__________জীবনের গল্প__________
লেখক: ShoheL Rana
____________পর্ব:-০৪____________
বাড়ির সামনে বড় একটা পুকুরে আশরাফ সাহেবের বড় ছেলে আমান মাছ চাষ করেছিল। আজ সেই পুকুরের পানি শুকানো হচ্ছে মাছ ধরার জন্য। বড়দের পাশাপাশি পাড়ার ছোট ছোট বাচ্চারাও লেগে গেছে পানি শুকানোর কাজে। অনেকে পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখছে দৃশ্যগুলো। মহিলারা উঁকি মারছে বাড়ির ভেতর থেকে। পাড়ে দাঁড়িয়ে আশরাফ সাহেব কাজ দেখিয়ে দিচ্ছিলেন সবাইকে।
পানি যখন শুকানো হয়ে গেছে তখন সবাই মিলে মাছ ধরে ধরে বালতি আর ডেকচিতে রাখতে শুরু করলো। ছোট বাচ্চাগুলো নগ্ন হয়ে মাছ ধরছিল, গায়ে কাদা মেখে ওদেরকে ভূতের মতো দেখাচ্ছে। রাজও কাপড় খুলে নেমে গেল মাছ ধরতে। আশরাফ সাহেব তাকে নিষেধ করেছিল। কিন্তু সে মানেনি সেই নিষেধ। এমন মজার মুহূর্ত মিস করা যাবে না। মাছ ধরার চেয়ে গায়ে কাদা মাখাতে মজা বেশি। মাছ ধরতে ধরতে বাচ্চারা একজন আরেকজনকে কাদা মেখে দিচ্ছিলো সারা শরীরে। যখন বড়দের মধ্যে কেউ বড় কোনো মাছ ধরে, তখন বাচ্চারা সবাই কাদার মধ্যে দৌড়ে যায় দেখার জন্য।
রাজের মেজ চাচ্চু জামাল বড় একটা কোরাল মাছ ধরেছে। তখন সবাই মিলে চিৎকার শুরু করে দিলো ওটা নিয়ে। কেউ কেউ মন্তব্য করলো, মাছটার ওজন সাত-আট কেজি হবে। ছোট চাচ্চুকে বড় কোনো মাছ ধরতে না দেখে রাজ বললো,
-ছোট চাচ্চু, তুমি ওরকম বড় মাছ ধরতে পারো না? মেজ চাচ্চু কত বড় মাছ ধরেছে, আর তুমি ছোট মাছও ধরতে পারো না?’
রায়হান বললো,
-তুই আগে গোসল করে আয়, তোকে ভূতের মতো লাগছে।’ কথাটি বলেই রায়হান মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রাজের কথাটা সত্যি সত্যি তার গায়ে লেগেছে।
ছোট চাচ্চুর পাশে রাজও মাছ ধরার জন্য কাদায় হাত চালালো। হঠাৎ সে জোরে চিৎকার করে উঠলো। একটা ট্যাংরা মাছের কাটা ঢুকেছে তার ডান হাতের আঙুলে। কাঁদতে কাঁদতে উঠে এলো সে পাড়ে। আশরাফ সাহেব দেখতে লাগলেন নাতির হাতটা। ফুলে গেছে আঙুল। নিচ থেকে মাছ ধরা রেখে উঠে এলো রাজের বাবা। ছেলের হাত দেখে বললো,
-তোকে কে বলেছে ওখানে নামতে?’
কিছুক্ষণ রাগ দেখালেন তিনি ছেলের উপর। তারপর ছেলেকে কোলে নিয়ে ঘরের দিকে হাঁটতে লাগলেন। পেছন থেকে আশরাফ সাহেব বললেন,
-একটা ছেড়া কাপড়ে কেরোসিন মেখে ওর আঙুলে বেঁধে দিতে বল। বিষ টেনে নেবে।”
.
.
বাড়ির উঠানে এসে আমান সাহেব স্ত্রীর নাম ধরে ডাক দিলেন। ভেতর থেকে ফাতেমা বের হয়ে এসে বললো,
-ভাবী রান্না করছে। আমাকে বলো কী করতে হবে।’
রাজকে ফাতেমার পাশে নামিয়ে আমান সাহেব বললেন,
-ওকে ধর, মাছের কাটা ঢুকছে আঙুলে। ওকে একটু গোসল করিয়ে আঙুলটাতে একটু কেরোসিন লাগিয়ে দে।’
বলেই আবার মাছ ধরতে চলে গেলেন আমান সাহেব। বাবার ভয়ে এতক্ষণ ভালো করে কাঁদতে পারেনি রাজ। বাবা চলে যেতেই আঙুলের ব্যথায় চিল্লাতে শুরু করলো সে। ফাতেমা তাকে টিউবওয়েলের কাছে নিয়ে গিয়ে বালতি থেকে পানি নিয়ে গোসল করিয়ে দিতে লাগলো। রাজ তার চিৎকার বাড়িয়ে দিলো। ফাতেমা তাকে একটা ধমক দিয়ে বললো,
-চুপ থাক। ওখানে নামার আগে মনে ছিল না মাছের কাটা আছে? এখন চিল্লাচ্ছিস কেন?
-চিল্লাবো। তোমার কী?’ বলেই কান্নার গলা আরও বাড়িয়ে দিলো রাজ। ফাতেমা হেসে বললো,
-চিল্লা… ওখানে গিয়ে আবার কাটা ফুটিয়ে আয় আঙুলে…’
রাজ কোনো কথা না বলে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো। ফাতেমা তার গায়ে সাবান মাখতে মাখতে বললো,
-কাপড় খুলে ওখানে নেমেছিস, কাটাটা নুনুতে ঢুকলে কী করতি?’
রাজের রাগ আরও বেড়ে গেল ছোট ফুফির উপর। অন্য হাত দিয়ে ফুফির চুল টেনে ছিড়তে চাইলো সে। সমানে কেঁদেও চললো। ফাতেমা হাসতে হাসতে বললো,
-আর বলবো না, আর বলবো না। চুল ছেড়ে দে আমার।’
রাজ চুল ছেড়ে দিলো ফুফির। ফাতেমা বালতির সব পানি নিয়ে ঢেলে দিলো তার গায়ে। তারপর রশি থেকে একটা তোয়ালে নিয়ে মুছে দিলো তার সারা শরীর।
রাজের কান্না তখনও থামেনি। ফাতেমা তাকে কোলে নিয়ে ভেতরে নিয়ে আসলো। তারপর একটা ছেড়া কাপড় কেরোসিনে ভিজিয়ে রাজের আঙুলে বেঁধে দিলো।
আঙুলের ব্যথা একটু কমতেই রাজ আবার গিয়ে দাঁড়ালো দাদুর পাশে। আশরাফ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
-আবার কেন এসেছিস?’
-আমার কাপড় নিতে এসেছি।’ বলে পাড়ের উপর রাখা নিজের কাপড়গুলো পরে নিলো রাজ। তারপর চুপচাপ মাছ ধরা দেখতে লাগলো। দাদু জিজ্ঞেস করলো,
-আবার নামবি ওখানে?’
-না..’ মাথা দুলালো রাজ। আশরাফ সাহেব হেসে নাতিকে কোলে তুলে নিলেন।
দুপুরের আগেই পুকুরের সব মাছ ধরা শেষ। বাড়ির উঠানে জমা করে রাখা হয়ছে মাছগুলো। এখান থেকে কিছু খাওয়ার জন্য রেখে বাকি সব বিক্রি করা হবে। যারা মাছ ধরতে সাহায্য করেছে, তাদেরকেও এক কেজি-দু কেজি করে দেওয়া হলো। তারপর কিছু মাছ খাওয়ার জন্য আলাদা করে বাকি সব একটা ড্রামে বরফ দিয়ে রেখে ভ্যানে তুলে দিলেন আমান সাহেব।
.
.
রাতে আয়েশা বেগম ছেলেকে আদর করে ভাত খাইয়ে দিচ্ছিলেন। সাধারণত দাদুর পাশেই খেতে বসে রাজ। কিন্তু হাতে ব্যথা পেয়েছে বলেই তার মা নিজ হাতে খাওয়াচ্ছে ছেলেকে। তা দেখে বীথি বললো,
-মা, আমাকেও খাওয়াই দাও।’
-তোর আবার কী হয়ছে? তুই তো নিজেই খেতে পারিস।’ বললেন আয়েশা বেগম।
-খাওয়াই না দিলে খাবো না আমি। আমি দেখেছি মাছ বড়টা ভাইয়াকে দিছো তুমি, আমি কিছু বলিনি।
-ও মাছ ধরতে গিয়ে হাতে ব্যথা পায়ছে, তাই ওকে বড় মাছটা দিয়েছি।
-আমি খাবো না, আমাকেও খাওয়াই দাও।’
মেয়ের কথা শুনে ভেতর থেকে আমান সাহেব বললেন,
-এদিকে আয় মা, আমি খাওয়াই দিবো তোকে।’
বীথি ভাতের প্লেটটা নিয়ে বাবার কাছে গেল। আয়েশা বেগম একটা বাটিতে করে পানি নিয়ে গেলেন হাত ধোয়ার জন্য। আমান সাহেব বাটির পানিতে হাত ধুয়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করে খাওয়াতে লাগলেন। চুপচাপ বাবার হাতে খেতে লাগলো বীথি।
.
.
♥ছয়♥
বিদেশ থেকে ফাতেমার হবু স্বামী এসে পৌঁছেছে আগেরদিন। আজ ফাতেমাকে দেখতে আসবে সে। তাই আশরাফ সাহেবের বাড়িতে নানা রকম খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। বাড়িঘর, উঠান-আঙ্গিনা সব পরিষ্কার করা হয়েছে। ফাতেমা সেজেগোজে বসে আছে হবু স্বামীর মুখোমুখি হওয়ার জন্য। একটা নীল শাড়ি পরেছে সে, কপালে একটা টিপও পরেছে। যত সময় গড়াচ্ছে, তার বুকের হার্টবিট ততো বেড়ে যাচ্ছে। ও যদি সামনে আসে, তাহলে কী করবে সে? কীভাবে কথা বলবে? ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে উঠে ফাতেমার মুখ।
ঘরের ভেতর বসে জানালা দিয়ে দূরের পথে তাকিয়ে আছে সে। যখনই কোনো ট্যাক্সি আসতে দেখে, ওর বুকটা ধকধক করে উঠে। মনটা নেচে উঠে খুশিতে। কিন্তু ট্যাক্সিটা যখন ওদের বাড়িকে ক্রস করে চলে যায়, তখন ওর মনটা বিষণ্ণতায় রূপ নেই।
বাইরের উঠোনে রোদের উজ্জ্বল ছাপটা মুছে গেছে। ওখান মেঘের কালো ছাপ পড়েছে হঠাৎ। হয়তো বৃষ্টি হবে আজ।
বাইরে বের হলো ফাতেমা। হালকা বৃষ্টির ফোটা পড়ছে দেখে মনটা খারাপ হতে থাকে তার। যদি বৃষ্টির কারণে ও আজ না আসে! আজ একটা দিন বৃষ্টি না হলে কী হতো?
আকাশে মেঘ গর্জে উঠলো হঠাৎ। চারপাশ আরও আঁধার হতে শুরু করেছে। দক্ষিণ দিক থেকে বাতাসের বেগ বাড়তে লাগলো। বাতাসে গাছগুলো দুলতে লাগলো। সেই সাথে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো আকাশ থেকে। রাস্তায় কয়েকজনকে দৌড়াতে দেখা গেল বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য। ফাতেমা আবার জানালার পাশে এসে বসলো মন খারাপ করে। আজ মনে হয় আর আসবে না ও। তবুও অপেক্ষা করতে লাগলো সে। আচ্ছা, যদি আসে? তাহলে প্রথমে পা ছুঁয়ে সালাম করবে? না, না, বিয়ের আগে সে পা ছুঁয়ে সালাম করবে না। তাহলে কী করবে? সামনেই আসবে না সে। শুধু লুকিয়ে মনের মানুষটাকে দেখবে। আচ্ছা, দেখতে কেমন হবে সে? ফাতেমা ওকে দেখেনি, তবে মনে মনে ওর একটা ছবি মনের ক্যাম্পাসে পরম যত্নে এঁকেছে। লম্বা আর স্বাস্থ্যবান হবে ও। আর চেহারাটা হবে মায়াবী। লম্বা ছেলেগুলোকে খুব পছন্দ ফাতেমার। ক্লাস টেনের শেষের দিকে এসে ওদের ক্লাসে একটা ছেলে ভর্তি হয়েছিল। দেখতে লম্বা, ফর্সা আর স্বাস্থ্যবান। ওকে ফাতেমার খুব ভালো লাগতো। প্রতিদিন স্কুলে গেলে ছেলেটাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো সে। কিন্তু কখনও কথা হয়নি ছেলেটার সাথে। ওর ভালো লাগার কথাও জানানো হয়নি তাকে। মেট্রিক পরীক্ষা শেষে ছেলেটার সাথে আর দেখা হয়নি কখনও। শুনেছে শহরের একটা কলেজে ভর্তি হয়েছে সে। কিন্তু মেট্রিকের পর ফাতেমা আর পড়েনি। সেই থেকে লম্বা ছেলের প্রতি দুর্বল সে। মনে মনে ভাবে যার সাথে বিয়ে হবে তার, সেই ছেলেটাও লম্বা হবে।
ঝুমঝুম করে বৃষ্টি পড়তে লাগলো মুষলধারে। আয়েশা আর ইয়াসমিন ঘরের চালের নিচে বালতি আর কলস বসিয়ে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করছিল। জানালার পাশে ননদকে গভীর চিন্তায় মগ্ন দেখে দুজন এগিয়ে গেল। দুজন দুপাশে ননদকে ঘিরে ধরে ইয়ার্কি করে বললো,
-ননদের বুঝি আর তর সইছে না? ইশ! বৃষ্টি এসে আমাদের ননদটার মন ভেঙে দিয়েছে।’
ফাতেমা হেসে বললো,
-ভাবী ভালো হচ্ছে না কিন্তু। যাও তোমরা…
-কেন যাবো? ননদের এমন কষ্টের মুহূর্তে আমরা কি চলে যেতে পারি?’ বলেই ননদের পাশে বসলো মেজ ভাবী। বড় ভাবীও বসতে বসতে বললো,
-মনে হয় একটু পর আমাদের ননদটার চোখ বেয়েও বৃষ্টি পড়বে ওভাবে।
-উফ! ভাবী তোমরা না… একটু কি শান্তি দেবে না আমাকে?
-শান্তি দেওয়ার মানুষ কি আমরা? যার শান্তি দেওয়ার কথা সে তো বৃষ্টিতে আটকে গেছে।’ বলেই বড় ভাবীর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলো মেজ ভাবী।
তখন বড় ভাবী মেজ ভাবীকে বললো,
-ইয়াসমিন আমরা কী করবো জানো, ওকে আর ওর হবু বরকে একটা আলাদা রুমে ঢুকিয়ে বাহির থেকে তালা মেরে দিবো। ওখানে যা খুশি করুক, ইচ্ছে হলে কামড়াকামড়ি করুক।
-ছিঃ লজ্জা নাই তোমাদের।’
দুই ভাবী একসাথে হেসে উঠে ওর কথা শুনে। হাসতে হাসতে বড় ভাবী বললো,
-বরের আদর যখন পাবে, তোমারও আর লজ্জা থাকবে না।
-বেশরম কোথাকার!’ মুখে এ কথা বললেও ভাবীদের কথাগুলো শুনতে ভালোই লাগে ফাতেমার। মুখে ভাবীদের নিষেধ করলেও মনে মনে চাই ভাবীরা যেন এরকম কথা আরও বলুক।
ইয়াসমিন ননদের গালে গাল ঠেকালো। তারপর বললো,
-ননদটা আজ খুব সেজেছিল। হবু বরকে দেখাবে বলে নীল শাড়ির সাথে ম্যাচ করে টিপও পরেছে। সব কি তাহলে ব্যর্থ হলো?’
তার কথা শেষ হতেই দূর থেকে একটা ট্যাক্সি ঢুকতে দেখা গেল গ্রামে। ফাতেমা মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলো, এটা যেন ও হয়…’
বড় ভাবী চোখ বড় বড় করে তাকালো ননদের দিকে। তারপর বললো,
-এত খুশি হয়ো না নন্দিনী, ওটা তোমার বর না… ও আজ আর আসবে না।
-অলুক্ষণে কথা বলো না তো ভাবী।’ বলেই লজ্জায় হেসে দিলো ফাতেমা। দুই ভাবী ওর দুই গাল টেনে বললো,
-ওরে… লজ্জা পাচ্ছে নন্দিনী।’
.
.
অবশেষে ট্যাক্সিটা এসে থামলো আশরাফ সাহেবের বাড়ির সামনে। ট্যাক্সিটা থামতেই দুইভাবী ফাতেমাকে নিয়ে চিল্লায় উঠলো। ফাতেমা দৌড়ে একটা রুমে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো।
রায়হান ছাতা নিয়ে বের হলো বাড়ির হবু জামাইকে আনতে। জামাইয়ের সাথে আরও দুজন বন্ধু এসেছে। রায়হান তিনজনকে নিয়েই ঘরে ফিরলো। ওরা অনেক নাস্তা নিয়ে এসেছে। নাস্তার প্যাকেটগুলো ভেতরে নিয়ে যেতেই রাজ, বিথী আর মনি ঘুরঘুর করতে লাগলো প্যাকেটগুলোর পাশে। পদ্মাবতী প্যাকেটগুলো খুলে তিনজনের হাতে জিলাপি, মিষ্টি, আপেল, কমলা ভাগ করে দিলেন। ওরা এতেই খুশি।
ওদিকে আয়েশা আর ইয়াসমিন ননদের রুমে গিয়ে ঠোকা দিতে লাগলো।
-ফাতেমা, দরজা খুলো, ফাতেমা….’ চাপাস্বরে ডাকলো আয়েশা। ভেতর থেকে ফাতেমা জবাব দিলো,
-খুলবো না…’
-না খুলে যাবে কোথায়? এখন না খুললেও পরে তো খুলতে হবে।
-পরেরটা পরে দেখা যাবে।’
এবার ইয়াসমিন বললো,
-ফাতেমা তোমার বরটা তো খুব সুন্দর!’
-খবরদার ওর দিকে নজর দিবা না তোমরা। হুমম…’
-দরজা না খুললো তো নজর দিতেই হবে।’
সাথে সাথে দরজা খুললো ফাতেমা। দুইভাবী তখন হেসে উঠে বললো,
-ইশ! কী লজ্জা! কী লজ্জা! যাও, হবু বরটাকে দেখে আসো।”
ফাতেমা লজ্জায় মুখে হাত দিয়ে ভাবীদের পাশ কাটিয়ে চলে এলো। ড্রয়িংরুমে বসেছিল তার হবু বর ও বরের বন্ধুরা। তাদের সাথে বসে বাবা কথা বলছে। ফাতেমা লুকিয়ে ওদের দেখতে লাগলো। হবু বরকে আগে না দেখলেও ভাব ভঙ্গিমায় ওকে চিনে নিলো ফাতেমা। দেখতে বেশ আছে। ও পাড়ার সেলিনা সুন্দর বর পেয়েছে বলে পাড়ার সবাই ওর বরের কত প্রশংসা করেছিল। এখন নিশ্চয়ই তার বরেরও প্রশংসা করবে সবাই। ভাবতেই বুকের ভেতর অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে ফাতেমার। দুইভাবী এসে ওর দুহাত ধরে বলে,
-হয়েছে, অনেক দেখছো। আর দেখতে হবে না।’
-উফ ভাবী, এমন করো কেন? আর একটু দেখতে দাও না?’
বড় ভাবী জিজ্ঞেস করে,
-বর পছন্দ হয়েছে?
-হুমম…’ লজ্জায় মুখ ঢাকে ফাতেমা
.
.
বিকেলের দিকে খানাপিনা শেষ করার পর ফাতেমা আর ফাতেমার হবু বরকে একটা রুমে আলাদা কথা বলতে দেয়া হয়। ফাতেমা খুব লজ্জা পাচ্ছে হবু বরের সামনে বসে। লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে সে। লজ্জা পেলেও তার খুব ভালো লাগছে। ওর হবু বরের নাম মাহফুজ। মাহফুজের সবকিছু ঠিক থাকলে ও দেখতে তেমন লম্বা না। এই জন্য ফাতেমার মন কিছুটা খারাপ। লম্বা ছেলেকে বর হিসেবে পাওয়ার স্বপ্ন দেখে এসেছে সে, কিন্তু কপালে নেই, কী করবে! যা জুটতে চলেছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে, তবে তাও কম না! ছেলের চেহারাটা যথেষ্ট মায়াবী। তাকালেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়।
প্রথম মাহফুজই কথা বলা শুরু করলো,
-যা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে তুমি ঢের বেশি সুন্দরী।’
ওর কথা শুনে আরও বেশি লজ্জা পেতে শুরু করলো ফাতেমা। কী উত্তর দেবে সে বুঝতে পারলো না। তাই চুপ করে রইলো। মাহফুজ আবার জিজ্ঞেস করলো,
-আমাকে পছন্দ হয়েছে তোমার?
-হুমম… খুব…’
-আমার দিকে তাকিয়ে বলো।’
-খুব পছন্দ হয়েছে।’ মাহফুজের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে ফেললো ফাতেমা। বুকের ভেতর ধকধক করছে তার। মাহফুজ তার থুতনি স্পর্শ করলো। সাথে সাথে কেঁপে উঠলো সে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। মাহফুজ তার থুতনি ধরে মুখটা তুলতেই চোখ বন্ধ করে ফেললো সে। সরাসরি তাকাতে পারবে না সে মাহফুজের দিকে।
.
.
(চলবে…)