জান্নাহ্ “পর্বঃ৫০

0
3557

#জান্নাহ্
#পর্বঃ৫০
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

রোদের তপ্ততায় ইহতিশামের নাভিশ্বাস।তবুও দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তমার এক ঝলক পাওয়ার জন্য।মেহনাজদের বাড়ির পাশেই যে বিশাল বটগাছ তার ছায়াতেই দাঁড়িয়ে আছে ইহতিশাম।ঘন্টা ধরে আজ তিনদিন এমনভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে ইহতিশাম।মেহনাজদের বাড়ির সামনেই সূর্যের প্রখর তাপমাতার মধ্যে দাঁড়িয়ে শরীর গলিয়েও মন গলাতে পারেনি মেহনাজের।বাড়ির পাশের বাগান থেকে বেড়ার ফাঁক দিয়ে রোজ নিয়ম করে ইহতিশামকে দেখে মেহনাজ।আর তাকে দেখেই তাপে ছড়িয়ে পড়া ইলেকট্রনের মতো বিক্ষিপ্ত হতে থাকে মেহনাজ রাগ।

দুপুর রোদে জ্বলে পুড়ে মাত্রই বটগাছের নিচে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ইহতিশাম।আজ আর সে ফিরবে না।যতক্ষন না পর্যন্ত সে তার কথা ব্যক্ত করতে পারবে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে।
মেহনাজদের বাড়ির দরজাটা কাঠের তৈরি।টিনের উপর আড়াআড়ি করে কাঠ লাগিয়ে তার দুটো পাল্লা করে মাঝে ছিটকিনি দেওয়া যেমনটা সাধারণ ঘরবাড়ির হয়ে থাকে।মেহনাজের তপ্ত দেহ যেনো আরো জ্বলে উঠলো ইহতিশামকে এখনো না যেতে দেখে।চঞ্চল পা তড়িৎ বেগে বাড়িয়ে বটগাছ তলায় এসে স্থির হয়।ক্ষোভিত গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে—

“কেন বারবার এখানে আসছো তুমি?তোমাকে না বাড়ন করেছি।”

ইহতিশাম বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিলো।কোমল গলায় বললো–

“কথাতো বললে নাজ।এতোটা দহন ক্রিয়ায় জ্বালিয়েও না আমায়।অনেক তো পুড়ালে,এইবার না হয় একটু প্রেমের বর্ষণই করাও।”

তেতে উঠে মেহনাজ।স্বশব্দে বলে উঠে—-

“প্লিজ,আর কোনো কথা শুনতে চাই না আমি।যা ছিলো তা শেষ অনেক আগেই।আর কিছু হওয়ার বাকি নেই।”

ইহতিশাম করুণ গলায় বললো—

“একবার আমাকে বলার সুযোগ তো দাও।”

ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছের মতো ইহতিশামের বুকে পড়ে মেহনাজ। তার শার্ট খামচে ধরে বুক কাঁপিয়ে কেঁদে বললো—

“কেন এমন করলে?কেন ধোঁকা দিলে আমায়?

ইহতিশাম আলতো হাতে জড়িয়ে নেয় মেহনাজকে।তার বুকটা যেনো অদ্ভুত শীতলতায় অাচ্ছন্ন হলো।মখমলে গলায় প্রত্যুক্তি করে বললো—

“আমি তোমাকে ধোঁকা দেয়নি নাজ।আমি আজও ঠিক ততটাই তোমায় ভালোবাসি যতটা প্রথম দেখায় বেসেছি।যা হয়েছিলো তা আমাদের ভাগ্যের দোষ।”

মেহনাজ ইহতিশামের বুক থেকে মাথা উঠায়।কান্না মিশিয়ে অভিমানি গলায় বললো—

“এখন ভাগ্যের দোষ কেন দিচ্ছো?সেদিন এমন কেন করলে?

ইহতিশাম বিগলিত গলায় দৃঢ় হয়ে বললো—

“যা দেখেছো ভুল দেখেছো ।”

মেহনাজ ভ্রু ক্রুটি করে।কান্নার ফলে তার চশমাটা ঘোলা হয়ে যায়।ইহতিশাম ধীর হাতে তা খুলে নিয়ে একটা টিস্যু দিয়ে মুছে আবার মেহনাজের চোখে লাগিয়ে দেয়।মেহনাজ তার কান্নার দলা গিলে নেয়।সম্পর্কের শুরু থেকেই ইহতিশাম যত্নশীল ছিলো তার প্রতি।কিন্তু হঠাৎ সবকিছু ছন্নছাড়া হয়ে গেলো।

বটগাছে নিচে বসে আছে দুইজন।গাছের পাতার ফাঁক ফোকর দিয়ে সূর্যের তীর্যক রশ্মি ভেদ করে চলে আসছে।গাছের ডালের ছায়া পড়েছে মাটিতে।মেহনাজ নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে।মৃদু গলায় বিড়বিড় করে বলছে ইহতিশাম—

“আসলে ওর সাথে অনেক বছরের টানাপোড়েন।একটা ঘটনার জের ধরে ও আমার উপর ক্ষেপে আছে।তাই সেদিন ওই ছবিগুলো ইডিট করে তোমার কাছে পাঠিয়েছে।আমরা সবাই একটা পার্টিতে ছিলাম।ড্রিংস করেছিলাম।কিন্তু লিমিট ক্রস করিনি।মেয়েটা মাত্রাতিরিক্ত নেশাগ্রস্থ ছিলো।ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলাম।এর বেশি কিছুই না।তুমি সেদিন আমার পুরো কথা না শুনেই আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে।কতো খুঁজেছি তোমায় আমি।পাইনি।”

মেহনাজ স্থবির হয়ে রইলো।এই ছোট্ট ঘটনায় সে যে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে।ইহতিশাম ঘাড় বাকিয়ে সরব দৃষ্টিতে তাকালো।স্মিত গলায় বললো—

“ক্ষমা করবে না আমাকে?

মেহনাজ দু’ফোটা চোখের পানি ফেললো।থমথমে গলায় বললো—

“আমার সেই অধিকার নেই ইহতিশাম।আমি তোমার যোগ্য নই।”

ভ্রু কুঁচকে ফেললো ইহতিশাম।গভীর সুরে বললো—

“এমন বলছো কেন?

হঠাৎ করেই ঝমঝম করে কেঁদে ফেলে মেহনাজ।বটতলায় যেনো ঝড় বইতে শুরু হলো।ব্যগ্র হয়ে বুকের সাথে মেহনাজকে চেপে ধরে ইহতিশাম।উদ্বেলিত গলায় বললো—

“শান্ত হও।কী হয়েছে খুলে বলো আমাকে।”

মেহনাজ তীক্ষ্ম সুরে ইহতিশামের হাতা খামছে ধরে বিলাপ করতে থাকে।কাঁদতে কাঁদতে গলা বসে আসে তার।ইহতিশাম হাত বুলাতে থাকে মেহনাজের মাথায়।

কাকের কর্কশ আওয়াজ ছন্দ তুলে নিরাক পরিবেশে।বেশ কিছুক্ষন কান্নার পর একটু ধাতস্থ হয়ে মেহনাজ ধরা গলায় বললো—

“তোমাকে ভুল বুঝে আমি চট্রগাম চলে গিয়েছিলাম।সেখানে একটা নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারে কোর্স করছিলাম।সেখানে আমার সাথে পরিচয় সীমানের সাথে।ও একজন ফটোগ্রাফার ছিলো।অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই কেনো যেনো ওকে ভালোবেসে ফেললাম আমি।রোজ হোস্টেলের বাইরে ঘন্টা ধরে আমার অপেক্ষা করতো।আমি ক্লাস শেষ করে আসতাম।আমার ছোট ছোট সব আবদার আমার বলার আগেই পূরণ করতো।কী থেকে কী হয়ে গেলো আমি জানি না।তোমার দেওয়া ধোঁকার পর আমি পুরো ভেঙে পড়েছিলাম।সবটা যেনোও সীমান আমাকে মেনে নিয়েছে।নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।উড়তে শিখিয়েছে।কিন্তু পরক্ষনেই আমার সেই সবকিছু এক নিমিষে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে সীমান।নিজের স্বার্থসিদ্ধর পর হাওয়া হয়ে যায়।কোথায় থাকে,কোথায় কাজ করে কিচ্ছু জানি না আমি।ওকে খোঁজার কোনো উপায়ই ছিলো না আমার কাছে।”

ঝর্ণার বেগে কাঁদতে থাকে মেহনাজ।ভালোবেসে সতিত্ব হারিয়ে সে এখন ভাঙা আয়নার মতো।তাতে মুখচ্ছবি তো দেখা যায় কিন্তু তাতে অকল্যাণ বয়ে আনে।
ইহতিশামের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।মস্তিষ্কের রগগুলো টনটন করে যেনো ছিঁড়ে যাবে।হাতের রগগুলো ফুলে ফেঁপে উঠে।ফোঁস ফোঁস করতে থাকে ইহতিশাম।ভাবতেই ঘৃণা লাগছে।তার প্রিয়তমার শরীরে অন্য কারো স্পর্শ।ছিঃ!

বেশ কিছুক্ষন মৌনতায় কাটে দুইজনের।মেহনাজ নিজের অপরাধে অপরাধি।ইহতিশাম নিজের ভুলে সাজাপ্রাপ্ত।কিন্তু সে সত্যিই এই মেয়েটিকে ভালোবাসে।সত্যিই ভালোবাসে।হুট করে অবাক কান্ড করে ইহতিশাম।বুকের পিঞ্জিরায় ঝাপটে ধরে মেহনাজকে।আশ্বস্ত করে সকল ভুল,দুঃস্বপ্ন ভুলে তারা নতুন করে শুরু করবে।মেহনাজ রাজী নয়।সে এই মানুষটাকে ঠকাতে চায় না।কিন্তু নাছোড়বান্দা ইহতিশাম।শরীরকে নয় হৃদয়কে ভালোবেসেছে সে।আর এই হৃদয়ের পরিশুদ্ধতা হৃদয় দিয়ে করবে।

মেহনাজের বাবা ইটালি গিয়েছে তার মাকে নিয়ে।দুই দিন আগেই তার অপারেশন হয়েছে।কৃত্রিম হাড় বসিয়েছে হুসনার পায়ে।হয়তো সে হাঁটতে পারবে।ইহতিশাম দেয়ালের সাথে চেপে জানালা দিয়ে নির্নিমেখ তাকিয়ে আছে।হাতে তার ধোঁয়া উড়ানো কফি।মেহনাজ শান্ত হয়ে বিছানায় বসে আছে।কফিতে চুমুক দিয়েই ইহতিশাম সন্দিহান গলায় বললো–

“সীমানের কোনো ছবি আছে তোমার কাছে?

মেহনাজ অস্ফুট স্বরে বললো—-

“নাহ।”

“ও ফটোগ্রাফার ছিলো?

“হুম।”

ইহতিশাম চট করে কিছু একটা ভাবলো।পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা ছবি দেখালো মেহনাজকে।তড়ক করে উঠে মেহনাজের হৃদপিন্ড।এ তো সীমান!

থতমত খেয়ে বললো—

“তুতুতুমি এই ছবি কোথায় পেলে?ওকে চেনো তুমি?

এই এক লাইনেই যেনো গা ছাড়া দিয়ে উঠলো ইহতিশাম।বিছানায় বসে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো মেহনাজের দিকে।ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহনাজ।অতি শীতল গলায় ইহতিশাম বললো—-

“ও সীমান নয়।ও সারহান।আর ও কোনো ফটোগ্রাফার নো।একজন জার্নালিস্ট।”

ধপ করে নিচে বসে পড়ে মেহনাজ।ঘন ঘন শ্বাস ফেলতে ফেলতে কম্পনরত গলায় বললো—

“সাআআরহান!সারহান জেইদি?জান্নাহ্ এর স্বামী?আমি আজ পর্যন্ত ওর স্বামীকে দেখিনি।শুধু শুনেছি।ওরর বিয়ের পর আর আসিনি বাড়ি।”

ইহতিশামের কানে বাঝতে থাকে সেই কথা।সারহান বলেছিলো সে বদলা নিবে,”না গিলতে পারবে না উগরাতে”।তাই ই করলো সারহান।বদলা নিলো।

দুই মানব-মানবীর ধূ ধূ নিঃশ্বাসের আওয়াজ বাতাসে আলোড়ন তুলতে লাগলো।ইহতিশাম নিজের মাথার চুল মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে।চোখ দুটো লালা হয়ে রক্তিম রঙ ধারণ করেছে।নাক ফুলিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলছে।এইভাবেও কেউ বদলা নেয়?
,
,
,
ছোট্ট মুখটা ম্লান করে ডিভানে বসে আছে জান্নাহ্।তার সামনেই তার প্রাণ অধীর আগ্রহে বসে আছে কখন কথা বলবে তার রজনীগন্ধা।জান্নাহ্ ভাবতেই পারছে না শুভ্রা এমন কাজ করতে পারে!

গোধূলিয ম্লান আলো তার পাট চুকিয়েছে অনেক আগেই।নিশুথি রাত ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে ঘড়ির কাটার সাথে।সময় চলে তার আপন গতিতে।কিন্তু সেই সময় বড্ড বেইমান।কাউকে দেয় আকাশসম খুশি আর কাউকে দেয় সমুদ্রের অগণিত জলরাশি সমান কষ্ট।কেউ তা দলিয়ে পা দিয়ে পিষে ফেলে সামনে এগুতে পারে কেউবা নিজেই নিষ্পেষিত হয় সেই মায়াজালে।

বিয়ের পর থেকে শুভ্রা জান্নাহ্কে নিজের ছোট বোনের মতো আগলে রেখেছে।সারহানের সব ব্যাপারে অবগত করেছে।কিসে সারহান খুশি হয়,কিসে সে রাগ করে।কিন্তু এতো কেয়ারিং এর মাঝে এতটা ঘৃণা চেপে রেখেছে মনে যার জন্য আজ তার অনাগত সন্তানকে মাতৃগর্ভেই প্রান দিতে হলো!

সারহান নির্বিকার গলায় বললো—

“কথা বলবেন না রজনীগন্ধা!শাস্তি দিচ্ছেন আমায়?

জান্নাহ ছোট্ট ঢোক গিলে আলতো গলায় বললো–

“বাড়ি যাবেন না সারহান?

তাচ্ছল্য হাসলো সারহান।উপহাস করে বললো—

“কার বাড়ি যাবো?ওই বাড়ি আমার নয় রজনীগন্ধা।আমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে তারা।এতো ভালোবাসা আমি চাইনি রজনীগন্ধা।”

জান্নাহ্ এর চোখ ভরে আসে।উপচে পড়ে সাগরের নোনতা জল।ধরা গলায় বললো—

“আপনি এমন কেন করলেন?যদি শুভ্রা আপুর কিছু হয়ে যেতো!

তাচ্ছিল্য সুরে বলে সারহান—

“আমি এতোটাও নিষ্করুণ নই।এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিলো সত্যিই ওই মানুষটার জানটা আমি ছিনিয়ে নেই।যে আমার ছোট্ট সোনাকে বাঁচতে দেয়নি।কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে রেখেছি ওই দুইজন বৃদ্ধ মানুষের জন্য যারা হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা দিয়েছে আমায়।এক গলিত পঁচা নর্দমার সারহানকে বুকে তুলে নিয়েছে।ওই ছোট্ট দুটি আকুল সত্ত্বার জন্য যারা আমাকে মামা বলে ডেকেছে।আমি তো আপনাকে ছাড়া আমার একটা নিঃশ্বাসও কল্পনা করতে পারি না।তাহলে সেরাজ কী করে তার অর্ধাঙ্গীনিকে ছাড়া বাকি জীবন কাটাবে!তাই ক্ষমা করেছি তাকে আমি।আল্লাহ্ নাকি সবাইকে তার পাপের শাস্তি দেয়।আমি তার উপর এই দায়িত্ব ন্যস্ত করলাম।”

বারকয়েক নাক টানে জান্নাহ্।জান্নাহ্ এর সামনে আসন পেতে মেঝেতে বসে থাকা সারহান ধীরগতিতে হাঁটু মেঝেতে ঠেকিয়ে উঁচু হয়।জান্নাহ্ এর নাকের ডগায় অধর স্পর্শ করায়।নাকের নিচে উপরের ঠোঁটের মাঝ বরাবর যে দ্বিখন্ডিত ভাঁজ আছে তাতে ছোট্ট চুমু খায় সারহান।জান্নাহ্ এর নরম তুলতুলে দুই গালে শুষ্ক ঠোঁটের স্পর্শ আঁকে ।আঁজলায় নিয়ে নেয় জান্নাহ্ এর মুখটা।অতি সন্তর্পনে মৃদু কামড় বসায় জান্নাহ্ এর নিচের অধরপল্লবে।ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আদুরে গলায় বললো—

“আপনাকে অনেক আদর করতে ইচ্ছে হচ্ছে রজনীগন্ধা।রেস্ট নিন।”

সারহান উঠে যেতে চাইলে তার হাত ধরে কাতর গলায় বললো জান্নাহ্—

“সারহান!

সারহান চোখে হেসে গাঢ় গলায় বললো–

“আপনাকে যে পুরো সুস্থ হতে হবে রজনীগন্ধা।এই প্রমত্তা নদীর উপচে পড়া ঢেউ তো আপনাকেই সামলাতে হবে।তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here