#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৪৫ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না
হায়াত-হামজার সে রাতটা কাটলো মন খারাপে। তাদের জন্য তার বোন লো ফিল করে এটা ভাবতেই ওদের কান্না পাচ্ছে। রাতে ঘুমাতে পারলো না অস্থিরতায়। ভোরে আর ডাকা লাগলো না করোর দু’জনে উঠে পড়তে বসলো। সালেহা বেগম অবাক হলেও খুশি হলেন। হানিয়া পরেরদিনই ফিরে এলো। হায়াত হামজার সাথে ভালো করে কথা বলল না ওরা বললেও রেগে গম্ভীর হয়ে কথা বলেছে। হানিয়া বুঝতে পেরেছে ভাইবোনকে আহ্লাদ দিলে তারা পেয়ে বসবে। আহ্লাদে গদগদ হয়ে ভেসে যাবে।
দুদিনের মধ্যে দুইপরিবার হানিয়ার ফুপু, চাচা এক জায়গায় হয়ে ডিসিশন নিলো একটা অনুষ্ঠান করা হবে। হানিয়া অমত পোষণ করে বলল “বড় অনুষ্ঠান করতে চাই না। দু বাসার যারা উপস্থিত আছো তাদের নিয়েই। ছোট করে অনুষ্ঠান করো সমস্যা নেই।”
ইরাবতী বেগম ধমকে উঠে বলল “অনুষ্ঠান করলে বড় করে করবে। তোর ইচ্ছে নেই বলে আর কারোর ইচ্ছে থাকতে পারে না?”
হানিয়া চুপ করে রইল। সেজাদ সেটা দেখে বলল “আমার মনে হয় এখন কোনো অনুষ্ঠান না করাই ভালো। হায়াত হামজার বোর্ড এক্সাম এর মধ্যে অনুষ্ঠান করলে ওদের মনযোগ নষ্ট হবে। আর যদি আবারও বিয়ে পড়াতে চাও তাহলে আজ শুক্রবার বিয়ে পড়িয়ে দিতে পারো”
সাইফুল এহসান ছেলের কথায় সাই জানিয়ে বলল “হ্যাঁ, তাছাড়াও অনেক দিন হলো এসেছি। ফেরার সময়ও হয়ে এসেছে। এর মধ্যে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলে আদেও হবে কিনা সন্দেহ।”
আহছানউল্লা আহমেদ সম্মতি জানিয়ে বলল “তাহলে আজই বিয়ে পড়ানো হোক আরেকবার।”
সকলে হুলুস্থুল বাঁধিয়ে আয়োজন শুরু করলো। নতুন শাড়ি কেনা হয় নি। সোনিয়া, সুভানা বলল গিয়ে কিনে আনার কথা হানিয়া নিষেধ করে দিয়ে তার মায়ের বিয়ের শাড়ি, ওড়না বের করলো। নতুনের মতো সুন্দর শাড়িটা। শাড়িটা পড়ে ওর মনে হলো ওর মা ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। ইফাজ, হায়াত, হামজা সব ভুলে মজায় মেতে উঠেছে। বলে না কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না ওদের দুটোর হয়েছে সেই দশা। ঠিক হয় তো আবার যা তাই। ওদের এতো লাফালাফিতে হানিয়ার মেজাজ খারাপ করে বলল “কুকুরের লেজ সোজা হয় না সেটার প্রমাণ তোরা।”
এ অপমান তাদের গায়ে লাগলো না। সোহান, মিছরিকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সোনিয়া বলল “থাক না বাচ্চা মানুষ। বোনের বিয়ে আর ওরা আনন্দ করবে না আজ আর বোকো না?”
হানিয়া হাসার বৃথা চেষ্টা করলো। সুভানা অন্য পাশ থেকে বলল “এখন তোকে আমার ভাবি বলে ডাকতে হবে? এতো সম্মান দিতে হবে?”
–“ভাবি হওয়ার আগে তোর বেস্টু।”
রুবা উঁচু পেট নিয়ে এগিয়ে এসে হানিয়া মুখ দু’হাতে ধরে বলল “তোর দেখছি আমার মতো ভাগ্য রে। আমার যেমন দুইটা মাত্র ভালো ননদ না তারা আপন বোনের মতো ব্যবহার করে। তোরও তেমন দুইটা ননদ পেয়েছিস।”
–“তুমিই তো বলো। আমার মতো খারাপ ননদ কোথাও নেই। আর এখন ভালো হলাম কীভাবে? শুধু পাম দিয়ে ফুলিয়ায় দেয়। আর আমার চোখে পানি আসে।”
রুবা ওকে আগলে জড়িয়ে ধরল। হানিয়া বলল “সরি ফর এভরিথিংক, দিলরুবা। আমি তোমাকে অনেক জ্বালায়। আর তুমিও বাচ্চাদের মতো রাগ দেখাও।”
সুভানা বলল “হয়েছে আমার এবার হিংসা হচ্ছে। আমাকে যদি এমন ভাবির মতো ভালো না বাসিস না তোর খবর আছে।”
সেজাদ সাদা পাঞ্জাবি আর হানিয়া লাল শাড়ি, মাথায় ওড়না গহনা, সাজ বলতে সাদা মাটা ভাব। হানিয়ার আজ বিয়ে বিয়ে ফিল হচ্ছে। মনে হচ্ছে আজ তার বিয়ে মনে হচ্ছে না সত্যিই বিয়ে। বর সাদা পাঞ্জাবি পরে তার পাশে বসে আছে। সেদিন কোনো অনুভূতি কাজ করে নি কিন্তু আজ ভিষণ নার্ভাস লাগছে। এমন একটা বিশেষ দিনে বাবা-মা’র অভাব খুব করে পোড়াচ্ছে। ‘কবুল’ বলতে গিয়ে ও কেঁদে ফেললো। এমন কেনো হচ্ছে ওর? সেজাদ সকলের অগোচরে ওড়নার আড়ালে ওর হাত চেপে ওকে আশ্বস্ত করলো। সকলের স্বাক্ষী মতে, ওদের সম্মতি নিয়ে, অনুভূতি দিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হলো। সকলে মিষ্টিমুখ করলো। ওদের দু’জনকে সালামিসহ গিফট দিল।
সেজাদ শান্ত হয়ে বসে থাকলেও এক বিদেশিনী মহিলাকে দেখে ওর চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেলো। আশপাশ তাকিয়ে দেখলো না তার বাবা-বোন নেই। তারা কোথায় গেলো? আর এই মহিলাটাই বা কোথা থেকে আসলো? মহিলাটা ওকে গিফট দিয়ে বলল “কংগ্রাচুলেশনস, নিউ কাপল। সেজাদের বিয়েতে আমি এভাবে এটেন্ড করতে পারবো। আই ক্যান নট বিলিভ দিস। বাই দ্যা ওয়ে ইউ আর লুকিং সো প্রিটি হানিয়া।”
হানিয়া হেসে বলল
–“থ্যাংকিউ, আন্টি। আংকেল আসে নাই?”
–“নো একচুয়ালি হি ইজ ভেরি বিজি।”
–“ওহ। হেই হ্যান্সাম বয় কাম”
সেজাদ ওর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
–“ওকে ডাকছেন কেনো?”
–“সৎ হলেও সে আপনার ভাই হয়। আর নিজের মায়ের সাথে… না একটা মানুষ গেস্ট হিসাবে আপনার বিয়েতে এসেছে সেজন্য একটু হলেও কথা বলতে হয় সে কমনসেন্স টুকু নেই?”
ওর সৎ ভাইয়ের নাম চার্লস রিখটার। হানিয়া ওকে পাশে বসিয়ে ছবি তুললো। সে হামজার বয়সী। ফ্রেন্ডলি ভাবে কথা বলছে। সেজাদ কিছু বলল না পুরোটা সময় চুপ রইলো। চেরি যাওয়ার সময় সেজাদের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে ছিল। চোখ ঘুরিয়ে সাইফুল এহসান আর সোনিয়াকেও খুঁজেছে পাই নি।
ওরা চলে গেলে হানিয়াকে একা পেয়ে সেজাদ বলল “আপনি জানেন কীভাবে?”
–“দাদুমণি বলেছে। যাই হোক ওনার প্রতি আপনার ঘৃণা আছে থাকতেই পারে। ওনি আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে। আপনি যানেন আপনার মা বেঁচে আছ। অথচ আমাকে দেখুন মায়ের চেয়ারা কেমন ছিল ছবি না থাকলে ভুলেই যেতাম। মানছি ওনি আপনাদেরকে রেখে নিজের সুখের জন্য চলে গিয়েছিল এটা ওনি একটুও ঠিক করে নি। একজনের এর জন্য সব মেয়ে জাতিকে খারাপ মনোভাব পোষণ করেন জানলাম আমাকেও কী খারাপ ভাবেন?”
সেজাদ চুপ করে রইল। হানিয়া বলল “মেয়ে জাতির মধ্যে তো আমিও পড়ি আমাকে তাহলে কেনো বিয়ে করেছেন। প্রথমবার জোর করে হলেও এবার তো নিজের ইচ্ছেতেই বিয়ে করেছেন কিন্তু কেনো? ওনি যায়ই করুক। মাথায় রাখবেন ৯ মাস আপনাকে ওনি বহন করেছে। সেই টাইমটা ভিষণ কষ্ট ও আনন্দের। আপনাকে জন্ম দিয়েছে এইটুকুর জন্য হলেও ওনার সাথে কথা বলা উচিত ছিল। ওনাকে দেখে মনে হলো ওনি আপনাদেরকে মিস করে।”
সেজাদ কিছু বলল না তাকিয়ে রইল। ওদেরকে খাওয়ার জন্য ডাক দিলো। সকলে খেয়ে বউ নিয়ে রওনা দিলো। হানিয়া কাঁদল না হায়াত হামজাকে ধমকে বলল “অনেক মজা হয়েছে এবার পড়তে বস। আমি কাল আসছি পিঠের ছাল তুলবো।”
হানিয়ার কথা শুনে সকলে হাসলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ