#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট২০
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
.
আরদ্ধর অফিসের ছাদে রেলিং ধরে দারিয়ে আছি আমি। আরদ্ধ পাশে বসে স্যান্ডউইচ খাচ্ছে আর ল্যাপটপে কাজ করছে।ওকে দেখে মনেই হচ্ছে না যে কিছু হয়েছে।সব কিছু নরমাল।ওর সবটুকু মনযোগ এখন খাবার আর কাজের দিকে। আমি শান্তচোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।স্যান্ডউইচ এর শেষ বাইটটা মুখে পুরে চাবাতে চাবাতে বলল
– আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ ভরবে পেট ভরবে না।হু
বলে আরদ্ধ আমার দিকে একটা স্যান্ডউইচ বাড়িয়ে দিল।আমি ছোট্ট একটা দম ফেলে আরদ্ধের হাত থেকে স্যান্ডউইচ নিয়ে কামড় বসালাম।
আমি জানি নিজ থেকে যতক্ষন না জিজ্ঞেস করব আরদ্ধ আমাকে কিছুই বলবে না।তাই কোনমতে স্যান্ডউইচ টা অর্ধেক শেষ করে বলে উঠলাম
– আরদ্ধ তুমি আলিশার….
-সব ডিটেইলস কিভাবে পেলাম তাই তো?
আমি তখনো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি আরদ্ধের দিকে।
আরদ্ধ ল্যাপটপ থেকে মাথা না তুলেই বলল
– ইনা তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছ আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এ গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি।আমার কোম্পানির বড় একটা সাইট কাজ করে হোয়াট হ্যাকিং করে ডেটা সিকিউরিটি বাড়াতে।জিসার ফোন বা সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট হ্যাক করা আমার জন্যে বাম হাতের খেলা।আমি জিসার ফোন নাম্বার আর কিছু পিক আমার এক স্টাফকে সেন্ড করলাম। আমি নিজে ওর ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করলাম।ততক্ষনে আরও বেশ কিছু ছবি আর ইনফরমেশন আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে ফরওয়ার্ড করা হয়ে গেছে।ব্যাস আর কি লাগে!বাকিটা তো জানোই।
আরদ্ধর কথাশুনে বিষম খেলাম আমি।এই ছেলে এত ফাস্ট কেন!
আরদ্ধ আমার দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল
-আর হ্যা জিসার রিয়েকশন দেখেই বুঝা যাচ্ছিল ও এই বিয়ে নিয়ে সিরিয়াস না।বিয়ের ব্যাপারে ও আগে থেকেই জানতো। আর এটাও ভালো করে জানতো ওর বাবা ওর বিয়েটা দিচ্ছে তার বিজনেস প্রফিটের জন্য।তাই সে বিয়েটাকে কন্ট্রাক্ট হিসেবে নিয়েছিল।তা না হলে চেনা নেই জানা নেই হুট করে একটা ছেলেকে কোন মেয়েই প্রথম দেখায় বিয়ে করতে রাজী হবে না।স্পেশালি সভ্যতার চাদরে ঢাকা সো কলড মডার্ন মেয়েরা।
আমি মাথা নামিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলাম
-তোমার মত ছেলেকে পেলে যে কেউ বিয়ে করতে এক পায়ে রাজী থাকবে।
-কই তুমি তো রাজী হও নি।সুন্দরমত প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলে।
আরদ্ধের কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি।কোন রকমে সামাল দিতে বললাম
– সব মেয়ে তো আর ইনা না আরদ্ধ।
আরদ্ধ কোল থেকে ল্যাপটপ্টা নামিয়ে রেখে আমার দিকে ফিরে বলল
– এই জন্যে সব মেয়েকে আমি কাউন্ট করি না। আমার দুনিয়ায় শুধু একটাই মেয়ে। আর সেটা হল ইনায়াত।
আরদ্ধ বেশ সিরিয়াস হয়ে গেছে।ওর চোখ মুখে একটা চাপা ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে।আমি বেশ টের পাচ্ছি আরদ্ধ যে কোন সময় ভয়ংকর কিছু একটা করে বসতে পারে।পরিস্থিতি সামলাতে হালকা হাসার চেস্টা করলাম আমি।
-হেহে..আরদ্ধ আসলে…
-প্রথম দিন যেদিন না করেছিলে ইচ্ছে করছিল অইখানে জাপটে ধরে ঠোট দুটোতে কামড় বসাই।নিজেকে যে কিভাবে কনট্রোল করেছিলাম আল্লাহ ভালো জানেন।মাঝে মধ্যে তোমার কথা শুনে এতটা রাগ ওঠে।তখন বাউন্ডারি ছিল বাট এখন নাই৷
আরদ্ধের কথা শুনে চোখ বড়বড় করলাম আমি।কোন কিছু বুঝে ঊঠার আগেই আরদ্ধ ছো মেরে আমার ঠোট দুটো নিজের দখলে করে নিল।দুহাতে কোমড় জাপটে মিশিয়ে নিল আমাকে নিজের সাথে। আমি ছাড়ানোর চেস্টা করলাম না। ভালোবাসার মানুষের আলিংগন থেকে মুক্ত হতে নেই। ওমন সুখ একবার হারালে দ্বিতীয়বার পাওয়া দায়।
.
.
সময় তার আপন ধারায় প্রবাহমান। দিন,মাস বছর কোনটিই কারও জন্য স্থায়ী না।প্রোজেক্টের কাজ শেষ প্রায়।সবকিছুই রেডি শুধু ফাইনাল টাচ দিয়ে সাবমিশনবাকি।আমার ভাগের সব টুকু কাজ আমি শেষ করে দিয়েছি। এখন শুধু প্রোডাকশন হাউজে ঝামেলা না হলেই অল সেট। কাজের চাপ এখনো খুব একটা কমেনি।সব কিছু এক হাতে সামলানো চাট্টি খানির কথা না। ঘরে বসে ল্যাপটপের কাজ করছি। এক ফাকে বাবা এসে রুমে ঢুকলেন।
বাবাকে দেখে নড়েচড়ে বসলাম আমি।ঘড়ির কাটায় রাত ১১টা বাজে।এত রাতে বাবা খুব একটা আসেন না আমার কাছে জরুরি কাজ ছাড়া।বাবা চুপচাপ এসে একটা চেয়ার টেনে বসলেন।আমি বাবার দিকে ফিরে বললাম
-কিছু বলবে বাবা?
বাবা কোন ভূমিকা না করেই ছোট্ট একটা দম ফেলে বললেন
-তোর বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছিলাম।
বাবার কথা শুনে বেশ দমে গেলাম আমি।অজানা একটা ভয় হুট করে গ্রাস কর নিল আমাকে।কাপা কাপা গলায় বললাম
-হ্যা বাবা বলো।
বাবা বাম হাতে চশমাটা ঠিক করে বললেন
-তুই যে ছেলেটাকে নিয়ে এসেছিলি। কি জানি নাম ওর।
-আরদ্ধ…..
-হ্যা হ্যা আরদ্ধ। ছেলেটাকে আরেকবার আমার সাথে দেখা করতে বলিস তো। ওর বাবার সাথে কথা বলা দরকার বিয়ের ব্যাপারে।
– আচ্ছা বাবা বলব।আরদ্ধ কালকে এসে তোমার সাথে দেখা করে যাবেনে।
– না না। বাসায় আসার দরকার নাই।বাইরে কোথাও বা ওর অফিসে হলেই হবে।আমি নিজে যাব। তুই শুধু বলে রাখিস তাহলেই হবে।আর তোর যাওয়ারও দরকার নেই। তুই তোর কাজ শেষ কর জলদি। বাকিটা আমি সামলে নেব।
কথাগুলো বলে বাবা আর থামলেন না।হুরাহুড়ি করে বের হয়ে চলে গেলেন।
বাবার কথাগুলো শুনে খুশি হওয়ার কথা আমার। কিন্তু আমি কেন জানি শান্তি পাচ্ছিনা।মনের ভিতরে কোথাও একটা অস্বস্তি কাজ করছে প্রতি মুহুর্তে।মনে হচ্ছে যা ছিল ভালো ছিল।এভাবেই চলে যেত অনন্ত কাল। নাহ ওসব বেখেয়ালি মনের চিন্তা।সব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে আরদ্ধকে সব ডিটেইলস ম্যাসেজ করলাম।আরদ্ধ ছোট্ট করে রিপ্লাই দিল
-Don’t worry.I’ll manage.Love you🖤
চলবে…
{ইদের জন্যে বেশ ব্যস্ত আছি তাই খুব বেশি বড় করে দিতে পারিনি। নেক্সট পার্ট ইন শা আল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি দিব।ইদ মুবারক সবাইকে।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন}