#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্ব-১৫
#আর্শিয়া_সেহের
শান্তর কোনো হেলদোল নেই। সে আজকে পন করেছে, ম্যাথ না করে এক পা ও নড়বে না। শান এই ঘর থেকে যাওয়ার জন্য অনেকক্ষণ ধরে বুঝাচ্ছে শান্তকে কিন্তু শান্ত তো শান্তই। সে ও নাছোড়বান্দা। ম্যাথ না করে ও এই ঘর ছাড়বে না।
শান হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পড়লো। রুমঝুম তো দুই ভাইয়ের কান্ড দেখে রিতিমত বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। রুমঝুমকে এভাবে হাসতে দেখে শানও মুচকি হাসলো। শান্তর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ম্যাথ বই খুলে নিয়ে বসেছে।
-“তোর ভাবি খুব টায়ার্ড। তোর ঘরে চল। ওখানে গিয়ে ম্যাথ করাবো”।
শানের কথা শুনে শান্ত ভ্রু কুঁচকে রুমঝুমের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ পরখ করে বললো,
-“ভাবি তোমাকে বলেছে যে সে এখন টায়ার্ড?”
শান ভরকে গেলো এই পিচ্চির কথায়। এখন তার মেজাজ গরম হলেও সে নিজেকে সামলে নিলো। ব্যাপারটা সফটলি হ্যান্ডেল করতে হবে। শান্তর দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো,
-“আরে দেখিসনি ওকে কেমন সারাক্ষণ সোফায় বসিয়ে রেখেছিলো? এখনো কত ভারি ড্রেস পড়ে আছে। বুঝতেছিসই তো ওর কষ্ট টা।”
শান্ত হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
-“কোথায় ভাবলাম ভাবি কে দেখবো আর ম্যাথ করবো ,তা আর হলো কই? সে নাকি এখন ক্লান্ত। আর হয় নাহ। চলো আমার রুমেই চলো।”
শান্তর কথার স্টাইলে শান রুমঝুম দুজনই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। এই ছেলে এতো পাকা কিভাবে হলো সেটাই ভেবে পায়না শান।
শান্ত বইখাতা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। শান পেছন থেকে বললো,
-“দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল।”
শান্ত কাঁদাহীন সাদা মন নিয়ে যেই না বাইরে গেলো অমনি শান ভেতর থেকে দাড়াম করে দরজা আটকে দিলো।
শান্ত কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো দরজার বাইরে। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার। একটু ম্যাথ করতে এসে তার মানসম্মান শেষ হয়ে গেলো। ভাবির সামনে তার ভাই তাকে ঘর থেকে বের করে মুখের উপর দরজা আটকে দিলো?
শান্ত বাইরে থেকে চিৎকার করে বললো,
-“আমার বিশ্বাসের এমন মূল্য দিলে ভাইয়া? তোমার কাছে আর কখনো আসবো না ম্যাথ করতে।”
শান একই রকম চিৎকার করে বললে,
-“বড় বাঁচা বেঁচে গেলাম।”
এরকম উত্তর বোধহয় শান্ত আশা করে নি। ভেবেছিলো ভাই বাইরে এসে সরি বলবে । শান্ত ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করতে করতে দরজার সামনে থেকে প্রস্থান করলো।
.
শান এতোক্ষণে রুমঝুমকে ভালো ভাবে দেখলো। বিছানায় রুমঝুমের সামনাসামনি বসে আছে সে। রুমঝুমের হাত দুটো আলতো করে ধরলো শান। হাতের পিঠে চুমু খেলো। রুমঝুম কাঠ হয়ে বসে আছে। ওর সমস্ত শক্তি যেন শেষ হয়ে গেছে। শান আরেকটু এগিয়ে রুমঝুমের কপালে চুমু খেলো।
রুমঝুম চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। শানের নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে তার সারামুখে। চোখ খোলার সাহসটাও হারিয়েছে রুমঝুম।
শান অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে রুমঝুমের ঠোঁটের দিকে। অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে ঠোঁটজোড়া। মাঝে মাঝে দুই ঠোঁট একসাথে চেপে ধরছে রুমঝুম। শান মুচকি হেঁসে চুমু খেলো রুমঝুমের ঠোঁটে।
সাথে সাথেই রুমঝুমের দেহে বয়ে গেলো এক অদ্ভুত শিহরণ। চোখ খুলে গেলো আপনাআপনিই।
রুমঝুম চোখ মেলে দেখলো শান ঘোর লাগা চোখে চেয়ে আছে তার দিকে। রুমঝুম আজ আর সেই চোখ থেকে নিজের চোখ লুকালো না। শানের চোখে চেয়ে রইলো খানিক সময়। কারো মুখেই কথা নেই।
আচমকা রুমঝুম এক ভয়ানক কাজ করলো। শানের গলা জড়িয়ে ধরে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো শানের ঠোঁটের মাঝে।
রুমঝুমের এই কাজ শানের কল্পনাতীত ছিলো। সে প্রথমে একটু অবাক হলেও পরে মুচকি হেঁসে দুহাতে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো রুমঝুমকে।
শান চুমু খেতে খেতেই রুমঝুমের বেশ কিছু জুয়েলারি খুলে ফেললো। রুমঝুম ঠোঁট ছেড়ে শানের বুকে মুখ লুকিয়ে হাঁফাতে লাগলো। শানের বুকের মাঝে শীতল শিহরণ খেলে গেলো তখন। তার প্রেয়সী তার বুকের মাঝে। তার চন্দ্রকন্যা এখন থেকে শুধুমাত্র তার।
শান শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রুমঝুমকে। রুমঝুমও মিশে গেলো শানের বুকের সাথে।
এভাবে কেটে গেলো অনেকটা সময়। শান রুমঝুমকে বললো,
-“তোমার ড্রেসটা পাল্টে নাও। এটা পরে কিভাবে আছো এখনো? আমারে শরীরে তো কাঁটা কাঁটা ফুটছে।
রুমঝুম শানকে আরেকটু ঝাপ্টে ধরে বললো,
-“আমার জামাকাপড় নেই তো এই ঘরে। আম্মু শিরীন কে দিয়ে যেতে বলেছিলো। ও বোধহয় ভুলে গেছে।”
শান রুমঝুমের হাত থেকে চুড়ি খুলতে খুলতে বললো,
-“তাহলে আজ রাতের জন্য আমার টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়ো। মন্দ হবে না কিন্তু।”
রুমঝুম শানের বুক কিল ঘুষি মেরে বললো,
-“চুপ করো পাজি ছেলে। শুধু লজ্জায় ফেলার ধান্দা।”
শান সবগুলো চুড়ি খুলে রুমঝুমকে বিছানায় বসিয়ে উঠে পড়লো। জুয়েলারি সব খোলা শেষ হয়ে গেছে। সে নিজের ঢোলা একটা টিশার্ট আর একটা ট্রাউজার এনে রুমঝুমকে দিলো। রুমঝুম তা দেখে ঠোঁট ফুলিয়ে শানের দিকে তাকালো। মুখ বাঁকিয়ে বললো,
-“আমি এসব পড়বো না। আমি ফ্রেশও হবো না।”
শান এক ভ্রু উঁচু করে বললো,
-“ওয়াশরুমে যাবে নাকি কোলে করে নিয়ে যাবো?”
রুমঝুম লজ্জায় আর কিছু বলতে পারলো না। জামাকাপড় নিয়ে দৌড়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়লো।
শান মুচকি হেসে রুমেই কাপড় পাল্টে ফেললো।
মিনিট দশেকের মাথায় ছিটকিনি খোলার শব্দে শান ওয়াশ রুমের দিকে তাকালো। ছিটকিনি খুললেও দরজা এখনো খোলে নি। শান এগিয়ে গেলো ওয়াশরুমের দিকে। দরজা ঠেলে দেখলো রুমঝুম গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
রুমঝুম মাথা না তুলে চুপচাপ পাশ কাটিয়ে বাইরে চলে এলো। শান পেছন থেকেই রুমঝুমের হাত ধরে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দাড় করালো। রুমঝুমের দুপাশে হাত রেখে বললো,
-” আমার কাছে এতো লজ্জা কিসের হু? সারাজীবন আমিই তো দেখবো?”
রুমঝুমের কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। শানকে তার দিকে এগুতে দেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
পানি পড়ার শব্দ পেয়ে রুমঝুম চোখ খুললো। সে দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে থাকলেও শান কোথাও নেই। সে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়েছে।
রুমঝুম নিজের মাথায় গাট্টা মেরে বেলকনির দিকে হাঁটলো।
আজ এক ফালি চাঁদ উঠেছে আকাশে। আকাশের বুকে নকশা কেটে অনেকগুলো তাঁরাও আছে। সেগুলো দেখতে দেখতেই রুমঝুম অনুভব করলো দুটো বলিষ্ঠ হাত পেছন থেকে তার কোমর জড়িয়ে ধরেছে। রুমঝুম আকাশের দিকে মুখ করেই চোখ বন্ধ করে গা এলিয়ে দিলো শানের বুকে।
শান রুমঝুমের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
-“আকাশ দেখা হলে এবার এই অধমের দিকে একটু তাকান চন্দ্রকন্যা। ”
রুমঝুম কথা বললো না। পেটের উপর থাকা শানের হাতটা আরো শক্ত করে ধরলো সে। শান রুমঝুমকে নিজের দিকে ঘুরালো। থুতনি ধরে মুখটা উচু করে চোখে চোখ রাখলো। বললো,
-“তোমাকে ভালোবাসার পূর্ন অধিকার দেবে চন্দ্রকন্যা? দেবে আমার চন্দ্ররঙা প্রেম কে নিজের রঙে রাঙাতে?”
কি মধুর আকুতি। রুমঝুম হাঁসলো। রাতের আঁধারেও সে হাঁসিতে আরেকবার হারিয়ে গেলো শান।
রুমঝুমকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো । ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে মুখ গুজে দিলো রুমঝুমের গলায়। রুমঝুমও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো শান কে।
দুজনে ডুবে গেলো ভালোবাসার অতল গহ্বরে।
কেটে গেলো সময়। অনুভবে রয়ে গেলো জীবনের ভালোবাসাময় প্রথম রাত্রিটি।
….
দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভাঙলো রুমঝুমের। পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো পুরো ঘর আলোয় ঝলমল করছে। দেয়াল ঘড়িতে সময় তখন নয়টা সাইত্রিশ । রুমঝুমের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। এতো বেলা হয়ে গেলো কখন। অবশ্য ঘুমিয়েছেই তো ভোরের দিকে।
দরজা অনবরত ধাক্কিয়েই চলেছে কেউ। রুমঝুম পাশ ফিরে দেখলো শান খালি গায়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। সমস্ত পিঠে আঁচড়ের দাগ। রুমঝুম বুঝলো এই দাগের ক্রেডিট তার নখের ।
নিজের দিকে তাকিয়ে খানিকটা লজ্জা পেলো রুমঝুম। বিছানার চাদরে ঢেকে আছে দুজন।
রুমঝুম শানকে ডেকে তুললো।
শান আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। পাশে চোখ ফুলিয়ে বসে আছে রুমঝুম। তার বউ। এখনো তার চোখে ঘুমের রেশ।
শান মুগ্ধ চোখে রুমঝুমকে দেখছিলো তখনই আবার দরজা ধাক্কানোর শব্দ এলো। রুমঝুম মিনমিন করে বললো,
-“অনেকক্ষণ থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে কে যেন। আমি কিভাবে যাবো বলুন? এদিকে বেলাও হয়েছে অনেক। তাই ডেকে তুললাম।”
শানের তখন মাথায় এলো রুমঝুমের কাপড়ের কথা। শান চাদর সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো। মেঝে থেকে টিশার্ট তুলে গায়ে জড়িয়ে নিলো। রুমঝুম ততক্ষণে চাদর দিয়ে নিজেকে একদম মুড়ে নিয়েছে। শান মুচকি হেঁসে এগিয়ে এসে রুমঝুমের কপালে চুমু দিলো। দুহাতে চাদরে আবৃত রুমঝুমকে কোলে তুলে ওয়াশ রুমে নামিয়ে দিলো।
-“তুমি ফ্রেশ হও। আমি তোমার কাপড় আনার ব্যবস্থা করছি।”
রুমঝুম মাথা হেলিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো। শান দরজা খুলে উঁকি মেরে দেখলো সিন্থিয়া আর তিহান দাঁড়ানো। সিন্থিয়া দরজা খুলতে দেখেই মুখ ভেঙচি দিয়ে একগাদা কাপড় তুলে দিলো শানের হাতে। শান এতো গুলো কাপড় কোনো রকমে সামলে বললো,
-“এভাবে মুখ ফুলিয়ে আছিস কেন?”
সিন্থিয়া কর্কশ কন্ঠে বললো,
-“এতো অল্পতে কিভাবে উঠলি? আরেকটু ঘুমাতি। মাত্র আধঘন্টা ধরে দরজা ধাক্কালাম।”
বলেই হনহন করে চলে গেলো।
শান বেক্কল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তিহানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এভাবে দরজা না ধাক্কিয়ে ফোন তো করতে পারতি।”
তিহান গমগমে সুরে বললো,
-” দুজনের মধ্যে একজনের ফোনও সুইচ অফ রাখলে না দিবো?”
-“চার্জ শেষ মনে হয়।”
-“দুজনেরই?”
শান চোখ পাকিয়ে তাকালো তিহানের কথা শুনে। তিহান শানের কাঁধ চাপড়ে দিয়ে যেতে যেতে বললো,
-“গলা-টলা একটু ঢেকে ঢুকে আসিস।”
বলেই অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,
-“যদিও আমি কিছু দেখিনি।”
শানের দুঃখ হয় মাঝে মাঝে এরকম একটা ফাজিলের পাল্লায় পড়ার জন্য। কি কুক্ষণে যে পাইছিলো এটারে।
শান কাপড়গুলো বিছানায় রাখলো। বেশিরভাগই শাড়ি। কয়েকটা থ্রিপিসও আছে।
রুমঝুমকে শাড়িতে দেখতেই শানের ভালো লাগে । তাই সবগুলো শাড়ি থেকে বেছে বেছে একটা ক্রিম কালারের শাড়ি দিয়ে এলো রুমঝুমকে। রুমঝুম ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। ব্লাউজটা তার গায়ে কিছুটা ঢিলা হয়েছে। তবুও কম্ফোর্টেবল।
সদ্য গোসল করা রুমঝুমকে দেখে শান বিষম খেলো। একধ্যানে চেয়ে রইলো তার দিকে। এমন রুপবতী তার ঘরে থাকলে সে অফিস -কাজ এগুলোতে মন দিবে কিভাবে? সারাক্ষণ তো এই রুপবতীর আশেপাশেই থাকতে ইচ্ছে করবে।
রুমঝুম শানের চোখের সামনে এসে তুড়ি বাজালো। সেই শব্দে শানের ধ্যান ভাঙলো। শান এক হাত মাথায় তুলে ঘাড়টা হালকা কাত করে বললো,
-“এতো সুন্দর কে হতে বলেছে তোমার? আমার তো সারাক্ষণ আদর করতে ইচ্ছে করে।”
রুমঝুমের গাল লাল হয়ে উঠলো। শান টুপ করে গালে একটা চুমু খেয়ে বললো,
-“এখনো এতো লজ্জা? কাল রাতের পরও এতো লজ্জা আসছে কোথা থেকে, আমার লজ্জাবতী?”
রুমঝুম মাথা নিচু রেখেই শানকে ঠেলে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিলো। নিচু স্বরে বললো,
-“সবসময় শুরু লজ্জা দেওয়ার ধান্দা। যান তো,গোসল সেড়ে নিন।”
শান উচ্চ শব্দে হেঁসে গোসলে ঢুকে পড়লো। মেয়েটাকে লজ্জাতে ফেলতে তার খুব ভালো লাগে। মেয়েটার লজ্জামাখা মুখটা শানের ভীষণ প্রিয়।
.
শান্ত বাদে এখনো কেউ ব্রেকফাস্ট করেনি। সবাই টেবিলে বসে শান-রুমঝুমের অপেক্ষা করছে। শিরীন আর মেঘার বেশ ভাব জমে গেছে ইতিমধ্যে। দুজন বসে বসে দুনিয়ার সব গল্প জুড়ে দিয়েছে।
মাহেরা খাতুন সকালেই বাড়িতে চলে গেছেন। মেহেদী বাড়িতে একা আছে। সারারাত ছেলেটার জন্য চিন্তা হয়েছে তার। বাইরে নিজেকে যতই শক্ত দেখাক,তিনি জানেন ছেলেটা ভেতর থেকে ভেঙে পড়েছে।তাই সকাল সকাল বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে সে।
মেঘাকে সবাই জোর করে রেখে দিয়েছে। আজকে তারা সারাদিন হৈ হুল্লোড় করবে এজন্য। মেঘাও আপত্তি করেনি। এদের সাথে থাকতে তার ভালোই লাগে।
ইমতিয়াজ মাহমুদ টেবিলে বসে অফিসের এক কর্মচারীর সাথে কথা বলছিলেন। কথার মাঝখানেই তিনি সিঁড়ির দিকে চেয়ে বললেন,
-“মাশাআল্লাহ।”
শাফিয়া আক্তার খাবার গোছাচ্ছিলেন। স্বামীর কথা শুনে তিনিও তাকালেন সিঁড়ির দিকে। শান আর রুমঝুম পাশাপাশি হেঁটে নেমে আসছে। চোখ জুড়িয়ে গেলো শাফিয়া আক্তারের। মুগ্ধ চোখে সেদিকে চেয়ে বললেন
-” আমার রাজপুত্রের সাথে আমার ঘরের লক্ষীকে কি দারুন মানিয়েছে। ওদের দিকে কারো নজর না পড়ুক।”
শান আর রুমঝুমকে পাশাপাশি বসালেন শাফিয়া আক্তার। সবাই বসে পড়লো যার যার জায়গায়। রুমঝুম কখনোই এমন একটা পরিবার পায়নি। আজ নিজের এরকম সুন্দর একটা পরিবার আছে ভেবেই আনন্দে কান্না পাচ্ছে তার।
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই গার্ডেনে গিয়ে বসলো আড্ডা দেওয়ার জন্য। রুমঝুমের চোখ পড়লো সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে। মাটি থেকে বেশ উঁচুতে মোটাসোটা একটা ডাল আছে। গাছটা কম করে হলেও বিশ-ত্রিশ বছর আগের।
আড্ডার একপর্যায়ে প্রান্ত বললো ,
-“তোদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে স্পেশাল হানিমুন প্যাকেজ দেওয়া হবে। তোদের বিয়ের গিফট হিসেবে। এখন বল কোথায় যাবি? দেশেই নাকি দেশের বাইরে কোথাও?
শান দাঁত কেলিয়ে বললো,
-“অবশ্যই দেশের বাইরে।”
প্রান্ত নিচু কন্ঠে বললো,
-“জানতাম তো। ”
বিথী বললো,
-“আচ্ছা পাহাড় নাকি সমুদ্র?”
শান রুমঝুমের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এটা তুমিই বলো।”
রুমঝুম লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। মেঘা পাশ থেকে গুঁতা মেরে বললো,
-“আর লজ্জা পেতে হবে না। বলে দে।”
রুমঝুম কিছু সময় ভেবে বললো,
-“সমুদ্র।”
তিহান লাস্ট চিপসটা মুখে পুরতে পুরতে বললো,
-“তাহলে তো মিটে গেলো। শান আর রুমঝুমের হানিমুনের জন্য আইল্যান্ড বীচ স্টেট পার্কই বেস্ট। সমুদ্র সৈকতের জন্য এটাই উপযুক্ত জায়গা। তাহলে ওটাই ফিক্সড ওকে?”
শান্ত ঝড়ের গতিতে দৌড়ে এলো রুমঝুমের কাছে। রুমঝুমের হাত ধরে বললো,
-“এ্যাই ভাবি। আমিও তোমাদের সাথে হানিমুনে যাবো। নিবে তো?”
রুমঝুম কি বলবে খুঁজে পেলো না। শান মাথায় হাত দিয়ে ধপাস করে বসে পড়লো ঘাসের উপর। বিরবির করে বললো,’ যার এমন একটা ভাই থাকে তার বেঁচে থেকে কি লাভ?
চলবে………
(রুশান নাদান বাচ্চা। ওর জন্য গার্লফ্রেন্ড কোথায় খুঁজবো আমি? ওকে সিঙ্গেলই মেনে নাও জনগন।
আর মেঘার জন্যও কেউ আসবে। অপেক্ষা করো একটু।)