চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৪৪ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
350

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৪৪ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

সন্ধ্যার ব্যস্ত রাস্তার জ্যাম ঠেলে সেজাদ হানিয়া গিয়ে পৌঁছালো সিনেমা হলের সামনে সেখানে আগে থেকেই নিশাদ ও ইমনরা সকলে অপেক্ষা করছি। ওদের দু’জনকে এক সাথে দেখে সকলে আকাশ থেকে পড়লো এমন ভাবে তাকালো। তারা এমন অসম্ভব দৃশ্য নিজের চোখে দেখে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। নিশাদ হতভম্ব হয়ে বলল
–“কেউ আমাকে চিমটি দিয়ে স্বপ্নটা ভাঙিয়ে দাও”

মনে মনে অবাক হলেও স্বাভাবিক ভাবে নিলো। নিশাদের কথা শুনে সুযোগ পেয়ে এক চিমটি দিয়ে নিজের রাগ ক্ষানিটা প্রকাশ করে শান্তি পেলো। এমন এক মূহুর্তে নিশাদের চিৎকার পেয়ে সকলে ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ওর হাত লাল হয়ে গেছে। নিশাদ হামজার দিকে তাকিয়ে বলল
–“কত বড় বিয়াদপ তুই বড় ভাইকে সুযোগ পেয়ে মারোস!”

হামজা ঠোঁট উল্টে বলল
–“তুমিই তো বললে চিমটি দিয়ে স্বপ্ন ভাঙাতে। এখন আমি বিয়াদপ হয়ে গেলাম।”

–“মুখে মুখে কথা বলবি না মে*রে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে দিব।”

হানিয়া বলল “তোর কতবড় কলিজা আমারে দেখা তো! তুই আমার সামনে আমার ভাইকে হুমকি দেস।”

নিশাদ হানিয়াকে সেজাদের পাশ থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল “সরসর ভাইয়ার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ একটু কোলাকুলি করি” বলে জড়িয়ে ধরলো। সেজাদ একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। নিশাদ বলল
–“ভাই আপনি আমার কত বড় উপকার করলেন জানেন? এতো বড় উপকার কেউ করার সাহস দেখায় নাই।”

সেজাদ বুঝতে না পেরে বলল
–“মানে বুঝলাম না!”

–“আসলে আপনার বউ আমার বিয়ের পথের কাঁটা এতোদিন কতবার যে বলেছি বিয়ে কর বিয়ে কর। আমার লাইনটা ক্লিয়ার কর। উল্টো আমার গায়ে হাত তুলে। কত বড় ভিলেন ও আস্তে আস্তে টের পাবেন। আপনার জন্য আমার দুঃখও হচ্ছে কেমন বউ পেলেন। আসলে আপনার কপালটাই খারাপ।”

–“হয়েছে আমার নামে ক্রিটিসিজেম করা?”

–“না হয় নি। ভাই আপনি কিন্তু আমার দলে বউয়ের দলে যাবেন না। আপনি ছেলে হয়ে আমার কষ্টটা বুঝবেন।”

সেজাদের সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। নিশাদ এমন রহস্য করে কথা বলছে। হানিয়া ইমনকে আরো টিকিট কাটতে বলল সুভানারাও আসছে। হায়াত হামজা ভয়ে আছে পড়াশোনা রেখে সিনেমা দেখতে আসার জন্য না আমার তাদের বোন খেঁপে যায়।

ওদের কথার মাঝে সুভানারা উপস্থিত হলো। ওরা হানিয়া আর সেজাদকে একসাথে দেখে খুশি হলো। ওরা সবাই যে যা সিটে বসে পড়লো কিছুক্ষণের মধ্যে মুভি শুরু হবে। হায়াতের একপাশে ইফাজ বসেছে। আরেক পাশে নিশাদ বসতে গেলে হানিয়া খেপে গেলো বলল “তুই ওর পাশে বসছিস কেনো? আর জায়গা নেই?”

–“শোন পাবলিক প্লেসে হারামিগিরি করবি না। তোরা নিউকাপল একসাথে বস তোরা তোদের মধ্যে ডুবে থাকবি। তা না! তোর বোনের জন্য আমি আছি।”

হায়াত নিশাদের কথায় লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। সে জানে এই লোকটা বেহায়য়া, নির্লজ্জ, মুখের লাগাম নাই। হানিয়া রেগে বলল
–“সাইকোর বাচ্চা, তুই চুপ থাক। হামজা হায়াতের পাশে বস।”

হামজা দাঁত কেলিয়ে হেসে হায়াতের পাশে বসলো। ওর পাশে হানিয়া এসে বসে গেলো। হানিয়া সেজাদের হাত টেনে তার পাশে বসিয়ে দিলো। নিশাদ শুধু হতভম্ব হয়ে দেখে গেলো বলল “সব কয়টা নিমকহারামির দল। ভাবলাম প্রেম করবো। শালাশালীরা পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়”

কিছুক্ষণের মধ্যে সেজাদ বুঝে গেলো নিশাদকে হানিয়া সাইকো বলায় যে নিশাদ হায়াতকে ভালোবাসে। হাসিও পাচ্ছে এদের কান্ডকারখানা, কথায়। সকলে হাসিমজায় মুভি দেখতে লাগলো। মুভির মাঝে হামজা ওয়াসরুমে উঠে গেলে। নিশাদ দৌড়ে গিয়ে বসে পড়লো। এমন একটা চান্সের আশায় চাতক পাখির মতো বসেছিলো। আর পেয়েও গেলো। হানিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল
–“বেহায়া একটা। জীবনেও মানুষ হবি না?”

–“নেহি একটা চান্সও মিস যাবে না।”

–“আমি এখানেই আছি। ভুলভাল কিছু দেখলে মার খাবি।”

–“তোর যদি ছোট বোনের প্রেম দেখতে লজ্জা না লাগে তাহলে আমরাও কাজ চালিয়ে যাবো।”

সেজাদ ওর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে সেই যে হানিয়া হাত ধরেছে এখনো ধরেই আছে ছাড়ে নি। ওর এই ছোট্ট ব্যাপারটা ভালো লাগছে। অন্য হাত দিয়ে হানিয়ার হাত টেনে ফিসফিস করে বলল “নিজেই তো হামজাকে তুলে দিলেন। এখন এমন করছেন কেনো?”

হানিয়া আরামদায়ক চেয়ারে হেলান দিয়ে হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল
–“ আপনি বুঝবেন না।”

মুভি শেষে সকলে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলো। সোনিয়া হানিয়াকে টেনে ফাঁকা জায়গায় এনে বলল “থ্যংকিউ হানিয়া। তুমি যে এতো তাড়াতাড়ি সবটা মেনে নিবে ভাবি নাই। খুব টেনশনে ছিলাম। যাই হোক, আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার ভাইটা চুপচাপ তুমি একটু মানিয়ে নিও।”

–“চেষ্টা করব আপু। দোয়া করবেন।”

–“তাতো অবশ্যই। তাহলে বাসায় গিয়ে বলি তোমাদের বিয়ের একটা অনুষ্ঠান করতে?”

–“আপনাদের ইচ্ছা।”

সেজাদরা গাড়ি করে চলে গেলো। ওর হানিয়াকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। তবুও যেতে তো হবে। মেয়েটার মাথায় কখন কী ঘুরে ও নিজেও ভালো করে বুঝতে পারছে না। ও হানিয়াকে কোনো ব্যাপারে জোর করতে চাই না। ওরা চলে গেলে। ইমন বলল “সব নিজের ইচ্ছেতে করছিস তো? নাকি তোকে কেউ জোর করছে?”

–“নিজের ইচ্ছেতে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি চাই না আমার জন্য নানু তার বন্ধুবীর কাছে ছোট হোক বা কোনো রকমের কথা শুনুক বা আমার জন্য তাদের সম্পর্কটা ভেঙ্গে যাক।”

হামজা তাকিয়ে রইল বোনের দিকে এতো লজিক্যালি সব দিক মাথায় রেখে কীভাবে সুন্দর সিদ্ধান্ত ন্যায় ও বুঝে উঠতে পারে না। হানিয়া এবার ভাইবোনের দিকে তাকিয়ে বলল “আর তোরা দুইটা” ওরা দু’জন ভয় পেয়ে গেলো।

হানিয়া কঠিন গলায় বলল
–“তোরা দুইটা যদি বোর্ড এক্সামে ফেল করতে চাস তাহলে কষ্ট করে এক্সাম দেওয়া লাগবে না। তোদেরকে নিয়ে টেনশন করতে আমার ভালো লাগে না। তোদেরকে নিয়ে কিছু বলার নেই আমি যে লুজার সেটা তোরা প্রুভ করে দিস।”

হায়াত-হামজা মাথা নিচু করে নিলো হানিয়া কখনো এভাবে কিছুই বলে না। এমন কঠিন গলায় কথা শুনে হায়াতের চোখে পানি এসে গেলো। হামজা নির্বিকারের মতো থেকে বলল “আপি তুই যে ক’দিন দেশে থাকবি সে ক’দিন প্লিজ নানুবাড়িতে থাকবি।”

–“আমাকে নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না। এক্সামে কীভাবে পাশ করবি সেটাই চিন্তা কর, ভাব। অন্তত পাপার সম্মানটা রাখার জন্য হলেও চেষ্টা করিস।”

হায়াত চোখের পানি মুছে বলল “একবারই তো খারাপ হয়েছে আর হবে না।”

–“একবার হয়েছে মানে আবার যে হবে না তার কী গ্যারান্টি? কিছু বললে তোমার চোখ আটো কল হয়ে যায়।”

হায়াত ফুপিয়ে উঠলো বলল “এভাবে কথা বলছিস কেনো আপি? আমার ভিষণ কষ্ট হচ্ছে।”

–“কীভাবে কথা বলেছি? আদর দিয়ে কথা বললে তো গদোগদো হয়ে যা-ও। পড়ালেখা লাটে তুলে তোমরা এসেছ সিনেমা দেখতে বাহ!”

ইমন বিরক্ত হয়ে বলল “ওফফ বাদ দে তো। ওরা ভালো করে পড়বে।”

–“তুই চুপ থাক মামা। আগুনে আর ঘি ঢালিস না।”

নিশাদ গম্ভীর কণ্ঠে বলল “তুই বায়োলজিতে ফেল করেছিস আমাকে জানাস নি কেনো হায়াত?”

–“কেনো খুশি হোস নি? আরো কয়েকটায় ফেল করলে খুশি হতি? আমি নিষেধ করেছিলাম। পরিক্ষার সময় পেন দিবি না ওকে। আমি জানি আমার কোনো কথার মূল্য নেই তোদের কাছে। না হায়াত না হামজা না তোর কাছে। তোর কথা বাদ দিলাম যেখানে নিজের ভাইবোনই দাম দেয় না সেখানে তুই! হাহ্!”

–“দেখ, আমি বুঝতে পারি নি এমন হবে। আর তুই ওভার রিয়াক্ট করছিস।”

–“হুম আমার সব কিছু তোদের কাছে বেশি মনে হবে। যায় হোক বাসায় যা আমার কিছু কাছ আছে ও বাড়িতে। কাল ফিরব।”

হানিয়া পিছনে ফিরে হাঁটা ধরলো। কাউকে মন বোঝাতে পারে না। কেউ বুঝে না তাকে। মুখে হাসি চোখে পানিতে সামনে ঝাপসা দেখছে দেখে মুছে নিল পানি। হামজার চোখেও পানি চলে এসেছে বোনের এসব হাবিজাবি কথায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here