#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৪৩ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না
বনানীতে নামি-দামি এক রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে সেজাদ আর হানিয়া। বিকাল হওয়ার দরুন তাদের রেস্টুরেন্টে ডেকোরেশনের জমকালো আয়োজনের আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে। সামনে ধোঁয়া উঠা কফির কাপ কেউ কোনো কথা বলছে না। হানিয়া বিরক্ত হয়ে উঠলো। সেজাদের দিকে তাকিয়ে ভাবল এই লোক এমন কেনো? নিজে কিছু বলছে না। সব কী সে শুরু করবে? হানিয়া হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল “আপনি কী ভাবছেন?”
সেজাদ ভাবলেশহীন ভাবে কফিতে চুমুক দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে উত্তর দিল “ভাবছি এই ওয়েদারে সফটমিউজিক হলে ভালো হতো!”
হানিয়া বিরক্তর চূড়ান্তে পৌঁছে গেলো বলল “আমি আমাদের বিয়ে ইস্যুটাকে মিন করছি। সে ব্যাপারে কী ভাবছেন? কী চান আপনি?”
সেজাদ হানিয়া দিয়ে শান্ত দৃষ্টি তাকিয়ে বলল
–“আমি যা চাই তা দিবেন সেটার শিওরিটি দিলে আমি কী চাই বলবো।”
হানিয়া মনে মনে একটু ভীত হলো বলল “কী চান? সম্ভব হলে দিবো।”
সেজাদ কালবিলম্ব করলো না ফটাফট বলে দিলো
–“আপনাকে চাই। আপনার সাথে বাকি জীবন কাটাতে চাই। আপনার সাথে বৃদ্ধ হতে চাই। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আর ঘুম থেকে উঠে আপনার সুশ্রী দেখতে চাই। দিবেন আপনিটাকে?”
হানিয়া হতভম্ব হয়ে গেলো। সেজাদ যে এভাবে এমন ধরনের কথা বলতে পারে বা বলবে ওর ধারণা ছিল না। পুরো কথা অবাকের সাথে মুগ্ধ হলো সাথে নাড়িয়ে দিয়ে গেলো শেষোক্ত কথা ‘দিবেন আপনিটাকে?’ কি বলবে ও? নিজেকে দিয়ে দিবে? সস্তা নাকি ও?
–“মিস্টার. সেজাদ এহসান, আমার সাথে হোল্ড লাইফ কাটানো এতো ইজি নয়। আমাকে যেমন দেখেন এতো ভালো নয় আমি। আমার ওপরে একসময় বিরক্ত এসে যাবে তখন কী আমাকে ডিভোর্স দিবেন? তখন দেওয়ার চেয়ে এখন দেওয়া বেটার না?”
সেজাদ চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস ছেড়ে বলল
–“ডিভোর্স ওয়ার্ডটা আমি ভিষণ হেইট করি, হানিয়া। আপনি আমার সাথে থাকতে না চাইলেও সমস্যা নেই আপনি যেতে পারেন।”
–“ডিভোর্স বা তালাক ছাড়া কীভাবে যাবো? আপনি যে স্বামীর অধিকার ফলাতে আসবেন না তার কী গ্রান্টি আছে?”
–“এসব কথা কেনো উঠছে। আপনি কিন্তু বলেছিলেন আমি যা চাই আপনি সম্ভব হলে দিবেন। এটা তো আপনার অসম্ভব কিছু নয়।”
–“আমার অনেক দায়িত্ব, সেজাদ! আমি সংসার নামক বেড়াজালে পড়ে সে দায়িত্ব ভুলে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।”
–“আপনার দায়িত্ব মানে আমারও দায়িত্ব হানিয়া। আপনি ভুলতে গেলেও আমি আপনাকে ভুলতে দিব না।”
হানিয়া চোখ মুখ কুঁচকে বলল
–“এতো পাটানোদের কথা বলছেন কেনো? আপনার এসব কথা শুনলে আমি গলে যাবো মনে করছেন? সেটা কখনো হবে না।”
সেজাদ হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বলল
–“আপনি কী সেদিনের জন্য আমাকে মানতে পারছেন না। বাট ট্রাস্ট মি আমি কখনো কোনো মেয়ের সাথে এমনটা করি নাই। ফাস্ট কী যেনো হলো।”
–“তাও আমার সাথেই কী লাক দেখেন!”
–“সরি আমি গ্লিল্টি ফিল করি।”
হানিয়া চুপ করে রইল। সেজাদ বলল “আর কী খাবেন?”
–“কিছু খাব না। আমি চলে যাব।”
–“ডিসিশন কী নিলেন?”
–“দেশ দুনিয়ায় থাকতে ভালো লাগছে না। মঙ্গল গ্রহে যাবো এটাই ডিসিশন।”
–“আমাকে আপনার সাথে নিয়ে যাবেন।”
–“আপনি আমার সাথে মজা করছেন?”
–“আপনিও তো করছেন।”
হানিয়া চুপ করে ছোট ছোট চুমুক দিয়ে কফি খেতে লাগলো। সেজাদ সেটা দেখতে দেখতে নিজেও কফি খেলো।৷ হঠাৎ সেজাদ প্রশ্ন করল
–“আপনি কেমন আছেন, হানিয়া?”
–“যেমন থাকার কথা তেমনই আছি।”
–“আপনি এতো ত্যাড়া ক্যানো বলেন তো!”
–“জেনেটিকালি”
–“তাহলে আমাদের বেবিরাও আপনার মতো হবে?”
হানিয়া কফিতে খেতে খেতে সেজাদের কথা শুনে বিশুম লেগে গেলো। সেজাদ ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে আর আয়েশ করে কফি খাচ্ছে। হানিয়া সেটা দেখে নিজেকে শান্ত করে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলল “কত সহজ তাই না? আমি একবারও বলেছি আপনার সাথে বিয়েটা আমি মেনে নিয়েছি? ফিউচার নিয়ে এতো ওভারথিংকিং ভালো না বুঝলেন!”
–“আপনি একটু আগেই বলেছেন আমি যা চাই সম্ভব হলে আপনি দিবেন। এটা তো অসম্ভব কিছু নয়।”
–“আমার সময় লাগবে। আপনাকে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।”
–“আমাকে ভয় পাচ্ছে? একবার হাত ধরেই দেখুন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ধরে রাখবো।”
–“আজ বেশি ডায়লগ বাজি করছেন।”
–“যেটা মনে করবেন। বাট আমি এই মূহুর্তে আপনার সাথে যে এতো কথা বললাম। এতো কথা আমি কখনো ফ্যামেলির সাথেও বলা হয় নি। আপনার সাথে কথা বলতে আমি কম্ফোটেবল ফিল করি। যা অন্য কারোর সাথে পারি না।”
–“সেটা আপনার ব্যর্থতা। শুনলাম আপনি নাকি আমাকে টাকায় মুড়িয়ে রাখবেন। কথা কী সত্য?”
সেজাদ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল হানিয়ার দিকে। ওর মাথায় কি চলছে সেটা বোঝাই চেষ্টা চালাচ্ছে।
–“আমাকে অন্য পাঁচটা মেয়েদের মেন্টালিটির সাথে মেলালে সে বিষয়টা ভালো হবে না। আমি পছন্দ করি না। যদি আপনার সাথে আমার সংসার করার কথা লেখা থাকে। তাহলে মাথায় রাখবেন। আপনার জন্য আমার আত্নসম্মানে এতোটুকু আঘাত আসলে আপনি আমাকে হারাবেন।”
সেজাদের মুখে হাসি ফুটে উঠল বলল “আমি আমার স্ত্রী’র অসম্মান হয় এমন কিছু কখনো করব না বা বলব না তার সম্মান রক্ষার জন্য সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবো।”
হানিয়া সেজাদের দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে রইল। সেজাদ হেসে বলল “কী খাবেন বলুন?”
–“কিছু খাবো না বললামই তো!”
হানিয়ার ফোন আসলো নিশাদ ফোন দিয়েছে। –“হ্যালো!”
–“হ্যালো! হুম, বল?”
–“কোথায় তুই?”
–“কেনো?”
–“কেনো মানে যেখানেই থাকিস আধঘন্টার মধ্যে বনানীতে আসবি।”
–“কেনো?”
–“কেনো মানে? সব কেনোর উত্তর হয় না।”
–“আমার কেনোর উত্তর না দিলে আমি যাবো না।”
–“দূর, আমার এক্সাম শেষ রিলাক্স করবো তাই সিনেমা দেখবো। হামজা-হায়াত, ইমন, ইফাজ আসছে।”
–“বাহ! তোর পরিক্ষা শেষ হায়াত হামজা পরিক্ষা তো শেষ হয় নি। তুই কোন আক্কেলে ওদের সিনেমা দেখতে যাস? মানে তোর কমনসেন্স খেয়ে ফেলছিস?”
–“আমার কমনসেন্স তোর বোন খেয়ে ফেলছে। কতদিন তোর বোনকে দেখি না। আজ-কাল ফোনও ধরে না। খুব তোর বোনের।”
–“তুই বাড়াবাড়ি করছিস”
–“বাড়াবাড়ির দেখলি কী? এখনো তো কিছু শুরুই করলাম না। তাড়াতাড়ি আয় নাহলে তোর বোনকে নিয়ে কাজী অফিসে ঢুকে যাবো।”
–“তুই আমাকে শান্তি দিবি না?”
–“নাহ!”
বলে ফোন কেটে দিল। সেজাদ বলল “এনি প্রবলেম?”
–“নাহ। আমাকে যেতে হবে।”
–“চলুন পৌঁছে দিচ্ছি।”
–“কোনো দরকার নেই।”
–“আমার দায়িত্ব আপনাকে পৌঁছে দেওয়া।”
–“এতো দায়িত্ববান আপনি?”
–“সেটা বরাবরই!”
–“বাহ! বাট আমি বাসায় যাচ্ছি না সিনেমা হলে যাচ্ছি যাবেন?”
সেজাদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল।
–“চাইলে সুভানা, সায়েম ভাইয়া, সোনিয়া আপুদেরও ডেকে নিতে পারেন।”
চলবে ইনশাআল্লাহ