রাত পোহালেই বিয়ে। অথচ খবর এলো পাত্র পক্ষ বিয়ে হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কারন তাফাজ্জল রহমান পাত্র পক্ষের চাওয়া টাকা দিতে পারেন নি। কুলছুম বেগম মরা কান্না জুড়ে দিয়েছেন। অপমানে ঘরে দরজা দেন তাফাজ্জাল। আশে পাশের মানুষ ছুটে যান ঘরে। দরজা ভেঙে তাফাজ্জল কে উদ্ধার করেন। একটু হলেই গলায় দড়ি দিতেন ওনি। সব কিছু নির্বিকার দেখে ভোর। যেন কোনো যন্ত্র মানবী। আশ্চর্য জনক হলে ও সত্য পাড়ার মানুষেরা ভোর কেই দোষারোপ করছে। নানান কটূক্তি করে যেন তাঁরা বিশ্ব জয় করে নিয়েছে। দু চোখের কোন বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে যায় ভোরের। বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। পোড়া কপাল নিয়ে আর থাকবে না সে। তাছাড়া সে না থাকলে তাঁর বাবা মায়ের মাথায় কোনো বোঝা ও থাকবে না। ধীর গতিতে ভরা সন্ধ্যা তেই বাসা থেকে বেরিয়ে পরে ভোর। এ জীবনে নতুন ভোরের অপেক্ষা শেষ। আজ থেকে সব মুক্ত।
তিন ঘন্টা পর
ভোরের মাথার কাছে বালিশ দিয়ে বসে আছে রাদ। হালকা ঘুম লেগেছে মাত্র। তখনি পাশ থেকে ভোরের হালকা গোঙানির আওয়াজ কানে লাগে। হুরমুরিয়ে উঠে রাদ। পাশে থাকা ভোর কে জেগে উঠতে দেখে বলে
” নার্স , দ্রুত স্যালাইন নিয়ে আসুন। ”
ভোর হালকা করে তাকায়। চশমার ফাঁকে ভোর কে দেখে রাদ। নার্স স্যালাইন এনে দিলেই তা চেঞ্জ করে দেয়। ভোরের জ্ঞান ফেরা দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। মেয়েটার গাঁয়ে কাঁচা হলুদের গন্ধ, সাথে বাসন্তী রঙের শাড়ি। দেখে মনে হচ্ছে বিয়ের কোনে। তাহলে এমন ভাবে ছুটছিলো কেন? সামান্য চিন্তাগ্রস্ত হয় ছেলেটা। সন্ধ্যায় গ্রামের মেইন সড়ক দিয়ে শহরে যাচ্ছিলো রাদ। একটা মেডিকেল ক্যাস্পিনের জন্য পাশের গ্রামে এসেছিলো। সবাই বিকেলে ফিরে গেলে ও গ্রাম টা ঘুরে দেখতে গিয়ে লেট করে ফেলে ওহ। রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ করেই ঝাঁপিয়ে পরে ভোর। মাথা ফেঁটে যায় , শরীরের বেশ কিছু স্থানে জখম ও হয়। কোনো দিকে না তাকিয়ে সামনের হসপিটালে নিয়ে আসে রাদ। যদি ও সে ডাক্তার তবে এখনো লাইসেন্স হাতে পায় নি। তাই পরিপূর্ন ভাবে চিকিৎসা করার রুলস নেই তাঁর কাছে। সে কারনেই ডাক্তারের হেল্প নিতে হয়েছে। প্রায় আধ ঘন্টা পরে টলমলে চোখে তাকায় ভোর। মেয়েটা উঠে বসার চেষ্টা করে। রাদ সাহায্য করে উঠে বসতে। তারপর বলে
” নাম কি আপনার ? ”
” ভোর। ”
” হঠাৎ করে গাড়ির সামনে ছুটে এসেছিলেন কেন ? ”
” মরার জন্য। ”
” ইউ মিন সুইসাইড ! মিস ভোর এটা কিন্তু অনুচিত। ”
মাথায় হাত রাখে ভোর। রাদের দিকে তাকিয়ে বলে
” আপনি, আপনাকে তো ঠিক ‘
” আমি ফিউচার ডক্টর ইফতিহার রাদ। মেডিকেলের শেষ বর্ষের স্টুডেন্ট। যদি ও আমার কাছে এখনো লাইসেন্স আসে নি। তবে ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি এসে যাবে। কিন্তু মিস সুইসাইড কেন করতে চেয়েছিলেন ? ”
রাদের প্রশ্নে বিব্রত হয় ভোর। সামন্য ভাঙা গলায় বলে
” আমি অভাগি তাই। আমার জন্য আমার বাবা মা অপমানিত হয়েছে। আমার জন্য পুরো গ্রামের কাছে কথা শুনতে হয়েছে। তাহলে আমার বেঁচে থেকে লাভ কি বলুন তো।”
” হুম সে তো বুঝলাম। তবে একটা কথা কি জানেন , আল্লাহর দেওয়া জীবন কে আঘাত করার অধিকার আপনার আছে তবে তাঁকে পুরোপুরি শেষ করার অধিকার নেই। সুইসাইড হলো পাপ। ”
” আমার পুরো জীবন টাই পাপ। ”
” সে যাই হোক। এখন কি আপনি সুস্থ বোধ করছেন ? আপনার পরিবারের সবাই চিন্তাগ্রস্ত। চলুন বাসায় পৌছে দিচ্ছি। ”
” আচ্ছা। ”
রাদের সাথে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় ভোর। শরীর টা এখনো দূর্বল। তাছাড়া সারাদিন না খাওয়া। যদি ও স্যালাইন দেওয়া হয়েছে তবে শরীর টা কেমন ভার ভার লাগছে। অসুস্থ শরীর নিয়ে যেতে থাকে মেয়েটা। হঠাৎ মাথা ঘুরে যায়। গেট ধরে বলে
” ডাক্তার সাহেব। ”
ভোরের থেকে কয়েক পা এগিয়ে ছিলো রাদ। ডাক্তার সাহেব শব্দ টা যেন বুকে এসে লাগে। পিছু ঘুরতেই দেখে মাটি তে পরে আসে ভোর। ছুটে যায় রাদ। ভোর কে তুলে ব্যগ্র হয়ে বলে
” কি হয়েছে ? পরে গেলেন কি করে। ”
” মাথা ঘুরছিলো। ”
” সকাল থেকে না খাওয়া তাই না ? ”
” হ্যাঁ। ”
” আমারো খেয়াল ছিলো না। এতো টা বাজে পরিস্থিতি তে খাওয়া দাওয়া হবেই বা কি করে। যাই হোক , আশে পাশের কোনো ধাবা থেকে খেয়ে নিবেন আসুন। ”
ভোর কে দাঁড় করায় রাদ। এক হাত ধরে হাঁটতে সাহায্য করে। নিজের ওজনের সাথে যেন পেরে উঠে না ভোর। সামান্য স্যালাইন দেওয়া তে নিজেকে এতো ভার ভার লাগে ?
রাস্তার পাশে এক ধাবা তে এসে বসে রাদ আর ভোর। শীত কাল হওয়া তে আকাশ দেখা যায় না। পুরো টাই কুয়াশায় মুরানো। তাঁর উপর এখন অনেক রাত। দোকানে শীতকালীন পিঠা বানানো হচ্ছে। দুটো পিঠা নিয়ে আসে রাদ। হাইজিন মেনে রান্না করা নেই দেখে রাদ কিছু খেতে আগ্রহ নয়। তবে ভোর কে সঙ্গ দিতে এক কাপ চা নিয়ে নেয়। কুয়াশা ভরা রাতে গরম চা বেশ ভালোই যাচ্ছে। খাওয়া শেষে বিল পে করবে তখনি ধাবায় থাকা বৃদ্ধ লোকটি বলেন
” বউয়ের এক্সিডেন হলো কি করে ? ”
বউ শব্দ টা শুনে থতমত খায় রাদ। টাকা নিয়ে বৃদ্ধ লোকটির বিল পরিশোধ করে বলে
” ওনি আমার বউ নয় , পেসেন্ট। ”
এক সেকেন্ড ব্যায় করে না ছেলেটা । ভোরের কাছে এসে বলে
” আসুন যাওয়া যাক। ”
গাড়ি চলছে তাঁর গতিতে। সিটে মাথা এলিয়ে আছে ভোর। এক পলক তাকিয়ে রাদ বলে
” কোন ক্লাসে পড়াশোনা করেন ? ”
” পড়াশোনা ”
” হুম কোন ক্লাস । ”
” না মানে এখন পড়াশোনা করি না। ”
রাদ পাশ ঘুরে তাকায়। ভোর কে এক পলক দেখে ভ্রু কুচকে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ হয়। কিছুক্ষণ পর বলে
” বয়স কতো আপনার ? ”
” আঠারো হবে কিছু দিন পর। ”
” আচ্ছা। কোন ক্লাস অব্দি পড়েছেন ? ”
” এস এস সি পাস করেছি। তারপর আর পড়া হয় নি। ”
” না পড়ার কারন। ”
” মা বাবা চায় নি পড়াশোনা করি। তাছাড়া মেয়ে মানুষের বোঝা বইবে আর কত দিন ? ”
” কথা টা বুঝলাম না। ”
দীর্ঘশ্বাস টানে ভোর। সামনের দিকে দৃষ্টি নিমজ্জিত রেখে বলে
” মেয়ে রা হলো পরের সম্পদ। বিয়ে দিতে হবেই। তাঁরা বাবা মা কে আয় করে খাওয়াতে পারবে না। আমাদের পেছনে যতো টাকা খরচ হবে তাই লস। ”
” কে বলেছে আপনাকে ? ”
ভোর যেন থতমত খায়। একটু ভেবে উত্তর পেয়ে যায়। বলে
” এটা সবাই জানে। গ্রামের প্রায় সব মানুষ ই এই কথা বলে। ”
” আচ্ছা। এখনো গ্রামের মানুষ এগুলো ভাবে। আশ্চর্য! ”
ভোর কিছু বলে না। গাড়ি এসে থামে বড় রাস্তায়। রাদ বলে
” এরপর কোন দিক ? ”
” এখানেই রাখুন আমি চলে যেতে পারবো। ”
” কি সব বলছেন ? ”
ভোর কথা বলে না। গাড়ি থেকে নেমে আসে রাদ। আশে পাশে তাকিয়ে বলে
” চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এই আঁধারে আপনি একা যাবেন ? গ্রামের যা পরিস্থিতি, কয়েক দিন আগে ও এক মেয়ের ধর্ষন হওয়ার খবর এসেছে। আমি আপনাকে একা ছাড়তে পারবো না। ”
” কিন্তু ”
” কোনো কিন্তু নয়। আর চিন্তা করবেন না। আমি আপনার বাসাতে তো যাবো না। ”
ভোর মাথা ঝাঁকিয়ে হাঁটা শুরু করে। ফোনের ফ্লাস জ্বালিয়ে চলতে থাকে দুজনে। কাঁদা মাটির মধ্য পা গেড়ে যায়। রাদ বিরক্ত হয়। তবু ও হাঁটতে থাকে। ভোরের বাড়ির কাছে এসে ভোর বলে
” ঐ যে ঐ টাই আমার বাসা। আপনি এখন চলে যেতে পারেন। ”
” আচ্ছা। নিজের খেয়াল রাখবেন। আর মেডিসিন গুলো ঠিক মতো নিবেন। ”
” আচ্ছা। ধন্যবাদ , এতো টা সাহায্য করার জন্য । ”
” ধন্যবাদ অন্য বিষয়। আর কখনো এমন করবেন না। আত্মহত্যা মহা পাপ। ”
ভোর নিজের বাসাতে পা রাখে। উঠানের কাঁচা বারান্দায় বসে আছে কুলছুম। আশে পাশে আরো অনেকেই রয়েছে। পুরো বাসা যেন গমগম করছে। ভোর কে দেখেই রাহিলা বলেন
” আইছে তোমার মাইয়া। দেখো বিয়া ভাঙছে আর এই দিকে বাপ মা রে একা রাইখাই চইলা গেছে।”
রাহিলার কথাতে মুখ তুলে তাকায় কুলছুম। ভোর কে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন। ততক্ষনে তাফাজ্জল ও চলে এসেছেন। কিছু ছেলে পেলে ভোর কে খুঁজতে গেছে। কুলছুম ভোরের কাছে এসে দাঁড়ান। ভোর মাথা নত করে বলে
” মা আমি ”
কোনো কথাই বলার সুযোগ মিলে না। তাঁর আগেই ভোর কে লাগাতার চড় থাপ্পড় দেয় কুলছুম। ধাক্কা খেয়ে হাতে থাকা ঔষধ পরে যায়। কারো ধ্যান নেই ভোরের মাথায় ব্যান্ডেজ। সবাই ওকে গালি গালাজ করতে ব্যস্ত।কেউ কেউ বলছে নষ্টামি করতে গিয়েছিলো। তাফাজ্জল মেয়ের কাছে এসে দাঁড়ান। ঘৃনায় ওনার চোখ কেমন করে উঠে। তিনি বলেন
” তোর মতো মেয়ে থাকা হলো দুর্ভাগ্য। এতো দিন টাকা পয়সা খরচ করছি অপাত্রে। কোনো কাজে আসবি না তুই। পাড়ার মানুষের কাছে আমার মাথা নত করালি। নষ্টামি করতে গেছিলি তাই না ? ”
” আব্বা ! ”
মুখ ফিরিয়ে নেয় তাফাজ্জল। কুলছুম মরা কান্না জুড়েছেন। তাফিন কে বুকে জড়িয়ে বলেন
” তুই হলি মুখ পুরি । আমার পোলা ডা আমাগো এক মাত্র ভরসা। তা ও তরে পড়ালেখা করাইছি। এতো টাকা পয়সা খরচ করছি কিন্তু তুই আমাগো ডুবাইলি।”
ছোট্ট তাফিন অবাক চোখে তাকায়। বোনের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা চালায়। নয় বছরের তাফিন যেন কিছুই বুঝতে পারে না। পাড়ার কিছু মানুষ থু থু দেয়। কুলছুমের কলঙ্ক হলো ভোর। এই কথা শুনেই রক্ত চরে যায় কুলছুমের মাথায়। এই মেয়ের জন্য এতো বড় কথা শুনতে হলো আজ। তেঁতে যায় কুলছুম। উঠানে রাখা বাঁশের কন্চি নিয়ে আসেন। ছোট্ট তাফিন মা কে বাঁধা দেয়। কুলছুম ছেলে কে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। ভোর কে বাঁশের কন্চি দিয়ে আঘাত করেন। সদ্য অসুস্থ শরীরে কন্চির আঘাত যেন মাথায় এসে লাগে। অসহ্য যন্ত্রনা হয়। চিৎকার করে উঠে ভোর। মাটি তে লুটিয়ে পরে , তবু ও কুলছুম মারতে থাকে ওকে। কেউ আগায় না। শুধু অদূরে দাঁড়িয়ে কাঁদে তাফিন।
রক্ত লাল শরীরে আঘাত করতে থাকে কুলছুম। তিনি যেন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে আছেন । বাসার গেটে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে উঠে রাদ। কাছেই ছিলো সে। হঠাৎ ভোরের চিৎকার কানে এসে লাগে। তখনি ছুটে আসে । তবে এমন পরিস্থিতি দেখে অবাক হয়। মাটি তে গড়াগড়ি খাচ্ছে মেয়েটা। রাদ এসে দাঁড় করায়।সবাই বেশ অবাক হয়। আধ বোঁজা চোখে তাকিয়ে ভোর বলে
” ডাক্তার সাহেব আপনি চলে যান। ”
” ভোর ! কেউ একটু পানি এনে দিন প্লিজ। কি জ্ঞান আপনাদের ? মেয়েটাকে এভাবে মারছিলো , কেউ আগালেন ও না। ”
কেউ পানি দেয় না। তাফিন ই পানি এনে দেয়। দু চোখে অশ্রু বর্ষন। ভোর কে পানি খাওয়ায় রাদ। সবাই কানা কানি করে। ভোর কে উঠিয়ে বেঞ্চে বসায় সে। ভোর আবারো বলে
” ডাক্তার সাহেব আপনি চলে যান। ”
” আপনি এখন চুপ করুন। ”
এগিয়ে আসে রাদ। উঠানে দাঁড়িয়ে বলে
” কি করছিলেন কি আপনারা ? এভাবে কেউ মারে। ”
” তুমি কে ? ”
তাফাজ্জলের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ইচ্ছে জাগে না। রাদ চিৎকার করে বলে
” আপনারা মানুষ ! কোন কারনে মেয়েটার উপর এমন আচারন করছেন। আপনারা জানেন ওনি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন।”
” তয় আপনি জানলেন কেমনে? ”
রাহেলার কথায় ঘুরে তাকায় রাদ। নিঃসেন্দহে মহিলা কূটনৈতিক সমাজের অংশ। রাদ বলে
” আমার গাড়ির কাছে পরেছিলেন ওনি। আমি ওনাকে হসপিটালে নিয়ে যাই।”
রাহিলা যেন দুই দুই করে চার মেলায়। রাদ সবাই কে বোঝাতে থাকে। ঠিক তখনি বোম ফাঁটায় রাহিলা। ব্যঙ্গ করে বলেন
” এই শহরের পোলার সাথে কুকাম করতে গেছিলো তোমাগো মাইয়া। কোন কারনে ফিরা আসছে বুঝলাম না। ছিইই ছিই এমন নষ্ট মাইয়া এলাকায় নাই। ”
” আপনি কি সব বলছেন ? ”
” তয় কি ? এই মাইয়ার লগে ইটিশ পিটিশ চালাইছো। এখন আসছো বুঝাইতে। এমন মেয়ে হইলো কলঙ্ক। ”
ভোর ধীর পায়ে উঠে আসে। কথা বলার মতো শক্তি পায় না সে। কুলছুম এতোক্ষন চুপ থাকলে ও এখন রেগে যান। ভোর বলে
” মা ওনি সত্যি কথা বলছেন। ওনার নামে এমন কথা বলবেন না কেউ। ডাক্তার সাহেব ভালো মানুষ। ”
কুলছুম এবার ভোর কে থাপ্পড় মেরে দেন। আবারো মারতে গেলেই বাঁধা হয় রাদ। ভোর কে উঠিয়ে বলে
” আপনারা মানুষ। অসুস্থ মেয়েটা কে এভাবে মারছেন। ”
সবাই যেন সার্কাস দেখছে। তাফাজ্জল আসেন। রাদ কে দেখে বলে
” আমাগো অনেক বদনাম হইছে। আর বদনাম করাতে চাই না। এই নষ্ট মাইয়া ঘরে রাখুম না আমি। ”
সবাই তালে তাল মেলায়। তাঁদের কথা গ্রামে এমন মেয়ে থাকলে ক্ষতি হবে। রাদ চেঁচিয়ে বলে
” ছিই আপনাদের কি মানসিকতা। ওকে আপনাদের কথাই থাকছে। ওনি থাকবেন না এই গ্রামে। আমি ওনাকে নিয়ে যাচ্ছি। ”
এবার কিছু লোক ব্যঙ্গ করে। রাদ কে খারাপ ব্যবসার মানুষ বলে তকমা লাগায়। ভোর বলে
” একি বলছেন ডাক্তার সাহেব। আপনি চলে যান প্লিজ। আমাকে নিয়ে ভাববেন না। ওরা আমাকে ঠিক ই জায়গা দিবে। ”
” আপনি কথা বাড়াবেন না ভোর। আমি কথা বলছি। ”
গ্রামের সকলের সাথে কলহ লেগে যায় রাদের। বাজে কিছু কথা আসে কানে। গাঁ রি রি করে উঠে। তৎক্ষনাৎ সে বলে
” আপনাদের এতো সমস্যা যখন , আমি ওনাকে পূর্ন মর্যাদা দিয়ে নিয়ে যাবো। আর আপনাদের কুৎসিত ধারনা , মেয়ে রা সংসারের বোঝা, এদের পেছনে টাকা খরচ করা অপাত্রে দান। আচ্ছা এই সমস্ত কিছুর জবাব দিবে ভোর। ফিরে আসবেন ওনি। নিজেকে তৈরি করবে। বাবা মা কে রোজগার করে মেয়ে রা ও খাওয়াতে পারে সেটাই করে দেখাবেন ওনি। আর এটা হলো আমার চ্যালেঞ্জ। ”
খোলা চোখে তাকায় ভোর। রাদ বলে
” আপনাকে বিয়ে করবো আমি। আশা করি আপনার অমত থাকবে না এতে। ”
” ডাক্তার সাহেব ! ”
” গ্রামের কুসংস্কার ভাঙতে সাহায্য করুন ভোর। ”
তখনি হজুর ডেকে নিয়ে আসে রাদ। ইসলামিক ভাবে বিয়ে সম্পূর্ন করে এক কাপড়ে বের করে নিয়ে আসে ভোর কে। পেছন ফিরে তাকায় ভোর। মেয়েটার হাত ধরে রাদ বলে
” এই নর্দমার কালো আঁধার ছাপিয়ে , চলো রোদ্দুরে। ”
#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#সূচনা_পর্ব
চলবে….