#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_4
শপিং শেষ। কিছু টা ইতস্তত বোধ করলে ও কুর্তি তে কিছু টা কমফর্টেবল ফিল করছে ভোর। একটু ডিজাইন করা হলে ও বেশ মানান সই পোশাক ই বটে। তবে প্রথম বার থ্রি পিস ছেড়ে কুর্তি পরা তে কিছু টা আড়ষ্টতা কাজ করছে। চেঞ্জিং রুম থেকে বের ই হতে পারছে না। আয়নায় নিজেকে দেখে চলেছে বার বার। কিছু টা লজ্জা ও লাগছে বটে। এ দিকে মেয়েটা দরজায় খট খট আওয়াজ করে বলছে
_ম্যাম আপনার হয়েছে?
_জি আপু আসছি।
চেঞ্জিং রুম থেকে বেরিয়ে আসে ভোর। ওকে দেখে কিছু টা হাসে মেয়েটা। এতো ক্ষন শাড়ি পরে থাকায় বয়স টা বিশের ঘরে মনে হয়েছিলো। এখন বোঝা যাচ্ছে বেশি বয়স নয়।
ফোনে দু চোখ নিমজ্জিত রেখেছে রাদ। বহু কষ্টের পর ভোরের জন্য কলেজ খুঁজে পেয়েছে সে। তবে এটার মাঝে ও আরেক বিপত্তি।এই কলেজে আসা যাওয়া সব মডেল স্টুডেন্টস। সেখানে ভোর হলো একদম ই সরল সোজা প্রকৃতির। রেগিং এর কবলে পরলে মাথায় হাত। তবে আশে পাশে এই কলেজ টাই ভালো আর চেনা জানা। হুট হাট যেখানে সেখানে ভর্তি করলেই তো হবে না। নিজের পাওয়ার এর সাথে মিল রেখেই তো কাজ করতে হবে। প্রায় মিনিট খানেক ধরে রাদ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভোর। বারং বার হাত কচলাচ্ছে। কিছু টা দ্বিধায় ভুগছে। ফোন রাখতেই চোখ যায় ভোরের দিকে। এক পলক তাকিয়ে বলে
_ওয়াও, লুক প্রিটি। আই থিংক এই কস্টিউম এ তেমন অসুবিধা হবে না তোমার। এম আই রাইট?
মাথা ঝাঁকায় ভোর। সান গ্লাস টা চোখে লাগিয়ে হাঁটা লাগায়। পেছন থেকে শক্ত পোক্ত হাতের চাপর পরতেই চোখ দুটো ছোট ছোট করে ফেলে। পর মুহূর্তে রনিত কে দেখেই ঠোঁট প্রসারিত হয়। দুজনে একে অপরের সাথে গল্পে মজে যায়। গার্লফেন্ড এর সাথে দেখা করার জন্য এখানে এসেছে রনিত। ভোর কে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রনিত বলে
_হু ইজ সি?
রনিতের প্রশ্নে কাহিল অবস্থা। কি উত্তর করবে মাথায় আসে না। এ দিকে ভীষন অপরাধ বোধ হচ্ছে ভোরের। বোকা চাহনি তে রাদের দিকে দৃষ্টি দেয়। আমতা আমতা করে রাদ বলে
_সি ইজ মাই রিলেটিভ। শোন ওকে হোস্টলে পৌছে দিতে হবে। আসছি রে।
ভোর কে নিয়ে পালিয়ে বাঁচে রাদ। রনিত অবাক হয় না। বরং তখন ই বেশ কিছু টা সন্দেহ করেছিলো ওহ। সেই কারনেই ছুটে আসে শপিং মলে। আর সন্দেহ একদম ই সঠিক ঠেকে।
_ডাক্তার সাহেব।
_কথা বলো না এখন। আমাদের দ্রুত যেতে হবে।
_ব্যাথা পাচ্ছি আমি।
পেছন ফিরে তাকিয়ে ব্যাথার কারন বুঝতে পারে না রাদ। ভোর বলে
_হাতে ব্যাথা পাচ্ছি।
_উফফস স্যরি। এই তুমি হাতে কাঁচের চুড়ি পরেছিলে?
_হ্যাঁ। তখন সব গুলো ভেঙে গেছে এই একটাই ছিলো। এটা ও ভেঙে গেল।
_ইসস কি যে করো না। দেখি কেঁটে ছে কি না।
ভোরের হাত টা পর্যবেক্ষন করে বুঝতে পারে কাঁটে নি। তবে লাল হয়ে গেছে। ভেতর থেকে খারাপ লাগে ওর। নিজের হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে
_এই ব্যাথা অতি সামান্য ডাক্তার সাহেব। এমন ব্যাথা আমি অনেক পেয়েছি।
_ তোমার বাবা মা ছোট থেকেই এমন করে?
_না। ওরা আমাকে খুব ভালোবাসতো। তবে আজকাল তেমন ভালোবাসে না। আমাদের গ্রামে এখনো যৌতুক চলে। বিয়ের সময় না নিলে ও বিয়ের পর চাপ সৃষ্টি করে। তেমনি হয়েছিলো আমার ছোট ফুপুর সাথে। বিয়ের পর অনেক অত্যাচার করতো ওনার স্বামী। আমার দাদা দাদি নেই। আমার আব্বার কাছেই সমস্ত চাপ পরে। ফুপুর জন্য আব্বার ধানের জমি বিক্রি করতে হয়। তবু ও হয় নি, আরো চায় তাঁরা। আব্বা দিতে নারাজ হওয়াতে ফুপু সমস্ত সম্পর্ক শেষ করে দেয়। দুই বছর আগে ফুপু আত্মহত্যা করে। সেই থেকেই আব্বা আর মা কে অনেক কথা শোনায় গ্রামের মানুষ। তাঁরা ও অনুভব করে মেয়ে দের টাকা পয়সা দিয়ে বড় করে কোনো লাভ নেই। ফুপু কে ও পড়াশোনা করিয়েছিলো। তবে ফুপু ও ভুল বুঝেন। আর আমার প্রতি ও তাঁদের একি ধারনা জন্মায়। এস এস সি পরীক্ষা দেওয়ার পর আর পড়াশোনা করাবে না বলে জানিয়ে দেয়। হয়তো আমি ও তাঁদের প্রতি এমন আচারন করবো বলে তাঁদের ধারনা। তাছাড়া মেয়েরা শুধু নিতে জানে দিতে জানে না। বিয়ের যৌতুক দেওয়ার জন্য দুই লাখ টাকা ধার্য করা হয়। আব্বা এক লাখ দিলে ও আর দিতে পারে নি। তাই হলুদের পর তাঁরা বিয়ে ভেঙে দেয়। আমি যে অভাগী তাই প্রমান হয়।
প্রচন্ড রকমের আবেগ মেশানো কথায় গলা ধরে আসে ভোরের। হঠাৎ করেই পরিবারের কাছে তিক্ত হয়ে পরে মেয়েটা। উঠতে বসতে বোঝা নামক পদবি দেওয়া হয় ওকে। হয়তো তাঁরা পরিস্থিতির স্বীকার তবে কথা গুলো কতো টুকুই বা উচিত?
হোস্টেলে এসে মিসেস কাজী আশার কাছে আসে রাদ। পুরো হোস্টেল এর দায়িত্বে আছেন তিনি। আগে একবার ওনার সাথে পরিচয় হয়েছিলো। ভোর যেন অবলা প্রানী। ওকে যা বলা হচ্ছে তাই করে চলেছে। কোনো মতামত নেই যেন। মিসেস আশা আসতেই উঠে দাঁড়ায় রাদ। হাত বাড়িয়ে বলে
_ আম ইফতিহার রাদ। সন অফ ইফতিহার খান।
_ওহ ইয়েস তোমাকে এখন চিন্তে পারলাম। আসলে অনেক দিন আগে পরিচয় হয়েছিলো কি না।
_হ্যাঁ। আচ্ছা ম্যাম যাঁর জন্য এসেছি সেটা হলো একজনের দায়িত্ব নিতে হবে আপনাকে। আই মিন ওকে দেখে রাখতে হবে।
_আচ্ছা। তো এই মেয়েটাই কি সে?
ভোরের দিকে ইশারা করে কথা টা বলেন আশা। সামান্য হাসে রাদ। বলে
_হ্যাঁ। ওহ আজ থেকে এই হোস্টেলেই থাকছে। একটু লাজুক, তাই ওকে দেখে রাখবেন প্লিজ।
_ওকে। ডোন্ট ওরি।
ভোরের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে তাকায় আশা। যাঁর ফলে উসখুস করতে থাকে মেয়েটা। বার বার চেয়ার খামচে ধরে। বুদ্ধিমতী আশা বুঝতে পারেন এখন প্রশ্ন করা ঠিক হবে না। আরো দু একটা কথা বলে চলে আসে রাদ ও ভোর। ভোর কে রুমে পৌছে দিয়ে বলে
_লিসেন তোমার যে কোনো প্রয়োজন মিসেস কাজী আশার কাছে যাবে। আর হ্যাঁ ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে।
মাথা দোলায় ভোর। এখনো কুর্তির সাথে মানিয়ে নিতে পারে নি মেয়েটা। কেমন যেন জড়োসড়ো হয়ে আছে। বেশ মায়া হয় রাদের। সমস্ত মায়া পানি হয় তখনি যখন মনে পরে বাসার কথা। অলরেডি 5’50 বাজে। আজ একটা কান্ড বাঁধবে নিশ্চিত। কোনো মতে বিদায় জানিয়ে চলে আসে রাদ।
বাসায় ফিরেই বুঝতে পারে আজ টর্নেডো যাবে ওর উপর দিয়ে। ট্রেরেস এ বসে চা পান করছেন দুই কপোত কপোতি। দূর থেকে কেউ আঁচ ই করতে পারবে না এরা যে 50 পেরিয়েছে। সংসার জীবনের বয়স ওহ দেখতে দেখতে হয়ে গেল 26 বছর। তবে এখনো দুজন কে আঠারোর কপোত কপোতিই মনে হয়। ছুটে যায় রাদ। পেছন থেকে রামিসা কে জড়িয়ে বলে
_স্যরি স্যরি মম। প্লিজ ফরগিভ মি। আর এমন টা হবে না।
_নো ডিয়ার। এমন করলে তো হবে না।
_নট ফেয়ার ড্যাড। আমাদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি কেন হচ্ছো?
_হা হা তুমি বড্ড অবুঝ রাদ। তোমার মম আর আমি আলাদা কি করে হই?
_তুমি থামবে প্লিজ।
রামিসার এক ধমকে থমকে যায় ইফতিহার। মুখ চেপে হাসে রাদ। এখনো এদের প্রেম কমে নি। এমন অফুরন্ত ভালোবাসা দেখলে অদ্ভুত শান্তি লাগে। মুখে সামান্য কঠোরতা ফুঁটিয়ে তুলেন রামিসা। রাদ এর হাসি বন্ধ হয়ে যায়। কানে হাত দিয়ে বসে পরে। বলে
_স্যরি মম , ভেরি স্যরি। প্লিজ ফরগিভ মি।
_তুমি কেন এমন করলে রাদ? জানোই তো আমরা তোমাকে নিয়ে কতোটা সেনসেটিভ। একটা কল করা উচিত ছিলো বেটা।
_স্যরি বললাম তো। আমি ভেবেছিলাম আগেই আসতে পারবো। বাট লাক ফেবারে ছিলো না। একটু লেট হয়েছে এর জন্য এতো রাগ?
এবার ইফতিহার মুখ খুলেন। রাদের বাহু তে হাত রেখে বলেন
_সেটা বিষয় নয়। কথা হচ্ছে তুমি আমাদের এক মাত্র সন্তান। আর তুমি এটা ও জানো তোমার ড্যাড এর শত্রু পক্ষ একটু নয় বরং হিউজ এমাউন্ট এর। তাই তোমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করা টা স্বাভাবিক নয় কি?
_সেটার জন্য স্যরি বললাম তো।
_আচ্ছা অনেক হয়েছে এবার ফ্রেস হয়ে নাও তুমি।
রামিসার কথাতে পেছন ঘুরে তাকায় রাদ। ছেলের দৃষ্টি বুঝতে পারেন তিনি। সামান্য বিব্রত হয়েই বলেন
_দেখো এখন তুমি লেক পুল করবে না। শুধু মাত্র সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার কারনেই আমি তোমাকে ফ্রেস হতে বলছি।
_লেক পুল কেন করবো মম? যেটা সত্যি সেটাই বলবো। বিয়ের ছাব্বিশ বছর পেরিয়ে ও তোমরা প্রেম করছো এটাই তো কথা।
_রাদ।
রামিসার ধমক খেয়ে পালিয়ে যায় রাদ। ছেলের ফাজলামি তে দুজনেই হেসে উঠেন।
ছোট থেকেই এমন দুষ্টুমি করে চলেছে রাদ। সব কিছুর জন্য দায়ী ইফতিহার। রোজ সন্ধ্যা তে ছেলের সাথে আড্ডা দিতেন আর নিজের প্রেমের গল্প বলতেন। আর রাদ ও নির্লজ্জের মতো আগ্রহ নিয়ে শুনতো।প্রথম প্রথম লজ্জা লাগলে ও সময়ের সাথে সাথে অভ্যস্ত হয়ে পরেন রামিসা। তবে এটা ও সত্যি স্বামীর সাথে প্রণয় কখনোই যাবে না। সংসার জীবনে পা রাখার পূর্বে ছয় টা বছর প্রেম করেছে দুজনে। একি ভারসিটির স্টুডেন্ট।
ফ্রেস হয়ে এসে ফোন নিয়ে বসে রাদ। ফেসবুক লগ ইন করতেই কয়েক শ নোটিফিকেশন এর শব্দ। কান যেন ঝালা পালা হয়ে যায়। পর পর ম্যাসেজ এর টুং টাং শব্দ কানে লাগে। ইচ্ছে হয় এখনি ফোন টা ফেলে দিতে। তৎক্ষনাৎ ম্যাসেজ আসে সুপ্তির
_কাল থেকে অনলাইনে কেন ছিলি না রাদ?
_একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম।
_ওহ ওকে।নেক্সট ক্যাম্পিন দুদিন পর ই। তো আমরা চাচ্ছিলাম যে সবাই মিলে একটা গেট টুগেদার করতে। তোর কি মতামত?
কিছু টা ভেবে সম্মতি দিয়ে দেয় রাদ। সুপ্তি বলে
_ রনিত বললো একটা মেয়ে কে নিয়ে শপিং মলে গিয়েছিলিস ?
সুপ্তির ম্যাসেজ টা আসতেই বুকের ভেতর ধক করে উঠে। ভোরের কথা মনে পরে যায়। তাড়াহুড়ো করে আসাতে খেয়াল ই ছিলো না। তাছাড়া ভোরের কাছে কোনো ফোন ও নেই। আর না আছে টাকা। মাথার চুল গুলো খামচে ধরে ছেলেটা। কি একটা ভুল করে এসেছে।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে