#চিরবন্ধু
#পর্ব_৮
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী
প্রায় আঠাশ দিনের মতো ছুটিতে ছিল গোফরান। মেডিক্যাল সার্টিফিকেট না পাওয়া অব্দি কাজে যোগদান করতে পারেনি। এই আঠাশটা দিন জীবনকে অন্যরকমভাবে চিনেছে সে। জীবনে যখন আঁধার নেমে আসে তখন দিনের বেলাও রাতের মতোই নিকষকালো অন্ধকার ঠেকে। আলোর প্রদীপ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর তার জীবনের সমস্ত আঁধার কাটিয়ে আলোর সন্ধান পাইয়ে দেয়া রমণীর প্রতি তার এক জীবনের ঋণ রয়ে গেল। যা কিছু সে হারিয়েছে, হারাতে হয়েছে সবটা সে ফিরে পেয়েছে পুনরায়। তাকে নিয়ে চিন্তায় বিভোর হওয়া একটা উদ্বিগ্ন মুখ, পুড়ে যাওয়া ললাটের উপর ভরসাযোগ্য একটা হাত, মন ভালো করে দেয়ার মতো হাসি, ঘোরে পড়ার মতো চাহনি সবটা। দিয়েছে অনেকগুলো সুন্দর মুহূর্ত। কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে ব্যস্ত গিন্নির পেটের ভাঁজে কয়েকটা চিমটি শেষে করে বসা রাগ মুছে দিতে শূন্য দূরত্বে টেনে এনে টুপটাপ কয়েকটা চুমু, তাকে ভয় দেখিয়ে দেয়ার পর তার বিচলিত মুখখানা দেখে হাসিতে ফেটে পড়া, ঘুমানোর সময় মাঝখানে দেয়ালে তুলে দূরত্ব বাড়িয়ে দিলে বিনিময়ে তার শতগুণ কাছে আসা। আর অনেকভাবে ভালোবাসা। সকাল বেলার কফির মগে, সাঁঝের বেলার চায়ের কাপে, মধ্যাহ্ন ভোজে, রাতে যত্ন করে বাড়িয়ে দেয়া ভাতের লোকমায়। ভালোবাসা আরও অসংখ্য রূপ দেখেছে গোফরান। কপালের ঘাম মুছে দেয়া শাড়ির আঁচলে যে ভালোবাসা থাকে, ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা খাবার মুছে দেয়া বৃদ্ধাঙ্গুলির যে সংযম তার তুলনা হয় না। ভালোবাসাগুলো দেখতে ভালোবাসার চোখের প্রয়োজন হয়।
গত আঠাশ দিনে তারা একে অপরকে এতটাই ভালোবেসেছিলো, কোনোদিন দেখা না হলে, পরিচিত না হলে, কূলহারা পাখির মতো একাকী জীবনকে সঙ্গী করে নিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ না হলে কখনো তারা জানতেই পারতো না এভাবেও ভালোবাসা যায়। এভাবেও ভালোবাসা হয়, এভাবেও ভালোবাসা রয়।
আর কাছে আসার গল্পটা মধু রাত্তির জানে, জানে বন্ধ দরজার এপাশটা, চারটে দেয়াল, একটা খোলা জানালা, টিক টিক করে চলতে থাকা ঘড়ির কাঁটাগুলি। যখন পৃথিবী ঝিমিয়ে আসতো, চারিদিকে সুনসান পিনপতন নীরবতায় ছেয়ে থাকতো, কোথাও থাকতো না কোনো ঝঞ্জাট ,কোনো কোলাহল, ঠিক সেই সময়টাতে দুজন দুজনকে শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুভব করতো। হাতের আঙুলির ভাঁজে আঙুল রেখে, কান পেতে একে অপরের হৃৎস্পন্দন শোনার প্রতিযোগীতায়, একে অপরের সাথে মিশে থেকে অনুভবে, অগুনতি সিক্ত চুম্বনে কতগুলো মুহূর্ত পেরিয়ে গেছে কেউ হিসেব রাখেনি।
______________
আরিবের চাকরি হয়েছে। এদিকে ফিজারও ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। যেমন কথা ছিল ঠিক সেভাবেই ধুমধাম বিয়েটা দেয়া হলো তাদের। এই কয়েকমাসে সংসারের চাবিটা তাসনিয়ার আঁচলে বেঁধে দিয়েছিল বড় ভাবি। বলেছিল,
– অনেক টেনেছি এই সংসার। এবার তোমার পালা ভাই। আমাদের একটু ভালো রেখো। আর কিচ্ছু লাগবে না।
তাসনিয়ার স্কুলের প্রমোশনও বেড়েছিল। বেসরকারি হলেও শহরের নামকরা স্কুলের মধ্যে সেটি একটি। সে বরাবরের মতো ইংরেজিতে ভালো ছিল। ইচ্ছেও ছিল কোনো একদিন শিক্ষকতা করবে। বিয়ের পর সংসারে মনোনিবেশ করার ফলে কখনো মাথায় আনেনি তাকে চাকরি বাকরি করতে। তারপর একটা সময় সব ওলট-পালট হয়ে গেল। আর এখন মনে হয় এই ওলট-পালট হওয়াটা ভীষণ দরকার ছিল। ভুল মানুষের সাথে হাজার বছর বাঁচার চাইতে, সঠিক মানুষের সাথে কয়েকটা মুহূর্ত কাটালেও শান্তি।
জুবরান আর মিনির জন্য হোমটিউটর রাখা হয়েছে। আর্টের জন্য আর্ট শেখানোর শিক্ষক। মিনির সেতারা শেখার ইচ্ছে। সেটাও অপূরণ রাখেনি তাসনিয়া। তার জীবনটা এখন কুসুমকাননের চাইতেও কোনদিকে কম নয়। ইচ্ছে করলেই মা মেয়ে একরঙা কাপড় পড়ে আইসক্রিম খেতে বেরিয়ে পড়ে, হাতে পায়ে আলতা মাখে, একে অপরের চুল বেঁধে দেয়, অবুঝপনায় মাথা নষ্ট করে গোফরান সিদ্দিকীর। জুবরান আজকাল বাবার সমস্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিজের মধ্যে কেমন করে যেন ধারণ করে ফেলেছে। অনুকরণের কারণে হয়ত। তাই সে কোথাও যায় না। নিজের চারপাশটা নিয়ে ভাবে। তাসনিয়া অবাক হয়ে দেখে তার ভাবুক ছেলেটিকে। এ যেন আরেক গোফরান সিদ্দিকী। বদি কাকা আর রতন কাকার সাথে তার খুব ভাব। তারাও উজাড় করে তাকে ভালোবাসে। রাগ উঠলে একে অপরকে গালি না দিয়ে কিভাবে সন্তুষ্ট হওয়া যায় তা নিয়ে সে একটা বিস্তর পরিকল্পনা খু্ঁজে বের করেছে। যখনি গালি দিতে ইচ্ছে তখনি তারা যেন বিশবার কান ধরে উঠবস করে। গালি দেয়ার পর একশো বার উঠবস করার চাইতে এটি ভালো কারণ এই উঠবস করার ভয়ে তারা নিজেদের কন্ট্রোল করবে। আরও কিছু চমৎকার শব্দ সে তাদের শিখিয়ে দিয়েছে। অক্ষরজ্ঞানহীন বদি আর রতন তার শিখিয়ে দেয়া শব্দগুলো বলতে পেরে নিজেদের ইতোমধ্যে শিক্ষিত ভাবা শুরু করেছে। জুবরান বলেছে গালির বদলে তোমরা একে অপরকে বলবে, স্ক্রাউন্ড্রেল যার বাংলা হচ্ছে খচ্চর । অনেকগুলো গালাগালের সমষ্টি এই শব্দটা। বদি আর রতন এখন হাটে-বাজারেও এই শব্দটা ইউজ করে। সেবার গোফরান যখন বাড়ি এল। তাকেও বললো এই শব্দটা। এও বললো এখন আর গালাগাল করিনা ছ্যার, স্কাউনডেল বলি। ছোট মিয়া শিখায় দিছে।
জুবরান বাবার দিকে তাকায়। গোফরান হাসে। বলে, – জিনিয়াস।
জুবরান তারপরও চেয়ে থাকে। বাবা যখন হাসে কিভাবে যেন সেই হাসির মধ্যেও অনেককিছু লুকোনো থাকে।
সংসারের দায়িত্ব সব তাসনিয়ার কাঁধে চলে আসায় স্কুল আর সংসার সামলাতে হিমশিম খেতে হয় মাঝেমধ্যে। বড় ভাবি আর বাড়ির কাজের ঝি ময়না না থাকলে আরও অসুবিধে হতো। ময়না খুবই কাজের। অনেকবছর যাবত এই বাড়িতে কাজ করছে সে। তার হাতের কাজ খুবই পছন্দ করেন বড় ভাবি। সে খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মানুষ। তাসনিয়াকে বড্ড সম্মান করে। মাইনে পেলে ওকে কিছু কিনে দিতে ভুল করেনা তাসনিয়া। সন্তুষ্টিতে তার দুচোখ তখন চকচক করে।
তার কয়েকদিনের মাথায় তাসনিয়ার শ্বাশুড়ি মারা গেল। এই শোক কাটিয়ে উঠার পূর্বে নিজের বাবাকেও হারিয়ে বসলো সে। নিজের সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি তিনি মেয়ের নামে লিখে দিয়ে গিয়েছেন তিনি। তাসনিয়ার মনে হলো আরও কি যেন হারিয়ে গেল জীবন থেকে। কিন্তু চিরসত্য এটাই যে একদিন তাদেরকেও যেতে হবে সব মায়া কাটিয়ে।
মিনি আর জুবরানের সম্পর্কটা এখন প্রায় অনেকটা সাপে-নেউলে হয়ে দাঁড়িয়েছে। একে অপরের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ায় সারাক্ষণ। তারপর পুরো বাড়ি মাথায় তোলে। আবার কেউ চোখের আড়াল হোক, কলিজা তাদের ফেটে যায়।
ঝগড়ার দিক থেকে মিনি বেশি এগিয়ে। সে জুবরানকে সারাক্ষণ রাগিয়ে দেয়ার তালে থাকে, আর জুবরান চুপচাপ কান্ড দেখে। সুযোগ পেলেই ঠাসঠাস করে মার বসিয়ে দেয়। যতই বড় হচ্ছে ততই যেন বাঁদর হচ্ছে দুটো।
তারপরও দিনশেষে তাসনিয়ার একটা পরিপূর্ণ সংসার আছে। বড় ভাবির ছেলেমেয়েগুলো বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে ওখানেই প্রতিষ্ঠিত হবে এমন চিন্তাভাবনা করছিলো কিন্তু তাদের বাবার জন্য পারেনি। তাই সবাইকে পড়াশোনা করে দেশে চলে আসতে হয়েছে। উনার মতে, জীবন একটাই। আর ক’দিন বাঁচবো। যতদিন বাঁচি সবাইকে নিয়ে হৈহৈ করে বাঁচি। মরে গেলে আর কেউ কাউরে পাবিনা। হাজার চেষ্টা করলেও না, নিজের প্রাণের বিনিময়েও না। ওরা বাড়িতে আসায় বাড়িটা আরও জমজমাট হয়ে উঠেছে। কাকিয়া ডেকে ডেকে তাসনিয়াকে পাগল বানিয়ে ফেলে, মিনির আর জুবরানের সাথেও তারা যেন ছোট্ট বাচ্চাটি। ফিজা তাদের কয়েক বছরের বড় হলেও এটুকু সম্মান দেয় না। নাম ধরে ডাকে বলে ফিজার সাথে কুরুক্ষেত্র চলতে থাকে বাড়িতে। মাঝখানে পড়ে তাসনিয়া বেকুববনে যায়।
আবরার আর মৌশি পরিকল্পনা করে কাকিয়া আর চাচ্চুর ঘটা করে অ্যানিভার্সারি পালন করার কথা ভেবেছিল। যেই ভাবা সেই কাজ। কাকিয়া ভীষণ অসুস্থ এমন গল্প সাজিয়ে চাচ্চুকে বাড়ি এনে কি চমৎকার একটা সারপ্রাইজই না তারা দিল। তাসনিয়া গোফরানের প্রতিক্রিয়া দেখে বলল
– বিশ্বাস করুন এখানে আমার হাত নেই। ওরা করেছে যা করার।
মৌশি বলল,
– চাচ্চু কাকিয়াকে গিফট দাও। কাকিয়া কিন্তু তোমাকে গিফট দিয়েছে।
তাসনিয়ার দেয়া রুমালটা নেড়েচেড়ে দেখে কেক না খেয়ে নিজের ঘরে চলে গেল সে। অথচ সে কত দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো সবার মুখ থেকে তানজিমের অসুস্থতার কথা শুনে। এমন মজা করার কোনো মানে হয়? অসভ্য সব কটা।
রুমালটাতে মিনি, জুবরান আর তাদের দুজনকে এঁকেছে তাসনিয়া। চারজনের একটা পরিবার। ওই দেয়ালে টাঙানো ছবিটার মতো। খুব পছন্দ হওয়ায় নিজের বুকপকেটে সে তা রেখে দিল।
নিজের গিফটটাও তাসনিয়া আদায় করে নিয়েছিল। কেকের টুকরো জোর করে খাইয়ে দেয়ার পর তার একটা শুকনো চুমু কড়কড়ে গালটাতে বসানো পর গোফরান সিদ্দিকীর মুখখানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। তাসনিয়া তা দেখে যখন হাসছিলো তখন তাকে কাছে টেনে কর্কশ গলায় গোফরান বলল,
– আমি কাজের জায়গায় ব্যস্ত থাকি ম্যাডাম। তারমধ্যে এইসব মজা একদম সহ্য হয় না।
তাসনিয়া হাসা বন্ধ করতেই গোফরান তার চেহারা পরখ করে বলল,
– ওকে সরি। তুমি হাসো। আমি আপাততঃ কোনো গিফট আনিনি। ওহ মনে পড়েছে, জন্মদিনের গিফটের মতো এবারও সেম গিফট পেলে রাগ করবে?
তাসনিয়া হেসে উঠলো আরও জোরে।
__________
বাইশ বছর আগে একটা কফিহাউজে প্রথম গোফরান সিদ্দিকীকে দেখেছিলো জুবরান। আর তারপর মায়ের হাত ধরে প্রবেশ করেছিল সিদ্দিক বাড়িতে। তখন তার বয়স পাঁচের মাঝামাঝি। সেই বাড়িতে আসার পর একটা বন্ধু পাওয়া, একটা আদর্শ বাবা পাওয়া, আদর্শ বাবার আদর্শ সন্তান হয়ে উঠা সবটা ছিল চ্যালেঞ্জের মতো। বাবা মায়ের মধ্যেকার সম্পর্কের টানাপোড়েন সবটা সে দেখেছে কাছ থেকে। দেখেছে কিভাবে ধীরেধীরে একে-অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছিল দুজন। যখন তার আর মিনির বয়স পনেরর কাছাকাছি তখন তাদের একটা ভাই এল। এর আগে ডাক্তার বলেছিলো মা আর কোনোদিন সন্তান জন্ম দিতে পারবে না। অথচ উপরওয়ালার ইচ্ছে ছিল ভিন্ন।
ওই ছোট্ট বাবুটার আগমনে মা আর বাড়ির সবাই কি ভীষণ খুশি! খুশির খবর শুনে বাবা সেবার রাতারাতি বাড়ি চলে এল। বাবার চোখেমুখে অজস্র আনন্দ ঢেউ খেলছিলো তখন। ছোট বাচ্চাটা যখন চেঁচিয়ে কাঁদছিলো ভীষণ, মিনি আর সে কত হেসেছে সেই কান্নাকে ব্যঙ্গ করে। একদম পুতুলের মতো একটা তুলতুলে শরীরের বাচ্চা। বাবা যখন প্রথম তাকে কোলে নিল তখন সে একেবারে চুপ হয়ে গেল। বাবা হেসে তাদের বললো, – দেখেছ ও কত্ত ভালো। তোমাদের মতো দুষ্টু না।
ওর নামকরণ করা হয়েছিলো নিভ্রান। নিভ্রানের আগমনে মা আর বাবার চাইতে খুশি বোধহয় কেউ হয়নি। ও যখন মায়ের গর্ভে ছিল বাবা তখন প্রায় সময়ই ফোনকলে তাদের বলতেন মায়ের দেখভাল করতে। বাবা বলার পর সে আর মিনি সবসময় মাকে দেখে দেখে রাখতো। নিভ্রানের জন্য মায়ের কত কষ্ট হতো হাঁটতে, চলতে। তারপরও মা হাসতো।
নিভ্রান যখন মায়ের কোলে এল মিনি আর তারমধ্য প্রায়সময়ই কাড়াকাড়ি চলতো নিভ্রানকে নিয়ে।
তাদের চোখের সামনে একটু একটু করে বড় হয়েছে নিভ্রান, হাঁটতে শিখেছে, কথা বলতে শিখেছে। আর এখন ওর বয়স তের। আর বাবা মা এখন অয়েল পেইন্টিংয়ে অস্পষ্ট ছবি। মিনার প্রাঙ্গনে বাবা মায়ের কবরের পাশে মিনি রোপন করেছে হরেক রকম ফুলের গাছ।
সেবার পতাকায় মুড়িয়ে বাবার দীর্ঘকায় লাশটা যখন বর্ডার থেকে এল। মা তখন পাথর।
কেন মা সেদিন চিৎকার করে একটিবার কাঁদেনি তার উত্তরটা জুবরান আর মিনি পেয়েছিলো মায়ের গত হওয়ার দিন। মাকে সে যখন জিজ্ঞেস করতো যদি বাবা তাদের আর ভালো না বাসে? মা বলতো উনি ভালো না বাসার আগেই যেন আমি চলে যাই। অথচ দুজনেই ভালোবেসে চলে গেল একসাথে।
বাবার শোক কাটিয়ে উঠার কোনো পথ খুঁজে পায়নি মা। এমনকি নিভ্রানের টানেও নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারেনি। বাবা যাওয়ার পর মাকে তারা আর ফিরে পায়নি।
বয়স যখন তার দশ। তখন বাবা তার জন্য সেনাবাহিনীর পোশাক বানিয়েছিলো। সামরিক সেনা কর্মকর্তাদের সাথে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বাসভবনের শিরে ঝুলিয়ে রাখা পতাকার দিকে তাকিয়ে বাবার সাথে জুবরানও প্রতিজ্ঞা করেছিলো আজীবন দেশের সেবা করে যাবে। বাবার আদর্শকে সে তার জীবন বাজি রেখে বাঁচাবে। বাবাকে সে নিজ হাতে কবর দিয়েছে, কিন্তু বাবার স্বপ্নগুলোকে নয়। না বাবাকে দেওয়া কথাকে। মা তার মধ্যে গোফরান সিদ্দিকীর প্রতিভিম্ব দেখেছে, আর বাবা মিনির মধ্যে তাসনিয়া তানজিমকে।
তাই তো নিভ্রানকে তাদের হাতে তুলে দিয়ে দুজনেই পাড়ি জমিয়েছিলো চিরঘুমের দেশে। তাই মিনি আর তার পথ কখনো আলাদা হয়নি । তারা বন্ধু হয়ে, নিভ্রানের অভিভাবক হয়ে থেকে যাবে চিরদিন, হয়ত মা বাবার মতো ওই ঘুমের দেশেও একদিন পাড়ি জমাবে, হবে অয়ল পেইন্টিংয়ে ধূসর ছবি। মিনির শাড়ির আঁচলে এখন বাঁধা পড়েছে সংসারের চাবি, তার কাঁধে দেশের মানুষের নিরাপত্তার ভার।
বৃষ্টিমাখা সাঁঝের বেলায় চুপচাপ নিজের ঘরে দাঁড়িয়ে বাবা মায়ের পেইন্টিংটির পাশে আরও একটি পেইন্টিং এঁকে চলে নিভ্রান । পেইন্টিংয়ে হাসপাতালের রোগী আর সংসার সামলানো সৌদামিনী সিদ্দিকী আর দেশসেবার ব্রতে নিযুক্ত মেজর জুবরান সিদ্দিকী পাশাপাশি দাঁড়িয়ে।
সমাপ্ত………….
পাঠকদের কাছে একটা মন্দ রিভিউ আশা করতেই পারি। অতঃপর ভালোবাসা ❤️❤️