#জান্নাহ্
#পর্বঃ৬৭
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
ভেজা চুলগুলো মুছে বিছানায় বসে ইহতিশাম।চোখে,মুখে অরন্যের ন্যায় ক্লান্তি।বুক ফুলিয়ে একটা শ্বাস ফেলে স্থির হয়ে বসে।একটু আগেই সরফরাজের সাথে কথা কাটাকাটি করে এসেছে জান্নাহ্ এর কেস নিয়ে।ইহতিশামের জুনিয়রের সন্দেহ ইহতিশাম ইচ্ছে করেই কেস ধামাচাপা দিতে চাইছে।সরফরাজ ব্যাকুল হয়ে আছে নিজের মেয়ের খুনিকে স্বচক্ষে দেখার জন্য।দরজার পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে মেহনাজ।ইহতিশামের কপালে চিন্তার রেখা দেখে জিঙ্গাসু গলায় বললো–
“কী নিতে এতো চিন্তিত তুমি?
চোখ তুলে নির্জীব চাহনিতে তাকায় ইহতিশাম।খসখসে গলায় বললো–
“কিছু না।”
ইহতিশাম চায় না এই ব্যাপারে আর ঝামেলা হোক।সারহানকে কথা দিয়েছে সে।মেহনাজ ইহতিশামের পাশে বসে স্বাভাবিক গলায় বললো—
“একটা কথা বলবো?
“হুম।”
“ইয়াস বোধহয় স্মোক করে!
ঝট করেই বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকায় ইহতিশাম।তীর্যক গলায় বললো—
“কী বলছো এইসব?
মেহনাজ মিহি গলায় বললো—
“আসলে তোমাকে কয়েকদিন ধরে বলবো ভাবছিলাম।সেদিন ওর ঘর গিয়ে দেখলাম সিগারেটের উটকো গন্ধ।আর আজ যখন ও কলেজে গেলো তখন ঘর গুঁছাতে গিয়ে দেখি বালিশের তলায় সিগারেটের প্যাকেট।”
ফোঁস করে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে ইহতিশাম।কটমটিয়ে উঠে দাঁড়ায়।ভারী গলায় বললো—
“এখন কোথায় ও?
“ঘরেই আছে।গেম খেলছে।”
ইহতিশাম রাগ নিয়ে দু’কদম বাড়াতেই মেহনাজ নরম গলায় বললো—
“বেশি ঝামেলা করো না।মা,বাবা নেই এখন বাসায়।আর ও এখনো ছোট।বন্ধুদের সাথে মিশে হয়তো কৌতূহল বশত নেশায় পড়েছে।বুঝিয়ে বলো।”
দরজায় করাঘাত পড়ে তখনি।মেহনাজ কথা শেষ না করেই সেদিকে তাকায়।ইয়াস তার ছোট্ট মুখটা মলিন করে দাঁড়িয়ে আছে।ইহতিশাম তাকাতেই সপ্রতিভ হয়ে বললো—
“কেউ এসেছে তোমার সাথে দেখা করতে।”
ইহতিশাম রাগাম্বিত গলায় বললো—
“তুই যা।আমি আসছি।”
বসার ঘরে নিমগ্নচিত্তে বসে আছে রাফাত।তাকে দেখেই পুরু ভ্রু জোড়া কুঞ্চি করে ইহতিশাম।চোখে জমা হয় উদ্বিগ্ন প্রশ্ন।রাফাতের দিকে তাকিয়ে জোর গলায় বিস্ময় নিয়ে বললো—
“তুমি !এখানে?
রাফাত ফ্যাকাশে দৃষ্টিতে তাকায়।নিষ্প্রাণ গলায় বললো—
“গতকাল সকালে জান্নাহ্ কল করেছিলো আমাকে।”
ইহতিশাম সানন্দে আগ্রহপূর্ণ হয়ে শুনতে চাইলো।
“তাই নাকি!কেমন আছে জান্নাহ্?
রাফাত নিষ্প্রভ চোখে মেহনাজের দিকে তাকায়।ভারাক্রান্ত গলায় বললো—
” জান্নাহ্ প্রেগন্যান্ট।ফাইভ মানথ রানিং।”
ইহতিশাম প্রসন্ন হেসে উচ্ছলিত গলায় বললো—
“রিয়েলী!ইটস আ গুড নিউজ।”
তৎক্ষণাৎ মেহনাজের তীক্ষ্ম স্বর ভেসে আছে।
“ও,তাহলে সারহান জেইদি তার আসর রঙ দেখিয়েছে!
ভরাট দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় রাফাত।কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে—
“কী বললে?
মেহনাজ তাচ্ছিল্য হাসে।ক্ষুব্ধ গলায় বললো—
“এই জন্য জান্নাহ্কে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছে!যেনো ওর জঘন্য সত্য জান্নাহ্ এর সামনে না আসে।”
রাফাত তিক্ত শ্বাস ফেলে হতাশ গলায় বললো—
“জান্নাহ্ সব জানে মেহনাজ।তবুও ও…।”
খলবলিয়ে বলে উঠে মেহনাজ—
“কী জানে জান্নাহ্?ওর স্বামীর জঘন্য সত্য।যে শুধু নারী দেহেই সুখ খুঁজে বেরিয়েছে।মেয়েদের ধোঁকা দিয়ে তাদের সাথে…।”
মেহনাজের কথা শেষ হওয়ার আগেই জ্বলে উঠে ইহতিশাম।অধৈর্য গলায় বললো—
“কিপ কোয়াইট মেহনাজ।স্টপ দিস ননসেন্স।”
খটমটিয়ে উঠে মেহনাজ।জোর গলায় বলে উঠে—
“কেন চুপ করবো আমি।আমার পুরো জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে ওই সারহান।আর ও নিজেকে সুখী করায় ব্যস্ত!এতো মেয়ের জীবন নিয়ে খেলে এখন ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে জান্নাহ্কে!সারহান কখনো জান্নাহ্কে ডিজার্ব করে না।”
ইহতিশাম প্রদৃপ্ত গলায় বললো—
“কে কাকে ডিজার্ব করে তা নিয়ে তোমাকে না ভাবলেও চলবে।”
কলের পুতুলের মতো সব গ্রোগ্রাসে গিলছে রাফাত।তার মস্তিষ্কের নিউরণে ছুটতে লাগলো একটি কথা,সারহান মেহনাজের জীবন নষ্ট করেছে!তার মানে সারহান মেহনাজের সাথে এমন কিছু করেছে।রাফাতের ভেতরকার প্রেমিকপুরুষ এক মুহূর্তে ছলকে উঠলো।সে কিছুতেই তার রেড চেরিকে এমন একটা নিচু মানুষের সংস্পর্শে থাকতে দিবে না।
রাফাতকে লক্ষ্য করে মেহনাজ তিরিক্ষি গলায় বললো–
“ভালো তো তুমি জান্নাহ্কে বাসতে।ফুফু,ফুপা তো তোমার সাথে জান্নাহ্ এর বিয়ে দিতে চেয়েছিলো।তাহলে ওই সারহান এলো কী করে এইসবে মধ্যে?আর তুমি এতো মেরুদণ্ডহীন কেন?কেউ এসে জান্নাহ্কে বিয়ে করে ফেললো আর তুমি হাত গুঁটিয়ে বসে রইলে?
অসহায় চোখে তাকিয়ে রয় রাফাত।তার ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে।এতোদিনকার চাপা রাখ মুহূর্তেই যেনো আগ্নেয়গিরির মতো ফুটতে শুরু করলো।
দমদমিয়ে বের হয়ে যায় রাফাত।
ইহতিশাম ক্ষেপা গলায় বলে উঠে—-
“কী শুরু করলে তুমি?রাফাতের সামনে এইসব বলার কী দরকার ছিলো?
ঝামটা মেরে বলে উঠে মেহনাজ—
“ছিলো।দরকার ছিলো।সারহানকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।আমাকে কষ্ট দিয়ে ও কী করে সুখী হতে পারে?
ইহতিশামের তপ্ত রাগ নিমিষেই বিগলিত হয়।অসহায় চোখে তাকিয়ে নিরাস গলায় বললো—
“তার মানে আমি তোমাকে সুখী করতে পারি নি?তুমি খুশি নও আমার সাথে?
ব্যস্ত হয়ে উঠে মেহনাজ।নিজের স্বীকারোক্তিতে বললো—
“ইহতিশাম,আমি তা মিন করি নি।”
“তুমি কি মিন করেছো তা আমার বোঝা হয়ে গেছে।আফসোস হচ্ছে আমার মেহনাজ।তোমাকে ভালোবাসা হয়তো আমার জীবনের দ্বিতীয় ভুল।যার খেসারত এইবার জান্নাহ্কে দিতে হবে।আমাকে তুমি আবার অপরাধি করলে সারহানের কাছে।যদি তাই হয় আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না মেহনাজ।কখনো না।”
বার কয়েক করুণ গলায় ডেকে উঠে মেহনাজ।শুনেও শুনলো না ইহতিশাম।রাতের মায়ায় নেমে গেলো নিজের ভুলের মাশুল গুনতে।আদৌ কী তা পারবে তা ইহতিশাম?
চলবে,,,
(বিঃদ্রঃ
বোনাস পার্ট।
ফরটি প্লাস কমেন্টসে কালও দুই পর্ব পাবেন।তবে সব পর্বেই হতে হবে।)