চন্দ্ররঙা_প্রেম পর্বঃ২৫(শেষ)

0
2332

#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্বঃ২৫(শেষ)
#আর্শিয়া_সেহের

সময়টা বসন্তকাল। তখন পড়ন্ত বিকেল। রোদের তাপ কমে গেছে। বসন্তকে আরো রঙিন করতেই যেন থোকা থোকা লাল রঙের কৃষ্ণচূড়া ফুটে রয়েছে শানদের বাগানের গাছটায়। গাছের সবচেয়ে নিচু ডালে দড়ি বেঁধে দোলনা বানানো। সেখানে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে রুমঝুম। পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছে শান্ত। রুমঝুম খিলখিল করে হাঁসছে।
শান গার্ডেনের একপাশে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আর উপভোগ করছে তার প্রিয়তমার তীক্ষ্ণ হাঁসির ঝংকার।

-“পাপা,পাপা। আমাল তকলেত পাততি না।”
(পাপা,পাপা।আমার চকোলেট পাচ্ছি না।)

আড়াই বছর বয়সী মেয়ে সাঁঝের কন্ঠে ল্যাপটপ থেকে মুখ তুললো শান। মেয়েকে কাছে টেনে নেয়ে নিয়ে বললো,
-“আমি তো ঘরেই রেখেছিলাম, সোনা। কোথায় গেলো বলো‌ তো?”

সাঁঝ মুখ ফুলিয়ে বললো,
-“বুদেতি আমি এতা কাল কাদ। দালাও তুমি।”
(বুঝেছি আমি এটা কার কাজ। দাঁড়াও তুমি।)

সাঁঝ কোমরে হাত রেখে ফুঁসতে ফুঁসতে রুমঝুমের দিকে এগিয়ে গেলো। দোলনার সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললো,
-“এ্যাই মাম্মা, আমাল তকলেত কাইতো কেন?”
(এ্যাই মাম্মা,আমার চকোলেট খাইছো কেন?)

রুমঝুম সাঁঝের কথায় পাত্তা না দিয়ে দোল খেয়েই যাচ্ছে। রাগে সাঁঝের মুখ লাল হয়ে উঠেছে। দুধ ফর্সা রঙের পিচ্চি মেয়েটা রেগে গেলে একদম লাল টমেটো হয়ে ওঠে। রুমঝুম এই ব্যাপারটা খুব উপভোগ করে।

সাঁঝ কোমরে হাত দিয়ে শান্তর কাছে গেল। শান্তর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
-“তাত্তু, দোলনা তামাও। তামাও বলচি।”
(চাচ্চু,দোলনা থামাও। থামাও বলছি।)

শান্ত আড়চোখে চেয়ে বললো,
-“আমি কারো তাত্তু না। যেদিন চাচ্চু বলবি সেদিনই তোর কথা শুনবো।”

-“আলে আমি তো তাত্তুই বলি তোমাকে।”
-“ওই তাত্তুই তো‌ বলা যাবে না।”
-“তাত্তু বলিনি তো। তাত্তু বলচি।”
শান্ত রেগে গেলো। সাঁঝের দিকে চেয়ে বললো,
-“তুই যাবি এখান থেকে? আমারে চাচ্চু ফাচ্চু কিছু ডাকতে হবে না। যা এখান থেকে।”

সাঁঝ এবার কেঁদে ফেললো। ঠোঁট উল্টে বললো,
-“মাম্মা আমাল তকলেত কেয়ে পেলচে। তুমি আমায় বকে দিচো। পাপা,পুপি,দাদু আল মামা চালা কেউ আমাকে বালোবাতে না।”
(মাম্মা আমার চকোলেট খেয়ে ফেলছে। তুমি আমায় বকা দিচ্ছো। পাপা,ফুফি,দাদু আর মামা ছাড়া কেউ আমাকে ভালোবাসে না।)

শান্ত ফিক করে হেঁসে ফেললো। প্যান্টের পকেট থেকে চারটা কিটক্যাট বের করে সাঁঝের হাতে দিলো। সাঁঝ চকোলেট পেয়ে কাঁদতে কাঁদতেই হেঁসে দিলো।‌ শান্ত নিচু হয়ে সাঁঝের চোখ মুছে দিয়ে বললো,
-“এবার আমার সাঁঝ বুড়ি খুশি তো?”

সাঁঝ একটু উঁচু হয়ে শান্তর গলা ধরে গালে চুমু দিলো। আহ্লাদে আটখানা হয়ে বললো,
-“এত্তগুলা কুতি আমি। তুমি আমাল গেলেট তাত্তু।”
(এত্তগুলা খুশি আমি। তুমি আমার গ্রেট চাচ্চু।)

রুমঝুম সাঁঝের দিকে চেয়ে বললো,
-“আমার কোলে আসো, আম্মু। একসাথে দোল খাই।”
সাঁঝ শানের দিকে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বললো,
-“আমাল তকলেত কেয়ে পেলার দন্য দাকচো আমাকে। আমি তোমাল মতলব বুদিনা বেবেচো?”
(আমার চকোলেট খেয়ে ফেলার জন্য ডাকছো আমাকে। আমি তোমার মতলব বুঝিনা ভেবেছো?)

সাঁঝের কথায় শান্ত আর শান হো হো করে হেঁসে উঠলো।‌ সাঁঝ দৌড়ে গিয়ে শানের কোলের বসে পড়লো। শান সাঁঝকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিলো। রুমঝুম মুখ ফুলিয়ে দোলনায় বসে রইলো। শান্ত হাসতে হাসতে রুমঝুমের কাছে এগিয়ে এলো। একটা পঁচিশ বছর বয়সী মেয়েও তার বাচ্চার সাথে চকোলেট নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে পারে এটা রুমঝুমকে না দেখলে শান্ত বুঝতোই না।
পকেট থেকে একটা কিটক্যাট বের করে রুমঝুমের হাতে দিলো। রুমঝুম শান্তর দিকে তাকিয়ে বোকার মতো হাসলো। শান্ত ভেঙচি দিয়ে বললো,
-“আমার ভাইঝির খাবারে নজর দিতে পারো বলে এটা দিলাম। খবরদার আমার ভাইঝির চকোলেট আর ছুবা না।”

রুমঝুম শুধু হাসলো। ছেলেটা তাকে কখনো ভাবির মতো ভালোবাসেনা। সবসময় বোনের মতো সম্মান করে,ভালোবাসে। গত পাঁচটা বছর ধরে রুমঝুমের সার্বক্ষণিক সাথী শান্তই।‌ পড়াশোনা, স্কুল বাদে পুরোটা সময় সে রুমঝুম আর সাঁঝকে নিয়েই কাটায়। এই পরিবারের প্রতিটা সদস্যের চোখের মনি রুমঝুম আর সাঁঝ। পাকনিটা শুধু দাদুবাড়িই না ,নানুবাড়িতেও সকলের চোখের মনি।

..

সেদিন রুমঝুমদের বাড়ি থেকে আসার পর পাঁচ বছর কেটে গেছে। চোখের পলকে কেটে যাওয়া সময় পাল্টে দিয়ে গেছে অনেক কিছুই। মাঝখানে কেটে যাওয়া চার বসন্ত সবার জীবনই রঙিন করে দিয়ে গেছে।

বিয়ের চারমাসের মাথায় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলো রুমেল। অবশ্য এর পুরো কৃতিত্ব মেঘার। অনেক কষ্ট সহ্য করে রুমেলকে পুরোপুরি সুস্থ করেছে সে। এখন তাদের সুখের সংসার চলছে। দুই বছর বয়সী একটি ছেলে আছে তাদের । মেঘা তাহমিনা মেগমের সাথে ছেলের নাম মিলিয়ে রেখেছে তাহমিদ। তাহমিদ জন্মানোর পর থেকে রেজাউল সাহেবের একাকীত্ব দূর হয়েছে।

রুশান এখন অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ভার্সিটি বাড়ির কাছে থাকা সত্ত্বেও সে হলে থেকেই পড়াশোনা করে । এ ব্যাপারে রুমেল প্রশ্ন করলেও রুশান এড়িয়ে যায়।শুধু বলে ওর হলে থাকতে ভালো লাগে।বড় রকমের ছুটি পেলে এক ছুটিতে সে ভাইপোর কাছে যায় তো পরের ছুটিতে বোনের মেয়ের কাছে যায়। এই দুই পিচ্চি তার জীবনের অর্ধেক জায়গা জুড়ে রয়েছে।

মেহেদী আর সিন্থিয়ার তিন বছর বয়সী জমজ ছেলে রয়েছে। মাহিম আর সিনিম । মাহিম যতটা দুষ্টু সিনিম ততটাই শান্ত। দু’জন পুরোপুরি একরকম। তাদেরকে আলাদা করতে সিন্থিয়ারই বেশ বেগ পেতে হয়। তবে সাঁঝ কিভাডে যেন তাদের দেখেই বলে দেয় কে সিনিম আর কে মাহিম। সাঁঝ আবার মাহিম ভাইয়ের ভক্ত। সিনিম চুপচাপ থাকে বলে তাকে ভালো লাগে না সাঁঝের।

প্রান্ত আর শিরীনের দু’বছর আগে বিয়ে হয়ে গেছে। শিরীন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা এখন।

বিথীর সাথে আর কখনো কারো যোগাযোগ হয়নি। বিথী নিজ ইচ্ছাতেই কারো সামনে আসেনি। কেন আসেনি সে কারন সবার অজানা।

প্রান্ত আর শিরীনের বিয়ের পরপরই তিহান তল্পিতল্পা গুটিয়ে বিদেশ চলে গেছে। সেখানেই এক ভিনদেশীর প্রেমে পড়েছে সে। খুব তাড়াতাড়িই বিয়ে করবে তারা।

দুদিন পর শান্তর চৌদ্দতম জন্মদিন। শান্ত চায় তার এবারের জন্মদিনটা বড় করে করা হোক। আত্মীয়-স্বজন সবাই একসাথে হোক। তার ইচ্ছাকে পূরন করতে ইমতিয়াজ মাহমুদ সব রকমের ব্যবস্থা শুরু করে দিয়েছেন।
শিরীনকে আজই এবাড়িতে রেখে গেছে প্রান্ত। সে আগামীকাল আসবে।

রুমেল-মেঘা, রেজাউল সাহেব,সিন্থিয়া-মেহেদী ,মাহেরা খাতুন সবাইকে দাওয়াত দেওয়ার দায়িত্ব রুমঝুমের। তবে এই গুরুদায়িত্ব নিজ দায়িত্বে পালন করছে সাঁঝ। রুমঝুম সবার নাম্বার ফোনে তুলে দিচ্ছে আর সাঁঝ দাওয়াত করছে‌ ।
শান অফিস থেকে ফিরে ড্রেস চেঞ্জ করছে আর মা-মেয়ের কান্ড দেখছে। এই ছোট্ট সাঁঝ তার জীবনে তীব্র আলোর ঝলকানি এনে দিয়েছে। সাঁঝের জন্মের সময়টা এখনো মনে আছে তার।

রুমঝুমের প্রেগন্যান্সির সাত মাসের সময় সে মাথা ঘুরে খাটের কোনায় পড়ে বেশ বড়সড় আঘাত পেয়েছিলো। রুমে এসে রুমঝুমকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে শানের মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো। বহুকষ্টে নিজেকে সামলে শাফিয়া আক্তারকে ডেকেছিলো শান। সেদিনের ঘটনায় সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।
ডাক্তার বলেছিলো বাচ্চার আঘাত লাগলেও সেটা গুরুতর নয়। তবে একটু সাবধানে রাখবেন । দ্বিতীয়বার যেন কোনো প্রকার আঘাত না পায়।

তারপর থেকে অফিস যাওয়া বন্ধ করে দেয় শান। একদম সাঁঝের দুনিয়াতে আসা অবধি রুমঝুমকে এক মূহুর্তও একা ছাড়েনি শান। ইমতিয়াজ মাহমুদ সে ক’দিন অফিস সামলান।
যে রাতে সাঁঝের জন্ম হয়েছিলো সে রাতে আকাশে এক ফালি চাঁদ উঠেছিলো। তোয়ালেতে মোড়ানো সাঁঝকে নিয়ে কেবিনের জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো শান। তার চন্দ্ররঙা প্রেমের পূর্ণতা দিয়েছে এই বাচ্চাটা। তার মেয়ে। তার কলিজা। শান মেয়ের কপালে চুমু এঁকে তার নাম দিয়েছিলো চন্দ্রিমা।

তবে মেয়ের উপর তার চেয়ে তার ভাইয়ের অধিকারই যেন বেশি। শান্ত সারাদিন বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে ঘোরে আর সাঁঝ সাঁঝ করতে থাকে। অগত্যা মেয়ের ডাকনাম সাঁঝই হয়ে গেলো। তবে শান মেয়েকে চন্দ্রি বলেই ডাকে।

অতীত থেকে তাকে ফিরিয়ে আনলো তার ঘরের দুই চাঁদের খিলখিল হাঁসির আওয়াজ। শান মেয়ের কাছে গিয়ে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-“আমার চন্দ্রি সোনা খুব খুশি আজকে?”
সাঁঝ ফোন নিয়ে টুপ করে শানের কোলের মধ্যে বসে পড়লো। সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,
-“তুপ কলো পাপা। মামাল কাতে কল কলেতি।”
শান নিজেই ঠোঁটে আঙুল দিয়ে মাথা ঝাঁকালো। সাঁঝ মিষ্টি হেঁসে ফোন কানে ধরলো।

রুশান এই বিকেল বেলায় বোনের কল দেখে অবাক হলো। রুমঝুম তো এই সময়ে ফোন করেনা। সামনে উপস্থিত লোকগুলোকে একটু অপেক্ষা করতে বলে রুশান সাইডে এসে ফোন রিসিভ করলো।
-“হ্যালো, আপু বল।”
-“এতো দেলি হলো কেন হু? পতা মামা। ইত্তু তালাতালি লিতিব কলতে পালো না?”
(এতো দেরি হলো কেন হু? পঁচা মামা। একটু তাড়াতাড়ি রিসিভ করতে পারো না।)

রুশান হেঁসে ফেললো। অসহায় কন্ঠে বললো,
-“আমি সরি চাঁদ সোনা। আর কখনো লেট করবো না। এখন বলো মামাকে কেন ফোন করেছো?”

সাঁঝ কেন ফোন করেছে সেটা কিছুক্ষণ ভাবলো। রুমঝুম মেয়ের ভাবনার গভীরতা দেখে ফোন নিয়ে নিলো। সাঁঝ তখনো ভাবছে সে কেন ফোন করেছে।
রুমঝুম রুশানকে আগামীকাল আসার জন্য বলে দিলো। উপলক্ষ টাও বলে দিয়েছে।
একে একে সবাইকে দাওয়াত দেওয়া শেষ করলো রুমঝুম।

..

দেখতে দেখতে দু’দিন কেটে গেলো। শানদের বাড়িতে হইচই লেগে আছে। সাঁঝ আর মাহিমই মাতিয়ে রেখেছে পুরো বাড়ি। শান্ত দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। উর্বিন্তা এখনো আসে নি দেখে তার মন খারাপ। আর বাল্যকালের ভালো লাগা সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসায় পরিনত হচ্ছে। উর্বিন্তা ক্লাস সিক্সে গার্লস স্কুলে ভর্তি হলে শান্তর সে কি কান্না। পরে অবশ্য কোনো এক কারনে উর্বিন্তা গার্লস স্কুল ছেড়ে শান্তর স্কুলে ভর্তি হয়েছিলো। সেইদিন শান্ত ভীষণ খুশির দিনগুলির মধ্যে একদিন।

সাঁঝ দৌড়াতে দৌড়াতে শান্তর কাছে এসে বললো,
-“তাত্তু ,একানে দালিয়ে আচো কেন?”
শান্ত হতাশ কন্ঠে বললো,
-“তোর চাচীর জন্য দাঁড়িয়ে আছি রে মা।”
সাঁঝ কিছুক্ষণ ঠোঁট লটকে রেখে জিজ্ঞাসা করলো ,
-“তাতি কি তাত্তু?”
শান্ত বেজার হয়ে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তুই ওদিকে যা মেরি মা। আমার দুঃখ বাড়াইস না তাত্তু ,তাতি এসব বলে।”

সাঁঝ আরো আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্ত সিনিমকে একা একা সোফায় বসে থাকতে দেখে বললো না। দৌড়ে সেদিকে চলে‌ গেলো।
প্রায় আধঘণ্টা পর উর্বিন্তা এলো। উর্বিন্তাকে দেখেই শান্তর দিল ধাকধাক কারনে লাগা।
উর্বিন্তা এগিয়ে এসে শান্তর হাতে একটা গিফট বক্স দিলো। মিষ্টি কন্ঠে বললো,
-“হ্যাপি বার্থডে,শান্ত।”

শান্ত কোনোমতে ধন্যবাদ জানিয়ে উর্বিন্তাকে বসতে বলে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলে। গিফটটা দেখে মুচকি হেঁসে ড্রয়ারে রাখলো। এটা ধীরে সুস্থে দেখবে সে। তার ভালোবাসার মানুষটির দেওয়া প্রথম উপহার বলে কথা।

শান্তর জন্মদিনে রাফিনকেও দাওয়াত দিয়েছে শান। সন্ধ্যার একটু আগে রাফিন এসেছে। রুশান গেটের কাছে থাকায় রাফিনকে সেই প্রথম দেখেছে। রুশান রাফিনকে দেখেই দৌড়ে গেলো তার কাছে। সৌজন্যমূলক হেঁসে বললো,
-“হাই স্যার। কেমন আছেন? সমস্যা হয়নি তো?”
-“ও তোমার স্যার কিভাবে হলো রুশান?”

শানের কন্ঠ শুনে থতমত খেয়ে গেলো রুশান। রাফিনের চোখের দিকে একপলক চেয়ে বললো,
-“আরে ভাইয়া ,পুলিশকে তো স্যারই ডাকা উচিত তাই না?”
শান হেঁসে বললো,
-“এখানে সে পুলিশ হিসেবে আসেনি। সো তুমি স্যার না বলে ভাইয়া বলতে পারো।”
রুশান ‘আচ্ছা’ বলেই জায়গা ত্যাগ করলো। শান সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে রাফিনকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।

রাত নয়টার মধ্যেই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলো। সাঁঝ ,তাহমিদ,মাহিম আর সিনিমের একসাথে অনেকগুলো ছবি তোলা হয়েছে। পরিবারের সবাই মিলেও একসাথে ছবি তুলেছে । মাহেরা খাতুন মেহেদী-সিন্থিয়া আর রুমেল মেঘাকে নিয়ে রাতেই নিজেদের বাড়িতে চলে গেছে। কাছাকাছি বাড়ি হওয়ায় কেউ আর না করেনি।

রাত প্রায় বারোটা । চারপাশে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। রুমঝুম সাঁঝকে ঘুম পাড়াচ্ছে। শান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সেই প্রথম দিনের মতো আজও আকাশে মস্ত এক চাঁদ অবস্থান করছে। গত পাঁচ বছর ধরে প্রতি পূর্ণিমায় শান আর রুমঝুম বেলকনিতে বসে চন্দ্রবিলাস করে।

রুমঝুম ধীর গতিতে এসে শানের পিছনে দাঁড়ালো। শান মেঝেতে বসে রুমঝুমের হাত ধরে টান দিলো। রুমঝুম এসে শানের কোলে পড়লো। আর চাঁদের আলো এসে পড়লো দু’জনের পুরো শরীর জুড়ে। রুমঝুম মুচকি হেঁসে শানের বুকে মাথা রাখলো।

শান রুমঝুমের মাথায় হাত বুলিয়ে ছড়া কেটে বললো-

হঠাৎ সেদিন মধ্যরাতে
দেখেছিলাম এক কন্যা
চন্দ্ররঙে গা ভিজিয়ে সে
ছড়ালো রুপের বন্যা।
আ..

শানের ছড়ার মাঝেই সাঁঝ এসে ধপ করে রুমঝুমের কোলে বসে পড়লো। সাঁঝকে এভাবে আসতে দেখে রুমঝুম হকচকিয়ে গেলো। আধঘন্টা ধরে এ কাকে ঘুম পাড়ালো সে‌। শান মেয়েকে টেনে নিজের বুকে নিলো। ধীর কন্ঠে বললো,
-“এখন ঘুমাও আমার চন্দ্রি সোনা।”
সাঁঝ বাবার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বললো,
-“আত্তা পাপা।”

প্রিয়তমা স্ত্রী আর কলিজার টুকরা মেয়েকে বুকে আগলে রেখে শান আবার আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ তার বুকে চাঁদসহ কতশত তারাকে আগলে রাখে।
তার জীবনের চাঁদ তো তার চন্দ্রকন্যা। আর তারা তার একমাত্র কন্যা। শান চাঁদের দিকে তাকিয়ে আনমনে বললো,
-“আমাকে আরেকটা তারা এনে দিবে চন্দ্রকন্যা?
রুমঝুমের বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগলো শানের কথা বুঝতে। যখন বুঝলো,তখন লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। অস্ফুট স্বরে বললো,
-“হু।”
-“কবে দিবে?”
রুমঝুম আর কিছু বলতে পারলো না। বিয়ের এতোবছর পরও সে শানের কাছে এলে লজ্জা পায়। লজ্জা পেয়ে মুখ লুকায় শানের বুকে। আজও সেটাই করলো। গভীরভাবে মিশে গেলো শানের বুকের সাথে। এখানেই তো তার প্রশান্তি।
মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করলো, তার জীবনের শেষ দিন অবধি যেন সে এখানেই ঠাঁই পায়।

অনেকক্ষণ কেটে গেলো নিরবতায়। একসময় শান আবেগময় অনুভূতি মিশিয়ে বললো,

-“জানো, ঝুম? আমার জীবনে যতকিছু পেয়েছি তার মধ্যে সবচেয়ে বড় পাওয়া তুমি। আমার চন্দ্রকন্যা, আমার ভালোবাসা, আমার চন্দ্ররঙা প্রেম তুমি।”

সমাপ্ত।।

(প্রথমেই দুঃখিত গল্পটাকে বড় করতে পারিনি বলে। সমাপ্তি এখানে আবার এখানে নয়। আপনাদের সবার প্রিয় রুশান আর শান্তর প্রেমকাহিনী নিয়ে ‘চন্দ্ররঙা প্রেম’ সিজন ২ আসবে। কবে আসবে সেটা এখনি বলতে পারবো না।
এন্ডিং কার কেমন লাগবে জানি না। সবাই ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে যাবেন। শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবো।
পরিশেষে অনেক অনেক ধন্যবাদ সব্বাইকে। ভালোবাসা অবিরাম সবার জন্য।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here