#জান্নাহ্
#পর্বঃ৫৭
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
বিছানার সাথে মাথাটা হেলান দিয়ে গা ছাড়া দিয়ে টানটান হয়ে আছে জান্নাহ্।বিছানার সাইড টেবিলের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে আগ্রহী চোখ জোড়া আবদ্ধ করে রেখেছে রাফাত জান্নাহ্ এর ওই কোমল মুখের দিকে।নিরুঙ্কুশ চেয়ে আছে সে।জান্নাহ্ নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে।
রাফাতের মস্তিষ্ক জুড়ে আলোড়ন তুলে দিলো।তার ছোট্ট রেড চেরি এতোটা সহ্য করেছে ভাবতেই তার গা কাঁটা দিয়ে উঠছে।ভেতরের মানুষটা কাঁদছে হু হু করে।নিষ্কম্প চোখে তাকিয়ে আছে রাফাত।ধীর হাতে গালের পানিটা মুছে জান্নাহ্ বললো—
“বিশ্বাস করো রাফাত,আমি মাম্মাকে মারতে চাইনি।আমি…।”
শব্দ করে কেঁদে ফেলে জান্নাহ্।রাফাত জান্নাহ্ এর হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললো—
“এরপর কী হয়েছে?
জান্নাহ্ কান্নার তোড় গিলে একটু ধাতস্থ হয়ে বললো—
“মামা পুলিশকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে অ্যাকসিডেন্ট কেস সাজিয়ে দেয়।সবার জানাজানি হলে আমাকে নিয়ে যায় তার সাথে।আর বাবার অবর্তমানে হসপিটালটাওটা বন্ধ করে দেয়।”
রাফাত ব্যগ্র হয়ে কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে—-
“সারহান!সারহান কী করে এলো এই সবকিছুর মাঝে?
জান্নাহ্ শান্ত হয়।তার চোখে মুখে ভরসার চিহ্ন ফুটে উঠে।ভাঙা ভাঙা গলায় বললো—
“বাবা খোঁজ নিয়েছিলো।সারহান ওদের ডিপার্টমেন্টের বেস্ট ছিলো।মামাকেও বলেছিলো তার সম্পর্কে।মামাকে বলেওছিলো তার বাড়ির খোঁজ নিতে।কিন্তু তার আগেই…।”
রাফাতের চোখ জোড়া আরো প্রশ্বস্ত হলো।তটস্থ হয়ে বললো—
“এরপর?
“আমিই মামাকে বলেছিলাম আমার বিয়ে দিয়ে দিতে।মামা রাজী হয়নি।আমিই তাকে জোর করি।সারহানকে আমি বাবার জায়গায় বসিয়ে আমার শেষ আশ্রয় মেনেছি।মামা অনেক কষ্ট তার বাড়ির ঠিকানা বের করে।বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।ঘটক কে এও বলে বিয়েতে যৌতুকও দিবে যেহেতু মেয়ের কেউ নেই।তারা গ্রামের মানুষ টাকার লোভ সামলাতে পারবে না।সারহান নাকি প্রথমে রাজি হয়নি।কিন্তু তার বাবা,মা জোর করে শুধু আমাকে দেখানোর জন্য পাঠায়।সারহান প্রথম দেখায় আমাকে পছন্দ করে।আর বিয়েতে রাজি হয়।”
রাফাত অসহিষ্ণু গলায় বললো—
“সারহান তোমাকে চিন্তে পারে নি।”
জান্নাহ্ সহজ গলায় প্রত্যুক্তি করে—
“নাহ।কী করে চিনবে?সে তো আমাকে একবারই দেখেছে।তখন তো আমি সাড়ে চৌদ্দ বছরের ছিলাম।চোখে লেন্স ছিলো।আমি আমার চুল কেটে ছোট করে ফেলেছিলাম।নর্মাল ড্রেস ছেড়ে পড়ছিলাম শাড়ি।ছয় মাসে নিজেকে বদলাতে একটু কার্পণ্য করি নি আমি।”
লম্বা শ্বাস নিলো জান্নাহ্।রাফাত ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।মাখনের মতো শরীরে কখনো ভুলেও হাত লাগায়নি রাফাত।সেই ছোট্ট রেড চেরি এতো কচি বয়সে বিয়ে করে নিলো।রাফাতের ভেতরকার মানুষটি হঠাৎ বিক্ষিপ্ত হাসলো।তাচ্ছিল্য সুরে তাকে বললো,”একবার কেন বলিসনি তুই ভালোবাসিস তোর রেড চেরিকে?রাফাতের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে বুক ভাঙা দীর্ঘশ্বাস।যা তার এই জন্মের প্রাপ্তি।কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে রাফাতের।গুমোট বাঁধা কষ্ট গুলো একে একে আলগা হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে তার সমস্ত দেহপিঞ্জরে।তার শরীরে যন্ত্রণা হচ্ছে।অসহনীয় যন্ত্রণা।ক্রমশ নিজেকে ভারী অনুভূত হলো রাফাতের।
জান্নাহ্ দুটো ঢোক গিললো।তার গলা শুকিয়ে এসেছে।ছোট্ট টেবিল থেকে পানি নিয়ে তা পান করে।পরিষ্কার গলায় বললো—
“সবকিছুই তো ঠিক ছিলো।সারহান সত্যিই আমাকে ভালোবেসেছে।বাবার মতো করে আগলে রেখেছে।আমাকে খাইয়ে দিতো।আমাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলো।ক্লাস,টিউশন কোনো কিছুতে বাঁধা দেয়নি।সারহানের বাবা আমাকে নিজের মেয়ের মতো করে ভালোবাসেন,আম্মাও আমাকে কম আদর করেন নি।শুভ্রা আপু নিজের বোনের মতোই ভালোবাসতো।জাবিন তো ছিলো তোমার অনুরূপ।আমার বন্ধু।তিতি আমাকে পরীমা বলে ডাকতো।যতটা হারিয়েছে তার চেয়ে বেশি পেয়েছি।ভালোই তো ছিল সব।কিন্তু!কিন্তু আমার কপালে যে সুখ সয় না।”
বুক কাঁপিয়ে কেঁদে উঠে জান্নাহ্।উন্মাদের মতো নিজের চুল খামচে ধরে বললো–
“সব শেষ হয়ে গেলো আমার।সব।”
রাফাত অধর ছড়িয়ে শ্বাস নেয়।জান্নাহ্ এর মাথাটা আলগোছে বুকের সাথে চেপে ধরে বিনয়ী গলায় বললো—
“শান্ত হও।কী হয়েছে খুলে বলো আমায়।”
জান্নাহ্ পাগলের মতো রাফাতে হাত খাবলে ধরে।জান্নাহ্ এর সমস্ত মুখ ভেজা জবজবে।গলার দিকটাও ভিজে আছে চোখের জলে।চোখ দুটো ফুলে আছে।ফ্যাকাশে হয়ে গেছে ফর্সা মুখটা।
“জানো রাফাত,সারহানকে আমি সত্যিই ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি।আমার সারহানও আমাকে খুব ভালোবাসে।সে যা বলেছে আমি তাই করেছে।যেভাবে চেয়েছে সেভাবে তার চাহিদা পূরণ।বিনিময়ে তার বুকে জায়গা দিয়েছে আমাকে।কিন্তু তবুও এমন কেন হলো।আমার ভালোবাসা মিথ্যে কেন হলো!ওরা সবাই আমার সারহানকে কেন আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চায়!
অশান্ত হয়ে উঠে জান্নাহ্।তার পুরো শরীরে কম্পন শুরু হয়েছে।রাফাত শক্ত হাতে জান্নাহ্কে চেপে ধরে।জান্নাহ্কে থামানো যাচ্ছে না।তার বুকের ভেতর থেকে কেউ যেনো তার হৃদপিন্ডে বের করে নিয়ে আসছে।সেই যন্ত্রণায় যেনো সে পুরো ধরা কাঁপিয়ে ফেলছে।জান্নাহ্ একটু কান্না কমতেই বলে—
“দুই মাস পর যখন আমি মামার কাছে আসি তখন মামা বলে সে নাকি সারহানকে কোন মেয়ের সাথে দেখেছে।আমি বিশ্বাস করিনি।আমার সারহান আমাকে ধোঁকা দিতে পারে না।মামা আরো খোঁজ নেয় এবং তা সত্য হয়।
কিন্তু তবুও আমি বিশ্বাস করি নি।কী করে করি!এতো প্রেম,এতো ভালোবাসা!সব মিথ্যেতো ছিলো না।”
জান্নাহ্ ফুঁফাতে থাকে।রাফাত প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।এ কোন রেড চেরিকে সে দেখছে।এইটুকু বয়সেই কাউকে কেউ এতো ভালোবাসতে পারে!জান্নাহ্ কাতর গলায় বলে–
“তোমার মনে আছে রজত আঙ্কেলের কথা?আমাদের ড্রাইভার।”
রাফাত ছোট্ট করে বললো—
“হুম।”
“শায়িখ ভাইয়ার বাবা সে।আঙ্কেল সবসময় বলতো তার ছেলে বড় চাকরি করে।শায়িখ ভাইয়া সারহানের অ্যাসিস্টেন্ট ছিলো।আঙ্কেল আমাকে অনেকবার তার ছেলের ছবি দেখিয়েছিলো।শায়িখ ভাইয়ার মাকে ছেড়ে আঙ্কেল দ্বিতীয় বিয়ে করে।সেখানে তার কোনো সন্তান ছিলো না।তাই তিনি তাদের কাছে ফেরত যেতে চান।কিন্তু শায়িখ ভাইয়া নাকচ করেন।একটা অ্যাকসিডেন্টে শায়িখ ভাইয়ার বোন মারা যায়।তার মা হসপিটালাইজড হয়।সে প্রায়ই আসতো সারহানের সাথে।একদিন আমি তাকে সাহস নিয়ে সব খুলে বলি।নিজের বোনের জায়গায় বসায় সে আমাকে।আর সব খুলেও বলে।
সামিরাকে আমি মারতে চাইনি।মামাকে দিয়ে ওকে আমার আর সারহানের বিয়ের কথা বলায়।কিন্তু সামিরা সারহানকে ছাড়ার বদলে আমাকেই ডিবোর্স দিতে বলে।তার ধারণা আমি তো গ্রামের মেয়ে আর সে মডার্ণ।কিন্তু সারহান আমাকে ডিবোর্স দিতে চায়নি।সে আমাকে কিছু জানায়ওনি এই ব্যাপারে।সামিরা মামার কথা বলেনি।কারণ মামা তার পরিচয় দেয়নি।কারো মাধ্যমে আমার আর সারহানে ছবি সামিরাকে পাঠায়।সামিরা ব্ল্যাকমেল করতে থাকে সারহানকে।সামিরার বাবার অধীনেই কাজ করতো সারহান।সেদিন ওই বাংলোতে সারহানের যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু কোনো কারণে যেতে পারেনি তা আমাকে শায়িখ ভাইয়াই জানায়।আমি মামাকে নিয়ে গিয়েছিলাম।ঠিক আমার আসল রূপে।কী করবো বলো,আমি আমার সারহানকে হারাতে পারবো না।সামিরা আমার কথা তো শুনলোই না উল্টো আমাকে মারার জন্য উঠেপড়ে লাগে।মামা বাধ্য হয়ে তাকে আঘাত করে।আর আমিও তখন।”
ঝরঝর করে অশ্রু বিসর্জন দেয় জান্নাহ্।রাফাতের হৃদপিন্ড লাফিয়ে উঠে।কী বলে তার রেড চেরি!খুন!যেই হাতে মানুষ বাঁচানোর প্রতিজ্ঞা করেছিলো সেই হাতে খুন!
জান্নাহ্ মিইয়ে গলায় বললো—
“কী করতাম আমি!আমার সারহানের পুরো ক্যারিয়ার শেষ করে দিতো।কেন ছাড়তে চাইছিলো না সে?কেন?আমি বাধ্য হয়েই।আমার কিছুই করার ছিলো না রাফাত।নিজেকে,মামাকে আর সারহানকে বাঁচাতে আমাকে এই ঘৃন্য কাজ করতে হলো।”
থামলো জান্নাহ্।সমস্ত রুমে থমথমে ভাব বিরাজ করতে লাগলো।এসির ভোঁতা আওয়াজে ঝিমিয়ে উঠে মস্তিষ্ক।গভীর নিঃশ্বাসের আলোড়ন ঘর কাঁপিয়ে দিচ্ছে।একে অপরের দিকে স্থির চাহনিতে আবদ্ধ দুইজন।
“তিথি গ্রাম থেকে এসেছিলো।একটা পাবলিক ভার্সিটিতে জার্নালিজমে পড়তো।সারহান ছাড়াও আরো অনেক ছেলের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো।ছেলেদের সাথে প্রতারণ করে তাদের থেকে টাকা হাতাতো।ওই স্লাটের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।”
জ্বলে উঠে জান্নাহ্ এর চোখ।হিংস্র হয়ে উঠে তার মুখভঙ্গি।জান্নাহ্ সরব গলায় আবার বললো—
“মেঘনোলিয়া বিবাহিত সারহান জানতো না।যখন যেনেছে তখন সরে আসতে চাইছিলো।জ্যাকব স্যার ম্যামকে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলো।কিন্তু সে সারহানকে ছাড়বে না।শায়িখ ভাইয়া মেঘনোলিয়া ম্যামের কথা জানতো না।কারণ সারহান গ্রামে আসলেই তার সাথে দেখা করতো।আমাকে জাবিন বলেছিলো মেঘনোলিয়ার কথা।আমি শায়িখ ভাইয়াকে জানিয়েছি।মামাকেও সেদিন আসতে বলেছি।তাকে মারতে আমার বেশি বেগ পেতে হয়নি।সে নিজেই আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো।”
একটা শীতল নিঃশ্বাস ফেলে জান্নাহ্।রাফাতের শ্বাস আটকে আসছে।কী বলছে এইসব!এই ও কী সম্ভব !এক ষোড়শী মেয়ে এতোটা নিঁখুত খুনী!শুধুই ভালোবাসার জন্য?
জান্নাহ্ গুমোট গলায় বললো–
“শ্রীজা সারহানের বন্ধু ছিলো।সে সব জানতো।আমি এনজিওতে যেদিন যাই সেদিন জানতে পারি।সে আমার জায়গা নিতে চায় আমার সারহানের জীবনে।কেন তাকেই পেতে হবে তাদের!তাই আমি তাকেও ছাড়িনি।সারহান শুধু আমার,শুধু আমার।আমার সারহানের ভাগ আমি কাউকে দিবো না কাউকে না।”
ফোঁস ফোঁস করতে থাকে জান্নাহ্।তার স্বরনালী ফেঁপে উঠেছে।চোখে মুখে অদৃশ্য আক্রোশ।দুই চোখের অগ্নিনালায় যেনো ঝলসে দিবে সব।
চুপ করে থাকে জান্নাহ্।যেনো তার দেহে প্রাণ নেই।রাফাত অনিমেষ চেয়ে আছে জান্নাহ্ এর দিকে।তার ছোট রেড চেরি এতোটা ভয়ংকর !ভাবতেই অন্তরাত্না কেঁপে উঠে তার।
আচমকাই বিলাপ করে উঠে জান্নাহ্।খসখসে গলায় বললো—
“সবকিছুর জন্য আমিই দায়ী।আমি যেখানে যাই সেখানে সবকিছু শেষ হয়ে যায়।আমার জন্যই বাবা মাম্মার সাথে ঝগড়া করেছে।আমার জন্যই বাবা মারা গিয়েছে।আমিই মাম্মাকে মেরে ফেলেছি।আমার জন্যই আমার সারহান আজ এতোটা কষ্ট পেয়েছে।না আসতাম আমি তার জীবনে।সে থাকতো তার মতো।বেঁচে থাকতো।আজ আমি তাকে জীবন্ত মেরে ফেলেছি।আমার জন্যই সে তার পরিচয় হারিয়ে ফেলেছে।আমি,আমিই দোষী।আমার মা হওয়ার কারণেই তার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।এতো পাপ করেছি আমি।ভালোই হয়েছে এই জন্যই আল্লাহ্ আমার সন্তানকে কেড়ে নিয়েছে।আমার সারহান একটা সুযোগ চেয়েছিলো আমার কাছে।আমি পারি নি তাকে বাবা হওয়ার খুশি দিতে।আমার পাপ আমার সব শেষ করে দিলো।অন্ধকারে ঠেলে দিলো আমার সারহানকে আবার।আমি সত্যিই পাপী।সত্যিই পাপী।আমার মরে যাওয়া উচিত,মরে যাওয়া উচিত।তুমি মেরে ফেলো আমাকে রাফাত।তুমি মেরে ফেলো।আমি তোমাকেও কষ্ট দিয়েছে।সবাইকে শুধু কষ্টই দেই আমি।”
জান্নাহ্ এর বুক ফাঁটা ক্রন্দনে বদ্ধ ঘরের বাতাস যেনো ভারি হয়ে এলো।নিজেকে অসাঢ় মনে হচ্ছে রাফাতের কাছে।কী বলবে সে!কাকে বলবে সে!
জান্নাহ্কে এইবার আর থামালো না রাফাত।দীর্ঘ দিনের জমে থাকা কষ্ট আজ যেনো বিগলিত হলো।
জান্নাহ্ কাতর চোখে তাকিয়ে অসহায় গলায় শুধায়—
“তুমি আমাকে ক্ষমা করবে রাফাত?
রাফাত তার শ্বাস ফিরে ফেলো।একটু নড়েচড়ে মখমলে গলায় প্রত্যুত্তর করে—
“তোমার প্রতি আমার কোনো রাগ নেই ছিলো অভিমান।ভালোবাসায় তো একটু অভিমান জায়েজ।”
জান্নাহ্ নাক টানতে থাকে।নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে তার।সে তার পাপের সাজা পেয়েছে।হারিয়েছে তার সন্তানকে।রাফাত গাঢ় গলায় বলে উঠে—
“ইহতিশাম ইশাকের কাজিন।সে এই কেসের ডিকেটটিভ ইনভেস্টিগেটর।আমার সাথে দেখা করেছে সে।আমি তাকে তোমার সব কথা বলেছি।যদি ইহতিশাম জানতে পারে এই খুনগুলোর সাথে তুমি জড়িত।তাহলে?
জান্নাহ্ বিক্ষিপ্ত হাসলো।হেয়ালি গলায় বললো–
“আর কী হবে!আমার ফাঁসি হবে।আমার মরে যাওয়াই উচিত।আমি মরে গেলে আমার সারহান বেঁচে যাবে।তাকে আমি অন্য কারো সাথে দেখতে পারবো না।এর চেয়ে ঢের ভালো আমি মরে যাই।আমি জীবিত থাকতে তো আমি তার ভাগ কাউকে দিতে পারবো না।”
রাফাত খটমটিয়ে উঠে নাকের পাটা ফুলিয়ে বললো—
“এমন কিছুই হবে না।আমি তোমার কিছুই হতে দিবো না।”
“কী করে বাঁচাবে আমাকে তুমি? আমি তো খুনী।আমার শাস্তি হওয়া উচিত।”
“যে শাস্তি পেয়েছো এর চেয়ে বড় শাস্তি আর নেই।আর এতে তোমার একার দোষ নেই।আমি আছি।তোমার কিছু হবে না।”
“আমার সারহানকে ফিরিয়ে দিতে পারবে আমায়?সারহানকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।তাকে ছাড়া আমি একটা নিঃশ্বাসও নিতে পারবো না।”
রাফাত তার শুকনো ঠোঁট জোড়া জীভ দিয়ে ভিজিয়ে ভরসার সুরে বললো—
“তোমার সারহান তোমারই থাকবে।আমি ব্যবস্থা করবো সব।এখন থেকে আমিও তোমার সাথে আছি।”
ম্লান হাসে জান্নাহ্।চোখের জলের দাগ লেগে আছে তার মুখে।সমস্ত ঘরে চোখ বুলিয়ে বললো—
“ঘরের এই অবস্থা করেছো কেন? আর এমন জংলীর মতো হয়ে আছো কেন?”
ঝরঝরে হাসে রাফাত।খেয়ালিপনায় বললো—
“তুমি এসে ঠিক করবে বলে।ভালো না হয় নাই বাসলে বন্ধু তো হতে পারো।”
জান্নাহ্ সংকীর্ণ হাসে।নরম গলায় বললো—
“যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।আযমর এইসব জংলী অবতার ছেড়ে মানুষ হও।”
মুখভর্তি হাসে রাফাত।তার ঠোঁটে টান পড়ে।আজ এতোদিন পড়ে হাসায় অস্বস্তি হয় অধরে।চট করে রাফাত বললো—
“সারহানকে বলে এসেছো?
“নাহ।”
“তাহলে?
জান্নাহ্ উঠে দাঁড়ায়।বিছানার চাদরে হাত লাগিয়ে বলে—
“প্রয়োজন হলে সে নিজেই আমাকে খুঁজে নিবে।তুমি যাও।আমার খিদে পেয়েছে।”
রাফাত ফুরফুরে গলায় বললো—
“ওকে ওকে যাচ্ছি।”
চলবে,,,