চুপকথা পর্ব-৬

0
1580

#চুপকথা-৬
Zannatul Eva

কক্সবাজার এসে পৌঁছানোর পর সবাই অনেকটা টায়ার্ড হয়ে গেছি। জার্নি করলে এটুকু ধকল তো নিতেই হবে। তবে কক্সবাজার আসার পর এর সৌন্দর্য আপনার সমস্ত ক্লান্তি একনিমিষেই দূর করে দেবে। আজকের দিনসহ আমরা এখানে তিনদিন থাকবো। আমরা লাবনী হোটেলে উঠেছি। আগে থেকে বুকিং করা ছিল অনলাইনে। পৃথিবীর দীর্ঘতম অখন্ডিত সমুদ্র সৈকত হচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে বিভিন্ন রূপ ধারন করে এই সমুদ্র সৈকত। প্রতি ঋতুতে এর চেহারার বদল হয়। রূপময়ী, মায়াবী এই সমুদ্রে যখন ঢেউ আছড়ে পড়ে তখন এর সৌন্দর্য আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। কক্সবাজারের সদরে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। কলাতলী বীচ, সুগন্ধা বীচ, বচ্ছরা পাহাড়, খুরুশকুলের মনেরো মসজিদ(গায়েবী), বাকখালী নদী(বিজিবি ক্যাম্প), ডায়বেটিস পয়েন্ট, ঝিনুক মার্কেট, শৈবাল পয়েন্ট ও গল্ফ বার, হিলটপ সার্কিট হাউজ এছাড়া আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে এখানে।

আমরা একটু রেস্ট নিয়ে তারপর নাস্তা সেরে নিলাম। এরপর আমরা কলাতলী সমুদ্রের দিকে গেলাম। সমুদ্র এখন শান্ত। তন্নী দৌড়ে গিয়ে সমুদ্রে নামলো। হাত-পা ছড়িয়ে বসে পানি নিয়ে খেলতে শুরু করলো। সানি তন্নীকে বারবার টেনে নিয়ে আসতে চাইলে তন্নী সানিকে ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখলো। অন্যরা এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করছে। আমি আর তিয়াশ পাশাপাশি হাঁটছি। মেয়েদের মধ্যে একমাত্র আমিই সিঙ্গেল। আর ছেলেদের মধ্যে তিয়াশ আর ওদের আরেকটা ফ্রেন্ড। নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। ও হ্যাঁ মনে পড়েছে ওর নাম দীপু। যেহেতু আমাদের পার্টনার নেই তাই আমরা একে অপরের সাথে কথা বলে সময় কাটাচ্ছি। যদিও আমার থেকে তিয়াশই বেশি কথা বলছে। আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিচ্ছি। দীপু ফটোগ্রাফার। ওর কারো সাথে কথা বলে সময় কাটাতে হয় না। ক্যামেরা নিয়ে চারদিক ঘুরেঘুরে দেখছে আর ছবি তুলছে।

হঠাৎ করে তিয়াশ বলল, কী অদ্ভুত না!

আমি বললাম, কী?

এই যে আমাদের আগে কয়েকবার দেখা হয়েছে তখন কী ভেবেছিলাম এখন আমরা একসাথে এতোটা পথ চলে আসবো? ব্যাপারটা ভীষণ অদ্ভুত না?

একটু তো কাকতালীয়ই বটে। নয়তো আপনিই কেন সানির বন্ধু হলেন! অন্য কেউও তো হতে পারতো। তবে এসব নিয়ে ভেবে কোনো লাভ নেই। কে কখন কোথায় থাকবে আর কার সাথে কার কখন দেখা হয়ে যাবে সেটা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। তিনি যেভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে রেখেছেন ঠিক সেভাবেই সব কিছু ঘটবে।

তিয়াশ বলল, কক্সবাজারের সৌন্দর্যের আসলেই কোনো তুলনা হয় না। যদিও এর আগে ফ্যামিলির সাথে অনেক বার এসেছি। কিন্তু তাও যতোবারই আসি এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হই। তবে এবারের ট্যুরটা একদম অন্যরকম। সবথেকে বেশি এনজয় করছি।

আমি বললাম, কেন? এবার আলাদা লাগার কারন কী?

তিয়াশ একটা হাসি দিয়ে বলল, সব কিছুরই আলাদা আলাদা অনুভূতি থাকে। যেমন ফ্যামিলির সাথে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দটা আলাদা তেমনি বন্ধুদের সাথে কিংবা নিজের স্পেশাল কোনো মানুষের সাথে সময় কাটানোর অনুভূতিটাও একদম আলাদা।

হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক বলেছেন। তবে এটা আমার প্রথম কক্সবাজার ট্যুর। আমার উইশ লিস্টে আরও অনেক পছন্দের জায়গা আছে। ছোটবেলা থেকেই আমার ট্রাভেল করতে খুব ভালো লাগতো। কিন্তু স্কুল, কলেজে থাকতে আমার পরিবার কখনও একা ছাড়তো না। আর বাসা থেকেও কোথাও যাওয়া হতো না। তবে আমার খুব ইচ্ছে পৃথিবী ঘুরে দেখার।

তিয়াশ বলল, পুরো পৃথিবীর ঘুরতে হলে তো কাজ, সংসার বাদ দিয়ে দিতে হবে।

আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম, আগে তো নিজের দেশটাই ঘুরে দেখি। আমাদের দেশে এতো এতো সুন্দর জায়গা থাকতে কেন যে মানুষ বিদেশে ঘুরতে যায় বুঝি না।

আসলে একেক জনের একেক রকম ইচ্ছে।

হুম।

এরমধ্যেই কোথা থেকে এক ফটোগ্রাফার এসে আমাদের দু’জনের ছবি তুলতে শুরু করলো।

আমি রেগে গিয়ে লোকটাকে বললাম, একি! পারমিশন ছাড়া ছবি তুলছেন কেন?

লোকটা তার বত্রিশ দাঁত কপাটি বের করে বলল, হানিমুনে এসেছেন ছবি তুলবেন না! আপনাদের দুজনকে কিন্তু বেশ মানিয়েছে।

আমার মাথাটা প্রচন্ড গরম হয়ে গেল। লোকটার দিকে তেড়ে গিয়ে বললাম, কী বলছেন এসব আপনি! আমরা স্বামী-স্ত্রী নই।

লোকটা বলল, সরি ম্যাম এখানে আসলে বেশির ভাগই নিউলি ম্যারিড কাপল আসে তাই বুঝতে পারিনি। আপনাদের ড্রেসের রঙ টাও ম্যাচিং। তাই ভেবেছিলাম আপনারা…….সরি ম্যাম সরি।

লোকটা হুরহুর করে হেঁটে
অন্যদিকে চলে গেল।

তিয়াশের দিকে তাকিয়ে রাগি স্বরে বললাম, এদের ধারনা এখানে হাজবেন্ড ওয়াইফ ছাড়া আর কেউ ঘুরতে আসে না। কী অদ্ভুত!! আরে আমি তো ছবি গুলো ডিলেট করতে বলতেই ভুলে গেলাম। লোকটাকে তো দেখতে পাচ্ছি না কোথাও। ভিরের মধ্যে কোথায় মিলিয়ে গেল বলুন তো! এখন কী হবে!

তিয়াশ শান্ত গলায় বলল, কাম ডাউন। ছবিই তো। কী হয়েছে! আমি তো আপনার অপরিচিত নই। আর এরা সবসময় এখানেই ঘুরে বেড়ায়। আমরা তো আরও ক’দিন আছি এখানে। খুঁজে পেলে ঠিক চেয়ে নিবো।

চেয়ে নিয়ে কী করবো!

ওকে ওকে দেখলে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ছবি ডিলিট করাবো। এবার একটু শান্ত হোন।

তন্নীকে আমাকে ডেকে বলল, হোটেলে যাবে। আমরা সবাই হোটেলে ফিরে গেলাম।
__________________

রাতে সমুদ্রের পাড় ধরে হাঁটছিলাম। দিনের সমুদ্র এমনিতেই সুন্দর কিন্তু কেন জানি আমার রাতের সমুদ্র দেখতে বেশি ভালো লাগে। আকাশে থালার মতো চাঁদ উঠেছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন আর জ্যোৎস্নার আলোতে উজ্জ্বল
চারপাশ। সমুদ্রের আছড়ে পড়া ঢেউ এসে আমার পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। এরকম একটা দিনের জন্য কত অপেক্ষা করেছি এক সময়। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ আমাকে একা একা সমুদ্র বিলাস করতে হতো না। সমুদ্রের ঢেউ গুলো যদি সব দুঃখ, কষ্ট গুলোকে নিয়ে চলে যেতো। কী ভালোই না হতো। পৃথিবীর দুঃখী মানুষ গুলো সমুদ্র পাড়ে এসে ভীর জমাতো তাদের দুঃখ দূর করার জন্য।

কী সব ভাবছি! এর মধ্যেই পেছন থেকে তিয়াশের গলার আওয়াজ ভেসে এলো, আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। একবার পেছনে ঘুরবেন প্লিজ!

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here