চলো রোদ্দুরে পর্ব-৩৫

0
1894

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_35

শিশির ভেজা সকালে ভোরের ঘুম আলগা হতেই নিজেকে আবিষ্কার করলো রাদের বুক পাঁজরে। এই প্রথম দুজন এক সঙ্গে রাত্রী যাপন করেছে। ভালোবাসার শুরু টা হলো ছোট্ট ভাঙা কুটিরেই। হাই তুলতে থাকে ভোর। কেমন করে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে রাদ। একটু করে ঝুঁকে নিলো মেয়েটা। হঠাৎ করেই রাদের নাকে নাক ঠেকিয়ে দিলো। চোখ মেলে তাকাতেই মেয়ে টার অদ্ভুত সুন্দর চোখ দেখতে পায় রাদ। এক হাতে চেপে ধরে ঠিক বুক পাঁজরে। ছুটোছুটি করে ভোর। রাদ বিরক্তির সুরে বলে
_সারাক্ষন তো ছুটোছুটিই করে গেলে। এতো টা আন রোমান্টিক কেন তুমি?

_আন রোমান্টিক ই ভালো।

_পৃথিবীর এক মাত্র বউ তুমি, যে কি না আস্ত এক আন রোমান্টিক।

_এক মিনিট, আপনি কি করে জানলেন যে, পৃথিবীর সব বউ রোমান্টিক?

_বোঝা যায় এটা।

_অনেক বোঝা বুঝি হয়েছে এখন আমাকে উঠতে দিন।

_না দিবো না উঠতে। আমি এখন ঘুমাবো।

_সারা রাত্রি ঘুমিয়ে পেট ভরে নি?

_পেট ভরেছে তবে মন ভরে নি। এমন দুষ্টু বউ থাকলে মন ভরবে কি করে?

_তো আরেক টা বউ নিয়ে আসুন।

_বললেই হলো।আমার এক জনেই সুখ।

ফুরফুরে হাসলো ভোর। ছেলেটার খোঁচা খোঁচা দাড়ি তে গাল ঘষে মেয়েটা বলল
_আমি সব কিছুর ভাগ দিবো তবে আমার বরের ভাগ কোনো মতেই নয়।

_হয়েছে মিসেস, এবারা বুকে ঘুমোন আপনি।

_সকাল হয়ে গেছে তো।

_আরেকটু প্লিজ।

ছেলেটার বাচ্চাদের মতো আবদার নাকোচ করবে কি করে? ছেলেটার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো মেয়েটি। রাদের গাঁ থেকে বিশেষ ধরনের পারফিউম এর গন্ধ নাকে এসে লাগছে। দারুন সুভাস টা।

আরেক টু সকাল হলে উঠে যায় দুজনে। খড়ের বিছানায় এই প্রথম ঘুমিয়েছে ওরা। তবে বেশ ভালোই ঘুম হয়েছে। হাই তুলতে থাকে রাদ। নিজেকে ঠিক ঠিক করতে ব্যস্ত ভোর। হেঁচকা টান মেরে মেয়েটি কে সন্নিকটে টেনে নিলো রাদ। যাঁর ফলে আবারো এলোমেলো হয়ে গেল শাড়ি। মুখ দিয়ে বিরক্তির শব্দ করে বলল ভোর
_আপনি তো নাম্বার ওয়ান বদ লোক।

_ধ্যাত রোম্যান্স নেই তোমার মাঝে।

_ওরে এতো রোম্যান্স করে ও ওনার মাথার ভূত নামে নি।

_রোম্যান্স করলাম কবে?

_কেন কাল রাতে

কথার মাঝে আটকে গেল ভোর। মিটিমিটি হাসছে রাদ। কিছু টা পিছিয়ে গেল ভোর। তবে রাদ মেয়ে টা কে যেতে দিলো না।বরং দুষ্টুমির শীর্ষে উঠতে লাগলো। ভোর পরলো মহা বিপাকে।ছেলেটার মারাত্মক স্পর্শ কখনো উপভোগ করছে তো কখনো বিরক্ত হচ্ছে। কি অদ্ভুত প্রেম।

পরিপাটি হয়ে বসে আছে ভোর। রাদ আগেই কাপ নুডলস রেখেছিলো ব্যাগে। সেটাই গরম পানি করে প্রসেস করে নিয়ে এলো। মৃদু হেসে বলল
_আশে পাশে জনবসতি নেই বললেই চলে। তাই অন্য কিছু নাস্তা হবে না।

_সমস্যা নেই। এতেই পেট ভরপুর হয়ে যাবে।

রাদের থেকে কাপ নুডলস নিয়ে গপ গপ করে খেতে লাগলো ভোর। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রাদ। সত্যি বলতে মেয়েটার মাঝে রোম্যান্স এর বালাই ও নেই।
_এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন ডাক্তার সাহেব?

_না এমনি।

ছেলেটার কন্ঠে হতাশা। নাছোড়বান্দা স্বরে ভোর বলল
_মিথ্যে বলবেন না একদম। বলুন কি হয়েছে।

_ তবে শুনো, তাকিয়ে ছিলাম কারন তুমি একটা হাম্বা।

_হোয়াট হাম্বা মানে কি হু? আপনি আমার সাথে ঝগড়া করতে চান। আমি কিন্তু খুব ভালো ঝগড়া পারি।

_থাক আর ঝগড়া করতে হবে না মিসেস। এবার একটু রোম্যান্স করুন।

_সারাক্ষন রোমান্টিক মুডে থাকেন?

_হুহ অলোয়েজ।

মেয়েটার গলায় মুখ ডুবিয়ে বললো রাদ। ভোরের অবস্থা কাহিল। এই ডাক্তার তো বড্ড যন্ত্রনা দায়ক হলো। আগেই ভালো ছিলো। এখন কেয়ার কম রোম্যান্স বেশি।
_আচ্ছা আর জ্বালাবো না। এখন দ্রুত আমাকে খাইয়ে দাও।

রাদের কথা মতো নুডলস খাওয়াতে লাগলো ভোর। বেশ তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে ছেলেটা। আসলেই স্বামী হিসেবে রাদের মতো কাউ কে পাওয়া ভাগ্যের বিষয়।

গাড়ি চালাচ্ছিল রাদ। হঠাৎ করেই গাড়ি থামিয়ে দিলো। জিজ্ঞাসা দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো ভোর। রাদের মুখ টা কেমন রুক্ষ্ম দেখাচ্ছে। ছেলেটার মুখে হাত রেখে ভোর বলল
_কি হয়েছে আপনার?

_মম ড্যাড কে না জানানো অব্দি শান্তি মিলবে না।

_ওনারা যদি আমাকে না মানেন?

ভোরের দিকে পূর্ন দৃষ্টি তে তাকালো রাদ। মেয়েটার চোখে চিক চিক করছে কয়েক ফোঁটা বিচ্ছেদের জল। রাদ চিন্তিত হলে ও একটা বিষয় নিয়ে সিউর ইফতিহার আর রামিসা ওর কথার মূল্য দিবেন। তবে ভোরের বিক্ষিপ্ত মুখ টা ওকে স্থির করে দিলো। মেয়েটা মাথা নিচু করে আছে। হালকা হাতে হাত বুলিয়ে বলল
_মম, ড্যাড না মানলে ও তুমি আমার। আর আমি তোমাকে ছাড়ছি না। আর শোনো অলোয়েজ থিংক বি পটিজিব। ইনশাআল্লাহ যা হবে ভালোই হবে।

মলিন হাসলো ভোর। মেয়েটার কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে ড্রাইভিং এ মনোনিবেশ করলো ছেলেটি। তবে ভেতর টা কেমন খচখচ করছে। হঠাৎ এমন কেন লাগছে?
.

দ্বীপ আর রায়া বহু দিন পর কনফারেন্স কলে এটেন্ট করতে পেরেছে। আজ কাল যা ব্যস্ততা চলছে। রায়ার শরীর টা কেমন দেখাচ্ছে। সুপ্তি আনমনেই প্রশ্ন করে ফেললো
_তুই কি প্রেগনেন্ট?

দ্বীপ মেয়েটার দিকে তাকালো। রায়া মাথায় হাত দিয়ে হতাশার সুরে বলল
_ না। তবে শরীর মেজ মেজ করে আজ কাল।

_আই থিংক তোর ডাক্তার এর কাছে যাওয়া প্রয়োজন।

কথা টা বলেই জ্বিভ কাঁটে সুপ্তি। হাসির শব্দে ভরে উঠে কনফারেন্স কল।ডাক্তার নিজেই ডাক্তার দেখাবে।নাহিদ মেয়েটার মাথায় চাপর দিয়ে বলল
_গাঁধি একটা।

_কি করবো, আমি তো এমনি।

_হুম যেমনি হোস না কেন তুই আমার।

ছেলেটার বুকে মাথা এলিয়ে দেয় সুপ্তি। পাশ থেকে ফোরন কাঁটে ইনায়া। বলল
_দেখলে রনিত আমরা যখন প্রেম করতাম তখন কতো কথা শোনাতো আমাদের। আর এখন দেখো নিজেরাই রোম্যান্স করে বেড়াচ্ছে।

_ঠিক,

_আমি ও সাপোর্ট দিচ্ছি।

দ্বীপের সাথে সাথে রায়া ও একি কথা বললো। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সুপ্তি। নাহিদ গাঁ ছাড়া ভাবে বলল
_তোদের রিলেশন আর আমাদের রিলেশন এক হলো নাকি? আমি অনেক কষ্ট করে পেয়েছি ওকে।

কথা টা বলেই সুপ্তির নাকে নাক ঘষতে লাগলো ছেলেটা। তবে আজ কে বেশ লজ্জা হচ্ছে সুপ্তির। লাজুক রঙা গালে হুট হাট চুমু বসিয়ে দিলো নাহিদ। পাশ থেকে কাঁশতে লাগলো রনিত। নাহিদ বলল
_তোরা ও কাপল আমরা ও কাপল। এতে কাশির কি হলো?

_আমরা বিবাহিত ওকে? আর তোরা মাত্র খোঁকা খুঁকি।

_আমরা ও বিয়ে করছি খুব দ্রুত।

ইনায়া চট করে সুপ্তির পিঠে চাপর মেরে দেয়। আহ করে উঠে সুপ্তি। দুই বান্ধবী রসিকতার সাথে হাতাহাতি করতে থাকে। ইনায়ার ছোট্ট ছেলেটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।দেখছে তাঁর মা মাসির কান্ড। এদের কান্ড দেখে হেসে উঠলো দ্বীপ আর রায়া। কিছুক্ষন কথা বলে কনফারেন্স কল এর ইতি ঘটালো।

রনিতের ছোট্ট ছেলেটি কে নিয়ে ট্রেরেস এ এসেছে সুপ্তি। বার বার বাচ্চা টি কে আদর করছে । নাহিদ ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে। যে মেয়েটা কে কিছু দিন আগে ও সহ্য হতো না। আজ সেই মেয়েটি কে না দেখে এক প্রহর কাঁটে না।
_এই নাহিদ।

সুপ্তির কন্ঠে হতচকিয়ে উঠলো নাহিদ। কাছে এলো সুপ্তি। ভ্রু কুঁচকে বলল
_কতোক্ষন ধরে ডাকছি তোকে। আর তোর কোনো পাত্তা নেই। কি ভাবছিলি?

_এমনি।

_আচ্ছা শোন দেখ না ইয়াত কে দেখতে কতো সুন্দর লাগে। নরম তুলতুলে, মনে হয় এক পেঁজা তুলো।

_হ্যাঁ আমার ইয়াত বাবা টা অনেক সুন্দর।

বাচ্চা টি কে আদর করতে থাকে নাহিদ। সুপ্তি বলে
_আমাদের ও এমন ফুটফুটে পেঁজা তুলো আসবে।

মৃদু হাসে নাহিদ। সুপ্তির কপালে এলোমেলো ভাবে চুমু খায়। মেয়েটি কে বুকের ভেতর পিষে ফেলতে পারলে হয়তো শান্তি মিলতো।

ইনায়া, রনিত, সুপ্তি আর নাহিদ আড্ডা তে বসেছে। আড্ডার এক পর্যায়ে রাদ কে কল করলো রনিত। এখনো ফোন সুইচ অফ দেখাচ্ছে। এদিকে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার ছিলো। অধৈর্য হয়ে পরছে সুপ্তি। নাকি সুরে বলল
_সব থেকে বেটার হবে আমরা ওর বাসায় চলে যাই।

_এই ভর দুপুরে যাবো?

_তো কি হয়েছে? আয় না রে রনিত।

_আচ্ছা তাহলে তাই চল।

ইনায়া মুখ টা গোমড়া করে রইলো। ছোট্ট বাচ্চা টি কে নিয়ে এতো ঘোরা ফেরা ঠিক নয়। ইনায়া কে জড়িয়ে ধরলো সুপ্তি। অন্য হাতে ইয়াত কে আদর করে বলল
_দেখ আমাদের বিয়ে টা হলে একটা মেয়ে বাবু হবে। আর তোর পুচকোর সাথে আমার পুচকির বিয়ে দিবো। তবু ও মন মড়া থাকিস না দোস্ত।

সুপ্তির কথা শুনে যে কেউ হাসতে বাধ্য। ইনায়া ও হেসে উঠলো। সুপ্তির গালে চুমু খেয়ে বলল
_খুব দ্রুত তোদের দুই মন এক সুতোয় বাঁধা পরবে।

লজ্জা পেলো সুপ্তি। নিজে হাজার কথা বলবে তবে অন্য কেউ বললেই লজ্জায় লাল নীল হবে।

ইনায়া কে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পরলো ওরা। সুপ্তি আর নাহিদ কে ফ্যাসেলিটি দিতে গাড়ি ড্রাইভ করছে রনিত।আর ওদের দুটি কে পেছনে বসিয়েছে। নাহিদের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো সুপ্তি।এ বুকে যেন কতো সুখ লুকিয়ে আছে। তবে মন কেন স্থির হতে পারছে না?

**আমি গল্প তাড়াহুড়ো করে বা রাগ করে শেষ করছি না। শুধু এর আগে আরো তিন টে পার্ট হতো এই যাহ। না হলে সব ঠিক ঠাক। **

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি।

পরবর্তী গল্প #অভিমানী_সে আশা করি সবাই সাপোর্ট করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here