__________জীবনের গল্প__________
লেখক: ShoheL Rana
____________পর্ব:-১৩___________
রাজ ধাক্কা দিলো মনিকে। পড়তে পড়তে দাঁড়িয়ে পড়লো মনি। তারপর রাজের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙ্গিয়ে চলে গেল সে। রাজ এক পা গাছের সাথে ঠেসে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। গাছের উপরে ছিল কাকের বাসা। একটা কাক উপর থেকে মল ফেললো রাজের উপর। তারপর ‘কা কা’ করে উড়ে গেল। খুব রাগ হলো রাজের। কাকটা তার গায়ের শার্টটা নষ্ট করে দিয়েছে। মাথায় হাত দিয়ে দেখলো ওখানে আরও বেশি মল। এখন যদি রিতা এসে দেখে, সর্বনাশ হয়ে যাবে।
বীথি তখন পুকুরে চাউল ধুতে যাচ্ছিল। ওকে ডাকলো রাজ,
-এই বীথি, এদিকে আয়…’
-কী?’ চাউল থেকে ধান বাছতে বাছতে বললো বীথি।
রাজ তার শার্টটা খুলে বীথির হাতে দিয়ে বললো,
-আমার শার্টটা একটু ধুয়ে দে না?
-পারবো না আমি, আমার আর খেয়ে ধেয়ে কাজ নাই।
-আমার লক্ষ্মী বোন, আদরের বোন, ধুয়ে দে না একটু?’ অনুনয় করতে লাগলো রাজ।
-ঠিক আছে, ঠিক আছে। ঘাটে রেখে আয়, আমি ধুয়ে দিবো।’
রাজ শার্টটা পুকুরঘাটে রেখে ঝাপ দিলো পুকুরে। আগের মতো ছোট নেই সে এখন আর। পুকুরের এ পাশ থেকে ওপাশে এক ডুবে চলে যেতে পারে সে। একটা ডুব দিয়ে যখন সে পানির উপরে মাথা তুললো, তখন বীথির রাগান্বিত কণ্ঠ ভেসে এলো,
-সব পানি ঘোলা করে দিছিস, এখন আমি চাউল ধুবো কী করে?
-টিউবওয়েলে যা। ওখানে ধু।
-হুহ, পারবো না।’ কথাটি বললেও বীথি টিউবওয়েলেই ধুতে চললো চাউল। পেছন থেকে রাজ বললো,
-বীথি আমার জন্য একটা লুঙ্গি আর গেঞ্জি আনিস…
-পারবো না…’ চলতে চলতে জবাব দিলো বীথি। রাজ নিশ্চিন্তে আবার ডুব দিলো পানিতে। সে জানে তার বোন ঠিকই তার জন্য পাল্টানোর কাপড় নিয়ে আসবে।
.
আরও কিছুক্ষণ পানিতে সাঁতার কাটলো রাজ। তারপর বীথি এলো তার জন্য কাপড় নিয়ে। সাথে রিতাও এসেছে। রাজকে সাঁতার কাটতে দেখে উপর থেকে জিজ্ঞেস করলো সে,
-কেমন লাগছে?’
-খুব মজা। তুমি আসবা?’
-না।’ হেসে দিলো রিতা। তারপর একটা ঢিলা তুলে নিয়ে সে জিজ্ঞেস করলো,
-এটা ব্যাঙ যাবে নাকি সাপ যাবে বলো তো?’
-ব্যাঙ ব্যাঙ।
-বীথি তুই বল কী যাবে?’ উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো সে বীথির দিকে। বীথি উচ্চারণ করলো,
-সাপ…’
-দেখি কার কথা ঠিক হয়। বলেই ঢিলাটা পুকুরের পানিতে ছুড়ে মারলো রিতা। ওটা ব্যাঙের মতো কয়েকবার লাফালো পানিতে। রাজ খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো,
-ইয়েহ, আমারটা ঠিক হয়েছে, আমারটা ঠিক হয়েছে।’ বলেই পাড়ে উঠে এলো সে। কাঁপতে লাগলো ঠাণ্ডায়। দাঁতের সাথে দাঁত বাড়ি খাচ্ছিল তার। এবার সেও একটা ঢিলা তুলে নিয়ে বললো,
-এটা ব্যাঙ যাবে নাকি সাপ যাবে বলো।
-সাপ যাবে।’ রিতা বললো। কিন্তু বীথি বললো,
-ব্যাঙ যাবে।’
তখন রাজ ইচ্ছে করেই ঢিলাটা পানিতে এমনভাবে ছুড়লো, যাতে ব্যাঙের মতো না লাফায়। রিতার কথা ঠিক হয়েছে দেখে সে খুশি হলো। হেসে উঠলো জোরে। তখন অসাবধানতায় পানিতে পড়ে যায় সে। তাকে পড়ে যেতে দেখে হেসে উঠে রাজ ও বীথি। রিতা নিজে আরও বেশি হাসতে লাগলো পড়ে যাওয়ায়। রাজ আবার ঝাপ দিলো পুকুরে। দুজনে পুকুরে সাঁতার কাটতে লাগলো তারপর। আর বীথি ঘাটে বসে রাজের শার্টে সাবান মাখতে লাগলো।
তুলাগাছের আড়াল থেকে কিছুক্ষণ ওদের সাঁতার কাটা দেখে মুখ মলিন করে চলে গেল মনি।
রাতে যখন একা পেল রাজকে, মনি একটা সরিষার তেলের বোতল নিয়ে এসে বললো,
-এদিকে আয়, তোর হাত পায়ে তেল মালিশ করে দিই…
-উল্টাপাল্টা কী বলছিস এসব? যা এখান থেকে।
-কেন? আজ তো খুব ব্যাঙের মতো লাফাইছিস, হাত পা ভাঙেনি? মালিশ করতে হবে না?
-তুইও লাফা যা, তারপর তেল মালিশ করিস।’ বলেই হাত ধরে রুম থেকে বের করে দিলো মনিকে। তারপর দরজা আটকে দিলো। মনি কিছুক্ষণ ‘রাজ রাজ’ বলে চিল্লাইয়া দরজায় বাড়ি মারলো। তারপর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে ওড়না দিয়ে চোখ মুছলো। দরজা খুললো না রাজ। আরও কিছুক্ষণ দরজার সামনে অপেক্ষা করে চলে গেল মনি।
.
.
এরপর থেকে রিতাকে আর পছন্দ করে না মনি। অপেক্ষা করতে থাকে কবে চলে যায় এরা। কিন্তু পরদিনও যায় না। পরদিন রিতাকে আরও ঘনিষ্ঠ হতে দেখা যায় রাজের সাথে। রাজের সাথে নৌকায় চড়তে যায় রিতা। রাগে ফুঁসতে থাকে মনি। মনে মনে দুজনের উদ্দেশ্যে বলে,
-তোরা দুজন খারাপ, খুব খারাপ।’
মনির রাগটা আরও বেড়ে গেল, যখন সে দেখলো, সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলে বসে রিতা রাজের খাতা নিয়ে কী যেন লেখালেখি করছে। দেখেই মনির ইচ্ছে হলো শালির চুল ধরে আছড়াতে। খুব বাড় বেড়েছিস শালি। এখন রাজের খাতায় প্রেমপত্র লিখছিস? দাঁড়া তোকে হাতে নাতে ধরছি। চুপিচুপি ওর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো মনি। কেউ এসেছে বুঝতে পেরে রিতা তাড়াতাড়ি খাতার পৃষ্ঠাটা ছিড়ে লুকিয়ে ফেললো। চমকে তাকালো পেছনে। মনিকে দেখে বললো,
-ওহ তুই? আমি ভাবলাম অন্য কেউ।
-কেন? এখন আমাকে দেখে বুঝি খুশি হসনি?
-না, না, তা নয়। আমি ভাবছিলাম রাজ এসেছে।
-তো রাজ এলে কী হয়েছে? ওর সামনে কী লুকাতে চাইছিস দেখি…
-আরে কিছু না। একটা ছবি আঁকতে চাইছি, দেখ…’ বলেই রিতা হাতের কাগজটা খুলে দেখালো। ওখানে সে একটা ছেলে আর একটা মেয়ের বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্য আঁকার চেষ্টা করেছে। অন্য কেউ হলে রিতার প্রতিভার প্রশংসা করতো। কিন্তু মনি প্রশংসা না করে উল্টো বললো,
-ছিঃ, এত বিশ্রী ছবি আঁকিস তুই। এসব তোকে দিয়ে হবে না। আরও ভালো ছবি আঁকতে হবে।
-একটু রং করলে ছবিটা সুন্দর লাগতো। রং আছে তোদের বাসায়?’ ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করলো রিতা। ওর হাসিটাও সহ্য হচ্ছে না মনির। রাগটাকে বুঝতে না দিয়ে সে বললো,
-না, না, ওসব রং-তং রাখি না আমাদের বাসায়। পড়ারই সময় পাই না, আবার ছবি আঁকবো?’
-ঠিক আছে, লাগবে না।
-আচ্ছা…’ বলেই ঘুরে দাঁড়ালো মনি। পাশেই বইয়ের তাকে ছিল রাজের ছবি আঁকার রং বাক্সটা। যাওয়ার সময় ওটা হাতে নিয়ে বের হয়ে গেল সে। আর রিতা আবার তার কাজে মন দিলো।
.
.
(চলবে…..)
.
.
(একটু ছোট হয়ে গেল। ম্যানেজ করে পড়ে নাও….)