চিঠি দিও ১০

চিঠি দিও
১০
_________

“বলো তো ভাবী আমায় কেমন লাগছে দেখতে?”
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে বেনী করতে করতে প্রশ্নটি করল উপমা। আসমা ঠিক ওর পেছনে বিছানার ওপর বসা ওর দিকে তাকিয়ে৷ প্রশ্নটি শুনে মৃদু হাসি খেলে গেল আসমার ঠোঁটের কোণে। বিছানা থেকে উঠে এসে উপমার দু কাঁধে হাত রেখে আয়নায় ওর প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে সহাস্যে আসমা বলল,
— ভীষণ প্রিটি।
— কিন্তু প্রিটি লাগলে তো চলবে না। আজ আমায় ভীষণ সিক লাগতে হবে। এক পলক দেখলেই যেন মনে হয় জ্বর থেকে উঠেছি মাত্র।
উপমার কথার অর্থটা আসমা ধরতে পারল না। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চাইল,
— মানেহ্!
উত্তর দিলো না উপমা। ঠোঁট কামড়ে হাসলো খানিক। প্রসঙ্গ পাল্টাতে উল্টো প্রশ্ন করল,
— তুমি কি কিছু বলতে চাও ভাবী? সাত সকালে আমার ঘরে।
— হু বলতে তো চাই।
ইতস্তত করল আসমা। এরপর বলল,
— নাহ্ থাক।
— কথাটা কি অস্বস্তিজনক?
ফিরে তাকাল উপমা। আসমা মাথা নাড়ল।
— কিছুটা।
— হোক অস্বস্তিজনক। তবুও তুমি বলো ভাবী। একটা কথা বলতে এসেছ তা না বলে যদি চলে যাও, আমার অশান্তি অশান্তি লাগবে। সারাক্ষণ এটাই মনে পড়তে থাকবে।
এ পর্যায়ে ম্লান হাসল আসমা।
— আমি আসলে বুঝতে পারছি না কথাটা তুমি কীভাবে নেবে। আমি ঠিক শিওর নই কিন্তু…
— নানী বলতো ননদীনি রায়বাঘিনী। সবসময় ভাবীদের ওপর হুকুমজারি করবে। এটাই ননদের বৈশিষ্ট। আমার মা কিন্তু ওরকম ছিল না। মামিদের কাছে সবসময় শুনে এসেছি মা তাদের সাথে কেমন বন্ধুর মতো মিলেমিশে থাকতো। মায়ের একমাত্র মেয়ে হিসেবে আমিও মায়ের পথ অনুসরণ করবো এটাই স্বাভাবিক। তবে তুমি কি আমাকে তোমার বন্ধু ভাবতে পারোনি ভাবী?
আসমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চাইল উপমা। আসমা দ্রুত ওর কাছে এসে বলল,
— ভাবব না কেন? শুধু বন্ধু! তুমি তো আমার ছোটোবোন হয়ে গেছ। এই পরিবারে তুমি আর অভ্রই ছিলে যে আমায় প্রথম দেখাতেই মেনে নিয়েছিলে এবং সাপোর্ট করেছ। এখন পর্যন্ত সমস্ত বিপদে-আপদে আমার ছায়াসঙ্গী হয়ে আছো।
— তবে আমার কাছে সংকোচ কেন?
পুনরায় ম্লান হাসল আসমা। লম্বা শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল,
— আচ্ছা, মেজো ভাইজানকে তোমার কেমন লাগে আনন্দি?
আসমার কথায় ফিরে তাকাল উপমা। হালকা হেসে উত্তর দিলো,
— কেমন লাগে মানে! অন্য ভাইদের যেমন লাগে তাকেও তেমনই লাগে।
— মানে অন্যরকম কোনো অনুভূতি নেই?
— ভাবী কি বলতে চাইছো পরিষ্কার করে বলো তো।
উপমাও যেন দ্বিধান্বিত। শাড়ির আঁচল আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে আসমা খোলাখুলি বলে ফেলল,
— আশিন ভাইজান যে তোমায় পছন্দ করে তা কি তুমি বুঝতে পারো আনন্দি?

এবারে যেন থমকে গেল উপমা। চুলের ভাঁজে ভাঁজে চলমান আঙুলগুলো স্থির হয়ে গেল কয়েক মুহুর্তের জন্য। বিস্ময়াভূত সে অবিশ্বাসের সাথে বলল,
— মেজো ভাই নিজে বলেছে তোমায় এই কথা?

বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেল আসমা। আশিন তাকে কিছুই বলেনি। তবে ওরা চলে যাওয়ার পর আশিনের ঘর গোছাতে গিয়ে সেই ঘর থেকে এমন কিছু আসমা পেয়েছে যার দ্বারা মনে হয়েছে আশিন উপমাকে পছন্দ করে। এছাড়াও যে ক’টাদিন বাড়িতে ছিল উপমার প্রতি আশিনের মুগ্ধতার দৃষ্টি, উপমাকে লুকিয়ে দেখা। এসবকিছু তো আসমার ধারণাকেই সমর্থন করে৷
— বলো না ভাবী, মেজো ভাই নিজে তোমায় বলেছে এসব?
উপমার অস্থিরতা মেশানো প্রশ্নখানা শোনামাত্র ধ্যান ভঙ্গ হলো আসমার। দু’দিকে মাথা নেড়ে সে বলল,
— নাহ্ নিজে বলেনি। কিন্তু তার কিছু কাজকারবার সন্দেহজনক মনে হয়েছে। এজন্যই তোমায় বলা। তুমিও তাকে…
— কক্ষনও না। আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি না এমন ভয়ানক কিছু। অন্যান্য ভাইদের মতো মেজো ভাইও আমার আপন ভাই। ছোটোবেলা থেকে তাকে সেই নজরেই দেখে এসেছি এবং আজীবন সেভাবেই দেখব।
— আচ্ছা এত অস্থির হয় না আনন্দি। আমার ভুল ধারণাও হতে পারে। কোনোকিছু যাচাই না করে তোমায় বলাটাও বোধহয় ভুল হলো।
উপমার কাঁধে হাত রাখল আসমা। উপমাও বুঝতে পারল এখন অস্থির হওয়ার সময় নয়৷ এমনকিছু যদি হয়েও থাকে খুব সতর্কতার সাথে বিষয়টা সমাধান করতে হবে।
চুলে রাবার আটকে টেবিল ঘড়ির দিকে তাকাল উপমা। নরম সুরে বলল,
— ঠিক বলেছ ভাবী। আচ্ছা তোমার কোন ব্যাপারটা সন্দেহজনক লেগেছে আমায় বলবে তো। আমিও বিষয়টা বুঝতে চাই। তবে আমার দিক থেকে এমন কিছুই নেই।
— বুঝতে পেরেছি।
— ভাবী এখন তো দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি বরং এসে শুনব তোমার কাছে। কেমন?
আসমাও এবার ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে নিলো একবার। বলল,
— তবে আমি তোমার খাবারটা বেড়ে দিই? খেয়ে যাবে।
— হ্যাঁ দাও। আজ কলেজের পর আমার প্রাইভেট আছে। ফিরতে দেরি হয়ে যাবে।
— বক্সে করেও কি খাবার দেব?
— নাহ্ তার দরকার পড়বে না। ক্যান্টিনে খেয়ে নেব।
— ঠিকাছে তবে। আমি যাই।
মাথা নেড়ে সম্মতি দিলে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল আসমা। বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলল অবশেষে।
আসমার গমন পথে নির্নিমেষ তাকিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলল উপমা। একটু আগে কি ভয়ানক কথা বলেছে ভাবী নিজেও কি আন্দাজ করতে পারে? মেজো ভাই আর উপমা! ছিঃহ্
ভাবতেই তো কেমন বিশ্রী বিশ্রী লাগছে। অনাথ একটা মেয়ে সে। সৃষ্টিকর্তা একহাতে যেমন বাবা-মা,পরিবার কেড়ে নিয়েছেন অন্যহাতে ঠিকই মামাদের মাধ্যমে নতুন একটা পরিবার উপহারও দিয়েছেন। বড় মামা-মামি যেমন বাবা-মায়ের অভাব পূরণ করে এসেছে ঠিক তেমনই চার ভাই তার ভাই-বোনের দিকের অপূর্ণতাটা পূরণ করে এসেছে। একেক ভাইয়ের কাছে একেকরকম যত্ন, স্নেহ পেয়েছে সে। তার তো সব ভাইয়ের সাথে সমান মিল। সবার সাথেই খুনসুটির সম্পর্ক। এমনকি মেজো ভাইয়ের সাথেও। এই যে ছোটো থেকে বড় হলো ওরা এক ছাদের নীচে। কই,একটা মুহুর্তের জন্যও তো মনে হলো না মেজো ভাইয়ের স্নেহের আড়ালে অন্য কোনো ভাষা লুকিয়ে আছে। অন্যরকম কিছু ভাবে মেজো ভাই ওকে নিয়ে। ও কি তবে মেজো ভাইকে বুঝতে পারেনি? সেজো ভাবীর কাছে সন্দেহজনক লাগল কেন মেজো ভাইকে? কি করেছে সে?
হৃদয়ে উত্থিত নানামুখী প্রশ্নের আক্রমনে দিশেহারা বোধ করতে লাগল উপমা। মামির কানে গেলে কুরুক্ষেত্র বেঁধে যাবে। আত্মীয়দের মধ্যে এমন সম্পর্ক মোটেই পছন্দ করেন না মামি। আর পছন্দ করবেনই বা কেন? উপমার নিজেরও তো বিষয়টা ভালো লাগছে না। হোক না মামাতো ভাই। ভাই তো! আর ভাই-বোনের কখনও বিয়ে হয়। ছিঃহ্ কি নোংরা। ভেতরটা গুলিয়ে এলো উপমার। কম্পিত পা জোড়া টেনে এক ছুটে চলে গেল সে ঘরের সাথে লাগোয়া বাথরুমটায়। টেপ ছেড়ে আঁজলা ভরে পানি চোখেমুখে দিতে লাগল। আজকের পর থেকে আর কখনও মেজো ভাইয়ের সামনে যেতে পারবে ও? স্বাভাবিক থাকতে পারবে মেজো ভাইয়ের সামনে! এ কি ভয়ানক ঘটনা ঘটতে শুরু হলো তার জীবনে।

কলেজে এলো উপমা মামার সাথে মোটরসাইকেলে চড়ে। ক্যান্টিনের সামনে ফাঁকা মাঠ, বাংলা মঞ্চ সব আজ গমগম করছে।অতনুর বিদ্রোহী কণ্ঠের ভাষণ এক মাইল দূর থেকে শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। কলেজ চত্বর ভরে উঠেছে নানাবয়সী লোকে। ভাষণের বিপরীতে তাদের সাড়া প্রতিধ্বনিত হচ্ছে কলেজের দেয়ালগুলোতে। বাংলা মঞ্চ পেরিয়ে যেতে যেতে উৎসুক ভাবে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করল উপমা। চঞ্চল ওর চোখজোড়া মূলত খুঁজে ফিরছে রওনককে। কিন্তু এত লোকের মাঝে তার দেখা মেলা ভার। ইতিউতি তাকিয়ে কাঙ্ক্ষিত মানুষকে না পেয়ে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বৃথা চেষ্টা বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো উপমা। ঠিক তখুনি, ঠিক তখুনি হুট করে রওনক সামনে পড়ে গেল ওর। ক্যান্টিনের সামনে হাত নেড়ে নেড়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে কাউকে কিছু বোঝাচ্ছে রওনক। দূর থেকে হলেও শারিরীক গঠন দেখে চট করে চেনা যাচ্ছে ওকে। মামার মোটরসাইকেল এগোচ্ছে ক্যান্টিন অভিমুখে। অন্য কোনোদিকে আর খেয়াল নেই উপমার। একদৃষ্টিতে হা করে তাকিয়ে আছে ও রওনকের দিকে। মাস্তানটা আজ কালো রঙের একটা পাঞ্জাবি পরেছে ধূসর প্যান্টের সাথে। বরাবরের মতো হাতা গুটিয়ে রাখা কনুই পর্যন্ত। চিকন শ্যামবর্ণ পরিপুষ্ট মুখখানা খোঁচা খোঁচা দাড়িতে ঢাকা প্রায়। অন্যান্য দিনের মতো দৃষ্টিতে গাম্ভীর্যতা নেই। আজ চোখ চঞ্চল, নড়াচড়াও চঞ্চল৷ কথার ফাঁকে ফাঁকে ঝাঁকড়া চুলগুলোতে একবার করে আঙুল বুলচ্ছে;এতে করে বেশ হ্যান্ডসামই লাগছে ওকে।
মোটরসাইকেল ক্যান্টিন ক্রস করে যাওয়ার পর পুনরায় ফিরে তাকাল উপমা। বিড়বিড় করে স্বগতোক্তি করল, “হ্যান্ডসাম মাস্তান”
— কিছু বললে মামণি?
অকস্মাৎ মামার কণ্ঠস্বরে থতমত খেয়ে গেল উপমা। মাথা নেড়ে আমতা আমতা করে বলল,
— ক..কিছু না; কিছু না।
কিন্তু ওর দৃষ্টিজোড়া ক্লান্ত হলো না। ততক্ষণ অবধি ও রওনকের দিকে তাকিয়ে রইল যতক্ষণ না পুরোপুরি মিশে গেল রওনকের দেহাবয়ব।
__________

দুপুরের কড়া রোদে জ্যামে আটকা পড়ে আছে রওনকের হোন্ডা। সূর্যের আলো তীর্যকভাবে গায়ে এসে পড়ছে ওর। মন মে’জাজ কিচ্ছু ভালো নেই। মাথায় কিছু একটা জট পাকিয়ে গেছে। ভাবনার তল খুঁজে পাচ্ছে না। ইদানীং অদ্ভুত এক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে ও। যে রোগের নাম উপমা রোগ। উঠতে, বসতে, হাঁটতে-বেড়াতে ও যেন উপমাকে দেখতে পায়। শুনতে পায় উপমার ঝংকার তোলা কণ্ঠস্বর। ক্ষণিক থমকে আশেপাশে তাকায় কিন্তু মেয়েটা আর দৃষ্টিগোচর হয় না। কি ভয়ানক ঘটনা! দিনকে দিন এই রোগ যেন প্রবল আকার ধারণ করছে। আজও একটু আগেও সভায় মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল ও। হঠাৎ মনে হলো দর্শক সারিতে উপমা বসে আছে। ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হেসে ওর দিকে তাকিয়ে। ক্ষণিকের জন্য থমকে গিয়েছিল রওনক। এরপর বহুকষ্টে সামলে নিলো নিজেকে। ওদিকে আজ ভাষণ দেয়ার সময় এক পর্যায়ে অতনু ওকে ডেকে নিলো নিজের পাশে। কাঁধে হাত রেখে এমনভাবে প্রশংসার তুবড়ি ছোটালো, ছোট ভাই সম্বোধনে মুখের ফেনা তুলে দিলো অবাকই হয়েছে রওনক। কেজানে মতলব কি বদমাশটার। মেজাজটা যা খারাপ হচ্ছিল না রওনকের!
— আমরা কোথায় যাইতেছি বন্ধু?
পেছন থেকে মিজানের বিরক্তি মাখানো প্রশ্ন ভেসে এলে ভাবনা সাঙ্গ হলো। নাকমুখ কুঁচকে রওনক উত্তর দিলো,
— আনিসের কাছে।
— হঠাৎ?
— হ সভা শেষে এক ফাঁকে যাইতে বলছে আমাক।
— নিশ্চয়ই কারবারের ব্যাপারে কথাবার্তা বলতে।
— হ। বুঝতেছিস ওর তাড়ার কারণ?
— তা আবার বুঝতেছি না? বর্ডারের কাছে ওর মাল আটকায় আছে কিছু। সেইগুলা উদ্ধারে এখন তোর সাহায্য লাগবে।
— এত ঝামেলা একসাথে ভাল্লাগে? আর এই শাউয়ার ট্রাফিক। গাড়িঘোড়া এত বাড়তেছে কেন বাল।
মুখ কুঁচকে ট্যাঙ্কের ওপর জোর চাপড় বসাল রওনক। তা দেখে মিজান ওর কাঁধে হাত রেখে বলল,
— কুল বন্ধু, কুল। কথায় কথায় এত হাইপার হলে চলে?
রওনক সে কথায় পাত্তা দিলো না। কাঁধ বাঁকিয়ে মিজানের থেকে ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে। গরমে মনে হচ্ছে মগজ গলে পড়বে। দরদর করে ঘাম ঝরছে একদম। পিঠের সাথে আটকে গেছে পাঞ্জাবি। পরেছেও কালো কাপড়। রাক্ষুসে রঙ। সমস্ত তাপ শুষে নিচ্ছে বোধহয়।
কপাল কুঁচকে গলা বাড়িয়ে সামনে দেখার চেষ্টা করল রওনক। লম্বা লাইন লেগেছে গাড়ির। কতক্ষণে এই জ্যাম ছাড়বে কে জানে! প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে দৃষ্টি ঘোরালো। তাদের থেকে কিছুটা এগিয়ে প্যাডেল চালিত ভ্যানগাড়ি দাঁড়ানো। ওতে ঠাঁসাঠাসি করে বসেছে ইউনিফর্ম পরা চার-পাঁচটা ছেলেমেয়ে। মেয়েগুলোর একজনেরও মুখ দেখা যাচ্ছে না স্পষ্ট করে। রওনকের মনে হচ্ছে ওদের মধ্যে উপমা বসা। নড়েচড়ে ও দেখার চেষ্টা করল সত্যিই উপমা কি না! পরবর্তীতে নিজের কাজকারবারে নিজেই বিরক্ত হয়ে উঠল । কি হয়েছে ওর? আশ্চর্য। উপমাকে দিয়ে কাজ কি ওর? প্রত্যেকটা মুহুর্ত এই মেয়েকে খোঁজার মানে কি?
চোখ বন্ধ করে নিজেকে কড়া ধমকে সামলানোর চেষ্টা করল রওনক। ট্রাফিক ততক্ষণে শিথিল হতে শুরু করেছে। গাড়ির হর্নের শব্দে চোখ মেলে চাইল রওনক। হোন্ডায় স্টার্ট দিতে দিতে অবাধ্য চোখজোড়া পুনরায় চলে গেল ভ্যানটার দিকে। সেই মুহুর্তে দৃষ্টিগোচর হলো পেছন ফিরে থাকা একটা মেয়ের ময়াল সাপের মতো রুষ্ট পুষ্ট বেনী ঝুলতে ঝুলতে একদম ভ্যানের চাকার কাছে পৌঁছে গেছে। আরেহ্ দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে তো মেয়ে। একবার এই বেনী চাকায় চলে গেলে মাথার খুলি টেনে না খোলা পর্যন্ত ছাড়বে না। ভ্যানচালকও প্যাডেলে পা দিয়েছে। আশংকায় সচকিত হয়ে উঠল রওনকের মস্তিষ্ক। কোনোকিছু না ভেবে ও জোর গলায় বলে উঠল,
— এ্যাই মেয়ে এ্যাই বেনী সামলাও। চাকায় চলে যাচ্ছে তো।
লোকসমাগমে রওনকের চিৎকার সকলের কানে সূঁচের মতো বিঁধল। সকলেই একসাথে ফিরে তাকাল ওর মুখপানে। ভ্যানটা বেশি দূরে না হওয়ায় ছেলে-মেয়েগুলোর কানেও গেল। বেনীর মালিক, সেও ফিরে তাকাল চকিতে। এঁকে বেঁকে পড়ে থাকা বেনীটা চট করে টেনে নিলো নিজের হাতে। আশংকায় বুক কেঁপে উঠল তারও। এক্ষুনি একটা অঘটন ঘটে যাচ্ছিল। ভাগ্যিস কেউ বলল। নইলে তো..
এ পর্যায়ে ভাবনা থামিয়ে সে কণ্ঠের মালিকের দিকে চোখ তুলে চাইল। সাথেসাথে ঠোঁটের কোণে খেলে গেল তার এক চিলতে মিষ্টি হাসি। এ কাকে দেখছে সে। রওনক!
এদিকে রওনকও অবাক। পেছন থেকে দৈহিক গড়ন দেখে ধারণা করেছিল মেয়েটা উপমা। বুঝতে পারেনি ওর ধারণা এভাবে মিলে যাবে। ঠিক তো, উপমাই তো বসা তার সামনে। এবার সত্যি সত্যি। ধারণা মিলে যাওয়ায় খুশির ঝলক ছড়িয়ে পড়ল রওনকের চেহারায়। পাশাপাশি দৃষ্টিজুড়ে খেলা করতে লাগল অপার মুগ্ধতা। ডাকু মেয়েটার হাসি এত চমৎকার কেন? থুতনির কাছটায় ভাঁজ থাকায় হাসিটা যেন একটু বেশিই মিষ্টি লাগছে, ঝলমলে রৌদ্রের মতো মিষ্টি। ঘোরগ্রস্তের মতো তাকিয়ে থাকতে থাকতে স্বগতোক্তিতে রওনক বলে ফেলল,
“আরেহ্ মেয়েটা হাসলে তো ওর চোখও হাসে।”

চলবে,
Sinin Tasnim Sara

★গল্পের প্রয়োজনে আমায় স্ল্যাং ইউজ করতে হচ্ছে। বিষয়টা নেগেটিভ ওয়েতে নেবেন না আশা করি 😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here