চলো রোদ্দুরে পর্ব-২৯

0
1892

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_29

‘ কবে যাচ্ছিস রাদ? ‘

কথা টা বলেই মুখ গোমড়া করে নিলো নাহিদ। রাদ কে কিছু বলতে না দিয়ে সুপ্তি বলল
_তোর না জানলে ও চলবে।

_আশ্চর্য! তুই কেন কথার মাঝে কথা বলিস?

_বিকজ তরে আমার সহ্য হয় না।

রাগে নাকের পাটা লাল হয়ে গেল নাহিদের। রনিত এগিয়ে এসে দুজনের মাঝে দাঁড়ালো। দুজনে ঝগড়া করতে ব্যস্ত। এই মুহুর্তে রাদ এর কিছু ভালো লাগছে না। টেবিলের শেষ প্রান্তে গিয়ে দ্বীপ আর রায়ার মাঝে বসলো। রায়া বলল
_আজকাল বেশি মনমড়া দেখাচ্ছে তোকে। কোনো সমস্যা?

_এমনি।

_মিথ্যে কেন বলছিস?

_মিথ্যে নয় রায়া।

_আবারো মিথ্যে বলছিস রাদ। রায়া ইজ রাইট। বাট তোর মুখ থেকে স্বীকার করানোর সাধ্য নেই কারো।

দ্বীপের দিকে তাকিয়ে রইলো রাদ। এর বেশি কি বলবে ওহ? ছেলেটার পিঠ চাপরে দ্বীপ বলল
_ভোর এখন কেমন আছে রে?

_ফাইন। হাত টা ঠিক হয়ে গেছে একদম।

_তুই ওকে নিয়ে চিন্তিত? রনিত থাকছে তো।

_আই নো দ্যাট। বাট তবু ও ভালো লাগছে না।

ঠোঁট টা কামড়ে ধরলো রায়া। আফসোস এর স্বরে বলল
_ইসস যদি এই সময় টা তে আমাদের ভিসা না আসতো।

_কামন রায়া মন খারাপ করছিস কেন? এতো বড় একটা সুযোগ পেয়েছিস তোরা। সিটিজেন পেলে খারাপ হবে না নিশ্চয়ই।

_বাট।

_ আচ্ছা বাদ দে এসব। শুনলাম সুপ্তির সাথে নাহিদের জব হয়েছে। বুঝলাম না দুজনে একি হসপিটালে কি করে হয়?

সবাই একটু করে হাসলো। ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত ওরা। না জানি হসপিটালে গিয়ে ও কেমন তোলপাড় শুরু করে দুজনে।

দুপর টা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়ি তে ফিরলো রাদ। ইফতিহার দুটো পেপার নিয়ে এলেন। মুহুর্তেই রাগ উঠে গেল রাদ এর। থমথমে মুখে বলল
_তোমাদের সব কিছু তো আমার ই। তাহলে এই পেপার নামক সনদ করার কি প্রয়োজন?

_প্রয়োজন আছে রাদ।হসপিটাল টা তোমার নামে করে দিতে চাচ্ছি আমি। যাতে করে ভেতর থেকে দায়িত্ব বোধ কাজ করে। একটা কথা মনে রাখবে প্রতি টা মানুষ নিজ সম্পদের কদর করে।

_সবার সাথে আমাকে মেলাচ্ছো ড্যাড?

_মেলাচ্ছি না বেটা। এটাই আমাদের লাইফ।

কথায় না পেরে সাইন করে নিজ রুমে চলে আসলো রাদ। মিনিট কয়েক পর নাহিদ কল করলো।অভিযোগের কন্ঠে বলল
_তুই কিছু একটা কর রাদ। আমি এই আস্ত ছাগল মেয়ের সাথে কাজ করতে পারবো না। অন্য কোথাও জব নিতে বল।

_কি হয়েছে নাহিদ?

_অতিষ্ঠ হয়ে গেলাম আমি। ফরমালিটিস সাইন করতে গিয়ে ও জ্বালিয়ে মেরেছে আমায়। শুধু মাত্র এই মেয়ে টার জন্য বন্ধু মহলের বেশির ভাগ সময় আমি এটেন্ট থাকি না। ওকে আমি মেরেই দিবো।

_এই না, নাহিদ কথা শোন।

ওপাশ থেকে কল কাঁটার টুট টুট শব্দ কানে এলো। ফোন টা আলগোছে বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো রাদ। জীবন টা কতো টা অদ্ভত হতে চলেছে। পুরোই ভিন্ন রকমের অনুভূতি। এতে রয়েছে শুধু মাত্র বিষাদ আর যন্ত্রনা।
.

” কেউ কারো নয়, সবাই পর হয়।
সময়ের সাথে বদল হয়।
কেউ আগে, কেউ বা একটু পরে।
তবে সে বদল হবেই হবে।
মিছে অনুভূতির দিও না কো সাড়া।
বদলে গেলে কপাল হবে পোড়া।”

কবিতা টির সঙ্গে নিজের জীবনের কিছু টা মিল খুঁজে পেলো ভোর। ফেসবুক স্ক্রল করার সময় ফেসবুকের ষোড়শী এক লেখিকা ফাতেমা তুজ এর পেজ টা ওর সামনে পরেছিলো। কেন যেন ইচ্ছে হলো একটু ঘেঁটে দেখার। সেই কারনেই পেজ চেইক করছিলো। হঠাৎ কবিতা টা চোখে পরলো। নিজের জীবনের সাথে মিল পেল বোধহয় তাই থমকে গিয়েছিলো। ঘন ঘন কয়েক টা শ্বাস ফেললো। ওর জীবনে বদলে যাবার মতো আর কেউ কি আছে? পর হবার ও তো কেউ নেই। এ পৃথিবী তে নিঃস্ব ওহ। প্রচন্ড একা একটা মেয়ে। উহহু একা নয় আছে একজন। যাকে ডাক্তার সাহেব বলে সম্বোধন করে ওহ। ভাবনার মাঝেই কলিং শুনতে পেলো। তিন্নি এসেছে দেখে মন টা ফুরফুরে হলো। তবে মেয়েটা বেশি সময় অবস্থান করলো না। বরং একটা চিঠি দিয়ে চলে গেল। চিঠি টা খুলে অবাক হলো ভোর। এ লেখা যে রাদ এর। কি সুন্দর আর স্পষ্ট
” আমার ফ্লাইট কাল। বলবো বলবো করে বলা হয় নি তোমায়। প্রচন্ড মন কষ্ট নিয়ে কয়েক টা লাইন লিখলাম। জানি রাগ করবে অথবা অভিমান করবে। তবে উপায় পেলাম না আমি। তোমার সঙ্গে দেখা করলে আমি নিশ্চিত ভাবে যেতে পারবো না। আমি আটকে যাবো কোনো এক বেড়াজালে। তোমাকে দেখে রাখার দায়িত্ব গ্রহন করেছি আমি। থাকবো তোমার পাশে। ফোনে যোগাযোগ ও করবো। যে কোনো সমস্যায় রনিত কে পাশে পাবে। আমার অবর্তমানে ওকে ভরসা করে চলো। আর শোনো মেয়ে খুব ভালো করে পড়াশোনা করবে। ডাক্তার সাহেব কে চমকে দিতে হবে। নিজের খেয়াল রেখো। কষ্ট পেও না। প্রচন্ড ভাবে মিস করবো। ”

মৃদু হাসলো ভোর। সময় কতো দ্রুত চলে যায়। চোখের পলকে কেঁটে গেল কয়েক প্রহর। মেয়েটার ভারী শ্বাসে রুম টা কেমন অদ্ভুতুড়ে হয়ে গেছে।হঠাৎ করেই ফাতেমা তুজ এর সেই কবিতার কথা মনে হলো ওর। তবে সত্যিই কি সবাই বদলে যায়? ভোর এর জীবনে কোন বদল ঘটতে চলেছে এবার?

রাদ এর মনে হলো ভোর আসবে। লুকিয়ে হলে ও আসবে। তবে ওকে ভুল প্রমানিত করার জন্যই বোধহয় মেয়েটা এলো না। ক্লান্তির শ্বাস টা ফেললো রাদ। এ জীবন টা দীর্ঘশ্বাসে ভরপুর। রেলিং এ পিঠ ঠেকিয়ে নখ কামড়াচ্ছে নাহিদ। পাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছে চলেছে সুপ্তি। জীবনে এই প্রথম সুপ্তির জন্য মায়া হলো নাহিদের। ধীর পায়ে কাছে আসলো। হালকা হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
_কিচ্ছু হয় নি। রাদ আবারো ফিরে আসবে আমাদের কাছে।

ঝমঝমে কেঁদে উঠলো সুপ্তি। আকস্মিক নাহিদ কে জড়িয়ে ধরলো ওহ। ছেলেটার মনের গহীনে শীতল বাতাসের স্পর্শ অনুভব হলো।ভেতর টা অদ্ভুত ভাবে কাঁপতে লাগলো। কেন যেন আজ কথা শোনাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বরং এভাবেই আরো কয়েক ঘন্টা কাঁটিয়ে দেওয়ার তীব্র বাসনা জাগলো।

বিধ্বস্ত চোখ মুখ।রামিসা আর ইফতিহারের সাথে অভিমান করেছে রাদ। সাফ সাফ বলেছে যাতে ওনারা এয়ারপোর্ট এ না আসেন। ছেলেটার অভিমানী কথা তে রামিসা ও সম্মতি জানিয়েছেন। হাজার হোক,সন্তান তো সন্তান ই হয়।এয়ারপোর্ট এ গেলে ওনি নিজে ও নিজেকে সামলাতে পারবেন না। ইফতিহার অবশ্য আসতে চেয়েছিলো তবে রাদ এর অভিমানী দৃষ্টির কারনে আসেন নি তিনি।

রাদ এর ছবি নিয়ে বসে আছে ভোর। ব্যলকনিতে বসে থাকায় কয়েক ফোঁটা পানি এসে পরলো ছবিটির উপর। তৎক্ষনাৎ ছবি টি মুছে নিলো ওহ। বুক টা শূন্য লাগছে। রাদ এর চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না। একদম ই মেনে নিতে পারছে না। দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হলো। চোখ দুটো ছল ছল। উপরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি আটকে নিলো। আশা ঘরে প্রবেশ করলেন। ভোর এর পাশাপাশি বসে বললেন
_জীবন টা অনেক বড় মেয়ে। কারো জীবন ই থেমে থাকে না। ওহ সব হয় বাজে কথা। এগিয়ে যাওয়ার জন্য শক্ত পোক্ত হাতের প্রয়োজন। তুমি ভাগ্যবতী যে এমন একজন আছে তোমার জন্য।

_সে তো চলে গেল ম্যাম। বহু থেকে বহু দূর চলে গেলেন ওনি। যাঁকে চাইলেই ডাকা যাবে না। যে ইচ্ছে হলেই রাত্রি দুপুরের কথা চিন্তা না করে চলে আসবেন না। যাঁর জন্য ব্যলকনির দরজা খুলে অপেক্ষা করা হবে না। আমি কি করে থাকবো ম্যাম?

আশা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো ভোর। আশা ভাষাহীন নির্বিকার।এমন পরিস্থিতি তে কিছু বলা যায় না।তাছাড়া নিজেদের অনুভূতি নিজেরাই বুঝতে পারবে। কিছু উপদেশ আর একটি খাম হাতে দিয়ে চলে গেলেন তিনি। চোখ মুছে ব্যলকনি তে আসলো ভোর। শীর শীর বাতাসে খোলা চুল গুলো উড়ে যাচ্ছে। আলতো হাতে খাম টা খুললো মেয়েটি। খাম এর ভেতরে রয়েছে বিশ লক্ষ টাকার চেক। দু চোখ ঘোলাটে হয়ে গেল। কাবিন পরিশোধ করে ঋন মুক্ত হলো রাদ। ওর ভীষন কষ্ট হচ্ছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। দারুন এক সাউন্ড করে মাথায় উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একটা
প্লেন।চিৎকার করে উঠলো ভোর। কাঁদতে কাঁদতে মেঝে তে বসে পরলো। খাম টা বুকে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ আমি আপনাকে প্রচন্ড মিস করছি ডাক্তার সাহেব। প্রচন্ড মিস করছি। বুক টা যন্ত্রনায় পরিপূর্ণ হয়ে গেল ডাক্তার সাহেব। আমি যে জ্যান্ত লা/শে পরিনত হলাম। একি অন্ধকারে রেখে গেলেন আমায়। কোথায় আপনার রোদ্দুর? আপনি ছাড়া এই সুখ যে পানসে লাগে ডাক্তার সাহেব। ‘

**সুখ আসতে না আসতে কষ্ট এসে হাজির। যাঁরা নাহিদ কে ভুলে গেছেন তাঁরা 15 পার্ট পড়ে আসুন।**

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here