চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৪১ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
290

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৪১ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

বিকালে তখন গোধূলি বেলা সূয্যিমামা ডুবুডুবু রৌদ্রর ছটায় আকাশ লালচে কমলাটে হয়ে আছে। ভ্যানে করে সকলে মেলায় এসেছে। গ্রাম্যমেলায় বিভিন্ন ধরনের স্টল বসেছে। রংবেরঙের হওয়ায় মিঠাই। নাগরদোলা, পুতুলনাচ, বিভিন্ন ধরনের পিঠা ইত্যাদি। ওরা দলে দলে ভাগ হয়ে গেছিল মেলায় এককজন একরকমের জিনিস পত্র দেখছিল। হঠাৎ ওদের সাথে আসা মিনা মেয়েটা ভয় নিয়ে আচমকা হানিয়াকে ডাকল। ও হেসে কী জিজ্ঞেসা করলো মেয়েটা নিচু হতে বলল ও নিচু হতে কানে কানে বলল “বড় ভাইয়া তোমাকে ঐ দিকটাই যে শিমুল গাছ আছে সেখানে ডাকছে। কি জানি জরুরি কথা বলবে।”

বলে দৌড়ে চলে গেলো হানিয়া একবার ভাবলো যাবে না জিনিস পত্র দেখতে লাগলো। আবার কী বলবে কৌতুহল দমাতে না পেরে মেয়েটার দেখানো দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।

সেজাদের অফিসের কল এসেছিল তাই ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। হানিয়া এসে পিছনে দাড়িয়ে বলল “আমাকে ডেকেছেন কেনো?”

সেজাদ পিছনে ফিরে হানিয়াকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। ফোনে বলল “আই কল ইউ ব্যাক।” বলে কেটে দিল।

চাঁদের আলোয় হানিয়া মুখে পড়ছে। লাল টুকটুকে রঙের থ্রি-পিসে ঘোন্টা দেওয়ায় বউ বউ লাগছে। গলা শুকিয়ে গেলো। এই মেয়ে আর কত রূপে মুগ্ধ করবে ও জানে না। বলল “সরি, কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি আপনাকে ডাকি নি।”

–“ঐ মেয়েটা তো আমাকে এখানে আসতে বলল আর বলল আপনি আমাকে ডাকছেন। কী জানি জরুরি কথা বলবেন।”

–“আপনার সাথে আমার কী রকমের জরুরী কথা থাকতে পারে? কোনো রকমের কথা যে থাকতে পারে এটা আমার জানা নেই। তা-ও আবার জরুরী! ওরা হয়তো মজা করছে। এইটুকু কমনসেন্স থাকা উচিৎ।”

সেজাদের এমন শক্ত কণ্ঠে বলা কথাগুলোয় হানিয়ার অপমানে মুখ থমথমে হয়ে গেলো। কিছু না বলে ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্ধুদ্ধ হতে। বাইকে আসা দুইটা ছেলের মধ্যে একজন হানিয়ার বাহুতে জোরে ধাক্কা দিলো। হানিয়া হঠাৎ ধাক্কা খাওয়ায় টালসামলাতে না পেরে ছিটকে ঝোপঝাড়ে গিয়ে পড়ল। সেজাদ আঁতকে উঠল মৃদু চিৎকার করে বাইকারের উদ্দেশ্য করে বলল “হেই ইউ স্কাউনড্রল”

হানিয়া ঝোপঝাড়ের কাঁটা বিঁধে গেছে। ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি এসে গেলো। সেজাদ ওর পাশে ঝুঁকে বসে বলল “আর ইউ ওকে?”

হানিয়া কাতর ভাঙা গলায় বলল –“আমি উঠতে পারছি না। আমার হাত কোথায় আঁটকে গেছে।”

ওর এমন গলায় ওর বুকটা কেমন ধক করে উঠলো বলল
–“একটু চেষ্টা করুন পারবেন। আমি হেল্প করছি।”

হানিয়া হাত টানাটানিতে হাতের বাহুর কাছে জামা ছিঁড়ে বাহু দিয়ে রক্ত ঝড়তে লাগলো। সেজাদ ওকে জড়িয়ে ধরল “ব্যাথা করছে? এখনি সেরে যাবে।”

তখনই কয়েকজন মহিলা-পুরুষ একত্রে আসলো বলল “ছিহ্ ছিহ্ রাস্তায় ফাঁকা জায়গায় পাইয়া পোলাপান জড়াজড়ি করে নষ্টামি করতাছে। হাই হাই।”

–“ছেলেটা মনে হইতাছে মাইয়াডারে জোড় করতাছে।”

–“আরে ঐ দেখ শহুরে নায়কা এদের চরিত্র এমনই হয় যার তার সাথে…”

ওদের একাকজনের মন্তব্যে হানিয়া সেজাদ হতভম্ব হয়ে গেলো। শেষের জনের কথা শুনে সেজাদের রাগ বাড়লো ধমকে বলল “এনাফ… না জেনে উল্টো পাল্টা কমেন্ট করছেন কেনো? প্লিজ টপিট”

–“দেখছোস দোষ করে এখন বড় বড় কথা বলছে। এতো গুলান মানুষ আমরা কী ভুল দেখলাম?”

–“আর মেয়েটারও তো জামা ছিড়ে। নোংরামির জায়গায় পাইনা এরা।”

সেজাদ মাথা ঠান্ডা করে বলল
–“দেখুন, আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। এখানে এক্সিডেন্ট হয়ে…”

–“দেখতাছিস, সবাই এরাম আকাম-কুকাম করার পরে বলে। দুইটাকে বিয়ে দাও নাইলে পুলিশে দাও”

–“পুলিশে দিলে টাকা দিয়ে বের হয়ে যাবে। বিয়ে দিয়ে দে বিয়ের পর যা খুশি করুক।”

হানিয়া খেঁপে বলল “কখনো না। কিসের বিয়ে? কোনো বিয়ে হবে না।”

–“দেখুন ভুল হচ্ছে বললাম তো!”

ওরা আরো আজেবাজে কথা বলতে লাগলো। আরো লোকজন জড়োসড়ো হলো ওদেরকে ধরে মসজিদে নিয়ে গেলো। কেউ ওদের কথা শুনলো না। হানিয়া যখন বুঝলো এদের কিছু বলে লাভ নেই চুপ হয়ে পাথর বনে গেলো চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। সেজাদেরও মাথা গরম হয়ে আছে। চেয়েও কিছু করতে পারছে না। হানিয়ার ‘কবুল’ বলতে গিয়ে ভাইবোন, বাবার মুখ মনে পড়লো। বহু কষ্ট অক্ষরের শব্দ বলল। সেজাদ হানিয়ার দিকে তাকিয়ে কবুল বলে দিলো। জুড়ে গেলো তারা। এর শেষ কোথায়? পরিনতি কী? কেউ জানে না।

ওরা চুপচাপ পাথরের মতো বসে আছে চারিপাশে কী হচ্ছে ওরা জানে না। হানিয়ার চোখ দিয়ে অনর্গল পানি গড়িয়ে পড়ছে। বিয়ে শেষে কিছুক্ষণ পর ইমন, হামজা-হায়াত, ইফাজ, সুভানা, সোনিয়া, সাঈদ, সায়ম, সোহানরা দৌড়ে এলো। ইমনকে দেখে হানিয়া আহ্লাদে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। হামজা হায়াত বিশ্বাস করতে পারলো না তাদের বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ইমন রেগে বলল “এসব কী করে হলো? আর আপনারা কেমন মানুষ?”

ওরা কিছু বলল না। হানিয়া বলল “আমি ঢাকা যাবো এখনই।”

সোনিয়া ভাইয়ের পাশে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলো ও প্রতিক্রিয়া করলো না উঠে দাঁড়িয়ে বলল “বাসায় যাওয়া উচিৎ!”

ওরা চুপচাপ মেনে নিলো। হানিয়া জেদ ধরলো বাসায় ফিরবে কিন্তু ইমন বোঝালো “রাত হয়ে গেছে কাল ফিরবে।”

বাসায় ফিরে সুভানার অন্য ভাইবোনগুলো সেজাদ হানিয়ার বিয়ের বিষয়টা সম্পর্কে জানিয়ে দিলো। সকলে স্তব্ধ হয়ে গেলো। সেজাদ সকলে পুরো বিষয়টা সম্পর্কে জানালো। হানিয়া সেই যে চুপ করে রুমে ডুকলো রাতে আর বের হলো না। কেউ এর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলো না ইরাবতী বেগম আর শাবনূর বেগম বলল “বিয়েটা তো ছেলেখেলা নয় বিয়ে বিয়েই। তাই বিয়ে যখন হয়ে গেছে ভাঙা তো যাবে না৷ ওরা সময় নিক তোমরাও সবাই বোঝাও ওদেরকে ওরা বুঝবে।”
খেলেও না হায়াত, হামজা কিছু বলার সাহস পেলো না বোনকে।

সোনিয়া ভাইয়ের রুমে আসলো। সেজাদ শান্ত হয়ে বসে আছে। সোনিয়া ওর পাশে বসে বলল “তোর কী হানিয়াকে পছন্দ না?”

সেজাদ উত্তর দিল না বসে রইলো। ও আবারও বলল “সাঈদ বলল তুই হানিয়াকে পছন্দ করিস তাহলে এতো দ্বিধা সংশয় কেনো, ভাই?”

–“ও আমাকে পছন্দ করে না। বিয়ে বিষয়টা অনেক দূরের ব্যাপার। ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়েছে।”

–“আর তোর ইচ্ছেতে কী হয়েছে?”

–“দেখ আপু, আমি ওকে পছন্দ করি। তাই বলে বিয়ে কথা কখনো ভাবিনি। আর সেখানে এমন বিশ্রী ঘটনা দিয়ে বিয়েটা হলো। এর ভবিষ্যৎ কী? ও জানে আমি ওকে পছন্দ করি। মেয়েদের সিক্সসেন্স এসব ক্ষেত্রে ভালোই কাজ করে। ওসবটা জেনেও সবসময় ডিসটেন মেনটেন করে চলত।”

–“শুন ভাই, আগে কী হয়েছে না হয়েছে ওসব বাদ দে। তোরা এখন স্বামী-স্ত্রী। বিয়েটা তো কোনো ছেলেখেলা নয়। নিজেদেরকে সময় দে। তোরা কথা বল সম্পর্কটা এগিয়ে নিয়ে যা। আমি হানিয়ার সাথে কথা বলল…”

রাত তখন গভীর সকলে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লেও গুটিকয়েক মানুষের চোখের পাতায় ঘুম নেই। হানিয়া চেয়েও ঘুমাতে পারছে না। চোখ দিয়ে অনর্গল পানি গড়িয়ে পড়ছে। চোখ ইতি মধ্যে ফুলে ফেঁপে উঠছে। সর্দি হয়ে গেছে। পানি তৃষ্ণা পেয়েছে উঠে বসলো পাশে সুভানা, হায়াত ঘুমাচ্ছে। বোতল খালি পানি নেই। নিচে গেলো। টেবিলের ওপরে পানির জগ থেকে পানি খেলো তখনই দু’টো ছায়ামূর্তি দেখতে পেলো। পানি খেয়ে কৌতুহল নিয়ে সেদিকে গেলো। সেখানকার একজন লোককে দেখে আর কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।

–“কাজ ভালো হইছে তো, মা?”

–“হ হইছে। খুশি হয়ে এখানে তোদের জন্য বোনাস সকলে মিষ্টি কিনে খাস। আর ওদের দু’জনের জন্য দোয়া করিস। ওরা যেনো সুখে সংসার করতে পারে। ”

–“হ্যাঁ তা তো দু’জনকে সুন্দর মানাইছে মা”

–“হ এখন যা। কেউ এসে গেলো সমস্যা হয়ে যাবে।”

লোকটা চলে গেলো। মহিলাটাও পিছনে ফিরে হানিয়াকে দেখে ভড়কে গেলো বলল “তুমি!”

–“সবটা সাজিয়ে বিয়ে দিলেন? এতো খারাপ আপনি? ছিহ্! কখনো এ বিয়ে মানব না আমি।”

বলে চলে যাওয়ার জন্য কয়েকপা এগিয়ে যেতে বলল “আমি কেনো এমনটা করছি শুনবে না? শুনে তোমার মনে হলে তুমি মানবে নাহলে না।”

ও থেমে গেলো। কী বলতে চাই সে?

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here