চন্দ্ররঙা প্রেম_২ পর্বঃ৭

0
883

#চন্দ্ররঙা_প্রেম_২
#পর্বঃ৭
#আর্শিয়া_সেহের

ভোর থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। পিহুর আজ দারুন একটা ঘুম হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমালে সেই ঘুমটা নাকি ভালো হয়। এমন একটা কথা পিহু শুনেছিলো কোথাও। আজ তার প্রমান পেলো।
গতকাল অনেক রাত অবধি রুশানের কথা ভেবে কান্নাকাটি করেছিলো পিহু। এখন বেশ ফুরফুরে লাগছে। দেয়াল ঘড়িতে সময় জানান দিচ্ছে ছয়টা বেজে দশ মিনিট। পিহু সময় দেখে হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙলো। চোখ মুছে বিছানা থেকে নেমে এগিয়ে গেলো জানালার দিকে। ধীর হাতে জানালা খুলে দিলো। সাথে সাথেই পিহুর ঘরে প্রবেশ করলো একদল হিম শীতল হাওয়া। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো পিহু। বৃষ্টি থেমে গেছে। গাছপালার রং এখন উজ্জ্বল চকচকে হয়ে আছে। পিহু জানালা দিয়ে বাইরে চোখ বুলিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়লো।

ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেলো পিহু। রুটি আর আলু ভাজি করবে। আসার সময় মায়ের ঘর থেকে কুরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ শুনেছে। এখনো পড়া শেষ হয়নি। সকালের নাস্তা বানানোর প্রয়োজন না হলে পিহুর মা রাফিয়া বেগম বেশ বেলা অবধি কুরআন তেলাওয়াত করেন। তাই পিহু সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ সে নাস্তা বানাবে । আসার সময় রাফিয়া বেগমকে বলে এসেছে ।

পিহুর রুটি বানানো শেষ । আলু কুচি কুচি করে কেটে রেখেছে। পিঁয়াজ কাঁটার সময় শুনতে পেলো তার বড় বোন বাইরে জোরে জোরে ‘হুশশশশ,হুশশশশ’ ‘যাহ যাহ’ এসব বলছে। পিহুর বড় বোন প্রিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার পর থেকে এ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে। তবে সবসময় না।‌ যখন তার অপচ্ছন্দের কেউ তার সামনে আসে কেবল তখনই এভাবে বলে তাকে তাড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। পিহু রান্নাঘর‌ থেকে বুঝতে পারলো না এতো সকালে তার আপুর অপছন্দের কে আসতে পারে।

পেঁয়াজ রেখে পিহু উঠে আসবে এমন সময় পিহুর মা এলেন। পিহুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“তুই যা করছিস কর। আমি দেখছি ওদিকে।”
পিহু ‘আচ্ছা’ বলে আবার রান্নায় মন দিলো।
মিনিট খানেকের মাথায় মায়ের কন্ঠও পিহুর কানে এলো। তিনি বেশ শক্ত কন্ঠে বলছেন,
-“সমস্যা কি তোমার? কেন এসেছো আবার এ বাড়িতে? বের হয়ে যাও।”

পিহু এবার সবকিছু রেখে উঠে পড়লো। কে এসেছে সেটা না দেখা অবধি শান্তি হচ্ছে না তার। রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে উঠোনে পা রাখতেই দেখলো মেইন দরজার সামনে আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। তার পেছনে দুই তিনটা ছেলে।
পিহু ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেলো সামনে। রাফিয়া বেগম পিহুকে দেখে বললেন,
-“তুই ভেতরে যা। এখানে আমি দেখছি ‌। এই ছেলে চায় টা কি?”

আরিয়ান পৈশাচিক হাঁসি হেঁসে বললো,
-“মেয়ের সাথে সাথে মেয়ের মায়ের ও বেশ তেজ বেড়েছে দেখছি। যাই হোক, আরিয়ানের বউ শ্বাশুড়ির একটু তেজ না থাকলে ক্যামনে হয়, তাই না শ্বাশুড়ি আম্মা?”
রাফিয়া বেগম মুখ ঝামটা মারলেন। প্রিয়া আবারও ‘যাহ্ যাহ্’ বলতে বলতে আরিয়ানের দিকে এগিয়ে গেলো। আরিয়ান প্রিয়ার বাম হাত মচকে ধরে পেছনে আনলো। প্রিয়া ব্যাথার কঁকিয়ে উঠলো। আরিয়ান পিহুর দিকে তাকিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,
-“আজ সন্ধ্যায় বউ সেজে তৈরি হয়ে থাকিস। আজই তোকে বউ করে ঘরে তুলবো। আর যদি কোনো রকম বাড়াবাড়ি করিস তাহলে তোর বাপের যেমন অবস্থা করেছি ,তোর মা বোনেরও একই অবস্থা করবো।”
কথাগুলো বলে আরিয়ান প্রিয়ার হাত ঝাড়া মেরে প্রিয়াকে উঠোনে ফেলে দিলো।
পিহুর দিকে আঙুল তুলে বললো,
-“রেডি থেকো জানেমান। আমাকে আরো খারাপ হতে বাধ্য করবে না আশা করি।”
কথা শেষ করে আরিয়ান গটগট আওয়াজ তুলে চলে গেলো পিহুদের বাড়ি ছেড়ে।

রাফিয়া বেগম দৌড়ে গেলেন প্রিয়ার কাছে। প্রিয়া উঠোনে পড়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে। পিহু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মাথা ফাঁকা হয়ে গেছে। আরিয়ান হঠাৎ এমন করবে সেটা পিহুর কল্পনাতীত ছিলো।
পিহুর ঘাম ছুটে গেছে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। নিজের জীবনের প্রতি ধিক্কার জানাতে ইচ্ছে করছে তার।

পিহু ধপ করে বসে পড়লো মাটিতে। রাফিয়া বেগম প্রিয়াকে ছেড়ে পিহুর কাছে এলেন। জড়িয়ে ধরলেন পিহুকে। মায়ের ছোঁয়া পেয়ে পিহুও কেঁদে উঠলো। রাফিয়া বেগম পিহুর মাথাটা বুকে চেপে বললেন,
-“ওই জানোয়ারের হাত থেকে আমার মেয়েটাকে রক্ষা করার মতো কেউই কি নেই? আমার মেয়েটা কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছে? এবার ওর প্রতি একটু সদয় হও আল্লাহ।”

পিহু মায়ের কথাগুলো শুনলো। ঠিক সেই সময়ে চোখের পাতায় তানিমের ছবি ভেসে উঠলো। তনিম একদিন বলেছিলো,
-“ওই জানোয়ারের থেকে তোমাকে আমি সবসময় রক্ষা করার চেষ্টা করবো, পিহু।”
পিহু ঝরঝর করে কেঁদে উঠলো। বিরবির করে বললো,
-“আজকে আমার অনেক বড় বিপদ। আজ আমাকে রক্ষা করতে আসুন , প্লিজ।”

পিহু বিছানায় বসে আছে। তাদের গেটের বাইরে আরিয়ান দু’জন ছেলেকে রেখে গেছে। পিহু যেন বাড়ি থেকে বের না হতে পারে সেজন্য। এলাকার পুলিশরাও সব আরিয়ানের চামচা। পিহু দুই হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে কাঁদছে। তনিম তো দেশে নেই। কার কাছে সাহায্য চাইবে এবার? রুশান তো অনেক দূরে। সেখান থেকে আসতে গেলে অনেক ধকল যাবে তার উপরে। কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না পিহু।

পিহুর হঠাৎ করেই শানের কথা মাথায় এলো। চট করে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো পিহু। কালবিলম্ব না করে অফিসে ফোন করলো। তবে রিসিভ করলো ম্যানেজার। তিনি জানালেন শান আজ আসেনি। পিহু হতাশ হলো। শানের পার্সোনাল নাম্বার তো তার কাছে নেই। পিহুর বুক কাঁপছে তীব্র গতিতে। পুরো শরীর ঘেমে ভিজে গেছে। প্রবল ভয় জেঁকে বসেছে তার উপর। হাত-পা কাঁপছে অবিরত।

পিহু এবার দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে কল করলো রুশানকে। রুশান তখন পুনমের হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো।‌ এতো দিন পর পিহুর কল পেয়ে একটু অবাক হলো রুশান। রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে পিহুর কম্পমান গলার আওয়াজ পেলো।
-“হ্যালো,রুশান স্যার। আ..আমি পিহুক। শুনতে পাচ্ছেন? হ্যালো.. হ্যালো”

পিহুর ছন্দহীন কথাতেই রুশান বুঝে গেলো তার সাথে খারাপ কিছু হয়েছে বা হতে চলেছে। রুশান শান্ত কন্ঠে বললো,
-“লিসেন মিস পিহু। আপনি শান্ত হোন আগে। আমি শুনতে পাচ্ছি। কি হয়েছে ? ভয় পাচ্ছেন কেন? আমাকে বলুন।”

পিহু দৌড়ে উঠে গিয়ে একটু পানি খেলো। নিজেকে শান্ত করে রুশানকে সবটা খুলে বললো।‌ সকালে আরিয়ান যা যা বলে গেছে সবকিছুই রুশানকে বললো পিহু। রুশান চুপচাপ শুনলো। বেশ কিছুক্ষণ পর বললো,
-“আপনি ঘাবড়াবেন না। আপনার বাড়ির এড্রেস পাঠান। আমি বিকেলের মধ্যে পৌঁছে যাবো।”
খরা মৌসুমে একটু বৃষ্টি মাটিকে যেভাবে ঠান্ডা আর শান্ত করে যায় রুশানের শেষ কথাটাও পিহুকে সেভাবে শান্ত করে দিলো। পিহু সাথে সাথে কল কেটে তাদের বাড়ির ঠিকানা রুশানকে পাঠিয়ে দিলো।

রুশান রাফিনের নাম্বারে কল করলো। রাফিন তখন বাড়ি থেকে থানার উদ্দেশ্যে বের হচ্ছিলো। রুশানের কল পেয়ে রিসিভ করলো।
-“গুড মর্নিং, স্যার।”
-“গুড মর্নিং। এই সময়ে কল করেছো হঠাৎ? কোনো ক্লু পেয়েছো?”
-“নো স্যার। আমি চট্টগ্রামে যাচ্ছি আজ। এই কেসের শেষ এবার দেখবো। এই কেস ক্লোজ না করে যশোর ফিরবো না।”
রাফিন মুচকি হাসলো। গর্বের সহিত বললো,
-“ইউ আর আ ব্রেভ বয়,রুশান। বেস্ট অফ লাক।”
-“থ্যাংকস স্যার। আপনি আমাকে কেসের সব ডিটেইলস পাঠিয়ে দিবেন সময় করে।”
-“অবশ্যই । সাবধানে যাও।”
-“ওকে স্যার।”

রুশান ফোন কেটে স্ক্রিনে চোখ বুলালো। পিহু বাড়ির ঠিকানা পাঠিয়েছে। ঠিকানাটা একবার দেখে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো।
প্রায় আধ ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে রুশান তবুও পুনমের কোনো খোঁজ নেই। আজ পুনমের কলেজে নবীনবরণ অনুষ্ঠান আছে। পুনমকে একনজর দেখার জন্যই এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে রুশান।

আরো দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর পুনমের দেখা পেলো রুশান। মিষ্টি কালারের একটা শাড়ি পড়েছে পুনম। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। ডাগর ডাগর চোখ দুটোতে মোটা কড়ে আইলাইনার টানা আর গাঢ় কাজল দেওয়া। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। এটুকুতেই রুশানের চোখে পুনমকে পরীর চেয়ে কম সুন্দরী লাগছে না। রুশানকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে পুনম মুচকি হাসলো। পুনমের বান্ধবীরা চেঁচিয়ে বললো,
-” শুধু বউকে দেখলে হবে জিজু? শালীদের দিকে একটু তাকান।”
রুশান সবার দিকে তাকিয়ে হেঁসে ফেললো। পুনমের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
-“খুব সুন্দর লাগছে। ”
রুশানের এটুকু প্রশংসাও যেন পুনমের অন্তর কাঁপিয়ে দেয়। মাথা নিচু করে নিলো পুনম। দাপিয়ে বেড়ানো উড়নচণ্ডী মেয়েটা এই ছেলেটার সামনে কিভাবে যেন লজ্জায় মিইয়ে পড়ে।

রুশান পুনমের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলো সে লজ্জা পাচ্ছে। তাই সে কিছুটা পিছিয়ে দাঁড়ালো। পুনম মাথা তুলে রুশানের দিকে তাকালো। রুশান আরেকবার খুব ভালো করে পুনমকে দেখে নিলো। তারপর বাইকের কাছে যেতে যেতে বললো,
-“আমি চট্টগ্রাম যাচ্ছি, পুনম। কবে ফিরবো জানি না। তুমি নিজের খেয়াল রেখো।”
পুনম রুশানের দিকে এগিয়ে এলো। রুশানের হাত ধরে বললো,
-“কেনো যাচ্ছো? কবে আসবা জানোনা বলছো কেন? আমি তোমাকে না দেখে থাকতে পারবো না।”

রুশান পুনমের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে বললো,
-” আবার?”
পুনম মাথা নিচু করে বললো,
-“সরি। কিন্তু কবে আসবা সেটা তো বলো।”
রুশান পুনমের সামনে উড়ে আসা চুল গুলো ঠিক করে দিলো।বাইক স্টার্ট দিয়ে বললো,
-“সময় হলে চলে আসবো। আসি এখন।”

রুশান চলে গেলো। পুনম অশ্রু ভরা দুচোখে চেয়ে রইলো সেদিকে। রুশানের বাইক চোখের আড়াল‌ হতেই পুনমের চোখ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আজকে সে নবীনবরণের জন্য এতোটা সাজে নি। সে সেজেছিলো রুশানের সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য। খুব আশা করে সেজেছিলো বলেই হয়তো নিরাশ হলো।

.

রুশান চট্টগ্রামের কাছাকাছি যখন এসেছে তখন বিকাল চারটার কাছাকাছি বাজে। ফোন একাধারে বেজেই চলেছে। রুশান বাইক থামিয়ে ফোন বের করলো। আবির ফোন দিয়েছে। রুশান রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে আবির গমগমে গলায় বললো,
-“কি চুলের জন্য পাঠিয়েছিস এখানে? কোনো কিছুর খোঁজ পাচ্ছি না। এখানে তেমন কিছুর অস্তিত্বই নেই। ভুলভাল ইনফরমেশন পেয়ে হুদাই এতোদূর পাঠালি আমাকে।”

রুশান তিন আঙুল দিয়ে কপাল ঘসতে ঘসতে বললো,
-“ভালো করে খোঁজ নিয়েছিস?”
-“আরে হ্যাঁ ইয়ার। সবরকম ভাবে খোঁজ নিয়েছি। এখানে এমন কিডন্যাপিং কখনোই হয়নি।”
-“ওকে। নেক্সট ফ্লাইটে ব্যাক কর তাহলে। আমি একটু ব্যাস্ত এখন।”
রুশান কল কেটে দেখলো মেঘার নাম্বার থেকে দুবার কল এসেছিলো। মেঘাকে ছোট্ট একটা মেসেজ পাঠিয়ে রুশান আবার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

শেষ বিকেলে রুশান পিহুর দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছালো। পিহু তাদের বাড়ির দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। ‘এই বুঝি আরিয়ান এসে যায়’ এই ভয়েই পিহুর কলিজা শুকিয়ে গিয়েছিলো।
দূর থেকে রুশানকে আসতে দেখে পিহুর মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো। সে ভুলে গেলো পাড়া প্রতিবেশীর কথা। তাদের বাড়িতে এমন সময়ে একটা ছেলের উপস্থিতি ঠিক কি রুপ অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে তা পিহুর মাথাতেও আসলো না। তার মনে এখন শুধুই আরিয়ান নামক ভীতি।

রুশান আসা মাত্রই পিহু গেট খুলে দিলো। পিহুদের বাড়ির সামনে থেকে একটা ছেলে তাদের দু’জনের দিকে কিভাবে যেন তাকালো। পিহু সেদিকে তোয়াক্কা না করে বললো,
-“ভেতরে আসুন। আরিয়ান বলেছে সন্ধ্যার মধ্যেই আমাদের বাড়িতে বর সেজে উপস্থিত হবে। এক্ষুনি সন্ধ্যা নামবে। আপনি প্লিজ যাবেন না। প্লিজ।”

পিহুর করুন আকুতিতে রুশান যেতে পারলো না। পিহুদের উঠোনে বাইকটা রাখলো। এতদূর জার্নি করে আসায় পুরো শরীর কেমন যেন চিটচিটে হয়ে আছে ।‌ বালিও লেগেছে শরীরে।
রুশান পিহুর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আমার একটু ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন। ”
পিহু রুশানকে নিয়ে ভেতরে ঢোকার সময় সামনে এলেন রাফিয়া বেগম। রুশানকে দেখে কপাল কুঁচকে পিহুর দিকে তাকালেন। পিহু এগিয়ে এসে বললো,
-“ইনিই রুশান স্যার মা। ওইযে আমাকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলো। আর আজকে সাহায্য চেয়েছি যার কাছে। ”

রাফিয়া বেগম চিনতে পেরে হাঁসি মুখে বললেন,
-“ওহ চিনতে পেরেছি। কেমন আছো বাবা তুমি?”
রুশান মুচকি হেঁসে বললো,
-“জ্বী আন্টি ভালো।”
পিহু দু’জনের মাঝে এসে বললো,
-“মা উনি অনেক পথ জার্নি করে এসেছে। একটু ফ্রেশ হবে।”
রাফিয়া বেগম হেঁসে বললেন,
-“আচ্ছা আচ্ছা, ভেতরে নিয়ে যা।”
রুশান যাওয়ার আগে রাফিয়া বেগমের দিকে তাকালো। অদ্ভুত ভাবে রাফিয়া বেগমের সাথে পুনমের চেহারার বেশ মিল পাচ্ছে রুশান।

মিনিট দশেকের মধ্যে রুশান ফ্রেশ হয়ে বের হলো।‌ অপরিচিত জায়গায় বেশ অস্বস্তি হচ্ছে রুশানের। রুশান জামাকাপড় পড়ে রুমের বাইরে আসতেই বাইরে বেশ কিছু মানুষের গলার আওয়াজ পেলো। রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো পিহু আর রাফিয়া বেগমও হন্তদন্ত হয়ে রুম থেকে বের হচ্ছে।

রুশান ওদের পিছু পিছু গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো। উঠোনে এলাকার প্রায় সব মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরিয়ান। মুখে লেগে আছে পৈশাচিক হাঁসি। রাফিয়া বেগমের বুক কেঁপে উঠলো। এমন কেলেঙ্কারি হবে এটা সে ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি।

আরিয়ান পিহুদের এক প্রতিবেশী মুরব্বির হাত ধরে সামনে এনে বললো,
-“দেখছেন আপনাদের আমি বলছিলাম না এই মেয়ের চরিত্র খারাপ? এবার হাতেনাতে প্রমান পাইছেন? ওই দেখেন ,পোলায় এখনো ওদের ঘরের মধ্যে।”
পাশ দিয়ে এক মহিলা বললো,
-“অভাবে মানুষের স্বভাব এমনেই নষ্ট করে দেয়।”
পেছন থেকে এক বয়স্কা মহিলা বললেন,
-“কি গো প্রিয়ার মা? বাড়িতে এসব কি শুনি?”

প্রতিবেশীদের কেউ পিহু বা তার বাড়ির কারো কথা শুনছে না। যে যেভাবে পারছে পিহুকে নোংরা কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। পিহু কেঁদেই চলেছে। এমন কিছুর জন্য সে প্রস্তুত ছিলো না। পিহু কাঁদতে কাঁদতে রুশানের দিকে তাকালো। তারপর হুট করেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলো ফ্লোরের উপর।

রুশান এগিয়ে এসে বললো ,
-“শান্তি হয়েছে আপনাদের? মেয়েটা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেছে। এখন বললে সে শুনতে পাবে না। তার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করুন। জ্ঞান ফিরলে আবার বইলেন।”

আরিয়ানের পেছন থেকে একজন মহিলা এগিয়ে এসে বললো,
-“এসব কথা আমরা শুনতে চাইনি। পিহুর জ্ঞান ফেরা অবধি অপেক্ষা করবো আমরা। এরপর তোমাকেই পিহুকে বিয়ে করতে হবে। আমাদের এলাকার মেয়ের সাথে যা খুশি করে যাবা আর আমরা মেনে নিবো ভেবেছো? কখনো না। কি বলো সবাই?”

পিহুদের বাড়ির উঠোন থেকে একসুরে ভেসে এলো,
-“ঠিক ঠিক। আজই পিহুর একটা ব্যবস্থা করতে হবে।হয় ওর সাথে এই ছেলের বিয়ে দেওয়া হবে নাহয় এই পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হবে।”
রুশান হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছে। রাফিয়া বেগমও বারান্দা ঘেসে বসে পড়লো পিহুর পাশে। সামনের সময়টা কি হবে ভেবেই রক্ত হিম হয়ে আসছে তার।
রুশান কোনো কথা না বলে এলোমেলো পা ফেলে ভেতরে ঢুকে পড়লো।

চলবে………

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
এরপর কি হতে পারে? কার কি মনে হচ্ছে জনগন?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here