জীবনের অন্যরঙ পর্ব-৫

0
381

#জীবনের অন্যরঙ [৫ম পর্ব]
#আজিজুর রহমান

জাগো উদয়প্রাতের ঊষা রক্তশিখা,

জাগো সূর্যের টিপ পরি জয়ন্তিকা!

জাগো ক্রোধাগ্নি অবমানিতের বক্ষে,

জাগো শোকাগ্নি নিরশ্রু রাঙা চক্ষে!

করিম বেঞ্চে বসে বিড়ি টানছে। দোকান ফাঁকা,মাঝে মাঝে কাস্টমার আসছে,চা খেয়ে চলে যাচ্ছে।পাড়ার ছেলেগুলো সন্ধ্যে হলেই জাকিয়ে বসে আড্ডা দেয়। গমগম করে দোকান। কয়েক কাপ চা খায় সারাদিনে তবু ছেলেগুলোর প্রতি করিমের কেমন মায়া জড়িয়ে গেছে। বেশি কাস্টমার এলে জায়গা ছেড়ে দেয়,এমনি খারাপ না তবে মাঝে মাঝে এমন তর্ক শুরু করে মনে হয় এই লাগে তো সেই লাগে। রাস্তার লোকজন হা-করে তাকিয়ে দেখে। আবার আপনা হতে জুড়িয়ে যায়। ক-দিন ধরে কেউ আসছেনা,ওদের পরীক্ষা চলছে। রাতের দিকে সুজয় আসে,ওর বুঝি আর লেখাপড়া হবেনা। বাপটা কারখানায় কাজ করে,মা শয্যাশায়ী। বোনটা এখনো পড়ছে। কাস্টমার ঢুকতে করিম ভাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
সুজয়কে নিয়ে রাজু ঢুকে বলল, করিম ভাই আজকের কাগজটা কোথায়?সকালে তাড়াতাড়িতে পড়া হয়নি।
করিম কাগজ এগিয়ে দিতে রাজু চোখ বোলাতে থাকে। করিম জিজ্ঞেস করে, কাগজে কিছু খবর আছে?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজু বলল,সব খবর কি কাগজে বের হয়?
কাস্টমার আসতে করিম ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রাজু কাগজে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, খালা কেমন আছে এখন?
–আগের থেকে কিছুটা ভাল। সুজয় বলল। টিনার জন্য মায়ের যত দুশ্চিন্তা।
–সব মায়েরই এই সমস্যা। অনি থাকলে ভাল বলতে পারতো।
–দেখা হলেই অনি মায়ের খোঁজ নেয়। সুজয় বলল।
রাজু নিজের মনে হাসে। করিম ভাই আবার এসে বসল। সুজয় বলল,তুমি হাসছো কেন?
–ওর কথা ভেবে হাসি পাচ্ছে। ওকে কে দেখে তার ঠিক নেই ও অন্যের খোঁজ নেয়। ছেলেটা একেবারে অন্যরকম।
–কার কথা বলছিস? করিম ভাই জিজ্ঞেস করল।
–অনির কথা বলছি। ছেলেটা যদি একটু সাহায্য পেত অনেক উপরে উঠতে পারত।
–ঠিক বলেছিস। ওর জীবটাই অন্যরকম। মা-বাবা ছাড়া সে কি করে জীবন কাটাচ্ছে অনিই জানে। করিম ভাই বলল।
–কিন্তু আমি একদিনও শুনিনি অনি নিজের জীবন নিয়ে অসুখী এই কথা বলেছে। এমনকি সে কারো বিরুদ্ধে কোনো খারাপ কথাও বলে না।
সুজয় বলল,এইটা ঠিক বলেছো। কারো বিরুদ্ধে ওকে কোনোদিন বলতে শুনিনি। আমি একদিন বলেছিলাম,সবাইকে তোর ভাল মানুষ মনে হয় কেন।কি বলল জানো?
রাজু কাগজ হতে মুখ তুলে তাকায়। সুজয় বলল,দ্যাখ সবাই আমার মত হবে এমন ভাবা অন্যায় আবদার। আমিও কি অন্যের মত?শালা ওর সঙ্গে তুমি কথায় পারবেনা।
–ওদের পরীক্ষা কবে শেষ হবে? করিম ভাই জিজ্ঞেস করল।
–তার কোনো ঠিক নেই। এতো স্কুল নয়,কারো কাল কারো পরশু–মনে হয় এই সপ্তাহে সবার শেষ হয়ে যাবে। রাজু বলল।
রাস্তায় টিনাকে দেখে সুজয় উঠে গেল। ফিরে এসে বলল,আমি আসছি রাজু ভাই?
–কিছু হয়েছে? রাজু জিজ্ঞেস করে।
–না না,কে নাকি এসেছে। সুজয় চলে গেল।
রাজু কি যেন ভাবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। চায়ের টাকা দিয়ে বের হয়ে গেল দোকান থেকে। জীবনের চলার পথ অনেক কঠিন। বাস্তবতা প্রতিনিয়ত নতুন সমস্যাকে সামনে এসে দাঁড় করায়। বারবার ইচ্ছে করবে এই জীবনকে এখানেই শেষ করে দেই। জীবনের আসল মানে শেষ করে দেওয়া নয়। এই শেষের মাঝে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাই জীবন।

অনিমানের পরীক্ষা খারাপ হয়নি। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা হয়নি অনেক দিন। আরেকটা পেপার আছে পাঁচদিন পর তাহলেই শেষ। চিত্রাকে বলেছে রবিবারে যাবে,অসুবিধে হবেনা। যাবার পথে একবার করিম ভাইয়ের দোকানে ঢু মেরে যাবে।কেউ না থাকুক রাজু ভাইকে পাওয়া যাবে মনে হয়। দোকান ফাঁকা করিম ভাই বসে আছে এককোনে। কি ব্যাপার?
করিম ভাই বলল, রাজু ভাই হিমু সুজয়ের মাকে নিয়ে অনেক্ষন আগে হাসপাতালে গেছে।
কাল শনিবার পরীক্ষা নেই। অনিমান ভাবে হাসপাতালে যাবে না অপেক্ষা করবে? করিম ভাই এক কাপ চা দিয়ে বলল,ফেরার সময় হয়ে গেছে।কিছু নাহলে এখুনি ফিরবে।
অনিমান চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে,গরীবের সঙ্গেই শুধু কেন এমন হয়। মায়ের পিছনে টাকা কম খরচ হলনা?চা শেষ হবার আগেই রাজু ভাই আর হিমু এল।
–কেমন আছে খালা? অনিমান জিজ্ঞেস করে।
–ডাক্তার দেখছে,এখনই কিছু বলা যাচ্ছেনা।সুজয় আর ওর কে আত্মীয় এসেছে ওরা আছে।সোমবার আমার পরীক্ষা– রাজু ভাই কি ভাবছো? হিমু বলল।
–ভাবনা তো একটাই। কি যে করবে সুজয়?নিজের পড়া গেছে এবার টিনার পড়াও না শেষ হয়।
অনিমান বলল, রাজু ভাই তুমি চিন্তা কোরনা। কাল শনিবার সবাই বেরবো। ফান্ড করতেই হবে।
–হুট করে কিছু করলেই হল?কিসের ফান্ড–একটা নাম তো দিতে হবে?
–পাড়ায় বেরিয়ে দেখি,সাড়া পেলে ওসবের জন্য আটকাবে না।
–ঠিক আছে,কাল অফিস যাবোনা। দেখা যাক পাড়ার লোকজন কি বলে? রাজু বলল।
–ফান্ড করলে আমার একশো টাকা ধরে রাখ। করিম ভাই বলল।
–এটাকে স্থায়ী করতে হবে। প্রতি মাসে কালেকশনে বের হবো।
–সেটা পরে ভাবা যাবে,এখন সুজয়ের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা দরকার। হিমু বলল।
রাস্তা দিয়ে মিতাকে যেতে দেখে অনি জিজ্ঞেস করে, এত দেরী?
–পরীক্ষা শেষ হল,একটু আড্ডা দিচ্ছিলাম। হেসে বলল মিতা।

এক এক করে সব করিম ভাইয়ের দোকানে জড়ো হতে থাকে। সুজয়ের মায়ের খবর শুনে আড্ডা তেমন জমল না। অনির প্রস্তাবে সবাই একমত না হলেও স্থির হল কাল বেরিয়ে দেখা যাক।
সিরাজের ইচ্ছে ছিল তনিমার ব্যাপারটা নিয়ে অনির সঙ্গে আলোচনা করবে। অবস্থা দেখে বিষয়টা তুললো না। পরীক্ষা হল থেকে বেরিয়ে তনিমার কলেজে গেছিল, সেখানে গিয়ে শুনলো তনিমা বেরিয়ে গেছে। আরো কিছু ব্যাপার আভাস পেল, বিশ্বাস না করলেও একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছে না। সুজয়ের মায়ের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়। কাল আবার বেরোবার প্রোগ্রাম করেছে।

“এপার ওপার জুড়িয়া অন্ধকার
মধ্যে অকূল রহস্য-পারাবার,
তারই এই কূলে নিশি নিশি কাঁদে জাগি
চক্রবাক সে চক্রবাকীর লাগি।”

কাল রাতের কথামত খবর দিয়ে সবাই সকালে জড় হয়। করিম ভাই সবে উনুনে আগুন দিয়েছে ওরা সবাই ঢুকল। রাজু ভাই জিজ্ঞেস করে,কোথা দিয়ে শুরু করা বলতো? অনি বলল,কর্ণেলের বাসায় চলো। কবে চলে যায় ঠিক নেই।
–প্রথমে এমন বাড়ী চলো যাতে ভাবি হয়। হিমু বলল।
–বাছবিচার দরকার নেই,একধার থেকে সব বাড়ী যাবো। আমরা তো জোর জবরদস্তি করছিনা।দিলে দেবে না দেয় না দেবে। রাজু বলল।
বেল বাজাতে দরজা খুললেন স্বয়ং জয় খাঁন।নাকের নীচে মোটা গোঁফ,জটলার দিকে চোখ বুলিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন।
–কাকু আমরা পাড়ার ছেলে,আণ্টি আমাদের চেনে।
–তোমরা কার কাছে এসেছো?আণ্টি না আমার কাছে?
অনিমান এগিয়ে গিয়ে বলল,আপনার কাছে একটা আবেদন নিয়ে এসেছি।
–না বললে বুঝবো কি করে?
অনিমান বিশদে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল। কর্ণেল খাঁন ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ঘাড় নেড়ে বললেন,হুউম।কিছুক্ষন পর বললেন,আমার কাছে তো টাকা নেই।
সুবীরের হাতে চাপ দিল হিমু। অনিমান বলল,ঠিক আছে কাকু।
হতাশ হয়ে চলে যাবার জন্য পা বাড়াতে কর্ণেল খাঁন বললেন,আচ্ছা যদি চেক দিই অসুবিধে হবে?
–বেয়ারার চেক দিতে পারেন। রাজু বলল।
কর্ণেল ভিতরে চলে গেলেন কিছুক্ষন ফিরে এসে অনির হাতে চেকটী দিলেন। অনি চেকটা না দেখেই বলল,আসি কাকু। আপনি আর কদিন আছেন?
কর্ণেল হেসে বললেন,কালই চলে যাবো। আণ্টি একা থাকবে তোমরা একটু লক্ষ্য রেখো।
একটু দূরে আসতেই হিমু ছো মেরে চেকটা নিয়ে দেখে কত টাকা?সুবীর জিজ্ঞেস করে কত টাকা রে?
–এখন একশো-দুশো যা পাওয়া যায়।শুভ বলল।
–দু-শো নয় দু-হাজার।হিমু বলল।
–কই দেখি দেখি।শুভ চেকের উপর চোখ বুলিয়ে বলল,শালা লেখক বুদ্ধিটা ভালই দিয়েছে।
অনিমান বলল, রাজু ভাই ডাক্তার সাহেব বেরোবার আগেই চলো।
বরুণ চোখ টিপে ফিস ফিসিয়ে বলল,শুভ্রতা।
রাজু বলল,তোদের সব ব্যাপারে চ্যাংড়ামী। অফিস কামাই করেছি সেজন্য আফশোস নেই। চল ডাক্তার সাহেবের বাড়ী।
বাড়ীর কাছে যেতেই শুভ্রতা বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,কি ব্যাপার?
–ডাক্তার সাহেব আছেন? অনিমান জিজ্ঞেস করে।
–এসো ভিতরে এসো।
সবাইকে বাইরের ঘরে বসিয়ে বাবাকে ডাকতে গেল। সবাই পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে। রাজু বলল,ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে অনি কথা বলবে। বরুণ বলল, শুভ্রতা আড়াল থেকে ঝাড়ি করছে অনি । ডাক্তার সাহেব ঢুকতে ওরা উঠতে যাচ্ছিল ডাক্তার সাহেব বললেন,বোসো বোসো।এত সকালে?আবার কার কি হল?
–আমরা একটা অন্য ব্যাপার নিয়ে এসেছি।
ডা.সাহেব সন্দিগ্ধ চোখ তুলে তাকালেন। অনিমান সমস্ত বিষয়টা বিশদে বলল। ডাক্তার সাহেব টেবিলে রাখা পেপার ওয়েট নাড়া চাড়া করতে থাকেন।ওদের দিকে না তাকিয়ে বললেন,খুব ভাল উদ্যোগ।তারপর রাজুর দিকে তাকিয়ে বললেন,কারো কিছু হলে তোমরা কয়েকজন ছুটে যেতে।সেই কাজে এভাবে সবাইকে ইনভলব করা হবে।পাড়ার মধ্যে একটা ঐক্য প্রতিষ্ঠা হবে।
–আমরা আপনাকে সভাপতি করতে চাই। দুম করে অনিমান বলল।
অনি একি বলছে?সকলে পরস্পর মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। কালেকশন করতে এসেছে এখানে সভাপতির কথা কেন?অনির সব ব্যাপারে পাকামী।বরুণ চাপা স্বরে বলল, শুভ্রতার কাছে হিরো হতে চায়।
–সভাপতি হতে পারলে খুশি হতাম। কিন্তু এত ব্যস্ত থাকতে হয় আমাকে সভা-টভায় উপস্থিত থাকা আমার পক্ষে বুঝতেই পারছো–। তোমরা জাস্টিস চৌধুরীকে বলনা,রিটায়ার মানুষ সবাই ওকে সম্মান করে,আমার মনে হয় উনিই যোগ্য ব্যক্তি।
–আমরা কিছু সাহায্যের জন্য বেরিয়েছিলাম।রাজু ভাই আমতা-আমতা করে বলল।
–অবশ্যই সাহায্য করব। এত বড় একটা কাজে থাকবনা?একসময় এসো,এখন একটু ব্যস্ত আছি।ডা.সাহেব উঠে দাড়ালেন।
শুভ বেরিয়ে বলল,ফালতু বাতেলা আসল ব্যাপারে লব ডঙ্কা।
–উনি একটা গুরুত্বপুর্ণ কথা বলেছেন,”পাড়ার সবাইকে ইনভলবড”–এটা কম সাহায্য নয়। অনি বলল।
–একথা কি খালার চিকিৎসায় কাজ হবে?হিমু বলল।
–তোরা থামবি?উনি তো পরে দেবেন বলেছেন। রাজু বলল।
দু-তিনটে গলি ঘুরে হাজার পাঁচেকের মত উঠল,চেক ক্যাশ হলে সাত হবে। রাজু অনিকে বলল, সন্ধ্যেবেলা বৃষ্টি ভাবির বাসায় যাবো।
বিরাজ ভাইয়ের বউ বৃষ্টি ভাবি। বিরাজ ভাইয়েে বাবা জাস্টিস রাজিব চৌধুরী। অবসর নেবার পর আর কিছু করেন না।
–এত টাকা একটা ব্যাঙ্ক এ্যাকাউণ্ট খোলা দরকার। রাজু বলল।
–শোনো রাজু ভাই একটা মিটিং ডাকার ব্যবস্থা করো সেখানে সব সিদ্ধান্ত করা হবে।
–এখন এসব কে সামলাবে?
–কেন তুমি?সবাই বলল।
তারপর সবাই যে যার বাড়ী চলে গেল।

করিম ভাইয়ের দোকানে একে একে প্রায় সবাই এসে গেছে। মিরাজ ওবেলা ছিল না, মিরাজও এসেছে। অনি তখনও আসেনি। রাজু ভাবে অনি কোথায় গেল?ওতো এমন করেনা,রেহানা আণ্টির বাসায় গেছিল তো?বরুণ একটু দেখতো,কিছু হল নাকি?
বরুণ এগিয়ে গেল। বাড়ীর কাছাকাছি যেতেই অনিন সঙ্গে দেখা। জিজ্ঞেস করে,তোর শরীর খারাপ নাকি?
অনিমান হাসল।জিজ্ঞেস করল,সবাই এসে গেছে?
–সবাই এসেছে,বাধাকপিটাও এসেছে।
–কে মিরাজ?মনে পড়ল অর্নি আপুর কথা। মেয়ে হলেও অর্নি আপু তাদের সঙ্গে থাকতো।
রাজু সারাদিন ডাক্তার সাহেবের কথাটা ভেবেছে।সবাইকে জড়িয়ে নিতে পারলে পাড়াটা একটা পরিবারের মত হয়ে যাবে। বিপদে আপদে কাউকে ডাকতে হবেনা, আপনিতেই জড়ো হবে।ডাক্তার সাহেবকে কেমন স্বার্থপর মনে হত অথচ সকালে কথাবার্তা শুনে মনে হোল উনিও পাড়ার জন্য ভাবেন। অনি ঠিকই বলে একপলকের দেখায় কোনোকিছু ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। অনিকে দেখে বলল,চল বৃষ্টি ভাবির বাড়ী।
অনিমান হাজার টাকা হাতে দিয়ে বলল,টাকাটা রাখো।
–টাকা?ও তুই গেছিলি? রাজু টাকা ব্যাগে রাখল।
বৃষ্টিভাবি এতগুলো ছেলেকে একসঙ্গে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,তোমরা?
–তোমার কাছে নয়? রাজু বলল।
–তোমাদের ভাই তো কোর্ট থেকে ফেরেনি।
–ভাই নয় তোমার শ্বশুর।
চোখ পাকিয়ে বৃষ্টিভাবি বলল,খুব সাহস বেড়েছে?আয় ভিতরে আয়। সবাইকে বসতে বলে জিজ্ঞেস করে,কেন এসেছিস বলতো?
অনিমান বিস্তারিত বুঝিয়ে বলল,সকালের সব কথাও খুলে বলল।
–বাঃহ এইটা তোমরা খুব ভাল কাজ করেছো।আচ্ছা বোসো,আমি বাবাকে খবর দিচ্ছি।
–আর চা।বরুণ বলল। বৃষ্টিভাবি পিছন ফিরে হাসল।
সবাই আলোচনা করছে। রাজু ভাই বলল, অনি তুই শুরু করবি।
–অনি শালা কায়দা করে বেশ বলতে পারে। শুভ বলল।
–দিনা আণ্টির বাড়ী শুভ বলবে। বরুণ বলল।
জাস্টিস রাজিব চৌধুরী ঢুকলেন। পরনে লুঙ্গি গেঞ্জী। সবাই উঠে দাঁড়াতে হাতের ইশারায় চৌধুরি মশাই বসতে বললেন।
অনিমান কিছু বলতে যাচ্ছিল জাস্টিস চৌধুরি বললেন,বৌমার মুখে সব শুনেছি।
কিছুক্ষন সব চুপচাপ। বৃষ্টিভাবি চায়ের ট্রে নিয়ে ঢুকে একটা কাপ শ্বশুর মশায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে ট্রে টেবিলের উপর রাখল। জাস্টিস চৌধুরি বললেন,চা খাও।
সবাই চা খেতে থাকে। একপাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিভাবি অনিকে লক্ষ্য করতে থাকে। জাস্টিস চৌধুরী বললেন,ভাল কাজ। ভাল কাজের মধ্যে থাকলে শরীর মনও ভাল থাকে। কিন্তু একটা নিয়ম নীতি না থাকলে ভবিষ্যতে জটিলতা দেখা দেবার সম্ভাবনা।
–আমরা আপনাকে সভাপতি করতে চাই।ডাক্তার সাহেবও আপনার কথা বললেন। অনিমান বলল।
–কে ডাক্তার বারিক শাহ?উনি কি তোমাদের সঙ্গে আছেন?
রাজু বলল,উনি বললেন এইভাবে পাড়ায় একটা ঐক্য প্রতিষ্ঠা হবে।
–তা হবে কিন্তু সংগঠনের কাজ যদি সুনির্দিষ্ট না থাকে তাহলে অনৈক্য হতেও সময় লাগবেনা।যেমন ধরো কাকে সহায়তা দেওয়া হবে?কেবল চিকিৎসা নাকি অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহায়তা দেওয়া হবে কিনা?
–বাবা অন্যান্য ক্ষেত্র মানে?বৃষ্টিভাবি জিজ্ঞেস করে।
–তুমিও কি ওদের সঙ্গে আছো?
–পাড়ার সবাইকে নিয়ে চলতে চাই। অনিমান বলল।
–যেমন কারো অর্থাভাবে বিয়ে হতে পারছেনা বা লেখাপড়া করতে পারছে না।
অনি বলল।

–আমি একটা কথা বলব?আপনি একটা খসড়া করে দিন। বৃষ্টিভাবি অন্যদের দিকে তাকালো।
সবাই হৈ-হৈ করে ভাবিকে সমর্থন করে।
জাস্টিস চৌধুরি সম্মতি দিলেন। একা একা ঘরে বসে সময় কাটতে চায় না। কোনো একটা কাজের মধ্যে থাকলে শরীর মন দুই ভাল থাকবে।

অনেক আশা উদ্দীপনা নিয়ে জাস্টিস চৌধুরীর বাড়ি থেকে বের হল। অনিমান ভাবে ঠিকই বলেছেন, অনেককিছু করার আছে। কতভাবেই নানা রকম বাজে খরচ করে মানুষ,সামান্য কিছু যদি প্রতিদিন জমানো যায়,তিল তিল করেই তাল হয়।খুব খারাপ লাগছে সে নিজে কিছুই দিতে পারছে না। যদি এই ফাণ্ড স্থায়ী হয় আর যেদিন উপার্জন করবে সুদে আসলে দিয়ে দেবে। বেশ রাত পর্যন্ত অর্থ সংগ্রহ হল। কাল সে বেরুতে পারবে না,ট্যুইশনি আছে। রাজু ভাইকে বলল অনি।
সারা শরীরে কেমন একটা অস্বস্তি জড়িয়ে আছে।বাসায় ফিরে গোসল করল অনি। খাওয়া দাওয়ার পর অনিমান ডায়েরী নিয়ে বসল। ভালই টাকা উঠেছে। সুজয়ের মায়ের চিকিৎসায় অসুবিধে হবেনা। “ঝড়ে হাওয়ার পাতা” নাম দিয়ে গল্পটা পাঠিয়ে দিয়েছে। ছাপা হলে জানাবে নিশ্চয়। ক্লান্ত লাগছে ভেবেছিল কাল পড়াতে যাবেনা। কর্ণেল জয়কে কেমন কাঠখোট্টা লাগতো। এককথায় দু-হাজার টাকা দিয়ে দেবেন ভাবতেই পারেনি।ডাক্তার সাহেব টাকা না দিলেও উনি বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিয়েছেন বোঝা গেল। বৃষ্টিভাবি চমৎকার মানুষ। উপন্যাসটা কিছুটা লিখে ফেলে রেখেছে। পরীক্ষা শেষ হলে আবার ধরবে। ছাপা হবে কি হবেনা ভেবে উৎসাহ পায়না। তবু শেষ করবে। কর্ম করে যাও ফলের আশা কোরনা,মা বলেছিল। ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে।

করিম ভাইয়ের দোকান খুলে উনুনে আগুণ দিয়েছে। আলুর দম বাড়ি থেকেই আসে।রোজকার রান্নার সঙ্গে দোকানের আলুরদম করিম ভাইয়ের বউই করে।ঘুম ভাঙ্গলেও অনিমান বিছানা ছেড়ে ওঠেনা।দুটো রবিবার যাওয়া হয়নি,ভাবছে আজ যাবে। ভাবি চা দিয়ে গেলেন।ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে করেনা।বলেছিল আজ বেরোবেনা তবু বের হল। করিম ভাই বলল,সবাই মিরাজদের ফ্লাটের দিকে গেছে। মিরাজের বাবার ট্রান্সপোর্টের বিজনেস। সারা বাংলাদেশে ওর বাবার ট্রাক চলে। রাজু ভাই বলল,তুই কেন এলি?পড়াতে যাবিনা?
–থাকি একটুক্ষন।
–বিরাজ ভাই তোর কথা বলছিল।পরীক্ষার পর পারলে একবার দেখা করিস।
–কি ব্যাপারে কিছু বলেছে?
–কি জানি কিছুতো বলল না।
মনে পড়ল বৃষ্টিভাবি কেমন অদ্ভুত ভাবে দেখছিল তাকে। মনে হয় আমি কি করে একা জীবন কাটাচ্ছি তাই ভেবে দেখেছে। অন্যদের কে নিয়ে ভাবতে আমার ভালো লাগে। মনেহয় আমি অনাথ নয়। আমার পরিবার যেন এই সম্পূর্ণ পাড়া। বিরাজ ভাই কোর্টে প্রাক্টিশ করে। বাবার সঙ্গে বাড়িতেও এসেছে ছোটবেলা কয়েকবার । কিন্তু কি কথা বলতে চায়? অনিমান অনুমান করতে পারেনা।

সল্টলেকে পৌঁছে বেল বাজাতে আন্টি দরজা খুলে দিল। অনিমান স্টাডি রুমে বসতে পাখা চালিয়ে দিয়ে চলে গেল। এক মুখ হাসি নিয়ে চিত্রা ঢুকে জিজ্ঞেস করে, কেমন হচ্ছে পরীক্ষা?
–ভাল।
–আমি জানতাম ভাল হবে। গডকে প্রেয়ার করেছি।
চিত্রা চেয়ারে না বসে অনিমানের পাশে এসে দাড়ায়। জিন্সের উপর কুর্তা পরণে । একটা খাতা এগিয়ে দিয়ে বলল,অনি তুমি বলেছিলে,নিজে নিজে যা মনে আসে বাংলায় লিখতে–দেখো কেমন হয়েছে?
অনিমান পড়তে থাকে চিত্রা গভীর আগ্রহ নিয়ে অনিকে লক্ষ্য করে,কেমন লাগছে তার বাংলা লেখা। অনিমান চোখ তুলে একবার চিত্রাকে দেখে পড়তে শুরু করল,”প্রেম শব্দটা ছোট, কিন্তু বিষয়টি কি তেমনই সহজ এবং ছোট ! ভালবাসা ভিন্ন কিছু –অনেক বড় ও বিশাল কিছু। হয়তো ভালবাসা কখনো ভিষণ ঝড়ের মুখোমুখি একা দাঁড়িয়ে থাকা। হয়তো ভালবাসা কখনো কারো জন্য মিথ্যে কষ্ট পাওয়া…… নাকি অন্য কিছু ?ভালবাসা কি অন্ধ সেকি বিচার করেনা অর্থ জাত বয়স ধর্ম? এতো বুঝিয়ে বলার বা লেখার মত কিছু নয়। এতো বোঝানোর বিষয় নয়।ভালোবাসাটা বোধহয় সব সময় একজনেরই আলাদা ব্যাপার–একজনই ভালোবাসার নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে–দু’জনের মিলিত জীবনের পক্ষে ভালোবাসার মূল্য তেমন কিছু বেশি নয় । সেখানে কৃতজ্ঞতা, দায়িত্ববোধ এগুলোরই মূল্য বেশি। জীবনে সব প্রতিজ্ঞা টেকে না, সব কথা রাখা যায় না, বুকের ভিতর রাখা মুখ বারবার ভেংগে গড়ে নিতে হয়। অতিসুখ্য, যে কোন মুহুর্তে হারাবার ভয়ই ভালবাসার রূপ এবং তা সত্যি হারিয়ে যায়, ভেঙে যায়। তারপরেও যা থাকে–তা ভালোবাসা নয়। জেদ, অতৃপ্ত অহংকার আর আহত পৌরষের মনের জালা। চিরস্থায়ী ভালবাস নিছক একটা উপকথা। ভালবাসার চেয়েও বোধহয় বড় নিছক বেঁচে থাকা, শরীরের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ, সামাজিক সম্মন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ। ভালোবাসা কিছুতেই নিরাপত্তা চায় না, চায় সবকিছু ভাংতে ।”
চিত্রা লক্ষ্য করে অনি মিট মিট করে হাসছে।তাহলে কি ভাল হয়নি?জিজ্ঞেস করে, কেমন হয়েছে?
–বিষয় নিয়ে অনেক কথা বলা যায় কিন্তু বাংলা লেখা সামান্য বানান ভুল ছাড়া দারুণ। মনে হয় আমার দায়িত্ব শেষ–।
চমকে উঠে অনিকে ধরা গলায় বলল,না না অনি তোমার দায়িত্ব শেষ হয়নি। কথা দাও তুমি যেমন আসছো আসবে?
অনি আজ চিত্রার গলার স্বরে অদ্ভুত অনুভুতি হয়।আন্টি দরজায় দাঁড়িয়ে গলা খাকারি দিয়ে চা নিয়ে ঢুকল। চিত্রা বলল,জানো মা অনি বলছে আমি অনেক ইম্প্রুভ করেছি।
আড়চোখে তাকিয়ে চা রেখে চলে গেল। চিত্রার সামনের চেয়ারে বসে বলল,বিষয় নিয়ে কি বলছিলে?
অনিমান চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলতে থাকে,প্রেম বিষয়ে আমার ধারণা খুব স্পষ্ট নয়। যখন একজনকে দেখে ভাল লাগে তার কথা শুনতে ভাল লাগে তার কাছে থাকতে ভাল লাগে তেমনি তাকে না দেখলে খারাপ লাগে তার কথা শুনতে না পেলে খারাপ লাগে সে কাছে না থাকলে কষ্ট হয়,তার সুখে সুখ তার দুঃখে দুখ–তোমার লেখায় এমন একটা ভাব।
চিত্রা মাথা নাড়ে। অনিমান বলতে থাকে,আর একধরণের প্রেম আছে,কবির ভাষায় “কানু হেন প্রেম নিকষিত হেম,কামগন্ধ নাহি তায়।”অর্থাৎ কৃষ্ণপ্রেম কষ্টি পাথরে ঘষা খাটি সোনার মত। তাতে কামনা নেই,আছে আত্ম নিবেদন। একে বলে ভক্তের প্রেম।
চিত্রা বলল,সেতো অন্য রকম।
অনিমান আবার বলতে থাকে,”আমি নিশিদিন তোমায় ভালবাসিবো তুমি অবসর মত বাসিও”এখানে প্রেমের বিনিময়ে কোন চাহিদা নেই। সম্রাট অশোক অনেক রক্তের বিনিময়ে কলিঙ্গ জয় করলেন। অনেকে স্বামীহারা পুত্র হারা পিতৃহারা হল। সম্রাটের মন বিষাদে আচ্ছন্ন হল।তিনি অহিংসা ধর্মে দীক্ষিত হয়ে স্থির করলেন,আর হিংসা নয়,রাজ্য জয় নয়। প্রেমের দ্বারা মানুষের মন জয় করবেন। এখানে প্রেম অনেক ব্যাপক।
–ভেরি নাইস।
–আবার সংকীর্ণতাও আছে। যাকে ভালবাসে তার কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ওঠে। যে সুন্দর মুখ তাকে আকর্ষিত করছিল সেটা এ্যাসিডে পুড়িয়ে বিকৃত করে দেওয়া,আমি পাইনি কাউকে পেতে দেব না।
–টেরিবল। শিউরে ওঠে চিত্রা।
অনিমান হাসল,চিত্রার মুখে যেন বাদলের মেঘ জমেছে। অনিমান কিছু বলতে গেলে চিত্রা বলল,প্লিজ অনি–আর না–।
–এবার অন্য প্রেমের কথা বলবো। প্রেম বীজের মত।
–মানে?
–পরিচর্যা করলে অঙ্কুরিত হয় পাতা মেলে কিন্তু পরিচর্যার অভাবে কিম্বা কেউ দলে পিষে দিলে প্রেমের মৃত্যু হয়।
–সব কিছুরই অবস্ট্রাকশন আছে। চিত্রা বলল।
–আর এক ধরণের প্রেম আছে মৃত্যুহীন।
চিত্রা কৌতুহলী চোখ তুলে তাকালো। অনিমান বলল,নক্ষত্রের মত। সাময়িক অদৃশ্য হলেও বিনষ্ট হয়না। কবির ভাষায়,”রাতের সব তারা আছে দিনের আলোর গভীরে।”
–অনি ইউ আর জিনিয়াস। কার কবিতা?
–রবীন্দ্রনাথ। মনে করো তুমি একজনকে ভালবাসলে,অনিবার্য কারণে তোমাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেল। দূর দেশে যেতে হল। সেখানে নতুন পরিবেশ নতুন সঙ্গীদের ভীড়ে তাকে আর মনে পড়েনা। তারপর একদিন আবার যখন ফিরে আসছো তাকে মনে পড়ল। যত কাছে আসছো মাধ্যাকর্ষনের মত তত তীব্র হচ্ছে বেগ–। চিত্রাকে অন্যমনস্ক দেখে অনিমান জিজ্ঞেস করে,ভাল লাগছে না?
চিত্রা মুখ ফিরিয়ে হাসল। অনিমানের দিকে তাকিয়ে বলল,ইউ আর মিস্টিরিয়াস।
–আজ উঠি?অনিমান উঠে দাড়ালো।
অন্যদিনের মত এগিয়ে দিল না অনিকে। চেয়ারে উদাসভাবে বসে থাকে চিত্রা।
অনি তার ভাবনার জগত এলোমেলো করে দিল।এতদিনের ধ্যান ধারণা বিশ্বাস চুরচুর করে ভেঙ্গে গেল। সব কেমন শূণ্য মনে হয়। ডেড বলছিল অনি খুব পুওর বাট হি ইজ মেণ্টালি ভেরি রিচ।
বাসে জানলার ধারে জায়গা পেয়ে গেল অনিমান।বাইরে তাকিয়ে রাস্তার লোকজন দেখছে উদাস দৃষ্টি মেলে। চিত্রাকে অনেক কথা বলেছে সেই কথাগুলো তার মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। প্রেমের কথা বলছিল,প্রেম কেবল দিতে চায়।তাই কি?কি দিয়েছে সবাইকে?বরং সবাইকে শুষে নিয়েছে জোকের মত। শুভ্রতার গম্ভীরভাব ভাল লাগে,অন্যদের মত চপল নয়। একে কি প্রেম বলা যায়?ওর বাবা আলাপ করিয়ে দেবার আগে সাগর কে কি চিনতো?যদি সাগরের সঙ্গে বিয়ে হয় তাকে কি প্রেম বলা যাবে?ওরা বিয়ে করে সুখী হোক। আজ কাজী নজরুলের একটি কবিতা মনে পড়ে গেল।

“তুমি আমায় ভালোবাসো তাই তো আমি কবি।

আমার এ রূপ-সে যে তোমায় ভালোবাসার ছবি॥

আপন জেনে হাত বাড়ালো-

আকাশ বাতাস প্রভাত-আলো,

বিদায়-বেলার সন্ধ্যা-তারা

পুবের অরুণ রবি,-

তুমি ভালোবাস ব’লে ভালোবাসে সবি?”

বাস থামতেই অনিমান দ্রুত নেমে হাঁটতে থাকে। জীবনের বাস্তবিক রঙ দেখেছে। তবে জীবনে অন্যরঙ তাকে নতুন বাস্তবতার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। নিঃসঙ্গতার জীবনেও দুঃখ থাকতে পারে সেটা কজনেই বা জানে।
.
.
চলবে………!

[গল্পের পর্বটি কেমন হয়েছে তা গঠনমূলক কমেন্ট করে জানান।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here