__________জীবনের গল্প__________
লেখক: ShoheL Rana
____________পর্ব:-০৩____________
রায়হানকে নিয়েই শায়লা সবার উদ্দেশ্যে বললো,
-আমার যখন বিয়ে হয় তখন রায়হানকে অনেক ছোট লাগতো, আর অনেক দুষ্ট ছিল। এখন কত্তবড় হয়ে গেছে। গোফ উঠেছে। দেখতেও সুন্দর হয়েছে।’
শায়লা আপুর মুখে নিজের কথা শুনে রায়হান কিছুটা লজ্জা পেয়ে হাসলো। শায়লা আপু এবার টিটকারি মেরে বললো,
-ওলে বাবালে, আমার ভাইটা দেখছি এখন লজ্জা পাচ্ছে। শায়লা আপু, শায়লা আপু বলে আমার পেছন পেছন ঘুরতি মনে আছে?’
শায়লার কথা শেষ হতেই ফাতেমা যোগ করলো,
-হ্যাঁ, পেছনে ঘুরতো শুধু তোমার কাছ থেকে এটা সেটা খেতে পারতো বলে। ও তোমাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতো।
-জানি, আমার বিয়ের সময় বাচ্চাদের মতো কেমন ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেছিল ও আমার এখনও মনে পড়ে।’
শায়লা আপুর কথায় সবাই জোরে হেসে উঠলো। রায়হান প্রতিবাদ করে বললো,
-বেয়ানদের সামনে কি আমার প্রেস্টিজ নষ্ট করছো?’
-আরে প্রেস্টিজ নষ্ট করবো কেন? তুই যে আমাকে কতো ভালোবাসতি তা সবাইকে বলছি। তা এখন কার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস? বলতো দেখি, বল, বল…’ শায়লা আপু তাগাদা দিলো।
-কী যে বলো না আপু, এখনও প্রেম/ট্রেম হয়নি।’ হেসে ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো রায়হান। ফারিয়া বললো,
-আপু, খোঁজ নিয়ে দেখেন, বেয়াই এর হয়তো কয়েকটা গার্লফ্রেন্ড খুঁজে পাওয়া যাবে।
-আসতাগফিরুল্লাহ! এখনও একটা পেলাম না, আবার কয়েকটা!’ সরাসরি ফারিয়ার চোখের দিকে তাকালো রায়হান। এবার ফাতেমা বলে উঠলো,
-সবাই মিলে আমার ভাইটাকে পচানো হচ্ছে, তাই না। আমার একটা মাত্র ছোটভাই।
-তুইও তো পচাতে বাদ রাখিসনি।’ অভিযোগ করলো রায়হান।’
ওদেরকে থামিয়ে শায়লা বললো,
-সবাই চুপ থাকো। রায়হান তুই আমার কানে কানে বল কয়টা প্রেম করছিস এখন।’
-উফ! শায়লা আপু, যাও আমি চলে যাচ্ছি এখান থেকে।’
উঠে চলে যেতে চাইলো রায়হান, তখন শায়লা তার হাত ধরো বললো,
-যাসনে। আচ্ছা মানলাম তোর ওরকম কেউ নেই। কাউকে পছন্দ করিস নাকি? নাকি একই ঘর থেকে তোর জন্য আরেকটা আনবো দেখ। ভাবীর ছোটবোন কাজল কিন্তু ভাবীর চেয়ে সুন্দরি।’
কাজলের দিকে ইশারা করলো শায়লা। কাজল চিৎকার করে উঠলো,
-শায়লা আপু ভালো হচ্ছে না কিন্তু।’
সবাই জোরে হেসে উঠলো আবার। হাসি থামতেই ইয়াসমিন বললো,
-আমি কিছু বলছি না বলে সবাই মিলে আমার একমাত্র দেবরটাকে যা তা বলে যাচ্ছো? আমি আছি আমার দেবরের পক্ষে।’
রায়হানের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলো ইয়াসমিন। রায়হান বললো,
-হুমম, আমার পক্ষে আমার ভাবী আছে। এবার বলো, কে কী বলবে?’
ফারিয়া বললো,
-আপনার ভাবী তো কথায় বলতে জানে না। ভাবীকে পেয়ে আপনার সাহস বাড়ার কোনো কারণ নেই। সত্যি করে বলেন কয়টার সাথে লাইন মারেন।’
রায়হান কিছু বলার আগেই ইয়াসমিন বললো,
-এই চুপ। আমার দেবরকে কিছু বলবি না। আমার দেবরের কয়েকটা প্রেমিকা আছে, প্রয়োজনে আরও কয়েকটা হবে।’
-ভাবী তুমিও ওদের পক্ষে কথা বলছো? যাও চলে যাচ্ছি আমি।’ উঠে চলে গেল রায়হান। সবাই একসাথে জোরে হেসে উঠলো আবারও।
.
.
বিয়ের তিনদিন পর জামাল বউকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গেল। এটা নাকি নিয়ম। যাওয়ার সময় দুই শালিকেও সাথে নিয়ে যায়। রায়হানের মনটা তাই ভীষণ খারাপ। ফারিয়ার সাথে ভালোভাবে ভাব জন্মাতে পারেনি সে। যোগাযোগের জন্য টেলিফোন নাম্বার চেয়েছিল সে ফারিয়ার। কিন্তু ওটা বাসার সবাই ইউজ করে বলে ফারিয়া দিলো না। তবে ফারিয়ার শেষ একটা কথা শুনে রায়হান কিছুটা স্বস্তি পায়। টেক্সিতে উঠার আগে ফারিয়া মন খারাপ করে বললো,
-বেয়াই এর কথা খুব মনে পড়বে। বেড়াতে যাইয়েন আমাদের ওখানে।’
-আচ্ছা যাবো…’
ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো ফারিয়া। তারপর ট্যাক্সিতে উঠে গেল। তবে উঠার আগে ফারিয়ার সেই হাসিটা রায়হানের দিলে বড় একটা ধাক্কা দিয়ে গেল।
.
.
স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে পরদিন ফিরে এলো জামাল। শায়লার জন্য মনটা ছটফট করছিল ওখানে তার। ভয় হয়েছিল যদি শায়লা চলে যায়, আর যদি দেখতে না পায়! তাই সে চলে আসে। কিন্তু আরেকটু দেরি করে আসলেই সে আর দেখতে পেতো না শায়লাকে। শায়লা তখন সব গুছিয়ে বের হচ্ছিল। স্বামী আর ছেলে আগে থেকেই ট্যাক্সিতে উঠে বসে আছে। শায়লা সবার সাথে কোলাকুলি করে বের হচ্ছিল। খুব কান্না করছে সে। আশরাফ সাহেবকে পা ছুঁয়ে সালাম করে কোলাকুলি করার সময় একেবারে কান্নায় ভেঙে পড়লো। আশরাফ সাহেব তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
-কাঁদিস না মা, কাঁদিস না। কয়েকদিন পর আবার আসিস বেড়াতে।’
শায়লা নিজেকে সামলিয়ে চোখ মুছলো। এরকম মুহূর্তগুলোতে বাচ্চারা কেবল পাশে দাঁড়িয়ে নীরব দর্শকের মতো চেয়ে থাকে। রাজ, বীথি এবং মনিও অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে বিদায় পর্বের কান্নার দৃশ্যগুলো। তারা ভেবে পায় না চলে যাওয়ার সময় কাঁদতে হয় কেন। এসব আবেগ এখনও তাদের কোমল হৃদয়ে প্রভাব ফেলতে পারেনি।
রান্নাঘর থেকে বড় একটা টিফিনবক্সে তরকারি ভরে নিয়ে আসলেন পদ্মাবতী। তারপর নিজে নিজেই বললেন,
-রায়হানটা যে কই গেল? শায়লার তরকারিগুলো একটু গাড়িতে তুলে দেয়ার জন্য কাউকে পাচ্ছি না।
-আমাকে দাও, আমাকে দাও, আমি গাড়িতে তুলে দিয়ে আসি।’ দাদির হাত থেকে টিফিনবক্সটা নিতে এগিয়ে এলো রাজ। পদ্মাবতী তাকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
-না, না, তুই পারবি না। ফেলে দিবি। জামাল তুই একটু এটা গাড়িতে তুলে দিয়ে আয়। শায়লাকেও সাথে নিয়ে যা।’
জামাল এই সুযোগটাই খুঁজছিল। কীভাবে একটু কথা বলা যায় শায়লার সাথে। মায়ের হাত থেকে টিফিনবক্সটা নিয়ে শায়লাকে বললো,
-চলো…’
দুজন বের হলো ঘর থেকে। ঘর থেকে রাস্তায় পৌঁছাতে বিশ/ত্রিশ পা ফেলতে হয়। এইটাও কম সময় না জামালের কাছে। শায়লার পাশে হাঁটতে হাঁটতে সে বললো,
-তোমাকে দেখার জন্যই ছুটে এসেছি। ভয় হয়েছিল তোমরা চলে যাবে বলে। ভাগ্যিস শেষ মুহূর্তেই এসে পড়েছি।
-আমারও মন খারাপ হয়েছিল তোমাকে দেখতে পাবো না বলে।’ ফুঁপিয়ে বললো শায়লা। ফুঁপানোর শব্দ এখনও কাটেনি তার।
-মাঝেমাঝে বেড়াতে এসো।’ আবদার করলো জামাল।
-সেটা কী ভালো হবে? মায়া জিনিসটা বড্ড খারাপ। সহজে বের হওয়া যায় না। এই যে এখানে এসে কয়েকদিন কাটিয়ে যাচ্ছি, এই মায়া কাটাতেও অনেকদিন লেগে যাবে আমার। খুব মনে পড়বে সবাইকে। এখান থেকে গিয়ে একা একা ভাববো সবার কথা।
-তোমার ভাবনাতে কি আমিও জায়গা পাবো?’
-কী মনে হয় তোমার?’
চুপ করে রইলো জামাল। ট্যাক্সির কাছে চলে এসেছে তারা। টিফিনবক্সটা ট্যাক্সিতে তুলে দিলো জামাল। গাড়িতে উঠার আগে শায়লা একবার ঘুরে তাকালো বাড়িটার দিকে। দেখলো, সবাই দাঁড়িয়ে দেখছে তাকে। গাড়িতে উঠে মুখটা বের করে শায়লা জামালকে বললো,
-ভালো থেকো।
-হুমম…’ মুখের ভেতর শব্দ করলো জামাল। ট্যাক্সিটা ছেড়ে দিলো। অনেকক্ষণ পর্যন্ত মুখ বের করে পেছনে চেয়েছিল শায়লা। জামালেরও চোখদুটো ভিজে এসেছিল তখন। দুজনের এখন দুটো আলাদা সংসার। এ কীসের মায়া তবে?
.
.
♥পাঁচ♥
কয়েকদিন ধরে খুব শীত পড়ছে। তাই মাগরিবের নামাজ পড়েই আশরাফ সাহেব আর বাইরে থাকেন না। ঘরের দিকে পা বাড়ান। আজও মাগরিবের নামাজ শেষে তিনি বাড়ির দিকে হাঁটছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই তিনি বাড়ি থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পান। কে কাঁদছে। জোরে পা চালালেন আশরাফ সাহেব। বাড়িতে এসে দেখলেন তার বড় মেয়ে কাঁদছে বিলাপ ধরে। বাবাকে আসতে দেখে সে জড়িয়ে ধরে কান্নার আওয়াজ বেড়ে গেল। আশরাফ সাহেব অবাক হয়ে বললেন,
-কী হয়েছে তোর? কাঁদছিস কেন?’
-বাবা গো, আমার সব শেষ হয়ে গেল গো বাবা…’ মেয়ের কান্না আরও বেড়ে গেল।
-কী হয়েছে বল?’
পাশ থেকে পদ্মাবতী জবাব দিলেন,
-বিদেশ থেকে ফোন এসেছে একটা। মনির বাবা নাকি এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে ওখানে।’
-কী বললে?’ উত্তেজিত হয়ে উঠলেন আশরাফ সাহেব। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। আবারও তিনি বিদেশে ফোনে যোগাযোগ করে খবরের সত্যতা জানতে পারলেন। মেয়ের জন্য তার খুব কষ্ট হলো। অল্প বয়সে তার মেয়েটা বিধবা হয়ে গেল। তার চেয়ে বেশি কষ্ট হলো মনির জন্য। মনির বয়স এখনও সাত পেরোয়নি। এই বয়সেই সে তার বাবাকে হারালো। তার জন্মের আগেই তার বাবা বিদেশে চলে যায়। জন্মের পর থেকে তো কখনও বাবাকে দেখেনি সে, এ জীবনে আর বাবার চেহারাটাও দেখার সুযোগ হবে না। কখনও যদি বাবাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হয় তার, তাহলে সে কী করবে?
মনিকে কোলে তুলে নিলেন আশরাফ সাহেব। সেও কাঁদছে। তবে বাবাকে হারিয়েছে বলে কাঁদছে না, মাকে কাঁদতে দেখে সেও কাঁদছে। বাবা নামক জিনিসটা এখনও তার কচি মনে ততটা জায়গা করে নিতে পারেনি। কিন্তু যখনই আর কেউ ফোন করে তাকে খুঁজবে না, যখনই আর কেউ ফোনের ওপাশ থেকে জিজ্ঞেস করবে না ‘আমার মামনিটা কেমন আছে, কী করছে’, তখন খুব মিস করবে সে বাবাকে। তবে কাঁদবে না। কাঁদার মতো করে ওভাবে মেশার সুযোগ হয়নি তার বাবার সাথে।
.
.
মনির বাবা মারা গেছে আজ সাতদিন হয়ে গেল। লাশটা আর দেশে আনা হয়নি তার। দেশে আনতে অনেক ফর্মালিটি অনুসরণ করতে হয়। তাই বিদেশের মাটিতেই চিরতরে শায়িত হতে হলো তাকে।
আজ তার জন্য কুলখানির আয়োজন করা হয়েছে আশরাফ সাহেবের বাড়িতে। গরিব মিসকিনদের খাওয়ানো হচ্ছে। এতিমখানার এতিম ছেলেগুলোও খাচ্ছে একপাশে বসে। সবাই খেয়ে দোয়া করবে মনির বাবার জন্য। তাদের দোয়ায় হয়তো ওপারে ভালো থাকবে সে।
বাড়ির পাশে একটা তুলাগাছে হেলান দিয়ে করুণ দৃষ্টিতে কুলখানির আয়োজন দেখছে মনির মা। তুলা গাছের উপর কয়েকটা কাক ‘কা কা’ করছে। আর দখিনা হাওয়ার প্রকোপে গাছের পাতাগুলো ঝরে ঝরে পড়ছে। হাড্ডির গন্ধ পেয়ে কয়েকটা কুকুর পায়চারি করছে আশেপাশে। পৃথিবীর সবকিছুই আপন নিয়মে চলছে, শুধু থেমে গেছে মনির মায়ের পৃথিবীটা। একটুপর মনি এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-মা, মা, আমারও খিদে লাগছে। আমিও খাবো।’
মেয়ের দিকে তাকায় মা। দুহাতে বুকে জড়িয়ে নেয় মেয়েকে। তারপর ছোটভাইকে যেতে দেখে ডাক দেয় সে,
-রায়হান, একটু এদিকে আয় তো ভাই।’
রায়হান পাশে এসে দাঁড়ায়। মেয়েকে তার হাতে দিয়ে মনির মা বলে,
-আমার মেয়েটার খিদে লেগেছে। ঐ যে এতিম ছেলে কতগুলো বসেছে, তাদের একপাশে আমার মেয়েটাকেও একটু জায়গা করে দে ভাই।’
বড় বোনের কথা শুনে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে রায়হান। বোনের কথার গভীরতা বোঝার চেষ্টা করে সে।
.
.
অন্ধকার রাত! বিদ্যুৎ চলে গেছে বলে চারপাশটা আরও বেশি অন্ধকার হয়ে গেছে। আশরাফ সাহেবের বাড়িটা অন্ধকারে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। ঘরের ভেতর দু-তিনটে ল্যাম্প জ্বলছে। পদ্মাবতী তার বড় মেয়েকে খোঁজ করে ঘরে পেলেন না। তখন তিনি একটা ল্যাম্প হাতে নিয়ে বের হলেন বাইরে। মেয়েকে খুঁজে পেলেন তুলা গাছের পাশে। দূরে ল্যাম্প জ্বালিয়ে কিছু জেলে মাছ ধরছিল। তাদের ল্যাম্পের আলোটা ক্ষীণ হয়ে দেখা যাচ্ছে। সেই আলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল সে। পদ্মাবতী মেয়ের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন,
-এখানে কী করছিস মা?’
-কিছু না মা, এমনি ঘরের ভেতর ভালো লাগছিল না তাই…
-ঠাণ্ডা লাগবে তো, গায়ে কোনো গরম কাপড়ও রাখিসনি। আয় ভেতরে আয়…
-ভেতরে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে মা। একটু প্রাণভরে বাতাস নিতে দাও। তুমি যাও, আমি আসছি।’
পদ্মাবতী আর কিছু না বলে চলে যাচ্ছিলেন। তখন মেয়ে ডাক দিলো তাকে,
-মা…
-হুমম…’ ঘুরে তাকালেন পদ্মাবতী।
-মা আমি মনির বাবাকে দেখেছি একটু আগে। আমার সাথে কথা বলেছে…’
-ওটা তোর মনের ভুল।
-সত্যি মা, ও এসেছিল। আর বললো মনির খেয়াল রাখতে। তারপর চলে গেল। কত করে দাঁড়াতে বললাম, থামলো না।’
পদ্মাবতী বুঝলেন মেয়ের শোকটা আরও বেড়ে যাচ্ছে, তাকে এভাবে একা থাকতে দেয়া ঠিক হবে না। মেয়ের হাত ধরে তিনি তাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন।
.
.
অনেকদিন লাগছে মনির মায়ের স্বাভাবিক হতে। বাড়ির সবাই মিলে তাকে আবার বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মেয়ের জীবন নষ্ট হবে ভেবে সে আর দ্বিতীয় বিয়ে করতে রাজি হয়নি। কিন্তু এক গ্রীষ্মের দিনে তার ছোট বোন ফাতেমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। কেউ ভাবেনি হঠাৎ করে ফাতেমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে। পাত্র বিদেশে থাকে। সামনের মাসে দেশে আসলেই দুজনের বিয়ে হবে। পাত্র বিদেশে থাকে শুনে আশরাফ সাহেব প্রথমে এই বিয়েতে রাজি হননি। বড় মেয়ের মতো ছোট মেয়ের জীবনটাও হোক এটা তিনি চাননি। কিন্তু পাত্র পক্ষ যখন বলে তাদের ছেলে আর বিদেশে কাটাবে না, দেশেই কোনো একটা ব্যবসায় করবে, তখন আশরাফ সাহেব আর রাজি না হয়ে পারলেন না।
মাঝেমাঝে বিদেশ থেকে ফাতেমার হবু স্বামী ফোন করে। অনেকক্ষণ ধরে কথা হয় তাদের। একজন আরেকজনকে বুঝতে শেখে। পরস্পরকে ভালো লাগতে শুরু করে। মাঝেমাঝে দুই ভাবী মিলে তাকে নিয়ে মশকারা করে। মেজ ভাবী একটু বেশি। সুযোগ ফেলেই মেজ ভাবী বলে,
-কী রে নন্দিনী, হবু স্বামীর জন্য বুঝি মন টিকছে না?’
তখন বড় ভাবীও শুরু করে,
-আর মুখ কালো করো না নন্দিনী, সামনের মাসেই তো আসছে।’
দুই ভাবীর কথার কী জবাব দেবে ভেবে পায় না ফাতেমা। সব সময় দুই ভাবীর আড়াল আড়াল থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না, দুই ভাবী ওকে ঠিকই খুঁজে বের করে মশকারা শুরু করে দেয়….’
.
.
(চলবে….)