জেদ” পর্ব-৩২

0
866

#জেদ(A Conditional Love Story)
#পার্ট৩২
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
সব কিছুই ঠিকভাবে চলছিল।আমি এই বিয়ে নামক শিকলকে গলায় পরে সাবলীয়ায় জীবন পার করে দিচ্ছিলাম।কিন্তু হঠাত করেই আরদ্ধ এসে আমার সব কিছু ওলট পালট করে দিল।আচ্ছা ওটা কি সত্যিই আরদ্ধ ছিল?সত্যিই কি আরদ্ধ এসছিল?যদি এসে থাকে তবে চলে গেল কেন? নাকি সবটাই আমার অবচেতন মনের কল্পনা !আমি কি দিনে দিনে আরদ্ধর অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছি?আরদ্ধর প্রতি ভালোবাসা কি তবে আমার এখন পাগলামির রূপ নিচ্ছে?
যতভাবছি তত প্রশ্ন এসে ভীড় জমাচ্ছে মাথায় ।হাজারো প্রশ্নের গোলক ধাধায় আমি দিশাহীনের মত ছুটে বেড়াচ্ছি ।কোথাও কোন উত্তর নেই ।নেই কোন কিনারা।আরদ্ধকে বড্ড মনে পরছে ।খুব ইচ্ছা করছে তাকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে থাকি ।তার বুকে মাথা দিয়ে তার হৃদস্পন্দন শুনি ।আমার ঠোটের উপর তার গরম নিশ্বাস,দুহাতে গাল জড়িয়ে কপালে কপাল ঠেকানো মুহুর্তগুলোর স্মৃতি যেন আমার বুকের মধ্য়ে ভাংগা কাচের মত বিধছে।ডুকরে কেদে উঠলাম আমি ।জানিনা এই ভাবে কতদিন চলবে ।কিহবে এই সম্পর্কের পরিনতি।আরদ্ধর জেদ আমার ভালোবাসাকে কেড়ে নিয়েছে আর বাবার জেদ আমার অস্তিত্বকে বিলীন করে দিয়েছে।দিনে দিনে নিজেকে অনভূতি শূন্য মনে হচ্ছে ।রান্না করতে গিয়ে কখন হাত কেটে বসে আছি সেদিকে কোন খেয়াল নেই আমার।আরাজকে খাবার বেরে কিচেন গোছাতে গিয়ে দেখি পুরো সিং লাল হয়ে আছে।এপাশ ওপাশ তাকাতেই বুঝলাম মাছ কাটতে গিয়ে মাছের মাংসের সাথে নিজের মাংসও কেটে ফেলেছি।বেশ কিছু সময় পার হয়ে যাওয়ায় রক্ত এখন ক্লান্ত হয়ে তার প্রবাহ পথে জমাট বেধে আছে।
বিগত ১৫দিনে এরকম অসংখ্য ক্ষত দানা বেধেছে শরীরে।অফিস যাওয়ার আগে সময় মত খাবার না পাওয়ায় আরাজ যা ইচ্ছা তাই বলেছে।চা দিতে দেরী হওয়ায় নিসংকোচে গরম চা ছুড়ে মেরেছে আমার গায়ে ।ছোট খাটো অভিযোগ আর হাত সাফাই এখন নিত্য দিনের ঘটনা ।এসব নিয়ে আরাজের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই এখন ।শুধু মাঝে মাঝে মধ্যে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাহাকার করতে ইচ্ছে হয় ।বাবামাকে বড্ড জানাতে ইচ্ছে হয় আমি ভালো আছি।অনেক ভাল আছি ।তোমাদের ইচ্ছে পূর্ন হয়েছে।আরাজ আমাকে সুখে রেখেছে।প্রচন্ড সুখ।
.
.
আরদ্ধর চিন্তাগুলো ইদানীং কুড়ে কুড়ে খায় ।প্রতিটা জায়গায় এখন তাকে নিয়ে কল্পনা বারছে।আমি বেশ বুঝতে পারছি আমার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে।প্রচন্ড ভাবে হচ্ছে।আমার মন মস্তিষ্ক সব কিছুতে আরদ্ধ জেকে বসেছে।যেদিকেই তাকাই না কেন আরদ্ধকে দেখতে পাই ।এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে অচিরেই আমি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলব ।আরাজকে আবারও বললাম কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে ।কিন্তু এবারও সে আমার আমাকে সঠিক প্রমান করে নানা অযুহাত দিয়ে চলে গেল।আরাজ কি করে না করে,কোথায় যায় কার সাথে থাকে আমি কিছু জানি না।আমাকে সে কিছু বলে না।মাঝে মাঝে গভীর রাতে মাতাল হয়ে আমার ঘরের দরজায় এসে ভাংচুর করে।আমি গুটিশুটি মেরে তখন বিছানার পাশে বসে থাকি।দিন দিন আরাজের ব্যবহারের রূক্ষতা বাড়ছে।একদিকে আরাজ অন্যদিক আরদ্ধ দুই বেড়াজালে আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি।লাস্ট কবে নিজেকে আয়নায় দেখেছিলাম খেয়াল নেই।প্রচন্ড মাথা ব্যাথা আর চরম বিষন্নতা আমাকে গ্রাস করে থাকে সব সময় ।নিজেকে সামলাতে আরাজকে না জানিয়ে বের হয়ে পরলাম বাসা থেকে ।
একা একা গুটীগুটী পায়ে এগিয়ে চলছি আমি রাস্তা ধরে ।চারদিক থেকে ঠান্ডা বাতাস হাড় কাপিয়ে দিচ্ছে।আমি হাতে হাতে ঘষে নিজেকে গরম রাখার চেস্টা করছি।এগিয়ে গিয়ে পার্কের একটা বেঞ্চে বসলাম ।গাছ থেকে শুকনো পাতা ঝরে পড়ছে ।একজন সেই পাতা গুলোকে জড়ো করছে।কেউ বা বিড়াল কোলে এগিয়ে যাচ্ছে কেউবা বাচ্চাকে ক্যারিং চেয়ারে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।আমি বেশ খানিক ক্ষন বসে চারদিকটাকে দেখলাম ।এত যান্ত্রিকতা আর সভ্যতার ভীড়েও অজানা একটা শূণ্যতা বার বার এসে ধাক্কা খাচ্ছে আমার বুকে।
আমি চারপাশটা আরেকবার চোখ বুলিয়ে বাসার পথে পা বাড়ালাম ।সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পরেছে অনেকটা।পাখিরা নীরে ফিরে যাভছে।আমি মাথা নিচু করে পা বাড়াচ্ছি ।ছোট্ট একটা গলির ধারে আসতেই কেউ একজন আমাকে পেছন থেকে টেনে নিল ।কিছু বুঝে উঠায় আগেই আমার কোমড় জড়িয়ে ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দিল।সব অকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে আমি চোখের পলক পর্যন্ত ফেলতে ভুলে গেছি।চোখ তুলে সামনে তাকাতেই কেপে উঠলাম।ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দিয়ে ছিটকে চলে এলাম দূরে।আমার সামনে আরদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে ।নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না আমার ।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আরদ্ধ আরেকদফা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল ।পাগলের মত চুষতে লাগলো আমার ঠোট দুটো।ঠোট ছেড়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আরদ্ধ ।ভেজা কন্ঠে বলতে লাগল
-ঠিক এই মুহুর্তটার জন্যে আমি বছর খানেক ধরে সময় গুনছি ।I missed you Ina .i missed you so much .
আরদ্ধর ছোইয়া একটু আগেও আমাকে স্বস্তি দিচ্ছিল কিন্তু এখন কেমন জানি অসহ্য লাগতেছে ।আমি আরদ্ধকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলাম ।নিজেকে সামলে বললাম
-আরদ্ধ যা হয়েছে ভুলে যাও ।আর ভুলেও এসব করার কথা দ্বিতীয়বার মাথায় আনবে না ।আমি এখন তোমার গার্লফ্রেন্ড না কারও বাড়ির বউ ।সুতরাং কিছু করার আগে ভেবে চিনতে করবে।
-ইনা…
-আরদ্ধ আমি আমার বাসায় যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।বাই ।
আরদ্ধকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি সেখান থেকে চলে এলাম …
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here