চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৩৮ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
338

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৩৮ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

হানিয়া জন্মদিন হলেও ওর মাতামাতি পছন্দ না। কেক আনতেও বারণ করছে সকলকে ঘুমাতে বলেছে রাত জেগে কিছু করতে হবে না। তার ভারস্য মতে জন্মদিন কোনো আনন্দে বিষয় নয়। বরং দুঃখে কেননা আমাদের এককাকটা সময় জীবন থেকে চলে যাচ্ছে মানে আমার অনেক কিছু হারিয়ে ফেলছি। মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতিবছর এতো বারণ করার পরও আহছানউল্লা সেসব কথা মানেন না কেক নিয়ে আসেন মেয়ের জন্য। এবার ও সেটা হলো কেক নিয়ে এসেছে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে হামজাকে ফোন দিয়ে হানিয়াকে নিয়ে আসতে বলল। হামজা পড়ছিল ওর মনে এক বিশাল ভয় ডুকে গিয়েছে আগের বার পরিক্ষায় ও ফেল করেছিল এবার হায়াত ফেল করেছে। এবার না দুজন একসাথে ফেল করে তাই তো জোর দিয়ে পড়ছে। ঘুমের কথা মাথায় আসছে না তার। সেজাদের নতুন জায়গায় ঘুম আসছে না। তাই ফোন টিপছিল। হামজার ফোন আসতে ও উঠে চলে গেলো। বলল “ভাইয়া ঘুমিয়েছেন না-কি?”

–“না কিছু বলবে?”

–“নিচে যাবেন? চাচু আপির বার্থডে সেজন্য কেক নিয়ে আসছে। গেটের বাইরে সাথে স্টুডিওর ভাইয়া-আপুরা আছে।”

–“বাইরে কেনো? বাড়িতে আসবে না?”

–“উহুম! পাপা চলে যাওয়ার পর আপি আর বার্থডে নিয়ে এক্সাইটমেন্ট দেখায় না। আপির মতে বার্থডে মানে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলছি।”

–“ওহ! আমি তো কাউকে চিনি না ওখানে গেলে আমার হেজিটেড হবে। আমি এখানে ঠিক আছি।”

হামজা জোড়াজুরি করলো না। এসব তার ধাতে নাই। কেউ একবার না বললে সেটা না ধরে নেয়। কাছের মানুষ হলে কিছু না বলে গম্ভীর হয়ে দুচারটা থ্রড দিলে কাজ হয়ে যায়। তখন রাত এগারোটা পঞ্চাশ বাজে। হানিয়া আহছানউল্লা এসেছে শুনে নিচে ছুটলো। সাথে হায়াত, হামজা, ইফাজ বছরের শেষ দিন হওয়ায় তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীরা জেগে বারবিকিউ পার্টি করছে সাথে ক্ষণে ক্ষণে বাজি ফোটাচ্ছে।

হানিয়া আজ নতুন কিছু আবিষ্কার করলো। অন্য জন্মদিনে আহছানউল্লা একা আসে সাথে স্টুডিও লোকজন একবার চাচি সাথে এসেছিল। তিনি আবার রাত জাগতে পারে না অসুস্থ হয়ে যায়। সকালে উঠে তার হম্বিতম্বি শুরু হবে বার্থডে ফটোসেশান আরো কত কী। কিন্তু আজ দৃশ্যটা ভিন্ন আহছানউল্লার সাথে রৌদ্দুর হাস্যজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ও কাছাকাছি আসতেই দুজন সহ আরো কয়েকজন সশব্দে বলে উঠলো “হ্যাপি বার্থডে” সাথে সাথে চারিদিকে বাজি ফানুস উঠতে লাগল বারোটা বেজে গেছে। একুশ বছরে পা দিল।

আহছানউল্লা হাতে থাকা কেকটা আর ছু’রিটা এগিয়ে দিল বলল “কাট”

হানিয়া হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল “আবারও? কতবার নিঃশেষ করেছি? আর কীভাবে বারণ করলে শুনবে?”

আহছানউল্লা গম্ভীর মুখে বলল “আমি কতবার বড়দের মতো কথা বলতে বারণ করেছি? শুনেছ আমার কথা?”

হানিয়া কেক কেটে সকলকে খাইয়ে দিল। রৌদ্দুরের সামনে কেক এগিয়ে দিয়ে বলল “এতো চেঞ্জ হচ্ছো কেনো জানি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।”

“কতদিন আর একরকম থাকব? পরিবর্তনটা জরুরি। এবার বল গিফট কী চাস?”

–“ বাবাহ! কিছু লাগবে না”

–“আমাকে ভাই হিসাবে কী মানা যায় না?”

–“যায় আর মানি শুধু তুমি মানো না।”

–“ওসব বাদ নতুনভাবে সবটা শুরু করতে চাইছি। কী গিফট চাস?”

–“তুমি নিজের ভুল শিকার করব আমার মামার কাছে একটা বার সরি বলবে প্লিজ! ও নিজেকে খুব ছোট ভাবছে। সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। নানু খুব আপসেট হয়ে আছে।”

রৌদ্দুর দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল “হুম এটা আমিও ভেবেছি। ইমনকে ডাক ওর সাথে কথা বলাটা জরুরী।”

হানিয়ার মুখে হাসি ফুটলো। হামজাকে বলতে ও ছুটলো। হামজা একা এলো ইমন আসলো না। রৌদ্দুর বলল “আমি ওর রুমে যাবো? ও কী খুব রিয়াক্ট করবে?”

–“করাটা কী স্বাভাবিক নয়?”

রৌদ্দুর ওর বাবাকে সহ সকলকে চলে যেতে বলল ও একা ফিরবে। হামজা নিয়ে গেলো রৌদ্দুরকে ইমনের রুমে। হানিয়া আহছানউল্লা আহমেদকে বলল “এতো কেক কিনে নষ্ট হবে শুধু শুধু কে খাবে এতো? যে যা খাবে রেখে বাকিগুলো পথশিশুদের দিয়ে দিও। ওদের একটু পেট ভড়লো।”

–“আমি জানি তো এটা বলবি। আমার মা’টা ভারি লক্ষীমন্ত মেয়ে কি-না।”

–“হয়েছে আর পাম মারবেন না চাচু। বাসায় ফিরেন না হয়। ভিতরে চলেন এতো রাত জাগলে অসুস্থ হয়ে যাবেন।”

–“আহা! এই শাসনটা তুমি ছাড়া কেউ করে না, মা।”

হানিয়া হাসলো খালি কিছু বলল না।

———————-
ইমন রুমে রাগে গজগজ করছে রুমের জানালা দিয়ে রৌদ্দুরকে দেখেছে। এই ছেলেকে সহ্য হয় না তার সাথে কিনা তারই ভাগ্নী হেসে হেসে কথা বলছে কেক খাইয়ে দিচ্ছে। আবার তাকেও কেক খাওয়ার জন্য ডাকছে। এবার এসাথে দু’গাল লাল করে দিবে। বেয়াদবটার!

রৌদ্দুর নক না করেই রুমে ডুকলো। নক করে ডুকলে যদি ডুকতে না দেয়। দোষটা যেহেতু ওর শুধরানোর দায়িত্বও ওর। ইমন রৌদ্দুরকে দেখে মনে মনে ভিষণ চমকালো কিন্তু মুখে কাঠিন্যে বজায় রেখে বলল “এতোরাতে তুমি?”

–“তোমার সাথে কিছু কথা ছিল, ইমন।”

–“তোমার কথা শোনার ইচ্ছে নেই আমার। তুমি প্লিজ আমার সামনে থেকে যাও। তোমাকে দেখলে রাগ বাড়ছে।”

–“সেটাই স্বাভাবিক। আ’ম এক্সটেমলি সরি ইমন। আমি জানি সরি বললে সবটা ঠিক হয়ে যায় না। তবুও আমি আমার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছি। জেনি যখন আমাকে এই অফারটা দেয়। আমি না করে দি। কিন্তু ও আমার কথা মানে না। ভিডিওটা কয়েকবছর আগের…আ’ম সরি ইমন। আমার জন্য এই ভুল বা পাপ যেটাই বলো সবটা দোষ আমার যার জন্য তোমাকে সাফার করতে হচ্ছে। জেনি অবশ্য তার শাস্তি পাচ্ছে। আমি ও পাচ্ছি অপরাধ বোধে ভুগছি। আমি সবটা ঠিক করে স্ত্রী-মেয়ের সাথে সংসার করতে চাই। তুমি আমার ভুলের জন্য ক্ষমা করবে প্লিজ”

ইমন মিনিট ক্ষনেক চুপ থেকে বলল “তুমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছ এটাতেই খুশি হয়েছি। আর কখনো কোনো খারাপ কাজে নিজেকে জড়িয়ো না। এক বাচ্চার বাপ হয়ে গেছো। সে বড় হয়ে এসব জানতে পারলে কষ্ট পাবে।”

রৌদ্দুর খুশি হয়ে ইমনকে জড়িয়ে ধরে বলল “থ্যাংকিউ…থ্যাংকিউ সো মার্চ।”

তারপরের দিন সকালে সেজাদ আর শাবনূর বেগম চলে গেলো। সেজাদের অফিসে কাজ পড়ে গেছে। শাবনূর নাতিকে একা ছাড়বে না। সোনিয়ারাও আজ ফ্লাইটে উঠবে বলে জানালো।

হানিয়া হায়াত-হামজা স্কুল থেকে এসেছে স্টুডিওতে। জন্মদিনের কোনো কিছু করতে না চাওয়ার পরও সবটা করতে হলো রৌদ্দুরের মায়ের ধমকাধমকিতে তার এমন জোড় দিয়ে কাজ করানো স্বভাব। নিজের ব্যবসাটাও এক্সপোস হলো। এটাই মেইন পয়েন্ট। সেদিন আর মামার বাড়ি ফিরলো না ও বাড়িতে থেকে গেলো।

ইরাবতী বেগম রাতে ইমন, ইজাজ আর সালেহাকে নিয়ে নিজের ঘরে গোপন বৈঠক বসালেন। এই বৈঠকের আলোচ্য বিষয় কি সেটা ইরাবতী ছাড়া কেউ জানে না। অনেকক্ষণ উসখুস করতে দেখে ইমন বলল “মা কী শুরু করলে? বললে বলো না হলে গেলাম। ভালো লাগছে না আমার এসব।”

ইরাবতী এবার আর সময় নিলেন না রয়েসয়ে বলতে শুরু করলো “এই যে আমার সইয়ের নাতি আসলো তাকে কেমন দেখলি? কেমন মনে হলো?”

ইজাজ বলল “ভালোই।”

ইমন বলল–“সে ভালো কী খারাপ এটা আমাদের জেনে তো লাভ নাই।”

ছেলের এমন ত্যাড়ামোতে ইরাবতী কিছু বলল না বলল
–“হানিয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। ছেলেটা শান্তশিষ্ট, ভদ্র আমার ভালো লেগেছে। কী বলিস বড়খোকা?”

রুমের মধ্যে তিনজন স্তব্ধ হয়ে ইরাবতীর দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা দেখে ইরাবতী বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো সবাই? মেয়ে বড় হয়েছে বিয়ে দিবা না? তাছাড়া ওখানে একা একা থাকে বিপদ-আপদ তো আর বলে কয়ে আসে না। আর ওর কিছু হলে আমারও তো ছুটে সেখানে যেতে পারবো না। এই তো সেদিন জ্বর হলো আবার হোস্টেলে নাকি ওকে ওর সহপাঠীরা হাত-পা বাঁধছিল। যদি কিছু হয়ে যেতো। একা একা থাকে প্রস্তাবটা খারাপ দেখছি না। পড়াশোনাও করলো সংসার ও করবে। মেয়ে হয়ে জন্মেছে বড় হচ্ছে। আমার মেয়েটা নাই তাই বলে কী তার মেয়েকে আমরা ফেলে দিবো? দায়িত্ব আমাদের সুপাত্রের হাতে মেয়েকে হস্তান্তর করা।”

ইজাজ বলল “মা, তোমার কথা সমার্থ করি। কিন্তু মধুর সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ও না বললে আমরা জোর করতে পারি না।”

–“জীবনটা মধুর। সংসারটাও ও-ই করবে। সেখানে তোমার বা আমাদের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ নয়। মা। মধু কী চাই সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের থেকে ছেলেকে মধু বেশি দেখেছে ও-ই ভালো জানবে ছেলে কেমন! আর তোমাদের কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হবে না। আমিই শুনে তোমাদেরকে জানাব।”

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here