চুপকথা পর্ব- ২৮

0
1549

#চুপকথা-২৮
Zannatul Eva

তোরা যে ঠিক কী করছিস আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। তুই কী পিয়াসকে মন থেকে মেনে নিয়েছিস কুহু? নাকি তিয়াসের উপর রাগ করে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিস? কী রে কথা বলছিস না কেন?

মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে বসে আছি। বড় আপা আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো কথাই যেন আমাকে ভেদ করতে পারছে না৷ চাপরাশটা কেমন অচেনা লাগছে। তিয়াসের চেনা মুখটা আজকাল বড্ড অচেনা লাগে। নিজের ভাইয়ের জন্য ও আমাকে ফিরিয়ে দিলো। ও কী ভেবেছে আমি পিয়াসকে বিয়ে করলে পিয়াস খুব সুখী হবে! নাকি আমি সুখী হব? না ও ভালো থাকতে পারবে! তিন তিনটে জীবন শেষ হয়ে যাবে। আর তার জন্য দায়ী থাকবে তিয়াস।

আপা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল, কী রে! তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি৷

হ্যাঁ, যাচ্ছি।

কোথায়?

গোসলে। মাথাটা ভীষণ ধরেছে। গোসল না করলে ভালো লাগবে না।

বাথরুমে ঢুকে পানি ছেড়ে একনাগাড়ে কান্না করে যাচ্ছি। এখন আর কেউ আমার কান্নার আওয়াজ শুনতে পাবে না। আমার এই কান্না তোমার কান অবধিও পৌঁছাবে না তিয়াস। তুমি কখনো জানবে না কেউ তোমার জন্য কাঁদছে। তুমি কখনো জানবে না কেউ তোমাকে ভালোবেসে মরে যাচ্ছে। কিন্তু আমার সুখ দেখে তুমি জ্বলে পুড়ে মরবে। তখন যেন সহ্য করতে না পেরে আবার পালিয়ে যেওনা।

কথা গুলো বলেই আমি ধুকড়ে কেঁদে উঠলাম।
_______________

গায়ে হলুদের দিন আমি অনেক চেষ্টা করেছি তিয়াসকে বোঝানোর যে, এটা ঠিক হচ্ছে না। এখনো সময় আছে তুমি বলে দাও তোমার মনের সব কথা।

আমার মনে কোনো কথা নেই তোমার জন্য। তুমি এখন আমার ভাইয়ের বউ হতে চলেছো। এসব কথা কেউ শুনলে কী ভাববে বলো তো!

কুহুকে খুব সহজে বলছি ঠিকই কিন্তু আমি জানি আমার ভেতরে ঠিক কী চলছে। তোমাকে বধূ বেশে দেখবো আমি। কিন্তু সেটা অন্য কারো বউ হিসেবে। তোমাকে বেনারসি সাজে দেখবো ঠিকই কিন্তু সেটা দূর থেকে। এসব মুগ্ধতা ভেদ করে তোমার কাছে কখনোই যেতে পারবো না আমি। তোমাকে ছোঁয়ার অধিকারী আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমার ভেতরের ঝড়তুফান তোমরা কেউ দেখবে না। সারাজীবন আমাকে এই ঝড়তুফান বয়ে বেড়াতে হবে। তুমি ভালো থেকো মায়াবতী। আমার ভাই তোমাকে অনেক ভালোবাসবে। অনেক সুখে রাখবে৷ আমার থেকেও বেশি।

তিয়াসকে কোনো ভাবেই বোঝাতে পারলাম না। শেষে নিজের ভাগ্যকে মেনে নিলাম। আর তিয়াসকে বোঝাতে শুরু করলাম যে, আমি পিয়াসকে এক্সেপ্ট করে নিয়েছি এবং আমি এই বিয়েতে খুশি।
_________________
আপনি তৈরি হচ্ছেন না যে? পিয়াসের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের রাগকে দমন করে ফেলুন। ছেলে-মেয়েদের সুখের চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না পৃথিবীত

একটা কথা খুব ভালো করে শুনে রাখো জাহানার। জাহিদের সময় তোমরা কেউ আমার কথা শোনোনি। মেনে নিয়েছি। পিয়াসের বিয়ের সিদ্ধান্তও তোমরা নিয়ে নিয়েছো। তাও আমি কিচ্ছু বলছিনা। কিন্তু আমার তিয়াসের বিয়ে নিয়ে কাউকে ছেলেখেলা করতে দেবো না আমি। তিয়াসকে নিয়ে আমার অনেক আশা।

সে না হয় পরেৃ দেখা যাবে। এখন আপনি পাজামা পাঞ্জাবী পরে তৈরি হয়ে নিন। আমি গিয়ে দেখছি পিয়াসের আর কতক্ষণ লাগবে। তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে তো।
________________
আমার সেই ছোট্ট কুহুর আজ বিয়ে। কিভাবে এতো বড় হয়ে গেলি তুই? ছোট থেকে এতো কষ্ট করেছিস। এখন আল্লাহ তোকে অনেক সুখে রাখবে দেখিস। তার জন্যই তো নিজের বোনের কাছেই তোকে পাটাচ্ছে। সুখে-দুঃখে দুই বোন একে অপরের পাশে থাকতে পারবি।

আমি মনে মনে বললাম, হ্যাঁ মা, তোমার মেয়ে অনেক সুখে থাকবে। এতো সুখ যে, সেই সুখ সারাজীবন যন্ত্রণা দেবে তোমার মেয়েকে।

কাঁদিস না। মেয়ে হয়ে জন্মেছিস, একদিন না একিদন তো পরের ঘরে যেতেই হবে। তোদের দুই বোনকে সুখী দেখে মরতে পারলে তবেই আমার শান্তি।

কী সব বলছো মা! এসব বললে কিন্তু আমি বিয়েটাই করবো না। কান্না মুছো।

এটা খুশির কান্না। মেয়েদের বিয়ে দিয়ে পরের ঘরে পাঠানো হয় যেন সে শ্বশুরবাড়ির সবাইকে নিয়ে সে সুখে শান্তিতে দিন কাটাতে পারে। তোরা ভালো থাক এটুকুই চাওয়া।
________________

বিয়ের আয়োজন সব ঠিকঠাক মতো চলছে। আত্মীয়-স্বজনরা সবাই আসতে শুরু করে দিয়েছে। একটু পরেই বরপক্ষ চলে আসবে। আমি সারাজীবনের মতো অন্য কারো হয়ে যাব। তিয়াসের চোখের সামনে থেকেও ওর থেকে অনেকটা দূরে চলে যাব। কিছুক্ষণ পরই আমার নামের সাথে অন্য একটা নাম জুড়ে যাবে। অথচ তুমি চাইলে আজকের দিনটা অন্যরকম হতে পারতো। আজকে আমার চোখ দিয়ে যেই অশ্রু ঝরে পড়ছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেই অশ্রুর ভাষা বোঝার ক্ষমতা কারো নেই। একমাত্র তুমিই পারো আমার এই অশ্রুর ভাষা বুঝতে। কিন্তু তুমি তো বুঝেও অবুঝ। তুমি কি আমাকে একটুও ভালোবাসো না তিয়াস?

লোকজনের বলাবলিতে শুনতে পেলাম বরপক্ষ চলে এসেছে। কিন্তু তাদের কানাঘুঁষায় আরও একটা কথা শুনতে পেলাম। যা শোনা মাত্র আমি বসা থেকে একদম উঠে দাঁড়ালাম।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here