#চৈতালি_পূর্ণিমা
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-৩৬ [বর্ধিতাংশ]
রৌদ্রতপ্ত অম্বরে স্থিরচিত্তে চলাচল করছে তুলোরাশির দল। দূর থেকে দেখতে তাদের একদম হাওয়াই মিঠাই-এর মত লাগছে। শান্ত,মিষ্টি। সারি সারি গাছ রাজ্যসম অভিমান নিয়ে মাটির গহীনে খুঁটি শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। অনিলের অভাবে নড়চড় নেই পাতার। নৈঃশব্দ্য, নিস্পন্দ পরিবেশ, তবুও অদৃশ্য এক আলোড়নের রেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে সকলের অভ্যন্তরে প্রখরভাবে। ঝড় বইছে সামাজিক মাধ্যমে। ঈষৎ প্রহর পূর্বে নির্বাণের বলা প্রত্যেক কথা এখন সকলের কর্ণগহ্বরে ঝংকার তুলছে। সকলের মুঠোফোনের কৃত্রিম পর্দায় এখন শুধু নির্বাণ আর নির্বাণ। যদিও বা অনেকে অনেকভাবেই নির্বাণকে তুলে ধরছে তবুও সেগুলো বেশিরভাগ তার পক্ষেই৷
তখন নির্বাণের বক্তব্য অনেকেই ভিডিও করে নিয়েছিল এবং নির্বাণ যাওয়ার পর পরই কিছুটা কাটসাট করে জাবির মেইন গ্রুপে পোস্ট করে দেয়। সেখান থেকে আবার বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের পাবলিক, পারসোনাল গ্রুপে ভিডিওটা ছড়িয়ে পড়ে এবং চোখের পলকেই ভাইরাল হয়ে যায়। পরিষ্কার হয়ে যায় স্পর্শী ও নির্বাণের মধ্যকার সম্পর্ক। মুখে মুখেও গুঞ্জন তুলতে থাকে নির্বাণ,স্পর্শীর নাম। কালক্রমে খবরটা রুদ্রের নিকট এসেও পৌঁছালো। তবে অবাক হওয়া বা প্বার্শপ্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগেই ডাক পড়লো ভিসির রুমে। বাধ্য হয়েই রুদ্র এবং তার বন্ধুমহলের সকল এগিয়ে গেল ভিসির রুমে। যেতে যেতেই সকলে বুঝে নিল, এখন ঠিক কি হতে চলেছে। কেন না, এসব সাধারণ ঝগড়াঝাটির বিষয় ডিপার্টমেন্টের হেডরাই সমাধান করে থাকে। কিন্তু এবার ভিসি যেহেতু নিজ থেকে বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করছেন সেহেতু জল অনেক দূর গড়িয়ে গিয়েছে। পুরো ঘটনাই এখন তাদের বিপক্ষে।
ভিসির রুমে আসতেই সকলে নির্বাণ,তাপসি, ডিপার্টমেন্ট হেডকেও দেখতে পেল। সাথে আরও অপরিচিত কয়েকজন এবং নিজ নিজ বাবা-মাকেও। মুহূর্তে সকলের আত্মার পানি শুকিয়ে এলো। ইতিমধ্যে সকলের বাবা-মাকে যেহেতু ডাকা হয়েছে সেহেতু আজ কারোই রেহাই নেই৷ বড় কিছু হতে চলেছে সামনে। তপ্ত নিশ্বাস ফেললো সকলে। রুদ্রদের দেখে তাপসি মিস তাদের সামিদের পাশে দাঁড়াতে বললেন। সামিরা নির্বাণদের উল্টোপাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। তাপসি মিসের কথা অনুযায়ী রুদ্ররা সামির পাশে মাথা নত করে দাঁড়ালো। ভিসি
একনজর সকলের দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “ভার্সিটিতে উশৃংখল ব্যবহার করার কারণ কি জানতে পারি?”
রুদ্র নির্বিকার ভঙ্গিতে নিজের পক্ষ নিয়ে নিজেই বলতে শুরু করলো এবং সব দোষ সামিদের উপর চাপিয়ে দিতে চাইলো। সামি এবং মাহিন এর প্রতিবাদ করে উঠলেই ভিসি বলে উঠেন, “সবাই চুপ! সকলকে বলার সুযোগ দেওয়া হবে।”
কথাটা শুনে সামি আর মাহিন ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে থাকলো। আর এদিকে রুদ্র সুযোগ পেয়ে নিজেকে রক্ষা করতে বানোয়াট এক কাহিনী শুনালো সকলকে। যার মধ্যে কি-না সম্পূর্ণ দোষটাই দেখালো সামিদের। অতঃপর সামিদের যখন বলতে দেওয়া হলো তারা সত্য ঘটনাটাই বলল। যা কি-না ছিল রুদ্রের বলা কাহিনীর সম্পূর্ণ বিপরীত। দুই পক্ষের কথা শুনে তার বা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা টিচারসগুলোর দিকে তাকালো, “এবার আপনারা বলুন আসল ঘটনা কি? মিথ্যে কে বলছে এখানে?”
নির্বাণ বলল, “কে মিথ্যে বলছে তা না হয় আপনি নিজেই দেখে নিন স্যার।”
কথাটা বলে নির্বাণ এগিয়ে এলো। ভিসির পাশে এসে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে একটা ভিডিও ক্লিপ ছেড়ে দিল সে। যেটাতে কি-না সকালের সম্পূর্ণ ঘটনা স্পষ্টভাবে রিকর্ডেড ছিল। আর এতে পরিস্ফুট বুঝাই যাচ্ছিল রুদ্র স্পর্শীকে বুলি আর হ্যারাস করছিল। তারই প্রতিবাদ করতে সামি,মাহিন এগিয়ে আসে। তারা প্রথমে ওয়ার্নিং দিলেও রুদ্র তাদের উসকিয়ে দেয় এবং একটা ঝগড়া বিবাধ সৃষ্টি করে। এর মাঝে সাধারণ অনেকে আহত হয় প্লাস স্পর্শীও মাথায় আঘাত পায়। সবটা দেখে ভিসির চোখের রেখা সরু হয়ে আসে। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় রুদ্রের দিকে, “এসব কি?”
রুদ্র আমতা আমতা করল, “না মানে স্যার..”
পরিষ্কারভাবে কিছু বলার পূর্বেই ভিসি তেজি কন্ঠে বলে উঠলেন, “ভার্সিটিতে এমন ধরনের বিহেভিয়ার গ্রহণযোগ্য না তা কি জানো না? হ্যারাসিং, বুলিং, ফাইটিং যে নিষেধ এখানে তা কি ভুলে গিয়েছ? তার উপর আমার সামনে দাঁড়িয়ে মিথ্যা বলার সাহস কিভাবে হয় তোমার?”
রুদ্র কিছু বলার আগেই নির্বাণ বলে উঠে, “স্যার! রুদ্রের কীর্তিকলাপ এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। তার বিরুদ্ধে আরও কিছু কমপ্লেইন আছে।”
“কি? দেখাও!”
নির্বাণ মাথা দুলিয়ে একটা ফাইল খুলে ভিসির সামনে টেবিলে রেখে আসে। ভিসি সেটা হাতে নিয়ে চোখ বুলাতেই নির্বাণ বলতে শুরু করলো, “রুদ্রের এরকম বুলিং-র্যাগিং, ঝগড়া এবং মারপিট করার আরও পুরোনো রেকর্ড এন্ড কমপ্লেইন আছে। সে সাথে, রুদ্র যে মাদকাসক্ত সেটার প্রমাণও এখানে দেওয়া আছে। আপনি চাইলে দেখতে পারেন।”
নির্বাণ সবটাই খুব সুন্দর করে গুছিয়ে-টুছিয়ে ভিসির নিকট সব তথ্য প্রদর্শন করেছিল বলে তার কোন কিছু বুঝে উঠতে সময় লাগলো না। সে সাথে, অথোরিটি যে এতদিন টাকা খেয়ে রুদ্রকে স্বাধীনতা দিয়ে আসছিল সেই তথ্যও ছিল সেখানে। রিপোর্টটা দেখে বুঝা কষ্টসাধ্য নয় যে, খুব আগে থেকেই এই রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছিল। কেন না, এখানকার সকল তথ্য এতটা সুক্ষ্ম আর পাকাপোক্ত যে তা অদেখা করা একবারেই সম্ভব নয়। ভিসি সাহেব বেশ অভিনিবেশের সহিত সবগুলো পয়েন্ট পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন।
এরই মাঝে, রুদ্রের বাবা-মারা প্রতিবাদ করে উঠেন। নিজের ছেলের পক্ষ নিয়ে বলতে গেলে তাপসি মিস এবং আরেকজন স্যার মিলে তাদের চুপ করি করিয়ে দেন।
অন্যদিকে, সব দেখে ভিসি তৎক্ষনাৎ নিজের সিদ্ধান্ত জানালেন, “তোমাকে বহিষ্কৃত করা হচ্ছে রুদ্র। ইউ আর রাষটিগেট রাইট নাও। তোমার মত স্টুডেন্ট এই ভার্সিটিতে থাকুক তা আমি চাই না। সো ইউ মে ক্যান লিভ নাও৷ আর বাকি সবাইকে দুই সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ড করা হলো। যেহেতু তোমরা আজকের ঝগড়া,মারপিটের অংশ ছিলে সেহেতু তোমাদের এই শাস্তি প্রাপ্য।”
কথাটা বলে ভিসি ক্ষান্ত হলেন। রুদ্র করুণ কন্ঠে বলে উঠল, “আপনি এমনটা করতে পারেন না স্যার। আমাকে আরেকটা সুযোগ দিন, আমি নিশ্চিত ভালো হয়ে দেখাব। আর কোন কমপ্লেইন পাবেন না আপনি।”
রুদ্রের সাথে রুদ্রের বাবা-মাও একই কথা বলেন, সুযোগ চাইলেন একটা। তবে ভিসির মন গললো বলে মনে হলো না। সে শুধু বললেন, “ইটস টু লেট নাও।”
কথাটা বলেই তিনি ডেক্স থেকে একটা কাগজ বের করে সেটাতে সাইন করে রুদ্রের দিকে এগিয়ে দিলেন এবং বললেন, “তুমি যেত পারো।”
“কিন্তু স্যার…”
রুদ্রের কথা বলার মাঝেই নির্বাণ বলে উঠে, “না স্যার! কাহিনি তো এখনো শেষ হয়নি। ওকে পুলিশে দেওয়া বাকি আছে।”
ভিসি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, “পুলিশে দেওয়া বাকি আছে মানে?”
নির্বাণের কণ্ঠনালিতে খানিকটা আক্রোশ মিশিয়ে বলল, “ওর বিরুদ্ধে সাইবার-ক্রাইমের মামলা আছে। হি ইজ এ ব্লাডি ক্রিমিনাল।”
#চলবে
কোনভাবেই পর্বটা মনমতো সাজাতে পারছি না, বার বার একই লেখা কাটছি আর লিখছি৷ পর্বটা হয়তো আমি দিতাম না কিন্তু আজ গল্প দিব বলে কথা দিয়ে রেখেছিলাম। তাই আগোছালো পর্বটাই দিয়ে দিলাম। পাঠকদের একটু মানিয়ে নেওয়ার অনুরোধ রইলো।