#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।০৪ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না
সকালে ঝলমলে রোদ। রুমের শুভ্ররাঙা পর্দাগুলো সেই রোদের আলোকে কক্ষে প্রবেশাধিকার দিবে না বলে কী তার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রোদ পর্দাকে কাঁচকলা দেখিয়ে পর্দা ভেদ করে ফ্লোরে লুটোপুটি খাচ্ছে। রাতে ভালো করে পর্দাগুলো টেনে দিতে মনে ছিল না। হানিয়া রুমের বেহাল দশা ঘুম থেকে উঠে বেড গোছানো হয় নি, কাল রাতের হলুদের ড্রেসটাও স্টাডি টেবিল চেয়ারের ওপরে অগোছালো ভাবে পড়ে আছে, মেকাপের জিনিসগুলো ডেসিনটেবিলের ওপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা এই অবস্থায় নতুন ভাবীকে তার রুমে এনে বোকামি করে ফেলল। হানিয়া বোকার মতো হেসে মাথা চুলকে বেডের ওপরের ব্ল্যাকেট একসাইডে সরিয়ে রাখতে রাখতে বলল
–“হে-হে! আসলে কী বলো তো ভাবী কাল এতো টেনশনে ছিলাম তাই আর কিছু গোছানো হয় নি।”
দোলা এতোক্ষণ মনে মনে হানিয়ার ওপরে রাগে ফেটে পড়ছিল ওর এমন স্বাভাবিক আচারণে দোলা অবাক না হয়ে পাড়ল না। দোলা দ্বিধায় পড়ে গেলো আমতা আমতা করে বলল
–“তোমার আমার প্রতি রাগ হচ্ছে না?”
হানিয়া ভ্রু কুঁচকে বলল “রাগ হবে কেনো? তুমি আমার কী ক্ষতি করেছ যে তোমার ওপরে আমার রাগ হবে?”
দোলা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে সরাসরি বলে ফেলল “কেনো আবার আমার জন্য যে তোমার বিয়েটা হচ্ছে না।”
–“ওহ কাম অন ভাবী! তুমি তো খচ্চর বেডা… আব… আসলে… মানে…!”
দোলা হানিয়ার কথা শুনে না হেসে পারল না। দোলাকে হাসতে দেখে হানিয়া বলল “হেসো না, তুমি আমাকে এই বিয়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলে। না হলে কী হতো বলো তো! যা-ই হোক রৌদ্দুর ভাইয়ের লাগাম টানো এভাবে ফেলে রেখ না। আমার কথা খারাপ লাগলে-ও তোমার ভালোর জন্যই বলছি। তুমি প্রেগনেন্ট বলেই এভাবে আমাকে জোর করে মিডিয়া না জানিয়েই বিয়ে সারতে চাইছিল না?”
দোলা চুপ হয়ে গেলো কী যেনো ভাবছে। ভাবুক ভাবা উচিত! হানিয়া ফ্রেশ হতে চলে গেলো এসে দেখলো দোলা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে বলল “কিছু বলবে?”
–“তুমি ছবির থেকেও সুন্দর। আচ্ছা, তোমার সত্যি কষ্ট হচ্ছে না তো?”
–“তুমি না ভীষণ বোকা! কেনো আমার কষ্ট হলে তোমার বরকে কী আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে? তোমার মনে হয় আমি ওমন থার্ডক্লাস ছেলেকে বিয়ে করব? নো ওয়ে…”
–“রৌদ্দুর যে বলেছিল রৌদ্দুর তোমাকে বিয়ে না করলে তুমি নাকি সুইসাইড এটম করবে। তাই তো বিয়েটা কাউকে জানাল না। বাচ্চাটা আসার পর বললাম জানাতে ও এ্যাবশন কর…”
দোলা থেমে গেলো যতোই হোক ওদের ভালোবাসার ফসল। এভাবে কী কোনো বাবা সন্তানকে মেরে ফেলার কথা বলতে পারে? তার ওপরে তাকে এভাবে ঠকাচ্ছিল। এতো বিশ্বাস এক নিমেষে শেষ করে দিল লোকটা! হানিয়া দোলার কাঁধে হাত রাখল বলল
–“এখনো বুঝতে পারলে না ও-ই কত বড় খেলোয়াড়। আমার ঠেকা পড়ছে আমার জীবন আমি ঐ ফালতু পোলার জন্য শেষ করে দিব? এতো সস্তা না-কি!”
দোলা মলিন হেসে বলল “তুমি বেশ চটপটে কথা বলতে পারো। কিন্তু বিয়েতে অমত থাকার সত্ত্বেও চুপ ছিলে কেনো? আমি না আসলে তুমি কী বিয়েটা করে নিতে?”
–“তোমার কী মনে হয়? কী করতাম? বিয়ে করে নিতাম?”
দোলা কী উত্তর দিবে বুঝতে পারল না, প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়ে রইল হানিয়ার দিকে। হানিয়া সেটা দেখে বলল
–“যে তোমাকে এখানে এনেছে সে আমার মামা হয়তো আমার সাথে ভিডিও দেখতে পেয়েছ। মামাই তো তোমার কাছে শুধু না রৌদ্দুর ভাই যে যে মেয়েগুলোর সাথে বেশি দেখা যায় সবার কাছেই গিয়েছে ছিল। কৌশলে নানান রকমের প্রশ্ন করে অনেক ইনফরমেশন পাই কয়েকজনকে বুঝিয়েও ছিল তাড়া আসবে বলেছিল সত্যটা সামনে আনার জন্য। কিন্তু তোমার কাছে যখন গেলো অনেক বড় প্রমাণ পেয়ে গেলো। অবশ্য, আমি জানতাম যে অনেকগুলো মেয়ে আসবে তাদের সাথে ভিডিও, পিক আসবে সকলে এসে ঠাশ, ঠাশ করে মারবে। আর আমি সেগুলো দেখে শান্তি পাবো। কিন্তু তোমার কথা ভেবেই হয়তো মামা শুধু তোমাকেই এনেছে।”
দোলা তাকিয়ে আছে। ওর বুকটা ভীষন ভারী লাগছে, চোখ দু’টো জ্বলছে, কান্না পাচ্ছে বোধ হয়। দোলা যানে সংসারে স্বামী নড়বড়ে হলে সে সংসার টেকে না, এভাবে সংসার করাও যায় না। ইমনের কাছে দোলা সবটা শুনে নি কিছু কিছু শুনেছে তাতেই ওর রাগ হয়েছিল কিছু বিশ্বাস করতে পারে নি কিন্তু এখানে এসে সবটা পরিষ্কার হয়ে গেলো। শুধু বাচ্চার জন্য! সিঙ্গেল মাদার হতেও ওর কোনো সমস্যা নেই। শুধু সন্তান বাবা ছাড়া বেড়ে উঠবে ভেবে এসেছে। এছাড়াও ওদের বিয়েটা যে কেউ জানে না যখন জানবে ও প্রেগনেন্ট তখন ওর চরিত্রেই সকলে কালি ছিটাবে। সমাজে বসবাস করাটাই দূষ্কর হয়ে যাবে। ওর ডেলিভারির সময় বাচ্চার বাবা কে? স্কুলে ভর্তির সময় বাচ্চার বাবা কে? দোলার কষ্টটা বাড়ছে সবটা তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় মেয়ে কাজিন-ভাবীরা হুড়মুড়িয়ে ডুকল রুমে। আলেয়া বলল
–“চুল ছিঁড়াছিড়ি করছ না-কি?”
–“ওসব ফালতু কাজ তুমি করো। আফটার অল, রৌদ্দর ভাই তোমার ক্রাস বলে কথা।”
হানিয়ার কথাটা শুনে আলেয়া অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। দোলা ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে। সকলে দোলাকে এটা ওটা প্রশ্ন করতে লাগল। হানিয়াকে ওর ফুপাতো ভাইয়ের বউ রুবা আর হায়াত টেনে সাইডে এনে বলল
–“এসব কী? কখন? কীভাবে হলো?”
হানিয়া ভ্রু কুঁচকে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল
–“মিসেস দিলরুবা আপনি কোথা থেকে উদয় হলেন? কাল তো ভাব মেরে আমার সাথে কথায় বললেন না। আর মিস হায়াত আপনি জানি কোথায় চলে যাবেন বলছিলেন যেতে পারেন। হুহ্! সাইড প্লিজ।”
হায়াত আর রুবা দু’জন মুখ কালো মেঘে ছেয়ে গেলো হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে তাকিয়ে রইল হানিয়ার যাবার পানে। অন্যরা তখন দোলাকে নিয়ে ব্যস্ত। নানাজন নানান রকমের প্রশ্ন করছে। কেউ কেউ খোঁচা মেরেও কথা বলছে।
হানিয়া গেলো ইমনকে খুঁজতে। পেয়েও গেলো হামজার রুমে। ইমনের অবস্থা দেখে হাসি মুখটা নিমেষেই গায়েব হয়ে গেলো। হাতে ক্ষত নিশাদ রক্তে ভেজা ব্যান্ডেজটা খুলছে নতুন করে ব্যান্ডেজ লাগবে। হানিয়াকে তিনজনের কেউ খেয়াল করল না ওদের মতো বকবক করে যাচ্ছে। হানিয়ার অক্ষিকোটরের অশ্রু কণা এসে ভিড় জমলো অস্ফুটস্বরে ডেকে উঠল
–“মা্ মামা!”
চলবে ইনশাআল্লাহ