জেদ পর্ব ৩৭

0
1271

#জেদ(A Conditional Love Story)
#পার্ট৩৭
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
আরদ্ধর বুকে লেপ্টে আছি আমি। আরদ্ধ এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে আরেকহাতে আমার চুলে হাত বুলাচ্ছে।কখনো থেমে থেমে কপালে চুমু খাচ্ছে আলতোভাবে।
-এখনো মাথা ব্যাথা করছে?
-উহু ।
আমি আরদ্ধকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম ।ওর খোলা বুকটাতে খুব করে নাক ঘষে নিলাম।আরদ্ধ আমার গায়ে আরেকটু চাদরটা টেনে দিল ।আরদ্ধ তার ভালোবাসার উষ্ণতায় জড়িয়ে রেখেছে আমাকে।কতক্ষন কেটেছে জানিনা কিন্তু যতক্ষন আরদ্ধ আমার সাথে ছিল আমার মধ্যে একটা অন্য রকম প্রশান্তি বিরাজ করছিল।
ঘুম ভেংগে নিজেকে অগোছালো অবস্থায় অবিষ্কার করলাম ।বেশ কিছু ক্ষন সময় লাগল আমার ধাতস্ত হতে ।বিছানা থেকে নামতে গিয়ে ধপাস করে মাটিতে পরে গেলাম ।ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম বিছানায় না সোফায় শুয়ে ছিলাম আমি ।কিন্তু আমি তো বিছানায় ঘুমিয়েছিলাম তাহলে সোফায় আসলাম কিভাবে?আর আমার সাথে না আরদ্ধ ছিল?আরদ্ধ কোথায় গেল?আমি তড়িঘড়ি করে বিছানার দিকে তাকালাম।সব কিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে আমার।বিছানার উপর আরাজ ঘুমিয়ে আছে।কিন্তু কালকে রাতে আমি বিছানায় ঘুমিয়েছিলাম। আর শুধু আমি একা ছিলাম না।আমার সাথে আরদ্ধও ছিল।আরদ্ধ কোথায় গেল?আর আমিই বা কিভাবে সোফায় আসলাম?তাহলে কি রাতের সব কিছু স্বপ্ন ছিল? কিছুইতেই হিসাব মিলাতে পারছিনা আমি। সব কিছু বার বার ওলট পাটল লেগে যাচ্ছে।ফ্রেশ হওয়ার জন্যে বাথরুমে গেলাম আমি।আয়নায় নিজের উপর চোখপরতেই চমকে উঠলাম আমি। চুল এলোমেলো হয়ে আছে।ঠোট ফুলে আছে। গলায় বেশ কিছু অংশে লাল লাল দাগ।এতক্ষনে সবকিছু স্বপ্ন মনে হলেও এখন সন্দেহের প্রগাঢ়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।কিন্তু কোন ভাবেই কোন কূল কিনারা খুজে পাচ্ছিনা আমি।মাথা ব্যাথা না থাকলেও পুরো শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা ।আমি কোন রকমে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম ।রান্না ঘরে গিয়ে আমি নাস্তা বানাতে মন দিলাম ।
কিছুক্ষন পর একে একে বাসার সবাই ঘুম থেকে উঠে গেল।খেতে বসে হঠাত করে আরাজের মা জিজ্ঞেস করে উঠল
-ইনায়াত তোমার গলায় এত লাল লাল দাগ দেখা যাচ্ছে কেন?
আরাজের মায়ের হঠাত এরকম প্রশ্নে চমকে গেলাম আমি ।আরাজ এতক্ষন মাথা নামিয়ে চুপচাপ খাচ্ছিল ।ওর মায়ের কথা শুনে সে মাথা উচিয়ে দেখতে লাগল ।আমি কোন রকমে বলে উঠলাম
-কালকে দুপুরে খাবারের জন্যে এলার্জি হইছিল প্রচুর ।আর এলার্জি উঠলে সারাশরীরে র‍্যাস বের হয় ।তাই হয়তো আচরের দাগে লাল হয়ে আছে।
আমি হালকা হাসার চেস্টা করলাম ।কথাটা শেষ করে আরাজের দিকে তাকিয়ে দেখি সে এখনো সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর চেহারার ভাব ভংগি দেখেই বুঝা যাচ্ছে আমার উত্তর তার পছন্দ হয় নি ।কিন্তু সেকেন্ড কয়েক তাকিয়ে থাকার পরে সে আবার আগের মত খাবারে মন দিল ।
খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে সবাই তখন আরাম করছে ।হঠাত করেই আব্বুর মাথায় ঝোক চড়ল আশেপাশের এলাকাটা একটু ঘুরে দেখবেন।যেই ভাবা সেই কাজ ।আমি ছোট থেকেই আব্বুকে ভ্রমন রসিক হিসেবে দেখে এসেছি ।কোথাও গেলে আমার চেয়ে বেশি আব্বু নেচে বেড়াত।এখনো তার ব্যতিক্রম হবে না জানি।মা বাবার সম্পূর্ন বিপরীত। মায়ের ঘুরাঘুরি স্বভাব পছন্দ না।বাবা যেতে চাইলেও বাধ সাধলেন মা।কিন্তু বাবার জেদের কাছে মাকে হার মানতে হলো ।সবাই হাটতে গিয়েছেন ।দুপুরে লাঞ্চ বাসাতে করবেন।আমি থালাবাসন গুছিয়ে দুপুরের রান্না চাপালাম ।রান্নাঘরের কোণে দাঁড়িয়ে তরকারি কুটছি হঠাত এক জোড়া হাত এসে কোমড় জড়িয়ে নিল আমার ।স্পর্শটা পরিচিত হলেও মুহুর্তেই চমকে উঠলাম আমি ।পেছনে ঘুরতে না ঘুরতেই এক জোড়া ঠোট চুমু বসিয়ে দিলো আমার ঠোটে ।আমি তখনো ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারিনি।আরদ্ধ আমাকে জাপটে ধরে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে।
-আরদ্ধ তুমি…।
-হ্যা আমি…
-তুমি এখানে কি করছ?
আরদ্ধ আমার কোন কথার জবাব দিল না ।আমার গলার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো।তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে পাশের একটা চেয়ার টেনে বসল ।
আমি এখনো হা করে আরদ্ধর দিকে তাকিয়ে আছি ।
-কি রান্না করছ?অনেক দিন তোমার হাতের রান্না খাওয়া হয় না ।
-আরদ্ধ ফাইযলামি করোনা ।তুমি এখানে কি করছ?আর কালকে রাতে তুমি আমার সাথে ছিলে এখানে?
-আমি ছাড়া কে থাকবে তোমার পাশে শুনি ?তোমার সেই সো কল্ড হাসবেন্ড আরাজ?
-আরদ্ধ প্লিজ……
-ইনা মিটীং আছে আমার আজকে একটা ইম্পরট্যান্ট ।I need my luck .পরে কথা বলব ।ওকে?
এক নাগারে কথাগুলো বলে আমার ঠোটগুলো আবার সিক্ত করে চলে গেল আরদ্ধ ।আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমার মধ্যে তার মায়া আর ঠোটে তার ছোয়া রেখে গেল ।
পেছন ফিরে কাজ এ মনযোগ দিব ঠিক তখনই কেউ একজন আমার চুলের মুঠি ধরে আছড়ে ফেলে দিল মাটিতে ।কিছু বুঝে উঠার আগেই আরেকটা থাপ্পড় সজোরে এসে পরল আমার গালে।আমি এখনো বুঝে উঠতে পারিনি আমার সাথে কি হচ্ছে।শুধু একটার পর একটা আঘাত তীরের ফলার মত ছুটে আসছে।আমার বুঝতে বাকি রইল না কে এসব করছে।কিন্তু আমি ভেবে কুল পাচ্ছিনা ঠিক কি কারনে আরাজ আমার উপর এই রাগের ধারা বর্ষন করছে?আরাজ আমার চুল ধরে ছেচড়িয়ে ডাইনিং রুমে নিয়ে গেল ।আমার নাক নিয়ে ততক্ষনে টপটপ করে রক্ত ঝরা শুরু করেছে।ক্কিন্তু সেদিকে কারও খেয়াল নেই ।আমি মাথা তুলতেই আরাজের মা বলে উঠলেন
-আমি আগেই বলছিলাম এই মেয়ের সাথে বিয়ে দিও না ।এই মেয়ে আমার ছেলেটার জীবন নষ্ট করে ছাড়বে।দেখো এখন ।
আরাজের মায়ের সাথে আমার মা সুর মেলালেন ।
-ইনায়াত তোকে আমি ভালো ভেবেছিলাম।কিন্তু তুই যে এতটা খারাপ তা আমার জানা ছিল না।আগে জানলে তোর মত মেয়েকে জন্মের সময়ই মেরে ফেলতাম ।
-কলংকিনি নিজের মুখে তো চুনকালি মাখছিস বাপ মা টারেও ছাড়লি না?ঘরে স্বামী রেখে পর পুরুষের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে বেড়াস !এক পুরুষে মন ভরে না তোর……
আরাজের মা অনবরত কিছু বলতেই আছেন।সেসব শুনার মত আর শক্তি আমি পাচ্ছিনা ।ধীরে ধীরে আধার নেমে আসছে আমার চোখের সামনে ……
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here