জান্নাহ্ “পর্বঃ১৪

0
4996

#জান্নাহ্
#পর্বঃ১৪
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

বসন্তের শুরুতে প্রকৃতিতে শীতলতা থাকলেও ধীরে ধীরে তা উষ্ণতায় ছেয়ে যায়।তপ্ত সূর্য সবসময় তার তেজস্বিতার ঠাট বজায় রেখে গনগন করে জ্বলছে।অনবরত ঘুরতে থাকা ফ্যানের নিচে বসেও রক্ষা নেই।ভ্যাবসা গরমে শরীরের আশপাশে যেনো আগুনের বলয় আচ্ছাদিত।

উদোম গায়ে বসে আছে রাফাত।তার হৃদযন্ত্রের ঠিক উপরেই ব্ল্যাক কালারের ট্যাটু করা।জান্নাহ্ লেখা সেখানে।ঠিক তার একটু উপর থেকেই গড়িয়ে পড়ছে উষ্ণ লহু।আবেগশূন্য হয়ে তাকিয়ে আছে সম্মুখপানে।বেখেয়ালি ভাবে তার হাতের সার্জিক্যাল নাইফ চলছে তার বুকের উপর।ঘরে ঢুকেই তা দেখে আচম্বিত হয় ইশাক।ত্রস্ত পায়ে এসে দাঁতে দাঁত চেপে উদাসী রাফাতের হাত থেকে নাইফটা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।গমগমে গলায় বললো–

“পাগল হয়ে গিয়েছিস!কী করছিস এইসব?

রাফাত নৈঃশব্দে মিষ্টি হাসলো।শান্ত ও স্বাভাবিক গলায় বললো–

“শরীরের রক্তক্ষরণ তো দেখা যায়,হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কী বোঝা যায়?

ইশাক দাঁতখামটি মেরে বললো–

“এইসব ভ্যাবলা মার্কা দেবদাসগিরি বন্ধ কর।একুশ শতাব্দীতে এসে শালা দেবদাসের মতো অভিনয় করোছ ক্যান?

রাফাত মৃদু হাসলো।ইশাক ব্যস্ত হয়ে একটা ফাস্টএইড বক্স এনে রাফাতের ক্ষত জায়গাটা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেয়।রাফাত এখনো নিরুত্তাপ।তার মধ্যে কোনো চঞ্চলতা নেই,নেই কোনো উদ্দীপনা।ফোঁস করে এক দম ফেললো ইশাক।রাফাতের পাশে বসে স্বশব্দে বললো–

“বন্ধ কর এইসব পাগলামি রাফাত।প্লিজ দোস্ত।”

রাফাত চোখে হাসে।তার পাঁজর যেনো ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে।ঘোলা চোখে ইশাকের দিকে অক্ষি আবদ্ধ করে।রুদ্ধশ্বাসে বললো–

“আমি কী সত্যিই অপরাধি!সত্যিই কী এতোটা কষ্ট আমার জীবন সংবিধানে লেখা ছিলো!নাকি কেউ জোর করে আমার ভাগ্যই বদলে দিয়েছে!

ইশাক প্রগাঢ় চাহনিতে রাফাতকে দেখে।গত কয়েকদিনে কেমন ম্লান হয়ে গেছে রাফাতের চেহারা।নির্ঘুম রাত্রিযাপন,স্কুলে গিয়ে অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে কখন জান্নাহ্ আসবে।বাসায় বসে অদ্ভুত সব কান্ড ঘটায়।ভবিতব্য ডক্টর এখন একজন মেন্টাল পেশেন্টে পরিণত হচ্ছে দিন দিন।ইশাক রাগমিশ্রিত গলায় বললো—

“তুই নিজের সাথে সাথে আমার জীবনটাও শেষ করে ফেলবি।ডক্টরি বাদ দিয়ে এখন তোর বডিগার্ড হতে হবে।ইন্টার্নি বাদ দিয়ে এই,এই এখানে এসে পড়ে রয়েছি শুধু তোর জন্য।তোর রেড চেরির জন্য।আর তুই!

রাফাত ছোট্ট শ্বাস ফেলে নিরুদ্বেগ গলায় বললো–

“তাকে তো আমি পেয়েছি।”

ইশাক গম্ভীর গলায় বললো—

“তুই কী শিউর ওই মেয়েটাই জান্নাহ্?

রাফাত উঠে দাঁড়ায়।চমৎকার হাসলো সে।সে হাসিতে কিছু তো একটা ছিলো যা ইশাক জানে না।রহস্যচ্ছলে বললো রাফাত—

“তার অন্তরাত্না কে চিনি আমি।আর তাকে চিনবো না!

রাফাত থামলো।পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে মৃদু হাসলো।বিছানার উপর তার কালো রঙের শার্টটা পড়ে আছে।ঘর জুড়ে সমস্ত জিনিস এলোমেলো।রাফাতের অশান্ত মন শান্ত করার জন্য ঘরকে অশান্ত করে ফেলেছে সে।রাফাতের মনে হলো এই তো জান্নাহ্ এসে বলবে,” রাফাত কী বাচ্চা,কী অবস্থা করেছো ঘরের?এমন নোংরা ঘরে আমি কখনো তোমার বউ হয়ে আসবো না।না মানে না।”
আরেক পশলা হাসলো রাফাত।তখন সে জান্নাহ্কে আলতো হাতে নিজের কাছে টেনে বলবে,”বউ নাহলে গার্লফ্রেন্ড হও।”জান্নাহ্ খিলখিলিয়ে হাসবে।ঝরঝরে গলায় বলবে,”উঁহু,আমি রাব্বাতুল বাইত হবো”।রাফাত কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান গলায় বলবে,”সেইটা আবার কী?
ঝলমলে হেসে জান্নাহ্ বলবে,”ঘরের রাণী।”
রাফাত অস্বীকার করে বলবে,”নাহ।তুমি তো আমার হৃদয়ের রাণী।”

দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাফাত।শ্রান্ত দুই চোখ মুদন করতেই গড়িয়ে পড়লো স্মিত নোনতা জলের প্রস্রবণ।
ইশাক রাফাতের কাঁধে হাত দেয়।আবেগপূর্ণ গলায় বললো–

“প্লিজ এইভাবে ভেঙে পড়িস না।ও এই এলাকায় আছে।খুঁজে নিবো ওকে আমরা।”

রাফাত ভাবাবেশবিহীন গলায় বললো–

“খুঁজে আমি ওকে নিবোই।ওকে যে আমার প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।কী খামতি ছিলো আমার ভালোবাসায়?সব তো ঠিক ছিলো।কথা দিয়েছিলো আমায়।আমি স্ট্যাডি শেষ করে ফিরলেই ও আমাকে বিয়ে করবে।ওর ডক্টর বর হয়ে ফিরবো আমি।কিন্তু দুইবছর না যেতেই সবকিছু এলোমেলো করে দিলো।যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো আমার সাথে।ম্যাসেজ,ইমেল,ফেসবুক সব বন্ধ করে দিলো।বাবাকে কতোবার জিঙ্গেস করলাম ওর কথা।বললো কোথায় গিয়েছে কিচ্ছু জানে না।আঙ্কেল,আনটির হঠাৎ মৃত্যুতে হারিয়ে যায় জান্নাহ্ আমার জীবন থেকে।”

রাফাত থামলো।তার দিকে কৌতূহলদীপ্ত হয়ে তাকিয়ে আছে ইশাক।স্বাভাবিক গলায় রাফাত আবার বললো–

“ভাগ্যিস ওর স্কুলে গিয়েছিলাম।শুনেছি গত একবছরে একবার এসেছিলো ওখানে।ওর এইটের রেজিস্ট্রিশন কার্ড নাকি হারিয়ে ফেলেছে।সেখান থেকেই ঠিকানা পাই।নাহলে তো কখনো জানতেই পারতাম না আমি।”

ইশাক দম ফেলে যা এতোক্ষন সে আটকে রেখেছিলো।
,
,
,
থমথমে ঘরে ফ্যানের শো শো আওয়াজ ছাড়া আর কোনো সাড়া শব্দ নেই।নাহ আছে।এক বিদঘুটে আওয়াজ।শায়িখ ঘুমোচ্ছে।আর ষাঁড়ের মতো তার নসিকাগ্রন্থি ডেকে চলছে।তপ্ত দিনেও কেউ এইভাবে শান্তিতে ঘুমায়!
সারা ঘরময় উষ্ণতা।সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলতে শুরু করলেও তার তেজ কমেনি।তার রশ্মি বর্ষিত হচ্ছে লাগাতার।ড্রয়িংরুমের কাউচে বেসামাল হয়ে তদ্রাচ্ছন্ন শায়িখের এমন আওয়াজে বিঘড়ে যায় সারহানের মস্তিষ্ক।শায়িখের মুখের উপর থেকে পাতলা চাদরটা সরাতেই চোখের পাতা প্রশস্ত করে সারহান।সমস্ত মুখে ঘাম জমে আছে।চোখের নিচটা মনে হয় কোনো অগভীর কূয়া।ভ্রু কুঞ্চি করে গাঢ় গলায় ডেকে উঠে সারহান–

“শায়িখ!

নড়লো না শায়িখ।বরং তার ঘ্রাণেন্দ্রিয়ওর আওয়াজ তুমুল ঝড় তুললো।এই একটা জিনিসই সারহানের শায়িখের পছন্দ না।সারহান নাক ফুলিয়ে বিরক্তিকর গলায় সজোরে ডেকে উঠে–

“শায়িখ!!

ঘুমন্ত শায়িখের কানে তা বাঘের গর্জনের মতো শুনালো।এলোপাথাড়ি উঠেই চম্কিত গলায় বলতে লাগলো–

“কে?কে?
আমি কিছু করি নি।আমি কিছু করি নি।”

সারহান ঠাট্টারছলে দুটো গাট্টা মারে শায়িখের মাথায়।শার্টের কলার টা ছড়িয়ে কাউচে বসে।দমদমে গলায় বললো–

“এই গরমে কেউ এইভাবে ঘুমায়।মারা পড়বে বুঝলে।বিয়ের আগেই বিধবা হবে তোমার বউ।”

শায়িখ প্রাণখুলে শ্বাস নিলো।এই বেলা দুপুরে সে একটা ভয়ংকর স্বপ্ন দেখছিলো।কেউ একজন তার পেটে একটা রাম দা ডুকিয়ে নাড়িভুঁড়ি বের করে এনেছে।নিমিঝিমি চোখের পাতা পূর্ণ প্রকাশ করে সারহানকে ভালো করে দেখে।বার কয়েক ঢোক গিলে শায়িখ।স্বপ্নে দেখা সেই ভয়ংকর লোকটার সাথে সারহানের অদ্ভুত মিল।নিজের ভবিষ্যৎ শঙ্কায় আঁতকে উঠে শায়িখ।
পরমুহূর্তেই শান্ত শ্বাস ফেলে।দিন দুপুরের দেখা স্বপ্ন সত্যি হয়না।ওগুলো শয়তান দেখায়।কিন্তু শায়িখের মনে আবার এক অদ্ভুত প্রশ্ন জাগ্রত হলো।তার স্যার তো শয়তানের থেকে কম নয়।নেহাত লোকটাকে শায়িখ ভালোবাসে বলেই এতো কিছুর পরও ছাড়তে পারে না।অবশ্য তার একার কী দোষ!মেয়েগুলোও যাচ্ছে তাই।বিবাহিত পুরুষের সাথে এতো কীসের মাখামাখি !জান্নাহ্ এর সাথে বিয়ের পর সারহানের সব গার্লফ্রেন্ড তার স্ত্রীর কথা জেনেও সম্পর্কে জড়িয়েছে।কিন্তু এক্ষেত্রে তারা নিজেরা জানে না,তারা ছাড়াও সারহানের একাধিক নারীসঙ্গী রয়েছে।এর মধ্যে কিছু খুন হয় আর কিছু মেয়েকে সারহান তার মধু ফুরাতেই ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

ঘুমো ঘুমো গলায় শায়িখ বললো—

“না মানে…।”

সারহান গম্ভীর অভিব্যক্তিতে স্বশব্দে প্রশ্ন ছুঁড়ে—

“ইহতিশাম ফিরেছে?

শায়িখ কোনোমতে চোখে পাল্লা দুটো টেনে ধরে মিনমিনে গলায় বললো—

“জ্বী স্যার।কাল রাতেই ল্যান্ড করেছে।এতোদিন ইতালি ছিলো।”

দুর্বোধ্য হাসে সারহান।দৌঁড়ে তার কোলে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে তিতি।চটপটে গলায় প্রশ্ন করে—

“মামা,পরীমার কী হয়েছে?

তিতি সারহানের উত্তরের প্রত্যাশা না করে মাথা নিচু করে অভিমানের সুরে বললো–

“পরীমা আমার সাথে কথা বলছে না।তুমি কী তাকে বকেছো?

সারহান মিষ্টি হেসে তিতির গালে চুমু খেয়ে বললো—

“নাতো মামুনি।কেন?পরীমা কিছু বলেছে?

তিতি নিঃশব্দে মাথা হেলিয়ে না বোধক সম্মতি দেয়।অভিযোগের সুরে বললো—

“মা যে পরীমার ঘরে যেতে দেয় না।”

“তাই বুঝি।আচ্ছা।মামা নিয়ে যাচ্ছি।”

“থ্যাংকিউ।”

তিতি সারহানের গালে শক্ত চুমু খেলো।জাবিন তার এক কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বের হচ্ছিলো।তাকে দেখেই জোর গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে সারহান–

“কোথায় যাচ্ছিস?

সারহানের প্রশ্নে দমকে যায় জাবিন।তিক্ততায় ভরে যায় তার মন।চোয়ালের পেশি শক্ত হয়ে আসে।কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক করে পেছন ফিরে নম্র গলায় বললো—

“কোচিং।”

সারহান নিজের হাত ঘড়িতে তাকায়।তপ্ত চোখে তাকিয়ে গাঢ় গলায় বললো–

“কোচিং তিনটায়।এখন তো দুটো বাজে।”

জাবিন শক্ত গলায় প্রত্যুত্তর করে–

“এক্সট্রা ক্লাস আছে।”

সারহান আগের মতোই বললো–

“ওয়েল।এক্সট্রা ক্লাস যেনো কোচিং এই হয় অন্য কোথাও না।”

তাচ্ছিল্য হাসলো জাবিন।নরম পায়ে বেরিয়ে আসে সে।সারহানকে তার একটা বিষাক্ত সাপ ছাড়া কিছু মনে হয় না।তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চায় সে।কিন্তু জাবিনের চিন্তা জান্নাহ্ কে নিয়ে।সে মরণ ফাঁদে পড়েছে।আদৌ কী মুক্তি মিলবে তার?

শুভ্রা কে ডেকে উঠে সারহান।রান্নাঘরে ছিলো সে।জমিরের কথা জিঙ্গেস করতেই বলে তিনি আড়তে গিয়েছেন।আজ অনেক বড় একজন ডিলারের সাথে আলোচন হবে।সাথে সেরাজও আছে।ব্যবসায়িক সব কাজে এখন সেরাজই জমিরের ভরসা।সেরাজের আপন কেউ নেই তেমন শুধু একটা বোন আছে।হোস্টেলে লেখাপড়া করে।উত্তরাঞ্চলে বাড়ি হওয়ায় এক রাতের ঝড় বৃষ্টিতে সব নিঃশেষ হয়ে যায়।ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় সেরাজ আর তার বোন।এখানে সেখানে দিনযাপন করতে করতে একসময় এসে পড়ে জমিরের কাছে।সেরাজ নিজের কাজে অত্যন্ত মনোযোগী এবং নির্লোভ।তার কাজের প্রতি একাগ্রতা আর সৎ মানুষিকতায় খুশি হয়ে নিজের মেয়েকে তার হাতে তুলে দেয় জমির।যেহেতু একটাই মেয়ে আর সেরাজে কেউ নেই তাই বিয়ের পর থেকে সেরাজ এখানেই থাকে।

নির্বিকার গলায় সারহান বললো—

“শায়িখকে কে খেতে দাও আপু।”

শুভ্রা মাথা ঝাঁকিয়ে খাবার বাড়তে যায়।শায়িখ এখনো ঢুলে যাচ্ছে।কাল সারারাত ইহতিশামের খবর নিয়ে পড়েছিলো।তাই ঘুমাতে পারেনি।সারহানের ধমকেই খাম্বার মতো উঠে দাঁড়ায় শায়িখ।সারহান মৃদু ছন্দে হাসে।তিতি কে লক্ষ্য করে বললো–

“তিতি সোনা বলোতো,খালি পেটমে..।”

তিতি একগাল হেসে উচ্ছ্বসিত গলায় বললো–

“খালি পেটমে দিমাগকি বাত্তি নেহি ঝালতি।”

“মাই প্রিন্সেস।”

সারহান তার নাক ঘষতে থাকে তিতির গালে।দাঁতের সাথে দাঁত চেপে বললো–

“আমার তিতিসোনা ইজ বেস্ট।”

তিতি তার আধো আধো বুলিতে বললো–

“হা মামা।তিতি ইজ বেস্ট।”

তিতির কথায় শায়িখও হেসে ফেলে।বাচ্চারা আসলেই ফেরেশতার রূপ হয়।আর মেয়েরা তো জান্নাত।হঠাৎই কপালে ভাঁজ ফেলে উদ্বিগ্ন গলায় শায়িখ বললো–

“বলছিলাম স্যার মেঘনোলিয়া ম্যামও কী….।”

সারহান প্রত্যুক্তি করলো না।প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রহস্য হাসলো।শায়িখ বাকিটা বুঝে নিলো।মৃদু গলায় বললো—

“ইহতিশাম কী ছেড়ে দিবে এইবার আপনাকে?
যদি সে জানতে পারে।”

বাঁকা হাসে সারহান।থমথমে গলায় বললো–

“না এইবার ও আমাকে ছাড়বে,না আমি ওকে ছাড়বো।ওর সাথে পুরোনো হিসেব বাকি আমার।”

চোখ পিটপিট করে ঢোক গিলে শায়িখ।ইহতিশামকে নিয়ে ভীত সে।অলরেডী বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখে ফেলেছে।তার উপর আবার খুন।সারহানকে নিয়ে শঙ্কিত সে।লোকটা বুঝি এইবার সত্যিই ফাঁসলো।তবে কথায় আছে,চোরের দশদিন তো গৃহস্থের একদিন।”

তিতিকে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে হাঁটা ধরে সারহান।বিরক্তি নিয়ে স্বগতোক্তি করে বললো–

“একটা আপদ বিদায় না হতে আরেকটা।শালা ভুজপাতা লাইফ।”

সারহানের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকায় তিতি।কিন্তু নিজের মামার উচ্চারিত অস্ফুট শব্দের কোনো অর্থোদ্ধার সে করতে পারলো না।

তিতিকে ঘরে নিয়ে বিছানার কাছে যেতেই সারহানের কোল থেকে অধৈর্য হয়ে নেমে পড়ে।জান্নাহ্ এর কাছে গিয়ে তাকে টপাটপ চুমু খেয়ে নেয়।আহ্লাদী গলায় বললো–

“কি হয়েছে তোমার পরীমা?

জান্নাহ্ তিতিকে নিজের কোলে বসিয়ে বললো—

“কিছু হয়নি তো সোনা।”

তিতি চোখের পল্লব ছড়িয়ে অবিশ্বাস্য গলায় বললো–

“ওওওমাআআআ,তোমার এখানে কী হয়েছে?ব্যথা পেয়েছো?

জান্নাহ্ এর চোখে যায় সারহানের দিকে।নিজের ঘামার্ত শার্ট চেঞ্জ করে একটা চেক শার্ট পরে নেয়।চুলের উপর হাত চালিয়ে তা সেট করাতে ব্যস্ত।তিতির কথার উত্তর না দিয়ে ব্যস্ত গলায় বললো–

“আপনি কী চলে যাবেন?

সারহান জান্নাহ্ এর সামনে এসে দাঁড়ায়।তার কোল জুড়ে বসে আছে তিতি।তিতির হাসি হাসি মুখে উচ্ছলতা।সারহান বা’হাত পকেটে গুঁজে হালকা ঝুঁকে জান্নাহ্ এর কপালে উষ্ণ চুম্বন করে।মামার এহেন কান্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করছিলো তিতি।উঠে দাঁড়িয়ে চটপটে গলায় বললো—

“আমিও।”

সারহান একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে।খুশিতে গদগদ হয়ে যায় তিতি। সারহান কোমল গলায় বললো–

“মাই লিটেল প্রিন্সেস।”

জান্নাহ্ এখনো অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সারহান তার প্রশ্নের প্রত্যুক্তি করে-

“বি রিল্যাক্স।আপনি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমি কোথাও যাচ্ছি না।”

আশ্বস্ত হয় জান্নাহ্।সে এখন অনেকটা সুস্থ।তবে পুরোপুরি নয়।স্কুলে যাওয়াসহ রুম থেকে বের হওয়াও বন্ধ তার।তিতিকে কোলে নিয়ে তাকে আদর করায় ব্যস্ত সারহান।জাবিন ঠিক যতটা সারহানকে ঘৃণা করে ঠিক ততটাই তিতিকে ভালোবাসে সারহান।যখনই সারহান বাড়িতে আসে তিতির জন্য কিছু না কিছু নিয়েই আসে।জান্নাহ্ এর মন আন্দোলিত হয়।তার ভাবনা,নিজের সন্তানকেও ঠিক এতোটাই ভালোবাসবে তো সারহান!

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here