জেদ” পর্ব-৩৩

0
913

#জেদ(A Conditional Love Story)
#পার্ট৩৩
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
আরদ্ধর জন্যে ঠিক কতটা অপেক্ষা করেছি এটা হয়তো আমি কখনো তাকে বলে বুঝাতে পারব না।বিয়ের পর থেকে এমন কোন দিন এমন কোন সেকেন্ড পার হয়নি যখন আমি আরদ্ধকে নিয়ে ভাবিনি। আমার চিন্তা চেতনা সব কিছু তেই শুধু সেই ছেলের বাস।প্রতিদিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকি কখন আরদ্ধ আসবে৷ তার মুখের সেই ভুবন ভুলানো হাসিটা দেখতে পারব। কিন্তু আজ যখন সেই সুযোগ পেলাম ঠিক তখনি সব কিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেল।এতদিন শুধু বার বার মনে হত শুধু একটা বার আরদ্ধকে কাছে পেলে সব ছেড়ে ছুড়ে আরদ্ধর কাছে চলে যাবো।তবে আজ কেন মন সায় দিচ্ছে না!কেন আজ বার বার অভিমান জমা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে!? বিয়ের পর অজস্রবার আরদ্ধকে ফোন করার চেস্টা করেছি।প্রতিবারই তার নাম্বার বন্ধ থাকতো। তার অফিস বাসা কোথা থেকেও তার কোন খোজ পাচ্ছিলাম না। যেন আমার জীবনে তার কোন অস্তিত্বই ছিল না।আর আজ যখন আমার সব কিছু তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে তখন সে তার ভালোবাসার দাবী নিয়ে আমার সামনে এসেছে।কিন্তু আমি চাইলেও পারব না। পারব না এখন তার হতে।তার কাছে ফিরে যেতে। আমার নাম এখন অন্য কারও সাথে জুড়ে গিয়েছে।এক অদ্ভুত দোটানায় পরে গিয়েছি আমি৷ মন পড়ে আছে আরদ্ধর কাছে কিন্তু মস্তিষ্ক কোন ভাবেই সায় দিচ্ছে না।
একা একা ভালো ছিলাম আমি ।কেন এল আরদ্ধ!কেন পাগল করল আমাকে?কেন আমাকে জড়িয়ে নিল তার ভালো বাসার উষ্মতায় ?আরাজ আজ বেশ শান্ত হয়ে আছে।আমার হাত কাপছে ।কোন কাজ ঠিক ভাবে করতে পারছি না।হাত থেকে বার বার জিনিস পরে যাচ্ছে।
আরাজ চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে আর আমাকে দেখছে ।খাওয়া শেষে আরাজ আমার হাত টেনে ধরল ।আমি পিছন ফিরে জিজ্ঞেস করলাম
-কিছু বলবে?
আরাজ আমার হাত ধরে টেনে বসালো ।
– কি হয়েছে তোমার ?এরকম করছ কেন?আর চেহারার এই অবস্থা বানিয়েছ কেন?চুল এলোমেলো ,চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল,গাল মুখ শুকিয়ে হাড় বের হয়ে আসছে ।কোন সমস্যা?
আমি আরাজের কাছ থেকে হাত টেনে নিয়ে হালকা হেসে বললাম
-না কিছু না ।
উঠে চলে আসব ঠিক তখনই আবার আরাজ হাত টেনে ধরল ।
-ইনা দেখ আমি মানছি আমার বিহেব ইদানিং অনেক রাফ হয়ে গিয়েছে।আসলে অফিসে একটা বড় ঝামেলা হয়ে গেছে।বস রাত দিন এইটা নিয়ে কথা শুনাচ্ছে।তার জন্যে একটু ডিসটার্ব থাকি .and you know নিউ ইয়র্ক এটা।এখানে ড্রিংক করা কমন জিনিস।আর ড্রিংক করলে আমার মাথা ঠিক থাকে না ।কি করি কি বলি তার কোন হুদিশ পাই না। I am really sorry .তোমার বাবা তোমাকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন যাতে তুমি খুশি থাকো ।আমি তাকে প্রমিস করেছিলাম সব সময় তোমার খেয়াল রাখব।কিন্তু আমি জানি না আমি কিভাবে তোমার সাথে এতোটা বাজে বিহেব করে ফেলেছি ।আমি তোমার বাবাকে দেওয়া কথা রাখতে পারিনি ইনা। please forgive me.
আরাজ আমার ডান হাএ দু হাত জড়িয়ে আকুতি করতে লাগল।
-its ok Araj .যা হয়েছে তা চেঞ্জ করতে পারব না।ভুলে যাওয়াটাই বেটার .just make sure ভবিষ্যতে যাতে এরকম কিছু না হয় ।কারন কিছু জিনিস সহ্য করা অনেক কঠিন ।সত্যিই অনেক কঠিন।
কথাটা বলে আমি একটা দম ফেললাম ।আরাজ হয়তো বা কিছু বলতে চাচ্ছিল।তার আগে আমি বলে উঠলাম
-যা হবার হয়ে গিয়েছে ।আমি আর এই বিষয়ে কথা বলতে চাই না ।ঘুমাও তোমার সকালে অফিস আছে।
কথা গুলো বলে আরাজের উওরের অপেক্ষা না করেই আমি রুমে চলে আসলাম।বড্ড ফাকা ফাকা লাগছে আজকে নিজেকে।আমি যত চেস্টাই করিনা কেন আরদ্ধকে ছাড়া আমার ভেতরটা হাহাকার করে ।ঘুম আসছে না ।প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।আমি চুপচাপ অপলক তাকিয়ে আছি জানালা ভেদ করে দূর আকাশে।
.
.
প্রতিদিনের মত আজকেও নাস্তা শেষ করে আরাজ বেরিয়ে গেল।আমি রান্নাঘরে আনমনে রান্না করছিল।আরদ্ধর খুব শখ ছিল বিয়ের পর ছুটির দিনে আমরা একসাথে রান্না করব ।আমি কাজ করব আর সে পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে চুলে নাক গুজে থাকবে।রান্না শেষে নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিবে।বিয়ে নিয়ে আমাদের তেমন কোন মাথাব্যাথা ছিল না।অন্য কপোত কপোতির মতো আমরা রিলেশনের দুই তিন মাস পর বাচ্চার নাম ,বাসার দেওয়ালের কালার ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে এসব নিয়ে মারামারি করিনি।আমাদের শুধু ছোট ছোট কিছু স্বপ্ন ছিল।দুজনের আশা ছিল একসাথে থাকার ।একহয়ে বাচার ।আরদ্ধ খুব করে চাইত আমি যেন ওর সাথে রাগ জেগে পূর্নিমা দেখি।আমি ওর বুকে মাথা দিয়ে ওর হৃদস্পন্দন শুনব আর সে হালকা করে আমার চুলে বিলি কেটে দিবে।থেকে থেকে চুমু খাবে আমার কপালে ।বেশ কয়েকবার আরদ্ধ বাড়াবাড়ি রকমের জেদ করে বসেছিল যেন তার সাধ পূরন করি কিন্তু বাবার ভয়ে তা আর পূরন হয় নি ।পরে তার খেসারত ও দিতে হয়েছিল ঘন্টা খানেক তার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে থেকে। সবকিছুই এখন কেমন যেন স্বপ্নের মত লাগে ।যেন এক নিছন কল্পনা যা কখনো পূরন হবার নয় ।
আনমনে ভাবছি কথাগুলো।নিজের চিন্তার জগতে ব্যস্ত আমি ।হঠাত কে যেন কলিং বেল বাজাল।ভ্রু সামান্য কুচকালো আমার ।বেলা মাত্র শুরু ।কে এল এই সময়?আরাজ তো এত তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরে না ।
ও দিকে কেউ অনবরত বেল বাজিয়েই যাচ্ছে।যেন ট্রন ছাড়া পরল।আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললাম।সামনে তাকাতেই থেমে গেলাম আমি ।হাত থেকে চাকুটা ফসকে গিয়ে আছড়ে পড়ল ফ্লোরে।আমি যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছি ।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি সামনের দিকে ।…….
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here