জেনির সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। আমি কী করবো উপায় পাচ্ছি না।”
–“মে হু না? তোর মেয়ে আছে মানে কোনো টেনশন করিস না। কী হাল করেছিস দেখছিস? পুরাই গরু চোর লাগতাছে।”
নিশাদ ফোঁড়ন কেটে ভেঙিয়ে বলল
–“হাহ্ মে হু না? ওনি বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলবেন।”
হানিয়া রাগি চোখে তাকালো। ইমন বলল
–“আমার ভালো লাগছে না তোরা যা। আমাকে একা থাকতে দে প্লিজ।”
ওরাও বাইরে চলে আসলো। এখানে একটা খাট ছিল সেটাতে এখন ইমন শুয়ে আছে। অন্যটাতে নিশাদ আজকেই একটা খাট অর্ডার দিয়ে আনিয়েছে। হানিয়ার আসার খবর ওরা চারজন ছাড়া কেউ জানে না এখনো। ইফাজ রিপোর্টারের মতো সব খবর দিয়ে যাচ্ছে ফোন দিয়ে। রাতটা ওরা একটু ঘুমিয়ে নিলো। সকালে যা করার করবে। কিন্তু হানিয়া ভালো করে ঘুমাতে পারলো না। টেনশনে, ক্লান্তিতে যা একটু ঘুম হলো দুঃস্বপ্ন এসে ঘুম ভেঙে দিলো। সকাল সকাল উঠে নিশাদকে টেনে তুলে চলল সাইবার অফিসে। নাহিদ ও আসলো। এসে হানিয়াকে দেখে চমকালো।
–“মধু কখন আসলি বনু? আমাকে জানালিও না? পর হয়ে গেলাম?”
–“রাগ করো না ভাইয়া। হুট করে চলে আসলাম রাত হয়ে গেছিল তাই তোমাদের জানাতে বারণ করেছিলাম।”
–“ভালো তো!”
–“রাগ করো না প্লিজ। তোমার বউয়ের সাথে ক্যাচাল পাকিয়ে দিব কিন্তু। আমাকে চিনোই তো!”
নাহিদ চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। ও বলল “ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। ভিডিওটার কী হলো রিয়েল কপি পেয়েছ?”
–“পারভেজ জানে আসতে বলল তাই তো তাড়াতাড়ি আসলাম। চল ভিতরে।”
ওরা উৎতেজনা নিয়ে ভিতরে গেলো। পারভেজ ওদেরকে ভিডিওটা দেখালো। ওদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। কি করবে ভাবতে পারলো না। কী করবে ওরা?
চলবে ইনশাআল্লাহ