#ছায়া_সঙ্গিনী
#পর্ব-০৮
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
আমি আর তুলি দ্রুত পায়ে হেঁটে ওদের কাছে গেলাম, আমাদের এভাবে আসতে দেখে দু’জনেই সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকালো। পরক্ষনেই পুরুষ ব্যক্তিটির অধরে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে। হয়তো আমাকে এখানে আশা করেনি কখনো,আজ নিজ থেকে তার কাছে এসেছি।এই নিয়ে হয়তো আকাশ কুসুম কল্পনা জল্পনা শুরু করে দিয়েছে অলরেডি।
ফারহা নিরবতা ভেঙ্গে বললো,
– ভাইয়া আপনাকে তো একটা খবর দেওয়াই হয়নি।আয়রার তো,,,,!
আমার আর তুলির বুঝতে বাকি নেই, ফারহা কিসের কথা বলতে চলেছে!তাই তুলি ফারহা’র মুখ চেপে ধরে বললো,
– ভাইয়া আপনারা কথা বলেন, আমরা একটু আসতেছি।
ইমরান ভাইয়া প্রথমে ভ্রু কুঁচকে তাকলেও পরে কি ভেবে যেন বললো,
– ঠিক আছে যাও, সমস্যা নেই।
তারপর তুলি ফারহা কে টেনে নিয়ে গেল এখান থেকে। এখন আমি পরেছি বিপদে, কি কথা বলবো আমি এই ছেলের সাথে?সব সময় এই ছেলের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলি আমি।
– আয়রা?
মাথা তুলে তাকালাম আমি, তাকাতেই লক্ষ্য করলাম, মিষ্টি কালারের শার্ট পরিহিত ফর্সা মুখশ্রী হালকা লাল রঙা ধারন করেছে। শুনেছি মেয়েরা লজ্জা পেলে এরকম হয়, এখন দেখি ছেলেদের ও হয়ে। এখন কথা হচ্ছে এই লোক লজ্জা পাচ্ছে কোন দুঃখে?
– আমি যেন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি! তুমি আয়রা নিজে এসেছো আমার সাথে দেখা করতে? আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না জানো তো? মানে এটা কিভাবে সম্ভব? আমি যেন আজকে কার ফেইস দেখে বাসা থেকে এসেছি?
ইমরান ভাইয়া মনে করার চেষ্টা করছে,কার ফেইস দেখে বাসা থেকে বের হয়েছেন তিনি। এদিকে আমার ইচ্ছা করছে,এক ছুটে পালাই। তোর বিশ্বাসের গুষ্টি কিলাই! কেন যে বুঝতে পারছিস না আমি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি তোর এসব সিনেমাটিক কর্ম কান্ড দেখে। ইচ্ছে করছে তোকে রাস্তার ড্রেনে নিয়ে ফেলে দেই।(মনে মনে ইচ্ছা মতো বকে দিলাম)
– ওহ্ হাঁ মনে পরেছে, আমার ছোট বোন ইনিয়া’র ফেইস আজকে প্রথম দেখেছি। কিন্তু এই ফকিন্নীর ফেইস আমার জন্য এতো লাকি? আমি তো বিশ্বাস ই করতে পারছি না।
ইমরান ভাইয়া কে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
– ভাইয়া আমাকে এডমিট কার্ড নিতে হবে, আমি বরং যাই।আর আপনি এই খুশিতে আপনার বোন কে চকলেট কিনে দিয়েন।
– নিশ্চই দিব। এখন তুমি যেহেতু বলেছো তখন ওর জন্য পুরো কিটকাট এর বক্স নিয়ে যাবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে ভাইয়া আমি যাই।
আর কিছু বলতে না দিয়ে দ্রুত পায়ে, চলে যাই এখান থেকে।
_____
ইমরান ভাইয়া অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আমি যখন ট্রান্সফার হয়ে কলেজে ভর্তি হই তখন ইমরান ভাইয়া অনার্স প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করেন। তখন কলেজ ড্রেস পরে আসতাম। বোরকা ছাড়া আসতাম বলে, কয়েক মাস পর তার নজরে পরি আমি। সেই থেকে শুরু হয় তার সিনেমাটিক পাগলামি। আমাকে দেখলেই তাকিয়ে থাকা,পিছু পিছু বাসা অবধি যাওয়া। আমার ক্লাসমেট দের কাছে চকলেট আইসক্রিম ফুল ইত্যাদি দেওয়া যা বলেও শেষ করা যাবে না। একদিন দু’তলায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি আর দেখছি তুলি আসছে কিনা? বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর পেন্সিল ব্যাগ থেকে লিপ বাম নিয়ে ঠোঁটে দিচ্ছি, দেওয়ার পর লিপ বাম টা পুনরায় ব্যাগে রাখার সময়, আকস্মিক ইমরান ভাইয়া এসে লিপ বাম টা নিয়ে নেয়!যার ফলে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাই আমি। আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে, তিনি লিপ বাম টা পকেটে পুরে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করেন। ঘটনা এতো দ্রুত ঘটলো যে আমি কিছুই বলতে পারিনি।
তারপর ফারহা’র থেকে শুনেছি,
– ইমরান ভাইয়া পরীক্ষার হলে বসে ঐ লিপ বাম ঠোঁটে ঘসে ঘসে দিচ্ছিলেন, তখন হলে গার্ড দেওয়া স্যারের বিষয়টি নজরে পরতে স্যার ইমরান ভাইয়ার থেকে লিপ বাম টা নিয়ে চলে যান।যাওয়ার সময় বলেছেন, পরীক্ষা শেষে স্যারের থেকে যেন নিয়ে আসে লিপ বাম টা।তো যথা সময়ে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর,ঐ স্যার কে খুঁজে পায় না।সে জন্য ঐ স্যারের বাসার ঠিকানা নিয়ে, বাসায় চলে যায় ইমরান ভাইয়া! একটা ম্যাচিউর ছেলের থেকে এটা কখনোই আশা করেনি স্যার।যে কিনা একটা লিপ বামের জন্য এতো দূর পর্যন্ত ছুটে আসবে। তারপর স্যারের কাছ থেকে লিপ বাম নিয়ে বাসায় ফিরে ইমরান ভাইয়া।
সেদিন বিষয়টা শুনে খুব হেসেছিলাম। আমি সবসময় বিয়েতে বিশ্বাস করি, এছাড়া অন্য কোন সম্পর্ক বা ছেলেদের এসব পাগলামি আমার কাছে মূল্যহীন। তাছাড়া রাহাতের ব্যাপারটা ঘটে যাওয়ার পর থেকে ছেলেদের প্রতি বিশ্বাস উঠে যায় আমার। এক্ষেত্রে অনেকে বলবে সবাই তো এক নয়। সব মানুষ বা ছেলেরা এক নয় ঠিক আছে, কিন্তু কে ভালো কে মন্দ বুঝবো কিভাবে? একটা মানুষের সাথে কয়েক বছর সংসার করে যেখানে মানুষটাকে সম্পূর্ণ চেনা যায় না,ডিবোর্স হয়। স্বামী বা স্ত্রীর পরকীয়া থাকে, সেখানে কয়েক দিন বা মাসের পরিচয়ে মানুষকে কাখনোই চেনা জানা যায় না।
যাই হোক,
এরপর যখন আমি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী,তখন একদিন কমন রুমে বসে ছিলাম। সেদিন তুলি কলেজে আসে নাই। একাকীত্ব বোধ করছি বলে,কমন রুমে বসে খাতায় কাটা কম্পাস দিয়ে কিছু আঁকার চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ আমার সামনে এসে বসে ইমরান ভাইয়া। বসে কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে বললো,
– তোমাকে আমি পছন্দ করি, এটা কি তুমি বুঝতে পারছ না? এতো অহংকার থাকতে নেই জানো না? আমি যদি চাই এই মুহূর্তে তোমাকে বিয়ে করতে পারি।
সামনে থাকা ব্যক্তিটার কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে যায় আমার। হাতে থাকা কম্পাস টা মুষ্টিবদ্ধ করে কাটা অংশটি লম্বা করে হাতে ঢু*কিয়ে দিলাম।ফল স্বরুপ কাটা অংশটির সাথে মোটা অংশ কিছুটা ঢুকে গেল।ফলে গলগল করে র*ক্ত ঝরতে থাকে। আকস্মিক ঘটনায় বরকে গিয়ে বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় ইমরান ভাইয়া।সে স্বপ্নেও ভাবেনি আমি এমন কাজ করতে পারি। নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে আমার হাত ধরতে এলে, আমি চিৎকার করে বলি,
– একদম ছোঁবেন না আমাকে, না হয় এর থেকেও ভয়ঙ্কর কাজ করতে আমি একটুও ভাববো না।
আমার চিৎকার শুনে আশপাশের ছাত্র ছাত্রীদের নজর পরে আমাদের দিকে।এর মধ্যে তারা কানাঘুষা শুরু করে দেয়।সব কিছু তোয়াক্কা না করে ব্যাগ নিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে চলে যাই আমি। সেদিনের পর থেকে ইমরান ভাইয়া আমার রাগ সম্পর্কে অবগত আছেন। তাই ভুল করেও উল্টো পাল্টা কিছু বলতে আসেন না আমাকে। তবে আমাকেই তিনি বিয়ে করবেন, এটা তার নিজের সাথে নিজের প্রতিজ্ঞা।
_________
এডমিট কার্ড নিয়ে বাসায় আসতেই ভাবীর টেপ রেকর্ড শুরু হয়ে যায়। কারণ এতো কিছুর মধ্যে বাজার করার কথা বেমালুম ভুলে যাই আমি। আজকে বাজার না আনলে এই মহিলার কথার জন্য টিকে থাকতে পারবো না তাই বাধ্য হয়ে আবার জুত জোরা পরে বের হতে নিলে আব্বু এসে বললো,
– আবার কোথায় যাচ্ছিস আয়রা?
– আব্বু কিছু কেনাকাটা বাকি ছিল, এসে কথা বলবো তোমার সাথে।
তারপর আবার বাজারে এলাম, লিষ্ট দেখে দেখে সমস্ত কেনাকাটা শেষ করে একটা রিকশা নিলাম। মুস্কিল হলো এগুলো দু’তলায় বহন করে নিব কিভাবে? আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দারোয়ান মামা এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলেন,
– মা কোন সমস্যা হইছে ?
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
– মামা আসলে ভাই বাসায় নেই। এখন এগুলো,,
আমার এটুকু কথায় বুঝতে পেরে মামা বেশিরভাগ জিনিস পত্র তুলে নিয়ে বললেন,
– আগে কইবানা আমারে ?
তারপর দুজনে মিলে বাসায় নিয়ে গেলাম। মামা চলে যাওয়ার সময় জোর করে একশো টাকা দিলাম,যদিও তিনি নিতে চান নাই।
কষ্ট করে নিয়ে এলেন তাই জোর করেই দিলাম আমি।
দুপুরের খাবার খেয়ে শুয়ে আছি তখন ফোন বেজে উঠল। আননোন নাম্বার থেকে কল দেখে মনে হলো রাহাত কল করেছে! রাহাত চলে যাওয়ার পর থেকে একটা সুপ্ত ইচ্ছা মনে এসে হাজির হয়। মনে হয় রাহাত কল করবে আমায়, আচ্ছা আমি কিভাবে কথা বলবো আমি ওর সাথে? সেই কর্কশ কন্ঠেই কি কথা বলবো? নাকি অন্য ভাবে? এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম।গলা থেকে ওরনা টা সরাতেই লাল রঙা স্থান টা দেখতে পেলাম।যেটা আমার স্বামী নামক মানুষটার প্রথম ছুঁয়ে দেওয়া। মুহুর্তেই যেন সব লজ্জারা এসে জড়িয়ে নিল আমায়, সেদিনের মুহূর্ত মনে হতেই। পুনরায় আবার এসে শুয়ে পড়লাম। ফোনের দিকে নজর পড়তেই কলের কথা মনে পরলো।
সেই কখন থেকে কল বেজেই চলেছে, অথচ আমি কীসব ভেবে চলেছি। নিজেকে নিজেই বকা দিয়ে কল রিসিভ করলাম,
– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছোত মা?
হঠাৎ এরকম কথা শুনে বরকে গেলাম আমি!কে হতে পারে?যে এভাবে বললো। আবার ভাবনায় পড়ে গেলাম। ফোনের ওপাশের ব্যক্তি আবারো বললো,
– তোকে দেখতে ইচ্ছা করে,আয় না একবার। রাহাত রে কতো কইলাম তোকে নিয়া আইতে, কিন্তু ছেলেডা সুনলো না।
এবার বুঝতে পারলাম আমার শ্বাশুড়ি মা কল করেছেন। তাই নম্র ভাবে বললাম,
– মা আপনি কেমন আছেন?
– আল্লাহ রাখছে ভালোই। তোর বাড়ির সবাই কেমন আছে?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছেন সবাই।
– আয়না একবার তোর নিজের বাইত? তোরে একবার দেকমু।
– অবশ্যই আসবো মা। তিন দিন পর আমার পরীক্ষা, পরীক্ষা শেষ করে আসবো কেমন?
– তাই আসিস,বড়ই খুশি হইলাম তোর কথা শুনে।
– এ ব্যাপারে আপনার ছেলে কে যেন বলবেন না ঠিক আছে?
– আইচ্ছা আইচ্ছা তাই হইবো।
– আচ্ছা আমাদের জন্য দো’আ রাইখেন মা? আজকে রাখি ভালো থাকবেন।
– আমি সবসময় তোদের জন্য আল্লাহ তা’আলার কাছে কইরে মা। আচ্ছা ভালো কইরা দেইস পরিক্ষা।
– ইনশা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুমুস সালাম।
রাহাতের মায়ের সাথে কথা বলে খুব হালকা লাগছে নিজেকে। তাই ছোট ভাইটার সাথে কথায় বলতে ওর রুমের দিকে গেলাম। ওকে ভয় দেখানোর জন্য লক না করে চুপিচুপি ঢুকে গেলাম আমি।ঢুকে যা দেখলাম তাতে আমার রাগে শরীর দপদপ করতে শুরু হলো!,,,,,,
#চলবে,,, ইনশা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম।
সবাই ঝিমিয়ে পড়েছে,কেউ আর আগের মতো সুন্দর মন্তব্য করে না। গল্পটা মনে হয় আর ভালো হচ্ছে না 😔)