চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৩৩ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
285

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৩৩ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

রুহির পরিবার রুহি ও ইমনের রিলেশনশিপ নিয়ে জানাজানি হয়ে গেছে। তারা কিছুতেই ইমনের মতো ছেলেকে মানতে রাজী না। রুহির জন্য আরো কত দেশি-বিদেশি ভালো ভালো ছেলেরা অপেক্ষা করছে ব্রাইট ফিউচার তার সেখানে এমন ভাইরাল হওয়া দুশ্চরিত্র ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে মেয়ের কপাল সহ নিজেদের মানসম্মান সমাজের সামনে ডুবাতে চাই না। রুহির বাবা-মা তার বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে মেয়ের কথা কান্না তাদের মন গলাতে পারছে না। রুহির বাড়ি থেকে বের হওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। ফোনটাও কেড়ে নিয়েছে। রাতে লুকিয়ে চুড়িয়ে ল্যান্ড লাইন থেকে ইমনকে তার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানালে সে দায়সারা ভাবে উত্তর দিল। “বিয়ে করে নাও। আমার মতো ছেলের সাথে কোনো বাবা-মাই মেয়ে দিতে চাইবে না।”

রুহি কাউকে বোঝাতে পারলো না। ইমনও গুমরে গুমরে কাঁদল। এখন ওর চাকরিটাও নেই। কীভাবে চলবে ও বড় হয়েছে মা-ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা চাইলে ওর লজ্জা লাগে। সেখানে এমন ঘটনার পরে বিয়ের কথা বলবে? অসম্ভব!

হানিয়া এসব দেখে বিরক্ত হয়ে কাউকে না জানিয়েই একাই রুহির বাসায় গেলো। সেখানে রুহির মা-বাবা-ভাই উপস্থিত ছিল। রুহিও হানিয়াকে দেখে ভড়কে গেলো। ভয়ার্ত চোখে সকলকে দেখলো। সকলে ওকে দেখে চিনতে ভুল করলো না। রুহির বাবা গম্ভীর কণ্ঠে বলল “কী চাই?”

–“আপনাকে কী বলে ডাকবো? আপনার মেয়ের বিয়ে হলে তার বাচ্চাকাচ্চা তো আপনাকে নানু বলে ডাকবে তাহলে আমারও নানুই হবেন? আ’ম রাইট রুহি হবু মামি!”

রুহি ভয়ের চোটে কিছু বলতে পারলো না। রুহির বাবা ভিষণ রকম রেগে গেলো বলল “রসিকতা করছ মেয়ে?”

–“নানুর সাথে রসিকতা করা দোষের কিছু না। আসেন বসে কথা বলি। আপনাদের বাসায় আসলাম বসতে বললেন না৷ নাস্তা পানি দিলেন না কেমন আপনারা?”

ওরা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো রুহির বাবা গলা ঝেড়ে বলল “কী বলতে এসেছ?”

–“আপনার মেয়েকে আমার মামি বানাব বলে এসেছি”

–“সেটা কখনো সম্ভব না।”

–“আমাকে কিন্তু চিনেন না মেয়েকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিয়ে দিবো কিন্তু তার চেয়ে রাজি হয়ে যাওয়ায় ভালো না?

ওনি রেগে বলল
–“তুমি আমাকে হুমকি দিচ্ছে? ফাজিল মেয়ে!”

হানিয়া ফেসটা অসহায় করে বলল
–“উইল ইউ বি মাই মামা’স শশুড়। প্লিজ প্লিজ প্লিজ। বিশ্বাস করুন ওটা আমার মামা নয় ঐ মেয়েটা আমার সাথে চ্যালেঞ্জ করছিল আমার মামাকে বিয়ে করে দেখাবে। মামা রাজি হচ্ছিল না তাই এমনটা করছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে নানু। আমার জন্য ওদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে না? দুজন ভালোবেসে এক হবে না? দুজন আলাদা মানুষকে বিয়ে করে কী সুখী হতে পারবে? যদি না পারে তখন সে মানুষগুলোও জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। জীবন্ত লাশ হয়ে বাচবে ওরা। আমি ম*রেও শান্তি পাবো না। প্লিজ আঙ্কেল অনেক আশা নিয়ে এসেছি আপনি ফিরিয়ে দিবেন না প্লিজ।”

হানিয়া সত্য-মিথ্যা সংমিশ্রণে কথাগুলো একনাগাড়ে বলে হাঁপিয়ে উঠলো। রুহির বাবা চিন্তিত হলেন। কী বলবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। হানিয়া নিজের কথা চালিয়ে গেলো। ওনি চুপ থেকে বলল “তুমি ছোট তোমার মামার বাবা-মাকে আসতে বলো আমি ভেবে দেখবো।”

———————–

২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে। ক্রিসমাস মার্কেট জমে উঠেছে। সে অনুযায়ী আজ হলিডে। নরওয়েতে অনেক দিন পর সকালে একটু রোদের দেখা মিলেছিল। তবুও অম্বরিতে ধূসর বিষন্ন মেঘ ঈর্ষা নিয়ে রোদকে চাদরের ন্যায় ঢেকে দিচ্ছে বার বার। সে মেঘগুলোকে দেখে দল বেঁধে আরো মেঘেরা এসে ভিড় জমালো। আবার সে রেশ ধরে তুষার বৃষ্টির দেখা মিলেছে। ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি হচ্ছে। সুভানা আজ বাড়িতেই আছে ছুটি পড়ে গেছে ইউনিভার্সিটিতে প্রাকৃতিক অবস্থা আর কয়েকদিন পর খুব খারাপ হবে তাই এখন থেকে অনলাইনে ক্লাস হবে। আজ দুপুরে খিচুড়ি রান্না করেছে লাইজু। সেটা এতো বেশি খেয়েছে যে নড়তে পারচ্ছে না। সাইফুল এহসান বলল
–“মা কিছু কথা ছিলো।”

শাবনূর বেগম পান চিবাতে চিবাতে বলল
–“হ্যাঁ বল।”

–“মা চেরি সেজাদের জন্য মেয়ে দেখছে। ওর দেবরের মেয়ে।”

শাবনূর বেগম থামিয়ে থমথমে মুখে বলল “দাদুভাই কী চাই দেখ। ও হ্যাঁ কইলে সমস্যা নাই।”

সুভানার মনে লাড্ডু ফুটে ফেটে গেলো। সেজাদ রাজী হচ্ছে না এটাও হবে বলে মনে হয় না। সাইফুল এহসান সুভানাকে বলল
–“দেখ তো মামণি তোর বড় ভাই বাড়ি আছে কি-না থাকলে ডেকে আন।”

সুভানা ডেকে এনে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইল কী সিদ্ধান্ত হয় সেটা জানার জন্য। সাইফুল এহসান সময় নিয়ে বলল “তোমার মা তোমার জন্য মেয়ে দেখছে তার নিজের দেবরের মেয়ে অথ্যাৎ তোমার সৎ চাচাতো বোন”

সেজাদের মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে উঠলো। শান্ত মানুষগুলো রেগে গেলে ভয়ংকর হয়। সেজাদও শান্ত ছেলে সে অযথা অকারণে রাগে না। কিন্তু যখনই নিজের জন্মদাত্রীর কথা উঠে তখনই সে রেগে যায় তাই তার সামনে এসব কথা কেউ বলে না। এতোদিন বিয়ে করতে না চাওয়ার কারণও তার মা! বিয়ে নিয়ে ভীতি কাজ করে। সেজাদ নিজের মনকে শান্ত করার প্রয়াস চালিয়ে বলল “তুমি আবারও ঐ মহিলার সাথে বলছ ড্যাড? বাট হোয়াই? কেনো কথা বলবে তুমি?”

–“সেজাদ সে তোমাদের মা। আমার একমাত্র স্ত্রী!”

–“রং! সে তোমার স্ত্রী ছিল এখন নেই। আর জন্ম দিলেই সবসময় মা হওয়ার যায় না ড্যাড। যেখানে আমি বিয়েই করতে চাই না সেখানে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষের চুজ করা মেয়েকে বিয়ে মতো একটা সাবজেক্টে জড়াবো? হাউ ফানি!”

–“সেজাদ তার অধিকার আছে তোমাদের বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এভাবে কেনো বলছ?”

–“জীবনে কখনো আমি কী পড়ব, কী খাবো, কোন স্কুল কলেজ পড়বো, এগুলো কখনো তিনি ঠিক করে দেন নি সেখানে বিয়ে? আমার লাইফের সাথে আরেকটা মেয়েসহ তার পরিবার জুড়বে তার সাথে বার বার দেখা হবে, ওহ নো! এটা ইম্পসিবল!”

–“সেজাদ বিয়েটা খারাপ না তুমি…”

–“বিয়েটা আমিও খারাপ বলছি না ড্যাড। শুধু ওনার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করব না। আর যেখানে নিজের মা থাকে নি সেখানে অন্য কোনো মেয়ের ওপরে বিশ্বাস করাটা আমার জন্য কষ্টদায়ক”

–“তোমার মাকে আমি ভালো রাখতে পারি নি তাই সে তার সুখের খুঁজে নিয়েছে। তুমি মেয়েটার সাথে কথা বলো। সবাই তো এক নয়। হয়তো আমার ভালোবাসায় খুঁত ছিল আমি ব্যর্থ স্বামী ছিলাম। কিন্তু তুমি সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবে।”

এবার শাবনূর বেগম মুখ খুললেন বললেন “মেয়েটাকে দেখ দাদুভাই। কথা কইয়া দেখ পছন্দ হইলে আগোইব না হলে না। আর যদি তোর কোনো পছন্দ টছন্দ থাকে তাহলে আমাগো ক আমরা ব্যবস্থা শুরু করি। কী বলিস সাইফুল?”

–“হ্যাঁ মা। সেজাদের তেমন পছন্দ থাকলে বলো তাহলে তো আমাদের এতো কষ্ট করা লাগে না।”

ওর পছন্দের কথা জিজ্ঞেসা করতেই সেজাদের হানিয়ার মুখশ্রী ভেসে উঠলো মনোদৃশ্যকল্পে। হৃৎস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা হারে বাড়লো। হাসফাস লাগলো। মস্তিষ্ক শুধালো কখনো সম্ভব না। কখনো না। কখনো না।

–“সেজাদ তোমার কী কোনো পছন্দ আছে?”

সেজাদ বলতে পারলো না। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। আচ্ছা ঐ মেয়েটা রেগে গেলে চোখ মুখ কুঁচকালে কেমন লাগবে? নিশ্চয়ই বিশ্রী লাগবে। ওমন সুশ্রী মুখে সবসময় হাসি মানায়।

–“কী হলো? কী ভাবছ? কিছু বলো!”

সেজাদ ভাবনায় ছেদ ঘটলো। এমন সময় এমন উদ্ভট চিন্তা মাথায় আসতেই ও নিজের ওপরেই বিরক্ত হলো। সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল “পছন্দ নেই।”

শাবনূর বেগম গম্ভীর হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে নাতির দিকে তাকিয়ে রইল। সেজাদের দিক থেকে কোনো সিগনাল না পেলে ওনি কিছু করতে বা বলতে পারছে না। কাজ এগিয়ে পরে এটা যদি ভুল হয় তার নাতি যা তখন যদি রাজি না হয় তাহলে প্রস্তাব রেখেও ছোট হয়ে যাবে। ফলে সম্পর্কে ফাটল ধরবে। সাইফুল এহসান ছেলের চোখ মুখ দেখে সে কথা বিশ্বাস করলেন না। দ্বিধা সংশয় কাটিয়ে বলল “মেয়েটা বাংলাদেশে তার নানাবাড়িতে থাকে। ওখানে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্জিনিয়ারিং পড়েছে। দেখতে শুনতেও মা-শা-আল্লাহ। আমরা তো আর ক’দিন পরে দেশে যাচ্ছি তুমি মেয়েটার সাথে দেখা করো। কথা বলো ভালো লাগলে কথা এগোবে। কী বলো মা?”

–“হ ঠিক। সুভা তোর কলেজ ছুটি দিসে না? তাহলে আর দেরি কিয়ের লাইগা। ঐ ছেমড়িকে গুছিয়ে আমাগো বাড়ি আসতে ক। ওর নানীর ফোনে আজ ক’দিন ফোন লাগে না সে যাগ গে। সায়েম রে ক টিকিট কাটতে। আর দেরি করা ঠিক হইব না।”

সুভানা আমতা আমতা করে বলল “কাকে ডাকবো?”

–“নেকা তোর সইরে ডাকবি।”

–“ও তো পাঁচদিন আগে বাংলাদেশ চলে গেছে। আসলে একটা… ”

সেজাদ শক্ত হয়ে বসে ছিল। হানিয়া চলে গেছে শুনে সুভানার দিকে তাকালো। শাবনূর বেগম আঁতকে উঠল ওর পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল “সে কী কথা? তুই আগে কইবি না? একলা একলা কেনো চইলা গেলো? হাই হাই মেয়েটা হারাই যায় নাই তো?”

সুভানা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলল “ও বাচ্চা না যে হারিয়ে যাবে। দরকার তাই গেছে।”

–“ফোন লাগাই দে তো! ওর নানীরেও ফোনে পাই না। ইরার লাইগা পরাণডা জ্বালা করতাছে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here