জেদ” পর্ব-২১

0
908

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট২১
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.

আরদ্ধ বেশ কিছুক্ষন থেকে আমার হাতদুটো শক্ত করে চেপে ধরে আছে। এক সেকেন্ড এর জন্যেও ছাড়ছে।পকেটে ওর ফোনটা বেশ কয়েকবার বাজতে বাজতে ক্লান্ত হয়ে থেমে গেল।আরদ্ধর সেই দিকে নজর নেই। সে চুপচাপ মাথা নুইয়ে বসে আছে।আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা ছেলেটা এরকম বিহেব কেন করছে।
-Aroddho! Is everything all right?
আরদ্ধ কোন কথা না বলে চুপচাপ বসে আছে।
আরদ্ধ আমার কথার জবাব না দিয়ে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে আমার হাতে তার মোবাইলটা ধরিয়ে দিল।স্ক্রীনের দিকে চোখ ফেলতেই দেখতে পেলাম বাবা আরদ্ধের অফিসে গিয়ে প্রবেশ করছেন।রিসিপশনে পৌছানো মাত্রই আরদ্ধর পিএ বাবাকে আরদ্ধের কেবিনে নিয়ে গেলেন ।আরদ্ধ বাবাকে দেখা মাত্রই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়াল।এতক্ষনের পুরো ঘটনাই 2xমোশনে চলছিল।এবার যেন সবকিছু স্বাভাবিক হল।বাবাকে দেখা মাত্রি আরদ্ধ সালাম দিয়ে উঠে এল।বাবা সালামের জবাব দিলেন কিনা কে জানে শুধু মাথা নাড়ালেন হালকা করে।চেয়ারের দিকে এগুতে এগুতে বাবা মাথা ঘুরিয়ে চারদিকটা বেশ ভালো করে দেখে নিলেন ।তারপর মাথা দোলাতে দোলাতে বললেন
-তা অফিস তো বেশ ভালোই সাজিয়েছ।
আরদ্ধ হালকা হেসে বলল
-আমি কখনোই সাজ গোজে ছিলাম না স্যার।আমার সবকিছুই যান্ত্রিক ভাবে গোছানো ছিল।সাজগোজের সম্পূর্ন ক্রেডিট ইনায়াতের।
আরদ্ধর কথা বাবা শুনেও না শুনার ভান করে বললেন
-তো বাবা আমি এসেছিলাম মূলত তোমার ফ্যামিলির খোজ নিতে ।ইনায়াতকে বলেছিলাম তোমাকে যাতে বলে তোমার বাবার সাথে আমি কথা বলতে চাই।
-জ্বি স্যার ।ইনায়াত আমাকে বলেছে ।But unfortunately বাবা বিজনেসের কাজে এখন Romania তে আছেন।সেখানে উনার সাইটের কিছু কাজ পেন্ডিং আছে।আমি উনাকে জানিয়েছি ।উনি দেশে ফিরা মাত্রই আপনার সাথে দেখা করবেন as soon as possible.
বাবা চশমা ঠিক করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন
-উনার মানে! ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।
-স্যার আমার বাবার বিজনেস উনি নিজে সামলাম ।সেটা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই।আপনি যেখানে বসে আছেন এই অফিস আমার নিজের পরিশ্রমে করা।গ্রাজুয়েশন এর শুরুতেই আমি এই প্রোজেক্ট দাড় করিয়েছিলাম।নিজের পরিশ্রমে আজ আমি এইখানে পৌছেছি।
-আর তোমার মা?
-She died when I was 4.
-তাহলে তুমি বড় হয়েছ কার কাছে?
-বাবার টাকার অভাব ছিল না ।একজন মা না থাকলে ছেলের জন্যে দশটা মা কিনা তার জন্যে অসম্ভব কিছু ছিল না।আমার দুই জন আয়া ছিলেন ।তাদের কাছেই বড় হয়েছি।স্কুল লাইফ শেষ করে কলেজের জন্যে পাড়ি দিয়েছিলাম আমেরিকায় ।তার পর থেকেই নিজেই নিজেকে সামলিয়েছি ।
-বেশ বেশ ।তোমার বাবার নাম কি যেন!
আরদ্ধ হাসিটা একটূ টেনে বলল
-আহমাদ রেজান।
নাম শুনে বাবা যেন চমকে উঠলেন ।ঠিক যেন এই জিনিসটারই ভয় করেছিলাম আমি ।বাবা যেন আকাশ থেকে পড়লেন।অত্যন্ত বিষ্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
-তুমি আহমেদ রেজানের ছেলে?
বাবার কথার আরদ্ধের কোন ভাবান্তর হল না ।সে স্বাভাবিকভাবেই জবাব দিল
-জ্বি ।
বাবা এবার গম্ভীর ভাবে জানতে চাইলেন
-তোমার বাবা জানেন ইনায়াতের কথা?
-জ্বী জানেন।বরং বাবা বেশ বিগত এক বছর থেকেই আমার বিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।আমি তখনই বাবাকে ইনায়াতের কথা জানিয়েছিলাম।বাবার ইচ্ছা ছিল আপনার সাথে কথা বলে এত দিনে বিয়ের কাজটা সেরে ফেলা কিন্তু আমি ইনায়াতের মতের বিরুদ্ধে যেতে চাইনি।
.
.

বাবা এবার একটু নড়ে চড়ে বসলেন ।বেশ অস্বস্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
-আচ্ছা তোমার মা কি মারা গিয়েছিলেন নাকি….!
-বাবা মায়ের বিয়েটা এরেঞ্জ ম্যারেজ হয়েছিল ঠিকই কিন্তু বাবা মাকে যথেষ্ট সম্মান করতেন আর ভালোবাসতেন।মা যেদিন মারা গিয়েছিলেন সেদিন বাসার বুয়াকে নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল।বুয়া মায়ের বেশ কিছু গয়না চুরি করে চলে যাচ্ছিলেন এমন সময় বাবা রুমে ঢোকেন ।আমি আর মা লুকোচুরি খেলছিলাম।মা তখন আমাকে আমার রুমে খুজতে ব্যস্ত ।মায়ের চোখ ফাকি দিয়ে আমি লুকিয়ে বাবা মায়ের রুমে এসে দেখি বাবা বুয়াকে বলছেন
-তুমি এইখানে কি করছ?আর আলমারির চাবি তোমার কাছে কেন ?তোমার ম্যাডাম কোথায়?এইসব সোনা তোমার কাছে কেন?তুমি চুরি করছিলে?থামো তোমাকে এখনি পুলিশে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
বাবা পুলিশকে ফোন করবেন এমন সময় বুয়া সব সোনা গয়না বাবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চিতকার করতে করতে মাটিয়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলেন
-স্যার আমাকে ছেড়ে দেন স্যার ।আল্লাহর দোহাই লাগে আমাকে ছেড়ে দেন।
বুয়ার চিতকার শুনে মা রুমে দৌড়ে আসেন ।বাবা তখনো হতবম্বের মত হাতে গয়না নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।মাকে দেখেই বুয়া দৌড়ে গিয়ে তার পিছনে লুকালেন ।
-,ম্যাডাম আমাকে বাচান।স্যার আপনার সোণা গয়না সব নিয়ে যাচ্ছিলেন।আমি স্যার কে বাধা দিলে উনি আমার ইজ্জত নেওয়ার চেস্টা করেন।
বুয়ার কথা শুনে আর পরিস্থিতি দেখে মা বুঝতে পারেন নি কোনটা ঠিক কোনটা ভুল।একজন নারী হিসেবে তার পক্ষে এইটা মেয়ে নেওয়াখুবই কষ্ট কর ছিল।মা রাগে দুখে রুম থেকে বের হয়ে চলে যাচ্ছিলেন।বাবা সব কিছু ফেলে ছুট লাগালেন মায়ের পিছু পিছু।সিড়ির ধারে এসে বাবা মায়ের হাত টেনে ধরলেন।মাকে বুঝানোর চেস্টা করলেন।কিন্তু মা মানতে নারাজ।ঠিক তখনি ঘটল দুর্ঘটনা।বাবার সাথে তর্কাতর্কি করে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পেছন ফিরতেই মা পা পিছলে পরে যেতে লাগলেন সিড়ি বেয়ে।মাথার পিছনে সিরিয়াস ইঞ্জুরি লাগার কারনে মা তখনি মারা যান । হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার আগেই মা ওপার দুনিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন।বাবা কখনোই মাকে খুন করেন নি ।বরং পুরোটাই একটা ভুল বুঝাবুঝি ছিল।

.
.
এতটুকু বলে থামল আরদ্ধ ।ওর গলার স্বর ভারী হয়ে এসেছে।বাবা আর কিছু বললেন না।চুপচাপ উঠে দাড়ালেন ।
-আচ্ছা আমি আজ তবে আসি ।
কথাটা বলে বাবা সেকেন্ড দেরী না কর হন হন করে বের হয়ে চলে গেলেন।আরদ্ধ গিয়ে দাড়াল গ্লাস ওয়ালের সামনে।
ঠিক এখানেই ভিডিওটা শেষ হয়ে গেল। ১৭ মিনিট ১৩ সেকেন্ড এর ভিডিওটা যেন আমার দুনিয়া কাপিয়ে দিল।ফোন নামিয়ে দেখি আরদ্ধ হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু সেই হাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে এক রাশ বেদনা আর অজানা বিচ্ছেদের ভয় ।…..
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here