চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।০৮ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
358

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।০৮ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

সকাল ছয়টা পূর্ব দিগন্তে সূর্যমামার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। হানিয়া ঘুম ভেঙে গেলে উঠে রুমে সাথে ছোট্ট বারান্দাটাই গেলো। নতুন পরিবেশ ঘুমটাও হলো না মানিয়ে নিতে সময় লাগবে তো! গাছের পাতা হলুদ বর্ণ রং ধারণ করছে। শরৎকালের হিম বাতাস ওর দেহ ছুঁয়ে গেলো। ঘুম থেকে উঠে শরীর মন ভালো লাগছে। নতুন পরিবেশ, নতুন ভিন্ন জীবন চলা। রাতে যে বৃষ্টি হয়েছে তার দরুন গাছপালা, রাস্তা ভেজা শীত শীত অনুভব হচ্ছে। হানিয়ার এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ ভালো লাগছে। এই ছোট বারান্দার পাশে বড় একটা বারান্দা এক হাত দূরত্বর মতো ফাঁকা অনাশয়ে যাওয়া আসা যাবে সেখানে বেশির ভাব গাছ দিয়ে ভর্তি করা। কিছু গাছে নাম না জানা ফুল ফুটেছে, বাহারি রংয়ের পাতার গাছ। এমন গাছ এবাসার সামনেও দেখা যাচ্ছে গেটের দুই পাশে। নিয়মিত যত্ন নেয় নাহলে কী গাছগুলো এতো সতেজ নির্মল থাকত! নতুন বাসায়ও হানিয়ার নানুমণি বাসার সামনে স্বল্প ফাঁকা জায়গা সহ ছাদে গাছ লাগিয়েছে কিছু দিন হলো৷ গাছই প্রকৃতির সৌন্দর্য রূপ দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়। কালরাতে সেভাবে কিছু খেয়াল না করলেও বুঝতে অসুবিধা হলো না সৌখিন বাড়ির মানুষগুলো। তাকে থাকতে দেওয়া রুমটাও দামী আসবাবপত্র দিয়ে সুন্দর করে সাজানো।

হানিয়া ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসল। ঘুরঘুর করতে করতে ড্রইংরুমে চলে আসল। কারোর দেখা পাচ্ছে না। ড্রইংরুমের ডান পাশে থেকে টুংটাং ধ্বনি ভেসে আসছে হয়ত কেউ আছে। হানিয়া সেখানে গিয়ে দেখলো সোনিয়া কাজ করছে। হানিয়া রান্নাঘরের সামনে গিয়ে বলল
–“আসতে পারি?”

সোনিয়া ব্যস্ত হাতে মনোযোগ সহকারে কাজ করছিল। সুভানা এতো সকালে উঠে না তার ঘুম থেকে উঠতে আটটা বাজে। সোনিয়ার দাদী নামাজ পড়ে হাঁটাহাঁটি করেন। সোনিয়াও ছোট ছেলেকে নিয়ে সারারাত ঘুমাতে পারে না উঠতে হয় বারবার। সকাল সকাল ও উঠে যায়। ঘুম থেকে উঠে সোনিয়ার দাদীর সাথে হাঁটে কখনো মামাদের সাথে জীমে যায়। আজ কয়েকদিন হলো বাড়ি ফাঁকা বাড়ির লোকজন বলতে দাদি, সুভানা, সোনিয়া আর তার ছেলে। এখন অতিথি হিসেবে হানিয়া আছে। হটাৎ হানিয়ার আগমনে কিঞ্চিত ভয় ও অপ্রস্তুত হয়ে গেলো দ্রুত সামলে নিয়ে বলল

–“আরে, আসো আসো। পারমিশন নেওয়ার কী আছে!”

–“আপনি কাজ করছিলেন তো তাই! ভয় পয়েছেন হঠাৎ আসাই আ’ম সো সরি।”

–“আব আরে ইট’স ওকে। কাজের মধ্যে বেশি মনযোগী ছিলাম সেজন্য একটু চমকে গেছি বাট ইট’স ওকে এতো ফর্মালিটি করে কথা বলছ কেনো, হুহ্? আমি যেমন সুভানার বোন তোমারও বোন বুঝেছ?”

হানিয়া হেঁসে সম্মতি জানিয়ে বলল
–“আমি হেল্প করি আপনাকে! তাহলে তাড়াতাড়ি কাজটা হয়ে যাবে!”

–“আরে না না কী বলো! আমি পারব শুধু শুধু তোমাকে কষ্ট কর…”

সোনিয়া আর বলতে পারল না। হানিয়া ওর হাত থেকে ছু*রি, চাপিং বোর্ড আর ফলের ঝুড়িটা ওর দিকে টেনে নিয়ে বলল
–“কষ্ট কিসের? আমিও বাসায় মামকে হেল্প করি। আমি একটু একটু পারি রান্নাবান্নার কাজ। বাই দ্যা ওয়ে,হোইয়ার ইজ সুভানা?”

–“তাকে কী এতো সকালে পাবে? সে-তো সারারাত ফোন চালিয়ে এখন ঘুমাচ্ছে। কেনো কোনো দরকার? এ্যানি প্রবলেম? আমাকে বলতে পারো!”

–“না না এমনিতেই শুনছি।”

সোনিয়া কিছু একটা ভেবে বলল
–“তোমার এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেলো? ক্ষুদা লাগছে?”

–“না না। আমি সকালে তেমন খেতে পারি না।”

সোনিয়া হাসল এটা সেটা জিজ্ঞাসা করতে লাগল। আর দু’জনে মিলে কাজ করতে লাগল। এমন সময় সোনিয়ার দাদি শাবনূর ও সোনিয়ার ছোট ছেলে সোহান আসলো। শাবনূর বেগম হানিয়াকে চোখ-মুখ কুঁচকে বলল

–“তুমি রান্নাঘরে কি করছ? তুমি হইলে গিয়া মেহমান। এখনি বের হও সুভানা দেখলে চেতে যাইব! ও শুনলে কী বলব? ভাববো আমরা ওর বান্ধুবীরে দিয়া কাজ করাইতেছি।”

হানিয়া ভ্রু কুঁচকে শাবনূর বেগমের মুখশ্রী অবকলন করে ঠোঁট উল্টে বলল
–“ও এমন ভাববে না আর ভাবলেও যদি জিজ্ঞেসা করে তাহলে বলে দিবেন আমার শশুড়বাড়ি গিয়ে যেনো আমার বরকে না খেয়ে ম*রতে হয় তাই আপনি আমাকে কাজ শেখাচ্ছেন।”

সোনিয়া ঠোঁট চেপে হাঁসল। শাবনূর বেগম হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। মেয়ে তো দেখি আচ্ছা বজ্জাত তার নামে তারই নাতনির কাছে কান পড়া দিবে? শাবনূর বেগম ধমকে বলল
–“এই মেয়ে আমি তোমাকে কখন কাজ শেখালাম? আমার নাতনিকে এসব বলে তুমি… ”

সোনিয়া শাবনূর বেগমকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল “দাদুমণি হানিয়া মজা করছে তাও বুঝছ না!”

শাবনূর বেগম শান্ত হয়ে বসলেন চেয়ারে। সোহান চেয়ার বেয়ে টেবিলের ওপরে উঠে তার বৃহৎ গোল গোল অক্ষি জোড়া দিয়ে সামনে নতুন মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে। হানিয়া সেটা বুঝতে পেরে বলল “হাই, বেবি!”

সোহান আধোআধো বুলিতে বলল “হ্যায়ো (হ্যালো) আনতি(আন্টি)!”

–“হোয়াট ইজ ইউর নেইম?”

–“মাই নেইম ইড (ইজ) সোহান। গুড বয়”

–“ইয়েস ইয়েস ভেরি গুড বয়।”

শাবনূর বেগম হানিয়াকে পর্যবেক্ষণ করছেন। মেয়েটার সৌন্দর্য ওর চোখে কাঁটার মতো বিঁধচ্ছে। হানিয়া বুঝতে পেরেও কিছু বলল না। শাবনূর বেগম হানিয়াকে প্রশ্ন করল

–“তোমার বাড়িতে কে কে আছে?”

–“নানুমণি, বাবাই, মাম, মামা, জমজ ভাই-বোন, ছোট ভাই, চাচা-চাচি, ফুপি তাদের ছেলেমেয়ে।”

ফলগুলো কেঁটে সোনিয়ার কাছ থেকে সুভানার রুমটা কোন দিকে শুনল ওর আর কষ্ট করে খুঁজে নেওয়া লাগল না সোহান হানিয়াকে নিয়ে গেলো। হানিয়া কয়েকবার ওকে ভালো মুখে ডাকল কাজ হলো না পরে ঠেলাঠেলি, শুড়শুড়ি দিয়ে উঠালো৷ বেচারি সুভানা। উঠে ফ্রেশ হয়ে আসল। হানিয়ার সোহানের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো বাচ্চাটা বেশ মিশুক।

–“কি রে? ইন্ট্রোভার্ট এতো এক্সট্রোভার্ট হয়ে গেলো। কাহিনী কী?”

–“এ কাহিনী মেলা পুরানো। পাপা চলে যাওয়ার পর থেকে নিজের ঝগরুটে, ইন্ট্রোভার্ট খোলসটা নাই হয়ে গেছে। নিউ হানিয়া হয়েছে।”

–“তাই তো দেখছি। বাই দ্যা ওয়ে চল রেডি হয়ে নে। বের হবো দশটাই, ইউনিভার্সিটিতে কত কাজ সব পেপারগুলো নিস”

–“আচ্ছা শোন, তোর বাবা-মা, চাচা-চাচি কই? তোরা কী তিনজন থাকিস বাসায়?”

–“আরে না। বাবা আর বড়আব্বু ইন্ডিয়াতে, বড়ভাইয়া-ছোটভাইয়া সুইজারল্যান্ডে ব্যবসার কাজে গেছে ওরা, আর মা এখানে কায়েকটা বাঙালি,বন্ধু, ভাবি পাতিয়েছে তাদের সাথেই পিকনিক মতো করে বেড়াতে গিয়েছে। চলে আসবে এসেই দেখিস মা আর দাদুমণির হেব্বি ঝগড়াঝাটি হবে এদের দুজনের জীবনে মিল হলো না।”

তার পরের দু’দিন হানিয়া আর সুভানার ব্যস্ত সময় কাটল। ঘোরাঘুরি, ইউনিভার্সিটির সকল ফর্মালিটি ফিলাপ করতে দুদিন চলে গেলো।

•••

রোদের তিব্র তেজে স্কুলের ছুটির ঘন্টা বাজতেই ছাত্রছাত্রীরা হুটোপুটি করে বের হয়ে আসল। যেনো প্রতিযোগিতা লেগেছে কে আগে বের হতে পারবে। হায়াত-হামজা হেলতে দুলতে বের হলো দূর থেকে ওদেরকে দেখতে পেয়ে নিশাদের চঞ্চল নয়নজোড়া স্থির হলো। মাক্স পড়া থাকলেও হামজা-হায়াতের চিনতে একদণ্ড সময় নিল না ছুটে আসল। হামজা সন্দিহান কণ্ঠে বলল
–“তুমি এখানে কী করছ? তোমার ক্লাস নেই? ফাঁকি দিচ্ছ না-কি?”

হায়াত ঠোঁট চেপে হেঁসে বললো
–ফাঁকিবাজ ডাক্তার! এমন করলে হাতুড়ে ডক্তার হবে।”

নিশাদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওদের মুখশ্রীতে দেখে রুষ্ট কণ্ঠে বলল
–“থা*প্পড়িয়ে না গাল লাল করে দিব। বে*য়াদ*ব দল। চলেন। আপনারা তো বিদ্যাসাগর একজন তো ফেল করেও জ্ঞান ঝাড়তেছে।”

হামজা মুখটা আঁধারে ডুবে গেলো। হায়াত হামজার দিকে তাকিয়ে মায়া হলো নিশাদের দিকে তাকিয়ে বলল “ফেল করেছে বেশ করেছে তোমার কী? নিজে তো পড়তে বসো না মেডিক্যালের স্টুডেন্টরা সারাদিন পরে আর তুমি সারাদিন ঘুরে-ঘুরে বেড়াও। হাতুড়ে ডাক্তার হবে না তো কী হবে।”

হামজা বোনের কথায় মনখারাপ ডেকে গেলো তেজ নিয়ে বলল “ঠিক বলেছিস হাতুরে ডক্টর একটা”

নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বলল “তোরা তো সবসময় আমার সাথে থাকিস। আমি পড়ি না তাই তোরা জানিস। খুবই ভালো। এবার গাড়িতে উঠ”

–“কেনো কোথায় নিয়ে যাবা?”

–“তোদেরকে বেঁচে দিয়ে আছি। আমি বড়ই গরিব বুঝলি বউ-বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে।”

ওরা ভেংচি কেটে চলল ফুপিরবাড়ি। গিয়েই খুশির খবর পেলো রুবা প্রেগন্যান্ট। হানিয়ার চাচারা, মামারা, রুবার বাবার বাড়ির লোকজন এসে হাজির ছোট খাটো অনুষ্ঠান হয়ে গেলো। এই খুশির দিনে হানিয়া অনুপস্থিত। হানিয়ার সাথে ভিডিও কলে সকলের কথা হলো। রৌদ্দুর হানিয়ার চলে যাবার খবর শুনে চোটপাট করল কিন্তু বেশিক্ষণ সেটা চলল না।

•••

সুইজারল্যান্ডে নাইট ক্লাবে সায়েম কয়েকটা গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে ফেলেছে। তাদেরকে চারিদিকে নিয়ে নাচানাচি করছে। সেজাদ ভাইয়ের এমন প্রতিভা দেখছে বসে বসে। মনে মনে বিরক্তিতে ফেটে পড়ছে। সেজাদকে একা বসে থাকতে দেখে কয়েকজন মেয়ে এসে ডান্স অফার করলেও সেজাদ সেগুলো রিজেক্ট করে দেয়। ভাইকে ফেলে যেতেও পারছে না সায়েমের নেশা করে এখন যাও একটু হুঁশ আছে। একটু পর তা-ও থাকবে না। নেশা করে একা একা কোথাও চলে গেলে বা কোনো মেয়ের সঙ্গে রুম ডেট করলে! সায়েম মেয়েদের সাথে ডান্স, ফ্ল্যাটের বাহিরে যায় না। লিমিট রেখে চলে। বেশি দূর গড়িয়ে গেলে সেজাদ তো আছে। সাথে ফ্রীতে ক্যালানী ও খাই। এই দু’দিন কাজে ডুবেছিল কাজ থেকে রিলেক্স পেতেই সায়েম সেজাদকে টেনে ক্লাবে আনল। কালই ফিরে যাবে ওরা।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here